কত বছর আগে মনে নাই তবে ঢাকায় একবার ভিক্ষুকবিরোধী অভিযান হইছিল সেইটা মনে আছে । তখন ভিক্ষুকদের ধরে ধরে ঢাকার বাইরে অন্য কোনো শহরে রেখে আসা হয়েছিল । কিছু কিছু ভিক্ষুককে টাকাও দেয়া হয়েছিলো রিক্সা-ভ্যান টাইপের কিছু কেনার জন্য । কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই । কয়েকদিন পর তারা আবার ফিরে আসছে ভিক্ষা করতে । কারণটা কি আমি জানিনা । আমি ছোট মানুষ । সবে ২০ বছর বয়স হইছে আমার । আমার এত ছোট মাথায় এত বড় বড় জিনিস ঢুকার মত যথেষ্ট ছিদ্র নাই ।
ভিক্ষুক দূরীকরন অভিযান বাস্তবিকই ভালো উদ্যোগ । কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় । আমি উত্তরাতে থাকি । উত্তরা ছাড়া অন্য জায়গার কথা আমি বলব না । উত্তরাতে যারা থাকেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন নর্থ টাওয়ার বা রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স এর সামনে প্রায়ই দেখা যায় নড়াচড়া করার সামর্থ্যহীন পিচ্চি একটা ভিক্ষুক সুউচ্চ স্বরে সারাদিন আল্লাহকে ডাকে । এইলোককে সকালে দুইজন লোক এসে রেখে যায় আর সন্ধ্যায় নিয়ে যায় । সারাদিনে ওর যা আয় হয় তা আমি মোটামুটি তিন-চার দিনে আয় করি । কিন্তু আমরা এতটাকা ওর থালায় দেখিনা । কারণ সারাদিনে ওই দুইজন লোক ৪-৫ বার আসে । বাকিটা বুঝে নেন ।
ইনি হলেন সেলিব্রিটি ভিক্ষুক । কিন্তু কয়েকজন আছেন যারা আসলেই আয় করতে পারেন না । তারা আবার সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন । কবে কোথায় কম্বল বিতরন হবে টাইপের কোন কিছুর আশায় থাকেন সারা বছর । আর এখন তারা আশায় থাকবেন কবে ভিক্ষুক নিবারণ অভিযান শুরু হবে । তারা টাকা পাবেন রিক্সা কেনার জন্য কিন্তু কিনবেন না । আবার ভিক্ষা করতেই নামবেন । অনেকদিন আগে, সম্ভবত ৫ম শ্রেণীতে পড়তাম তখন দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় দেখেছিলাম, লন্ডনে নাকি একজন ভিক্ষুক সপ্তাহে ৩২০০০ পাউন্ড আয় করে । তখন ১ পাউন্ড=১০২ টাকা ছিলো । আমি ১ পাউন্ড=১০০ টাকা ধরে নিয়ে হিসেব করেছিলাম । সপ্তাহে একজন ভিক্ষুকের আয় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা !
বাংলাদেশও উন্নতি করতেছে । এখনই কোন কোন ভিক্ষুক সপ্তাহে হাজার দশেক টাকা কামাই করে । দশ বছর পরে ৩২০০০ পাউন্ড না হোক ৩২০০০ টাকাতো কামাই হবে তাদের নাকি ??
জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন, "এত উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কেউ কি পায়ে ঠেলে দেবে বলে আপনাদের মনে হয় ?"
লেখকের কথাঃ অনেক বড় বড় জ্ঞানী-গুণী ব্লগার, বড় ভাই, বড় আপুরা আছেন এই সামুতে । যদি কখনো কোন ভুল হয়ে যায়, দয়া করে ধরিয়ে দেবেন । বড়রাই তো ছোটদের ভুলগুলো শুধরে দেবে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪