আমার এক বন্ধু ইংল্যাণ্ডে থাকে। তার কাছে শোনা। সে জানাল, ইংল্যাণ্ডে কোন অপরাধীর মৃতু্যদণ্ড হয় না। মানে, কেউ খুন করলেও তার মৃতু্যদণ্ড হয় না। মৃতু্যদণ্ড নামে যেই শাস্তিটা আছে, সেটা ও দেশে প্রযোজ্য নয়।
কেবল একটি অপরাধ করলে অপরাধীর মৃতু্যদণ্ড হয়। সেটা হল, খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল দেয়া। যুক্তিটা হল, যে ১ জন মানুষকে খুন করে সে কেবল ১ জনকেই খুন করে, আর যে খাদ্যে বা ওষুধে ভেজাল করে, সে কত লোককে খুন করে তার কোন হিসাব নাই। সুতরাং খাদ্য ও ওষুধে ভেজালকারী খুনীর চেয়েও বড় খুনী। খুনী ১ জনকে খুন করে, আর খাদ্য ও ওষুধে ভেজালকারী খুন করে ১ টা জাতিকে।
আমাদের দেশে ব্যাপারটা পুরো উল্টো। আমরা খাদ্যে ভেজাল করাটাকে কোন অপরাধ মনেই করি না। আটার সাথে পশুখাদ্য হিসেবে আমদানী করা পঁচা গম, সয়াবিনের সাথে পাম ওয়েল ও চালের সাথে কাকড় মেশানো ইত্যাদি সাধারণ ঘটনা।
তাছাড়া হোটেলগুলোতে খাদ্য প্রস্তুতির পদ্ধতিও ভীষণ অস্বাস্থ্যকর। যে বড় কড়াইটাতে লুচি ভাজা হচ্ছে সেই তেল কবেকার কে জানে। কেবল নতুন তেল যোগ হয়, পুরোনো তেল ফেলা হয় না। বাসি পঁচা খাবার মিশিয়ে দেয়া হয় সদ্য প্রস্তুত খাবারের সাথে। কদিন আগে শুনলাম, হোটেলে হালিম বিক্রি করলে নাকি সবচেয়ে লাভ। কারণ হালিমের মধ্যে আগের দিনের বাসি সিঙ্গারা, পুরি, ভাজি ও পরোটা খুব সহজেই মিশিয়ে দেয়া যায়।
ফাস্টফুডের ঝকঝকে দোকানগুলোতে বাসি খাবার গরম করে খেতে দিয়ে পকেট কেটে টাকা রেখে দিচ্ছে। চায়নিজ হোটেলগুলির ফ্রিজে পড়ে আছে বহুদিন আগের মুরগির মাংস, ডিম ইত্যাদি। এসব দিয়ে সে খাবার বানিয়ে দিচ্ছে। আমরা তাদের চাকচিক্যের কাছে প্রতারিত হচ্ছি প্রতিদিন।
মাঝে মাঝে হোটেলগুলিতে ভেজালবিরোধী অভিযান চলে। সামান্য কিছু টাকা জরিমানা করা হয়। বাসি পচা খাবার ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু পরের দিনে থেকেই আবার নতুন উদ্যোমে বাসি পচা খাবার বিক্রি শুরু হয়। এটা একটা ইঁদুর বিড়াল খেলা।
আমাদের দেশে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হল, শিশুখাদ্যে ভেজাল। শিশুরা আইসক্রিম, চকলেট ও আচার ইত্যাদি খায়। এগুলো কবে তৈরি, মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা ইত্যাদি বোঝার কোন উপায় নাই। বিখ্যাত কোম্পানীগুলি সামান্য কিছু তথ্য দিলেও অখ্যাত কোম্পানীগুলির পণ্য দেখে ভেজাল কি না বোঝার কোন উপায় নাই। তাছাড়া স্কুলের মোড়ে ফেরি করে যে লোকটি শিশু খাদ্য যেমন, আচার, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি বেচছে, তার খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে কোন ধারণাই নাই। নোংরা ময়লা পরিবেশে এসব খাবার তৈরি করে প্রতিদিন শিশুদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
আইন বলে, পণ্যের মোড়কে পণ্যের পরিমাণ, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও খুচরা মূল্য লিখতে হবে। এই আইন ভাঙ্গাটা একটা সাধারণ ব্যাপার। অখ্যাত কোম্পানী তো বটেই বিখ্যাত কোম্পানীগুলিও অনেক ক্ষেত্রে এই আইন মানছে না।
আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজালের ব্যাপারে যে আইন আছে এবং শাস্তির বিধান আছে, তা খুবই লঘু দণ্ড। ইংল্যাণ্ডের উদাহরণ সামনে নিয়ে খাদ্যে ভেজালের ক্ষেত্রে ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
তবে একটি খবর আমাদের আশা জাগায়।
খবরটি এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:১৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




