মাঝে মাঝেই আমাদের এমন হয় যে, আমরা মারাত্মক রেগে গেছি কিংবা লজ্জায় পড়ে গেছি কোনো বিষয়ে আর সেই সাথে আক্ষরিক অর্থেই লাল হয়ে গেছে আমাদের গাল দুটো। বিশেষত ফর্সা মানুষদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি আরো বেশি লক্ষ্য করা যায়। আর সেই মানুষটি যদি মনের মানুষ হয় তাহলে তো কথাই নেই; শুধুই তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছা করে তখন... wink emoticon
অবশ্য প্রিয়জনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে উৎসাহিত করার জন্য এ লেখাটি না, বরং কেন এমন হয় তা সহজ করে বুঝিয়ে বলতেই এ লেখা।
খুব সহজ করে বলতে গেলে, আমাদের মুখের চামড়ার নিচের রক্তনালীকাগুলোতে অধিক পরিমাণে রক্ত চলাচলের ফলেই লালচে গালের দেখা মেলে। উত্তাপ, অসুস্থতা, অ্যালার্জি, অ্যালকোহল ছাড়াও বিভিন্ন অনুভূতির প্রকাশক হিসেবেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
যখন আমরা কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে যাই অথবা লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পড়ি, তখন আমাদের দেহ থেকে অ্যাড্রেনালিন ক্ষরিত হয়। এ হরমোনটি এরপর ধাপে ধাপে বেশ কিছু কাজ করতে থাকে।
(১) আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়ে যায়।
(২) হৃদকম্পন ক্রমশ এমনভাবে বাড়তে থাকে যেন বুকের ভেতর কেউ ড্রাম বাজাচ্ছে।
(৩) আমাদের চোখের মণিগুলো এরপর আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে যাতে আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে যতটা বেশি সম্ভব সজাগ থাকা যায়।
(৪) আমাদের হজম প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে যায় যাতে করে শক্তিটুকু আমাদের পেশীতে এসে জমা হয়।
(৫) আমাদের রক্ত নালীকাগুলোও ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়ে যায় যেন রক্তপ্রবাহ ও অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। এ সময়ই মূলত আমরা আরক্তিম গালের দেখা পাই। তখন কেমিক্যাল ট্রান্সমিটার অ্যাডেনাইলিল সাইক্লেজ এর সিগনাল পেয়ে আমাদের মুখের চামড়ার নিচে থাকা রক্তনালীকাগুলো প্রসারিত হয়ে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে গালগুলো লাল হয়ে যায়!
অনেকে আবার এ লাল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিকে ভয়ও পেয়ে থাকেন। এ ভয়কে বলা হয় এরিথ্রোফোবিয়া। এন্ডোথোরাসিক সিমপ্যাথেকটমি সার্জারির সাহায্যে এ প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব।
একটি অসাধারণ আবেগপূর্ণ জিনিসের এমন সহজ-সরল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেখে আবার বেঁকে বসার কারণ নেই। কারণ দিনের শেষে আমরা সবাই যে আবেগেরই ফেরিওয়ালা...