somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেঃ সেলিম স্মরনে...

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“কয়েকদিন পর ঝাঁকড়া চুল আর পুরু গোফওয়ালা একটি ছেলে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। দাড়িয়ে বলল, ‘স্যার আমি লেঃ সেলিম’। বুকে জড়িয়ে ধরলাম। লেঃ সেলিম বলল, ‘স্যার মা বাবার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা যাচ্ছি’। এই যাওয়া তার শেষ যাত্রা হবে ভাবতে পারিনি। মিরপুরের বিহারী পট্টিতে কিছু পরাজিত পাক বাহিনী লুকিয়ে ছিল। তাদের গুলিতে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান শহীদ হন। লেঃ সেলিম অস্ত্র হাতে ছুটে যায় সেখানে এবং প্রচন্ড গোলাগুলির পর শাহাদৎ বরন করে। দেশ স্বাধীন হবার পর বীর মুক্তিযোদ্ধার এ ধরনের হত্যাকান্ড মেনে নেওয়া যায় নাহ”। কথাগুলো অধ্যাপক ড. এস আই খান স্যারের। যিনি তৎকালীন রাজশাহী প্রকৌশল মহাবিদ্যালয়য়ের (বর্তমান রুয়েট) শিক্ষক ছিলেন।



আজ ৩০ শে জানুয়ারি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট সেলিম মো. কামরুল হাসান বীর প্রতীকের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী ।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে পাকিস্তানি বাহিনীর স্থানীয় দোসরদের হাতে তিনিসহ ৪১ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। [সুত্রঃ প্রথম আলো]

বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ সিরিজের ছাত্র ছিলেন সেলিম মো. কামরুল হাসান। বেঁচে থাকলে আজ হয়ত তিনি হতেন দেশের নামকরা ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশ কে বাঁচানোর জন্য ছুটে যান তিনি। বিজয় নিয়ে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ম ব্যাচে কমিশন প্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট। কিন্তু ১৯৭২ সালে ৩০ শে জানুয়ারি বিহারিদের দখলে থাকা অবরুদ্ধ মিরপুর মুক্ত করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি,অত্যধিক রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়।

তাঁর সহপাঠী স্পেক্ট্রা প্রপার্টিজ লিঃ এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ আকরামুজ্জামান স্মৃতিচারনা করেছেন , “ শহীদ লেঃ সেলিম মো. কামরুল হাসান আমাদের সিরিজেরই ছাত্র । প্রথম দিন থেকে সে সকলের নজর কেড়েছিল তার স্বভাব সুলভ চঞ্চলতার জন্য। ক্রীড়াঙ্গনে ছিল তার সরব পদচারনা। সর্বক্ষন হৈ চৈ পছন্দ। প্রথম বছরেই কলেজ ছাত্র সংসদের সহকারী ক্রীড়া সম্পাদক”।

শুধু ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন নাহ, জেভেলীন থ্রোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃকলেজ চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহন করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। প্রসঙ্গত রুয়েট সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছিল।


শহীদ লেঃ সেলিমের মা সালেমা বেগমের বক্তব্যঃ

৫ মার্চ যখন কেউ রাস্তায় নামার সাহস করেনি, তখন আমার দুই ছেলে তেজগাঁওয়ের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরের পুলিশদের নিয়ে পাকিস্তানিদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। ৩১ মার্চ তারা দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেয়। জেনারেল সফিউল্লাহ নিশ্চিতভাবে স্বীকার করবেন যে, তাঁর ব্যাটালিয়নে সবচেয়ে সাহসী ও উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিল সেলিম। ১৪ এপ্রিল লালপুর যুদ্ধ থেকে সে যে যাত্রা শুরু করে, তা শেষ হয় বাংলাদেশের শেষ রণাঙ্গন মিরপুরে। মাঝে তেলিয়াপাড়া, হরষপুর, মুকুন্দপুর, ফুলগাজী, বেলোনিয়া, আখাউড়া যুদ্ধে সে অসামান্য সাহসিকতার পরিচয় দেয়। এসব কথা জেনারেল ভুঁইয়া (সুবিদ আলী ভুঁইয়া), জেনারেল মোরশেদসহ (হেলাল মোরশেদ খান) সবাই স্বীকার করবেন।

দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের 'ব্রাভো' কম্পানির কমান্ডার সেলিমকে স্বাধীনতার পর পরই রাষ্ট্রপতির গার্ড কমান্ডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর অগোচরে সেলিমকে তাঁর কম্পানি থেকে বিচ্ছিন্ন করে মেজর মঈন (মইনুল হাসান চৌধুরী) ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে নিয়ে যান।কিন্তু দুঃখজনক_বুকের বিশাল ক্ষত নিয়ে জলা পার হতে পারেনি সেলিম। পরে সে যখন রক্তশূন্য হয়ে নির্জীব, তখন শত্রুসেনা তাকে আবারও আঘাত করে। ওই সময় সাহায্য পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল তার, কিন্তু তা হয়নি। বৃষ্টিস্নাত রাতে আধো জ্যোৎস্নায় ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করে সে। তার সঙ্গী ৪১ জন সেনাসদস্য সেদিন শহীদ হয়েছিল।

তাদের রক্তের বিনিময়ে মুক্ত হলো মিরপুর (তৎকালে ঢাকার উপশহর)। মিরপুরের মুক্তিদাতা লেফটেন্যান্ট সেলিম মোহাম্মদ কামরুল হাসান এভাবেই উৎসর্গ করল নিজের জীবন।

বিকেলের দিকে জীবিত সেনাদের নিয়ে কালাপানির ঢালের কাছে সে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ফ্যাকাসে ও ক্লান্ত। সবাইকে উৎসাহ জুগিয়েছে বিল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের দিকে যেতে। কিন্তু বুকের ক্ষতের কারণে নিজে পানিতে নামতে পারেনি। ক্লান্ত শরীরটা একটি গাছের আড়ালে রেখে একটা একটা করে গুলি চালাচ্ছিল ঘাতকদের দিকে। কভার-ফায়ার করে সহযোদ্ধাদের সরে যেতে সাহায্য করছিল। সেদিন রাতে মেঘে ঢাকা চাঁদ ছিল। ঝিরঝির করে বৃষ্টি ঝরছিল। হয়তো সেলিম আমার কথা, দেশের কথা, সহযোদ্ধাদের সাহায্যের কথা ভাবছিল। না, কেউ তাকে উদ্ধার করতে যায়নি।

সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন মেজর মঈন ও কর্নেল সফিউল্লাহ। ওর প্রতীক্ষা কত দীর্ঘ হয়েছে জানি না। একসময় আকাশে ওই ফ্যাকাসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আমার চাঁদ বুঝি বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে।

(কালের কন্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক কতৃক অনুলিখিত, কালের কন্ঠে কেমন আছ মা শিরোনামে প্রকাশিত )

রাজশাহী প্রকৌশ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হলটি লেঃ সেলিমের নামে নামকরন করা হয় ১৯৭২ সালে। গতকাল আমার নিজের অ্যালোটমেন্ট হয় লেঃ সেলিম হলে। প্রত্যেক রুয়েটিয়ান গর্বের সাথে স্মরন করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মহান এই মুক্তিযোদ্ধা কে। আজ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর প্রতি আমরা সকলে জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা।

# অধ্যাপক ড. এস আই খান ও প্রকৌশলী মোঃ আকরামুজ্জামান, দুজনার কথাগুলো নেওয়া হয়েছে রুয়েটের সিভিল ডিপার্টমেন্ট হতে প্রকাশিত স্মৃতি বিবরনী সমৃদ্ধ প্রকাশনা “সেই সময় এই সময় থেকে”
# ছবিটি সংগৃহীত
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:০০
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×