টেবিল থেকে অর্ধেক আপেল এর টুকরা নিয়ে কাটলো জুয়েল। কিন্তু ওটা মুখে দিল না। চাকুটা নিয়ে জিহ্বায় ছোঁয়াল। একটু নোনতা নোনতা লাগছে। মানুষের রক্তের স্বাদ নোনতা হয়। রক্ত ধুয়ে ফেলা হয়েছে। তবুও নোনতা স্বাদ আছে এখনও। ভালোই লাগছে। চাকু হাতে নিয়ে আবার বেডরুমে গেল।
একটা নিথর দেহ পরে আছে। হাত পা বাঁধা। শরীরের জায়গায় জায়গায় রক্ত। এই শরীরের প্রতিটা ভাঁজ আগে অনেক প্রিয় ছিল ওর। এখন দেখলেই ঘৃণা করে। গালের রক্তটা চাকুর উল্টা পাশ দিয়ে মুছে নিয়ে জিহ্বায় ছোয়ালো। অনেক মজা! প্যান্টে মুছলো চাকু। ঠোঁটটা কেটে দিল। রক্ত বেরুচ্ছে না আর। এই ঠোঁট এ আগে কত কামড় দিয়েছে! ঠোঁট দিয়ে। দাঁত দিয়ে নয়।
প্রথম কামড় দিয়েছিল একটা বৃষ্টির দিনে। রিক্সায় করে যাচ্ছিল রিনির সঙ্গে। হঠাৎ বৃষ্টি আসলো। রিক্সায় হুড তোলা ছিল। কিন্তু তবুও ভিজে যাচ্ছে ওদের পা। রিনি ওর ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে মেলে ধরে। আর জুয়েল ওকে জড়িয়ে ধরে। রিনি ওর দিকে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে। ঠোঁট এগিয়ে দেয় জুয়েল এর ঠোঁট এর দিকে।
এখনও চোখ বন্ধ আছে। চোখের ভেতর চাকুটা ঢুকিয়ে দিল। ভারী কিছু তরল বের হয়ে আসে। চোখ গুলো এখন অনেক ভয়ংকর লাগছে। যে কেউ দেখলেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠবে। জুয়েল ভয় পাচ্ছে না। এক সময় এই চোখ অনেক মায়াবী ছিল। সব সময় চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতো। চোখ ভর্তি ছিল জুয়লের জন্য প্রেম। রিনিকে বলেছিল, সারাজীবন অই চোখে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। আর কেউ যেন অই চোখের ভালোবাসায় গভীরতা না পায়। মরে যাব।
রিনি বলে, এরকম কখনও হবে না। ওর শরীর, মন সব কিছু জুয়েলের। চোখও।
রিনি মিথ্যা বলেছিল। ওর চোখের আয়নায় অনেকেই তাদের নিজের, তাদের ভালোবাসার প্রতিফলন দেখেছে। এসব জুয়েল জেনেছে রাকিব এর কাছে।
রাকিব জুয়েলের ভার্সিটি লাইফের বন্ধু। দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিল। সেদিন হঠাৎ দেখা। ওকে নিয়ে কেএফসি তে গেল। কিন্তু কিছুই খেল না। আগে ফ্রাইড চিকেন ওর অনেক প্রিয় ছিল। বসে বসে জুয়েল একা একা খেল। আর গল্প করলো। অনেক গল্প।
তারপর? প্রেম ট্রেম কিছু করিস? নাকি এখনও আগের মতোই মেয়েদের এড়িয়ে চলিস?
করি দোস্ত। রিনি। আমাকে অনেক ভালোবাসে।
তোকে ভালোবাসে? তুই বাসিস না?
বাসি তো। অনেক।
যদি কখনও শুনিস, ও অন্য কাউকে ভালোবাসে?
খুন করে ফেলব।
কাকে? যাকে ভালোবাসে, তাকে নাকি ওকে?
জানিনা। এসব বাদ দে তো! ও অন্য কাউকে ভালবাসতেই পারে না।
আচ্ছা আচ্ছা। ঠিক আছে। তবে তোকে কাল একটা জিনিস দেখাব।
পরেরদিন রাকিব ওর ফোনে রিনির কিছু ছবি দেখায়। অন্য ছেলের সাথে। খুব ব্যাক্তিগত কিছু ছবি। ছবি গুলো কীভাবে পেল রাকিব, জানতে ইচ্ছা করছিল না। একেবারে স্বাভাবিক ছিল জুয়েল। একসাথে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দিল। রাতে বাসায় ফিরল।
রিনি ঘুমাচ্ছে। কি নিষ্পাপ চেহারা! ও অন্য কারুর সাথে এরকম করতেই পারে না! জুয়েলই ওর প্রথম ভালোবাসা। যদি জুয়েল এর আগেও কাউকে ভালোবাসতো, তাহলে তো রিনি তা জুয়েলকে বলত। কিন্তু রাকিব ওসব কি দেখালো? ভার্সিটি লাইফে কি করেছে এসব?
ডাইনিং রুম গেল খাওয়ার জন্য। বাহিরেই খাওয়ার কথা ছিল। রাকিব এর সাথে। অবশ্য রিনিকে রাকিব এর কথা বলেনি। রাকিব নিজেই মানা করেছে। কিন্তু রাকিব কিছুই খেল না। তাই আর বাহিরে খাওয়া হয়নি। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে খেয়ে নিল। টেবিলের উপর একটা আপেল। পাশে চাকুটা। অর্ধেক কেটে খেয়ে নিল।
চাকু হাতে নিয়ে রুমে গেল। রাকিব এর দেখানো ছবিগুলোর কথা খুব মনে পরছে।
চাকুটা বেড এর পাশের টেবিলে রেখে দিল জুয়েল। লাইটার নিয়ে বেলকুনিতে গেল। রিনি সিগারেট পছন্দ করে না। বেলকুনিতে অ্যাস্ট্রে রাখা আছে। রিনি রেখে দিয়েছে।
সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে চেয়ারে বসে পরল। বাহিরে অন্ধকার। পাশের রোডলাইটটা কয়েকদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। মাঝেমাঝে চাঁদনী রাতে এই আলোর জন্য চাঁদ দেখা যায় না। রিনিকে নিয়ে এখানে বসে চাঁদ দেখে। তখন ভাবত, এই লাইট না থাকলে আরও সুন্দর দেখা যেত। ঢাকা শহরে এরকম একটা সিস্টেম করা উচিত যেন, প্রতি জ্যোৎস্না রাতে সব লাইট অফ করে দেওয়া হয়।
আজ জ্যোৎস্না রাত নয়। আর লাইটও বন্ধ। তবুও তেমন অন্ধকার না। ঢাকা যেন কখনও অন্ধকার হয় না! আশেপাশে কই থেকে যে আলো আসে, বোঝা যায় না। রাস্তার বিপরীত পাশে কয়েকটা ঘরে আলো জ্বলছে। নিশ্চয় লেখাপড়া করছে। হাতঘড়িতে দুইটা বাজে। এই ঘড়িটা রিনি ওকে গিফট করেছে গত জন্মদিনে। যখন জুয়েল অনেক ব্যাস্ত থাকে, আর সময় দেখে, তখন রিনিকে মনে করিয়ে দেয় এই ঘড়ি। যদিও ওকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ঘড়ির কোন প্রয়োজন নাই।
দূরে কোথাও কুকুর ডাকছে। একটা কুকুর যদি কোন এলাকায় ডাকে, তখন আশেপাশে অন্য এলাকার কুকুরও ডেকে ওঠে। ব্যাপারটা এরকম লাগে জুয়েলের কাছে যেন, একজন বলে,
-অই কুত্তারা, জাইগ্যা আছস?
~হ ভাই। আছি।
~মামা, আমিও জাইগ্যা আছি।
~কোন সমস্যা নাকি? হইলে জানাইয়েন। জাগনা আছি।
-আচ্ছা থাক। ঘুমাইসনা। এলাকায় উল্টা পালটা কিছু দেখল জানাইস।
বেলকুনিতে একটা ছোট গোলাপ গাছ। একটা গোলাপ কলি ফুটেছে কয়েকদিন আগে। রিনি অনেক আনন্দ দিয়ে ডেকে দেখালো। রিনি অনেক সামান্য ব্যাপারেই অনেক খুশি হয়। একটা ফুলের কুঁড়ি ওকে যে পরিমান আনন্দ দিয়েছে, জনিনা, একটা ছোট বাচ্চা ওকে কি পরিমান আনন্দ দিবে! আর দুই তিন মাস পর সেই আনন্দ জুয়েল দেখতে পারবে।
কুঁড়িটা ছিঁড়ে পিষে ফেলল হাত দিয়ে। সিগারেটের আগুন দিয়ে বেলকুনির দড়িটা কেটে ঘরে নিয়ে আসলো।
রিনি ঘুমাচ্ছে। কপালে একটা চুমু দিল। একটু নড়ে উঠে পাশ ফিরল। হাত দুটো এক সাথে আছে। দড়িটা দিয়ে বেধে ফেলার পর চোখ মেলে তাকালো।
কখন এসেছ?
কোন উত্তর দিল না। রিনি নড়তে গিয়ে বুঝতে পারল, ওর হাত বাঁধা। চমকে তাকালো জুয়েলের দিকে। জুয়েল ততোক্ষণে দড়িটার অন্য পাশ খাটের সাথে বেঁধেছে। আর ওর ওড়না হাতে নিয়ে পা বাঁধতে গেল।
কি করছ তুমি? জুয়েল! কি করছ?! কি হয়েছে তোমার?
তোমাকে একটা ম্যাজিক দেখাবো। পা দুটো একসাথে করো। বাঁধবো।
আমি ম্যাজিক দেখব না। আমার হাতের বাঁধন প্লীজ খুলে দাও! কি হয়েছে তোমার জুয়েল?
পা ছড়াছড়ি করছে রিনি। জুয়েলের গায়ে হঠাৎ পশুর মতো শক্তি। বেডে উঠে ওর পায়ের উপর বসে পরে। রিনি চিৎকার করতে যায়। তখন জুয়েল ওকে বলে,
চিৎকার করনা। পাশের বাসার লোকজন উঠে যাবে।
রিনি কি করবে, বুঝছে না। জুয়েল কে ও ছয় বছর ধরে বিশ্বাস করে। মাঝেমাঝে অনেক পাগলামো করে। একদিন লুঙ্গি দিয়ে বলে, লুঙ্গি পরো। তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব! রিনি যায়নি অবশ্য। তবে আজকের মতো পাগলামি আগে করেনি। রিনি চুপ করলো। জুয়েল ওর পা বেডের সাথে বেধে দিল।
রিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। জুয়েল টেবিল থেকে চাকুটা হাতে নিল। রিনি বুঝতে পারছে না, কি হতে যাচ্ছে!
কি করবে তুমি?
একটা ম্যাজিক দেখাবো।
চাকু কেন?
একটু পরে বলব।
পাশে একটা রুমাল ছিল। ওটা রিনির মুখে বুজে দিয়ে টেপ দিয়ে মুখ বাধল। রিনি আর কথা বলতে পারছে না। ওর শরীরের সব কাপড় কেটে খুলে ফেলল। রিনির শরীরের সব চেয়ে প্রিয় জায়গা ছিল ওর বুক। বাঁ পাশে, ঠিক যেখানে রিনির হৃদপিণ্ড, সেখানে চাকুটা রাখল। রিনি নরাচরা করার চেষ্টা করে লাভ হচ্ছে না। চাকুর হাতল বাঁ হাতে ধরল। আর ডান হাত দিয়ে উপর থেকে জোরে একটা চাপ দিল। প্রায় পুরোটা ঢুকে গেল।
কিছুখন পর রিনির ছটফট থেমে গেল। শরীর নিথর হয়ে যায়। গাল কেটে দেওয়ার আগে অখানেও একটা চুমু দেয়। ঠোঁটে চুমু দেয়। পেটে, যেখানে একটা বাচ্চা আছে। ছেলে হলে নাম রাখার কথা ছিল স্বপ্ন। আর মেয়ে হলে জ্যোৎস্না। বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না না। রিনির মেয়ে জ্যোৎস্না।
রিনির মেয়ে। জুয়েলের না। চাকুটা পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে কয়েকবার ঘুড়িয়ে বের করে আনল। পেটটা একটু নড়ছিল। কিন্তু সেটা জুয়েলকে আটকানোর জন্য যথেষ্ট না।
কাটা ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল জুয়েল। রক্ত বেরুচ্ছে না। একটু বের করার চেষ্টা করলো চুষে। বের হল না। এই প্রথমবার জুয়েল রিনির ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। কিন্তু কোন সাড়া পেল না। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। ডাইনিং রুম এ গিয়ে আপেলটা নিয়ে বেলকুনিতে বসে পরল।
মনে পরল, দুই বছর আগে একবার রাকিব দেশে এসেছিল। জুয়েলকে বলল রিনিকে নাকি ওর অনেক পছন্দ হয়েছে। অনেক ফ্রেন্ড এর সাথে একটা ছবিতে দেখেছে ফেসবুকে। সেখানে জুয়েলও ছিল। রাকিব জানতো না, জুয়েল রিনিকে ভালোবাসে! জুয়েল কিছু জানায়ওনি! রাকিবকে নিয়ে ওদের গ্রামে বেড়াতে যায়। সেখানে ওদের একটা ইটের ভাটা আছে। প্রচণ্ড আগুনে সেখানে মাটি পুড়ে ইট হয়ে যায়।
জুয়েল একাই ঢাকায় ফিরে আসে। রাকিবকে খুঁজে পাওয়া যায়নি এরপর। জুয়লের সাথে যে রাকিব গিয়েছিল, এটাও কেও জানতো না!