তখন সন্ধ্যা। মা কাজে গিয়েছিল। বিকেলের ভাত-ঘুম শেষে ওর গোছল করতে ইচ্ছে হল। অসহ্য গরম।
শাহিদা বস্তির পাশের পুকুরে বেশ কিছুক্ষণ ডুবিয়ে নিল। পুকুর হতে উঠে দেখে ঘাটে রাখা কাপড় নেই। সে এদিক ওদিক খুঁজল। না, কোথাও নেই। বাধ্য হয়ে ও ভেজা কাপড়েই ঘরে চলে এল।
ও ঘরে ঢুকতেই কে যেন দ্রুত হাতে দরজা বন্ধ করে দিল। শাহিদা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেল। আবছা অন্ধকারে চিনতে পারল, এ নুরু মিয়া। বস্তির সবচেয়ে বড় মাস্তান।
শাহিদা চিৎকার করার আগেই নুরু মিয়া ওর মুখ চেপে ধরল।
‘চিল্লাবি না, ’ নুরু মিয়া ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, ‘শুধু যা কমু, শুনবি।’
শাহিদা বুঝতে পারল, নুরু মিয়ার অপর হাতে চকচকে ধারালো ছোরা। সে আতঙ্কে জমে গেল।
‘শুধু একবার দেহা। তাইলেই চলব।’
শাহিদা কিছুই বুঝতে পারল না। বোকার মতো জিজ্ঞেস করল, ‘কী দেহামু ?’
‘জামাটা একবার খুললেই হইব।’
শাহিদা হতভম্ব হয়ে গেল। ছিঃ, লোকটা কী খারাপ ! নুরু মিয়ার ছোরার ভয় দেখাল, জবরদস্তি করল। কিন্তু শাহিদা রাজি হল না। বাধ্য হয়ে নুরু মিয়া অন্য কৌশল ধরল, ‘তর পায়ে পড়ি, একবার দেহা। তর পায়ে পড়ি।’
শাহিদা তবুও রাজি হল না। হঠাৎ নুরু মিয়া ওকে জাপটে ধরল, ‘হারামজাদী, খুলবি না ? তর বাপ খুলব। ’
শাহিদা বুঝল জোরাজুরি করে লাভ নাই। বরং কেউ এসে ওদের এই অবস্থায় দেখে ফেললে বিপদ হবে। তার ভয় করতে লাগল, যে কোন মুহূর্তে কেউ না কেউ এসে পড়তে পারে। বাধ্য হয়ে শাহিদা রাজি হল।
জামাটা খুলতেই নুরু মিয়া লোভী চোখে তার দেহের দিকে তাকিয়ে রইল। শাহিদা নিজেও নিজের দেহ দেখল। ও বুঝতে পারল না, এ দেহে এত দেখার কী আছে ।
নুরু মিয়া ওকে ঝপ করে জাপটে ধরে শরীর হাতড়াতে লাগল। শাহিদা এক ঝটকায় নুরু মিয়াকে সরিয়ে দিল।
‘আপনে যান। দয়া কইরা আপনে যান। আমার ইজ্জত মাইরেন না। ’
নুরু মিয়া প্রথমটায় হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর আস্তে করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
নুরু মিয়া চলে যাওয়ার পর শাহিদা বুঝতে পারল, তার অন্য রকম লাগছে। এ এক নতুন অনুভূতি। আজও ঠিক ও রকম লাগছে। মনে হচ্ছে, নুরু মিয়া এসে এই মাত্র তার দেহটা হাতড়ে দিয়ে গেছে।
কাপড়গুলো ও আলনায় গুছিয়ে রাখল। এখন কি খালুজানকে ডাকবে নাকি জানালায় গিয়ে উকি দেবে ? ওর ইচ্ছে করছে জানালায় গিয়ে উকি দিতে। বেশ কিছুক্ষণ সে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। তারপর গুটি গুটি পায়ে জানালার কাছে এগিয়ে গেল।
ওই ছবিটাই চলছে। কারো গায়েই কাপড় নেই।
শাহিদার কলজে কাঁপতে লাগল। যদি খালুজান দেখে ফেলে ? তবু এক অজানা আকর্ষণে ও জানালা হতে সরতে পারল না।
রহমত মিয়ার নেশা জমছে না। সব কিছুই আছে অথচ কিসের যেন অভাব বোধ করছে। রহমত মিয়া পঞ্চম পেগ নিল। বেশি টানলেই সব অভাব পূরণ হয়ে যাবে। নিজেকে সম্রাট মনে হবে। এর চেয়ে ফুর্তি আর নেই।
আবারও বাথরুম চেপেছে। এই সব দেখতে বসলেই কেন যেন বার বার বাথরুম পায়। ফুর্তির সময় উটকো ঝামেলা। রহমত মিয়া দাঁড়াতে গিয়ে বুঝতে পারল, তার লুঙ্গির গিট খুলে গেছে। সে লুঙ্গিতে গিট মেরে দরজা খুলে বেরুল। তারপর বাথরুমে গিয়ে ঢুকল।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে দেখতে পেল, শাহিদা ডাইনিং টেবিল সাজাচ্ছে। তখনই সে বুঝতে পারল, তার এতক্ষণের অভাবটা কী। রহমত মিয়া শাহিদার শরীরের দিতে তাকাল। আশ্চর্য ! এ তো বড় হয়ে গেছে। দেহে আগুনের মতো তীব্র আকর্ষণ জমে গেছে। এখন শুধু পুড়ে মরার পতঙ্গ দরকার।
রহমত মিয়া ঘরে ঢুকে ক্যাসেটটা বদলে দিল। লাভ হল না, প্রথম ক্যাসেটটাই ভালো ছিল। এটার মধ্যে জমজমাট কিছু নেই। ভিডিও দোকানের ছোকড়াটার পাছায় কষে একটা লাথি দিতে হবে।
সে বেশ খানিকটা ফরোয়ার্ড করে দিল। নাহ, নতুনত্ব বিশেষ কিছু নেই। পুরোনো জিনিস। একই কচকচানি। আর কত দেখতে ইচ্ছে করে ? হারামজাদার পাছায় এই ক্যাসেট ঢুকানো দরকার।
হঠাৎ রহমত মিয়ার জানালার দিকে দৃষ্টি গেল। জানালার একটা কপাট খোলা। কপাটের ওপাশে একটা উৎসুক ভয়-পাওয়া মুখ। শাহিদা ! অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে টিভি স্ক্রিনের দিকে। মুখটা হা হয়ে ঝুলে পড়েছে। কপালে নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
রহমত মিয়া জানালা বন্ধ করার ভান করে এগিয়ে গেল। আসলে তার ইচ্ছা ছিল, শাহিদাকে ধরে ফেলার। শাহিদা চট করে সরে গেল। এত দ্রুত সরে গেল যে, কিছুক্ষণ আগে ওখানে কেউ ছিল, সেটাই বিশ্বাস হচ্ছে না রহমত মিয়ার।
রহমত মিয়া দরজা খুলে বেরিয়ে এল। তার মনে অসম্ভব ফুর্তি জেগেছে। এত ফুর্তি সে আগে পায় নি। শাহিদাকে পেলে জমবে ভালো।
শাহিদাকে পাওয়া গেল ডাইনিং টেবিলের সামনে। এক মনে ডাইনিং টেবিল সাজাচ্ছে। রহমত মিয়া শিকারী বেড়ালের মতো ঝপ করে শাহিদাকে পাঁজাকোলা করে নিল।
শাহিদা প্রথমটা চমকে গেল। সে বুঝতে পারল না, খালুজান কিভাবে নুরু মিয়া হয়ে গেল। নুরু মিয়া ঠিক এই রকমই করেছিল। শাহিদা বুঝতে পারল, তার অন্য রকম লাগছে। কেমন যেন ভালো লাগা বোধ।
মায়ের কাছে একটা গল্প শুনেছিল শাহিদা। সেই গল্পে এক রাজকুমারীর প্রেমে পড়েছিল এক বিকট দৈত্য। দৈত্য রাজকুমারীকে কিছুতেই বাগে আনতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে দৈত্য মায়াবলে রাজকুমার হল। কিন্তু শর্ত হল, শুধুমাত্র চাঁদের আলোয় সে রাজকুমার থাকতে পারবে। চাঁদের আলো চলে গেলেই সে দৈত্য হয়ে যাবে।
দৈত্য রাজকুমার হয়ে রাজকুমারীকে বশে এনে ফেলল। একদিন চাঁদের আলোয় তারা গল্প করছে। হঠাৎ এক খণ্ড মেঘ এসে ঢেকে দিল চাঁদকে। সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমার হয়ে গেল দৈত্য। রাজকুমারী ভয় পেয়ে পালিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু ততক্ষণে রাজকুমারীকে ধরে ফেলেছে দৈত্য।
শাহিদার মনে হল, খালুজান সেই রকম দৈত্য হয়ে গেছে। এ দৈত্যের হাত থেকে তার নিস্তার নেই। শাহিদা ভয়ে চোখ বুজে পড়ে রইল ড্রয়িং রুমের কার্পেটে।
চলবে .......
প্রথম পর্ব । তৃতীয় পর্ব

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


