আতর একটি সুগন্ধি প্রসাধনী সামগ্রীর নাম ।মুসলমানদের ব্যবহৃত একটি সুগন্ধি দ্রব্য ।আতর ইসলামে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে।আতরের সুবাস বা সুঘ্রাণ পবিত্রার আমেজ কে করে তোলে আরও সুন্দর ও পবিত্র ।প্রতি শুক্রবার জুম্মার দিন গুলিতেও ধর্ম প্রাণ মুসল্লীগন আতর মেখে খোদার ঘর মসজিদে নামাজ পড়তে যায় ।বছর ঘুরে আবারো আসছে পবিত্র রমজান মাস।রমজান মাস জুড়ে প্রতিটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের শরীর থেকে ছড়াবে আতরের সুবাস।এরপরই খুশির ঈদ।তাই ঈদের প্রস্তুতিও জোরেশোরে শুরু হয়ে গেছে ।আতর ছাড়া যেন ঈদই অপূর্ণ । ঈদের দিনে সকালে মুসল্লি গন গোসল করেই সরিলে আতর মেখে ঈদগাহ মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ।
শরিয়তে পুরুষদের জন্য অন্য কোন প্রাকার সুগন্ধি হালাল নয় একমাত্র আতর ছাড়া এছাড়াও আতর গায়ে মাখা সুন্নত।আর মৃতের একমাত্র প্রসাধনও আতর।আতর সুধু মুসলমান ব্যাবহার করতে পারবে তা নয় অন্যান্য ধর্মের ধর্মাবলম্বীদের আতর ব্যাবহারে কোন রকম নিষেধাজ্ঞা নাই।
ইতিহাস সূত্র মাধ্যমে জানাজায় মুঘল আমল থেকে আতরের ব্যাবহার শুরু হয় ।মুঘল আমলে আগর গাছের ছাল থেকে তৈরি হতো আতর।সর্ব প্রথম আগর গাছ সনাক্ত কারিদের দৌড়াল বলা হয় স্থানীয় ভাষায়।আগর থেকে আতর তৈরির পদ্ধতি হিসেবে দেখা যায়, বয়স্ক আগর গাছে দা দিয়ে কুপিয়ে রেখে দিলে সেখান থেকে রক্তের মত ঘন রস পড়ে।গাছের সেই ঘন রস দিয়েই তৈরি হয় সুগন্ধি পবিত্র ও সুন্দর আতর ।আগর গাছের বৈঙ্গানিক নাম Aquilaria malaccensis ।
বাংলাদেশের চিরসবুজ সম্পদের গ্রাম নামে সুপরিচিত সিলেটের জেলার মৌলভীবাজারের সুজানগর গ্রাম যা সুধু বাংলাদেশে কিংবা এশিয়া মহাদেশে নয়,সারা বিশ্বে আতর তৈরির জন্য সুপরিচিত ও বিখ্যাত। গ্রামটিতে ঢুকলেই দেখা যায় সারি সারি আগর গাছ ।সিলেট জেলার পাহাড়ে আগর গাছের চাষ হয় ।বর্তমানে আগোর গাছ চট্টগ্রামেও পাওয়া যায় । আগর গাছ সবচাইতে বেশী জন্মায় পাথরিয়া পাহাড়ে এই জন্য এই পাহাড়টি আগর চাষের জন্য বিখ্যাত ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মূল্যবান আগর গাছের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রেইন ফরেস্টে। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত ও ভুটানে এর চাষ হয়।
প্রাকৃতিক সুগন্ধি পণ্য হিসেবে আগর আতর বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের স্থান দখল করেছে এছাড়াও দেশে-বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।বর্তমানে মৌলভি বাজারকে সরকার এক জেলা এক পণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে।এখানকার উৎপাদিত আগর-আতর শতভাগ বিদেশে রপ্তানি হয় এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। আতর শিল্পের নান্দনিক প্রক্রিয়া অবলোকনে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। সম্ভাবনাময় এ সুগন্ধি শিল্প বিকশিত হলে, সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে এবং সর্বোপরি বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ স্থান করে নিতে পারবে ।
আতর শিল্প বর্তমানে এদেশে বিক্রি হয় দেশী ও বিদেশী অনেক ধরনের আতর।এর মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদায় বেশি আছে জান্নাতুল নাঈম, জান্নাতুল ফেরদাউস, শাইখা, হাজরে আসওয়াদ, সুলতান, উদ, কিং হোয়াইট, আল-ফারেজ, কুল ওয়াটার ইত্যাদি নামের আতর ।
বর্তমানে ঘরে বসেই আতর তৈরি করা যায় ।আতর তৈরির নিয়ম ও প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন উপকরণ সম্পর্কে ইউটিউবে বিস্তারিত দেখে আপনিও পারেন ঘরে বসেই তৈরি করতে সুগন্ধি আতর ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৫১