somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপন্যাস - কুষ্ঠ নিবাস - পর্ব - ০১

২৯ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক

রহমত মিয়া গদি আঁটা চেয়ারে বসে আছে। সামনে ট্রলির উপর টিভি এবং ভিসিপি। রহমত মিয়া এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে।
‘লাইনটা যাওনের আর সময় পাইল না ’ - চরম বিরক্তি প্রকাশ পেল ওর কণ্ঠে ।
‘লাইন যাইব না তো কী হইব ? যেই রকম পচা জায়গায় বাসা ভাড়া নিছ ? - ফোঁড়ন কাটতে ছাড়ল না তার স্ত্রী।
জবাবে রহমত মিয়া খোলা জানালা পথে এক দলা থু থু ছুঁড়ে দিল। বিদ্যুঃৎকর্মী নাকি স্ত্রীর উপর সে খাপ্পা বোঝা গেল না। ম্যাচটা ঠুঁকে একটা সিগারেট ধরাল। তাকিয়ে রইল জনবহুল রাস্তার দিকে।
আজ শুক্রবার। অসংখ্য জনস্রোত বিকেলের রাস্তায়। একদল ছেলে খামোখাই হল্লা করছে। মেয়েদের প্রতি টিটকারি করছে। একটা বাস দ্রুত গতিতে আসছে। পিকনিক পার্টি। জোরসে মাইক বাজছে । বাস থেকে কয়েক জন কলা পাউরুটি মেয়েদের দিকে ছুঁড়ে দিল। মেয়েদের দলটা বোধহয় কোন পড়–য়া ব্যাচ। ছুটি শেষে বাড়ি ফিরছে। তাদের দেহে অলঙ্কৃত হচ্ছে এসব অনাকাঙ্খিত উপহার।
হঠাৎ জোর আওয়াজে রহমত মিয়ার সম্বিত ফিরে এল। ওহ্, টিভি বন্ধ করা হয়নি। রহমত মিয়া ভিসিপির প্লে বাটন টিপে আবার চেয়ারে এসে বসল। এখন টিভিতে স্নানরতা নায়িকাকে বাহুলগ্না করতে চলেছে উদ্দাম নায়ক। গানের শেষ দৃশ্য। গান শেষ। হঠাৎ বন্দুকের শব্দ। নায়িকার জমিদার বাপ ভিলেনরূপে উপস্থিত ওদের অভিসার মেলায়।
এমন সময় ধপ্ করে সামনে এসে বসল শাহিদা। গা জ্বলে গেল রহমত মিয়ার। সে দিনের ঘটনার পর শাহিদা রহমত মিয়াকে বিশেষ তোয়াক্কা করে না।
সে দিন বাসায় কেউ ছিল না। রহমত মিয়ার স্ত্রী ফাহমিদা বাপের বাড়ি গিয়েছিল। রহমত মিয়া গদিতে বসে ভাবল, আজ রাতটা জমবে ভালো। ব্লু ফিল্ম আর ড্রিংক। সে ম্যানেজারকে গদিতে বসিয়ে রেখে বিকেলেই গদি থেকে বেরিয়ে গেল। একটা রিক্সা নিয়ে সোজা চলে এল একটা ভিডিও লাইব্রেরিতে।
ভিডিও দোকানের শুকনা খিটখিটে কর্মচারীটি তাকে দেখে দাঁত বের করে হাসল, ‘স্যার, নতুন মাল আইছে। হেভি জোস। ’
‘হেভি জোস দরকার নাই। তিন নম্বরী লও। ’
ছোকড়াটি খ্যাক খ্যাক করে হাসল, ‘ তিন নম্বরী ক্যান, চাইলে পাঁচ নম্বরী শুদ্ধা দিতে পারি।’
‘অতো পোষাইব না। লও দুইটা তিন নম্বরী। ’
তিন নম্বরী ক্যাসেট নিয়ে রহমত মিয়া সোজা বাসায় চলে এল। খ্যামটা নাচ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। শালার জীবনটা সার্থক। কী সব যন্ত্র বের হল । সব চিচিংফাক। যে কোন দেশী হেভি জোস দেখা যায়।
প্লেয়ারে ক্যাসেট রিউইন্ড করতে গিয়ে রহমত মিয়া বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। ঠিক তখনই দরজায় খুট খুট শব্দ। রহমত মিয়ার প্রস্রাব আটকে গেল। ইদানিং এটা হয়, হঠাৎ টেনশন হলে প্রস্রাব আটকে যায়। কী যে যন্ত্রণা ! কে হতে পারে ? এই প্রায় সন্ধ্যায় তো ফকির আসার কথা না। সে বিরক্ত হয়ে বাথরুম থেকে বেরুল। দরজা খুলে দেখে শাহিদা।
‘কি রে তুই আইলি ক্যা ? তর মায় কই ? ’
‘মার শইল খারাপ। আমারে পাডাইল বাসন কোসন মাইজ্জা থুইতে। ’
শাহিদা রান্না ঘরে ঢুকে গেল। কিছুণের মধ্যে ওর বাসন ধোয়ার শব্দ পেল রহমত মিয়া। ও রুমের দরজা বন্ধ করে ক্যাসেট অন করে দিল।
তিন নম্বরী ক্যাসেট। কোন দেশী কে জানে। আমেরিকান হবে বোধহয়। এই সব জিনিস বানাতে ওস্তাদ আমেরিকানরা। দুইটা মেয়ের সঙ্গে একটা ছেলে। তাদের চেহারা স্বাস্থ্য দেখেই কেমন কেমন লাগে রহমত মিয়ার। মনে হয়, ওদের জন্মই হয়েছে এই সব কাজ করার জন্য।
উহু, শুধু ক্যাসেটে জমছে না। ড্রিংকস দরকার, সঙ্গে হালকা নাস্তা। রহমত মিয়া ক্যাসেট বন্ধ করল। দরজা খুলে বেরিয়ে এল।
রহমত মিয়া মিটসেফ থেকে চিপস ও চানাচুর এবং ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে এল। চিপস ও চানাচুর একটা বড় প্লেটে নিল। ড্রিংকসের বোতল খুলে গ্লাসে ঢালল তরল। কয়েক টুকরো বরফ মিশিয়ে নিল। তারপর দরজা লাগিয়ে আবারও ক্যাসেট অন করে দিল।
একটা ছেলে আর দুটো মেয়ে। তারা নানা বেকায়দায় কসরত করছে। মেয়ে দুটো মনে হচ্ছে ছেলেটাকে আইসক্রিমের মতো খেয়ে ফেলবে। হঠাৎ করে শব্দটা বেশি মনে হল। কমিয়ে দিল রহমত মিয়া। এমন সময় কেন যে এল শাহিদা ?
দরজার কাছে শাহিদার গলা শোনা গেল - ‘খালুজান, ভাত তরকারীগুলান কি নিয়া যামু ?’
রহমত মিয়া টিভি মিউট করে দিল। দরজা না খুলে চিৎকার করে বলল, ‘ওইগুলি নিয়া গেলে আমি খামু কী ? ’
‘আপনের লিগা রাইন্ধা থুইয়া যাই। ’
‘তুই রানতে পারবি ?’
‘পারমু না ক্যান ? এক শ বার পারমু।’
‘তাইলে রান্ধন লাগা। ’
রহমত মিয়ার গ্লাসে তরল কমে এসেছে। আরেকটু তরল ঢালল বোতল থেকে। বরফ মিশাল কয়েক টুকরা। চুমুক দিল। গলা বেয়ে নেমে যাচ্ছে বিষাক্ত ঠাণ্ডা তরল। কিন্তু জমছে না। আরো কিছু দরকার। ফুর্তি করার মতো আরও কিছু।
শাহিদা ভাত দিল চুলায়। তরকারী কেটে গোশত দিয়ে রান্নার আয়োজন করতে লাগল। ঠিক তখনই শুনতে পেল ভিসিপির শব্দ। খালুজান বোধহয় নতুন কোন ছবি লাগিয়েছে। শাহিদা চুলার আঁচ কমিয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে রওয়ানা হল।
ড্রয়িং রুমের দরজা বন্ধ। শাহিদার মন খারাপ হয়ে গেল। ধাক্কা দিতে গিয়েও দিল না। যদি খালুজান ধমক দেয়।
শাহিদা আনমনে পাশের রুমে ঢুকল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে তার খুব সাজতে ইচ্ছে হল। ওরে বাপ রে ! কতগুলো লিপস্টিক ! একের পর এক ক্রিমের কৌটা ! ও লোভী চোখে ওগুলোর দিকে চেয়ে রইল।
একটা কাজ করলে কেমন হয় ? একটা লিপস্টিক নিয়ে নিলে ? খালামনি টের পাবে না। এতগুলো থেকে একটা হারালে কারও টের পাওয়ার কথা না। শাহিদা একটা লিপস্টিক কোমরের খাঁজে লুকিয়ে ফেলল। ও ভীত চোখে চারদিকে তাকাল কেউ দেখল কি না। না, কেউ দেখেনি। কেউ দেখার কথাও তো না।
পাউডারের কেসটা উদোম। ও খানিকটা পাউডার গায়ে মেখে নিল। কী সুন্দর গন্ধ ! বড়লোক হইলে যে কত মজা !
বারান্দার দিকের দরজাটা খোলা। শাহিদা দরজাটা বন্ধ করতে এসে দেখল, বাইরে শুকাতে দেয়া কাপড়গুলো ওঠানো হয় নি। কাপড়গুলো উঠিয়ে রেখে যাবে - এই ভেবে ও রান্না ঘরে চলে এল।
ভাত হয়ে এসেছে। তরকারীটা একটু দেরি হবে। ও ব্যস্ত হয়ে সালাদ কাটতে লাগল। খালুজান সালাদ ছাড়া খেতে পারে না। সালাদ কাটতে কাটতে ও খানিকটা খেয়ে নিল।
কী সর্বনাশ ! ভাত বোধহয় জাউ হয়ে গেল। ও দ্রুত হাতে ভাতের মাড় ঝরতে দিল। গোশতের তরকারীটাও প্রায় হয়ে এসেছে। গোশতের ম ম গন্ধ বেরিয়েছে। ও লবণ চাখতে গিয়ে এক টুকরো গোশত খেয়ে ফেলল।
শাহিদা দ্রুত ডাইনিং টেবিলটা সাজাল। কাজ শেষ হলেই খালুজানকে ডাক দেয়া যাবে। সে সুবাদে হঠাৎ উকি মেরে খানিকটা ছবি দেখা যাবে।
বারান্দার দিকের দরজাটা খুলে ও বারান্দায় চলে এল। বেশ কতগুলো কাপড় বারান্দায়। ফুল প্যান্ট, শার্ট, লুঙ্গি এবং জাঙ্গিয়া। জাঙ্গিয়াটা তুলতে গিয়ে ও মুচকি হাসল। পুরুষ মানুষ এই জিনিসটা কেন যে পড়ে ?
ঠিক তখনই তার জানালার দিকে চোখ চলে গেল। ড্রয়িংরুমের বারান্দার দিকের জানালার একটি কপাট খোলা।
ঘরের ভেতর খালুজান খালি গায় কার্পেটের উপর বসে আছেন। তাঁর পরনে শুধু লুঙ্গি। বোতল হতে কী সব ঢেলে খাচ্ছেন। সম্ভবত একেই মদ বলে। শাহিদা সিনেমায় দেখেছে। খালুজান সিনেমার ভঙ্গিতে মদ খাচ্ছেন।
শাহিদা সাবধানে কপাটের পাশে চলে এল। ভয়-পাওয়া চোখে ভেতরে উকি দিল। ভিসিপিতে ছবি চলছে। ছবির কেউই শাহিদার চেনা না। অমিতাভ, শ্রী দেবী, মিঠুন - কেউ নেই। এ কেমন ছবি ! ওরা পোশাক খুলে ফেলছে দেখি ! ছিঃ, লজ্জা নেই ?
শাহিদা চট করে কপাট হতে সরে এল। পাশের ঘরে এসে বুঝতে পারল, তার কেমন যেন লাগছে। বছরখানেক আগে একবার এমন হয়েছিল।

চলবে .....

দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৯
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×