somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূলধারা '৭১ : ইতিহাসের অজানা অধ্যায়

০৭ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যে কোনো যুদ্ধের ইতিহাসই নানারকম জটিল উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠার কথা, ওঠেও। বিশেষ করে এ যুগের যুদ্ধগুলো শুধুমাত্র অঞ্চলভিত্তিক যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তার এক বা একাধিক আন্তর্জাতিক প্রভাব ও পরিপ্রেক্ষিতও থাকে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও সেরকমই একটি বিষয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আলোচনায় এ দিকটি এক রকম উপেক্ষিতই থাকে।

মূলধারা '৭১ গ্রন্থে মঈদুল হাসান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এমন একটি অধ্যায়ের প্রকৃত স্বরূপ তুলে এনেছেন যেটি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা বিভিন্ন গ্রন্থে প্রায় উপেক্ষিতই থাকে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানেই যেন মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা, নারীর সম্ভ্রমহানি, পাকিস্তানীদের নির্মম নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট, আগুন, রাজাকারদের কুকীর্তি ইত্যাদি। বলাবাহুল্য এসবই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, ইতিহাসের সমগ্র নয়। লেখকের নিজের ভাষায়-- 'মুক্তিযুদ্ধের ঘটনার ব্যাপ্তি বিশাল, উপাদান অত্যন্ত জটিল এবং অসংখ্য ব্যক্তির আত্নত্যাগ ও অবদানে সমৃদ্ধ।' আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের ইতিহাস জানতে হলে এই সমগ্রকে জানতে হবে, অংশত নয়।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের মধ্যে ইতিহাস সম্বন্ধে আগ্রহ আশংকাজনক ভাবে কম। বাংলাদেশের বড় দুটো রাজনৈতিক দল আবার মুক্তিযুদ্ধকে নামিয়ে এনেছে তাদের নেতাদের ঘোষণা বিতর্কের মধ্যে। যেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কিংবা জিয়াউর রহমানের ২৭ মার্চের ঘোষণাই এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে! কোনো দেশের মুক্তিযুদ্ধকে দুজন মাত্র ব্যক্তির পর্যায়ে নামিয়ে আনার মতো এমন ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ দুটো দলের বারবার ক্ষমতায় আরোহন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় যুদ্ধাপরাধিদের অংশগ্রহণের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম ও স্কুল-কলেজ পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে তাদের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনার প্রবণতা দেখা গেছে। এবং এজন্যই তরুণ প্রজন্মের মনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে একটি বিমূর্ত ধারণার জন্ম হয়েছে।

২৫ মার্চের ক্র্যাক-ডাউনের পর বঙ্গবন্ধুর স্বেচ্ছা-গ্রেফতার বরণ জাতিকে যে নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় ঠেলে দিয়েছিলো, সেখান থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটলো, কার বা কাদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হলো সেসব বিষয়ে খুব সামান্যই ধারণা আছে আমাদের নতুন প্রজন্মের। আর এই সুযোগটি নিয়েই একটি গোষ্ঠী জিয়াউর রহমানকে জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। তাঁর বেতার ঘোষণাটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এবং তাঁর দেশপ্রেম, আন্তরিকতা ও বীরত্ব ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও (বিরোধী পক্ষ অবশ্য প্রশ্ন তোলে, কিন্তু সেগুলো ফালতু প্রশ্ন, এসব বালখিল্য কথাবার্তার কোনো গুরুত্ব নেই), যুদ্ধের সময় যে তিনি একজন সেক্টর কমান্ডারের চেয়ে অধিক কিছু ছিলেন না এবং একজন সেক্টর কমান্ডারের পক্ষে যে এত বড় একটি যুদ্ধ পরিচালনা করা সঙ্গত কারণেই সম্ভব ছিলো না এটা সামান্যতম কমনসেন্স থাকলেও যে কেউ বুঝতে পারবেন।

যাহোক, এই গ্রন্থে লেখক মূলত 'মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা, উদ্যোগ ও মূল ঘটনাধারাকে' তুলে ধরেছেন এবং এ জন্য অনিবার্যভাবেই তাঁকে বেছে নিতে হয়েছে প্রবাসী সরকারের কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটকে। যুদ্ধের সময় লেখক তাজউদ্দিন আহমদের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছিলেন এবং সংগ্রামের সাংগাঠনিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। সঙ্গত কারণেই সেসবের একটি নির্ভরযোগ্য বিবরণ এ গ্রন্থে রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পাকিস্তান যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে পারে, ২৫ মার্চের অনেক আগেই শেখ মুজিব সেটি অনুমান ও আশংকা করেছিলেন। এবং সেরকম কিছু ঘটলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কাছ থেকে কিরকম সহায়তা পাওয়া যেতে পারে সেটি জানার জন্য তাজউদ্দিন আহমদকে ৫/৬ মার্চ ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার কে সি সেনগুপ্তের সঙ্গে আলোচনা করতে পাঠিয়েছিলেন। সেনগুপ্ত এর উত্তর সন্ধানে দিল্লিতে যান এবং ফিরে এসে তাজউদ্দিনকে 'ভাসাভাসাভাবে' জানান যে-- 'পাকিস্তানী আঘাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে ইসলামাদস্থ ভারতীয় হাই কমিশন সম্পূর্ণ বিপরীত মত পোষণ করেন; তবু "আঘাত যদি নিতান্তই আসে" তবে ভারত আক্রান্ত মানুষের জন্য "সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা" প্রদান করবে।' ২৪ মার্চ সেনগুপ্তের সঙ্গে তাজুদ্দিনের পরবর্তী বৈঠকে মিলিত হবার কথা থাকলেও সেটা হতে পারেনি। ২৫ মার্চের হামলার পর-- ভারতের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বা আদৌ পাওয়া যাবে কী না-- এরকম একটি অনিশ্চিত অবস্থা মাথায় নিয়েই তাজউদ্দিন তাঁর তরুণ সহকর্মী আমিরুল ইসলামকে নিয়ে ৩০ মার্চ সীমান্তে পৌছান। কিন্তু অচিরেই তিনি উপলব্ধি করেন যে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কোনো নির্দেশ এসে পৌঁছেনি। ৩ এপ্রিল তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান এবং তাঁর জিজ্ঞাসার জবাবে জানান যে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ২৬/২৭ মার্চেই একটি সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তিনি ভারতকে অনুরোধ জানান। কিন্তু তখন পর্যন্ত সরকার গঠন তো দূরের কথা, সহকর্মীরা বেঁচে আছেন কীনা সেটাও তাজউদ্দিনের জানা ছিলো না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় ১০ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। যদিও তার আগেই ১১ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেতার ভাষণ দেন।

তাজউদ্দিন আহমদ যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন তার পেছনে একটি তাৎপর্যময় কারণ ছিলো। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রতিরোধ যুদ্ধে সহায়তা চাওয়া আর বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সহায়তা চাওয়া যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার এবং ভিন্ন মাত্রাযুক্ত সেটা তাজউদ্দিন আহমদ যথার্থই উপলব্ধি করেছিলেন। আগেই উল্লেখ করেছি, সাক্ষাতের শুরুতেই ইন্দিরা গান্ধি জানতে চেয়েছিলেন যে 'আওয়ামী লীগ ইতিমধ্যেই কোনো সরকার গঠন করেছে কী না'-- এবং ইতিবাচক উত্তর পেয়ে তিনি 'বাংলাদেশ সরকারের আবেদন অনুসারে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি জ্ঞাপন করেন।'

তাজউদ্দিন আহমদের এই দূরদর্শিতা তাঁর 'প্রধানমন্ত্রীত্বের' নয় মাস ধরেই কার্যকর ছিলো। আরেকটি উদাহরণ দিলে সেটি আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেও এটিকে তিনি স্রেফ 'দাবি' হিসেবেই জিইয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, কোনো চাপ বা তদ্বির করে একে তরান্বিত করতে চাননি। কারণ, একদিকে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে যেমন ভারতের বাস্তবসম্মত কিছু অসুবিধা ছিলো সেটি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, অন্যদিকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যে ক্ষতিগ্রস্থ হতো সেটিও উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। কারণ সেক্ষেত্রে পাকিস্তান একে 'ভারতীয় ষড়যন্ত্র' বলে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ যেমন পেতো তেমনি এই যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে চালিয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার চেষ্টা করতো (১৯৬৫ সালের মতো), যা পরিশেষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অঙ্কুরেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতো। তাজউদ্দিন আহমদ তাঁর রাজনৈতিক ও দার্শনিক প্রজ্ঞার কারণে বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারলেও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাই সেটি পারেননি, ফলে তাজউদ্দিন আহমদকে সরকার গঠনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের থেকেই নানা রকম উপদলীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়। জানা যায়, অন্তত অক্টোবরের আগ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের প্রচারণা ছিলো-- 'তাজউদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধের নীতি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, ভারতের ভূমিকা অস্পষ্ট বা ক্ষতিকর এবং সোভিয়েট ভূমিকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী।' অক্টোবরের দিকে এসে তাঁর অনুসৃত নীতির ইতিবাচক ফলাফল দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে পরিষ্কার হয়ে এলে দলের ভেতর থেকে এমন অভিযোগ ওঠে যে, তিনি-- 'মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সরকারের সর্বস্তরে আওয়ামী লীগের দলগত স্বার্থ নিদারুণভাবে অবহেলা করে চলেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর মতাদর্শের প্রতি চরম উপেক্ষা প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তিদের জোরদার করছেন।' কেন এমন অভিযোগ উঠেছিলো সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসবো। তাঁর বিরুদ্ধে একদিকে খন্দকার মোশতাক এবং মাহবুব আলম চাষীর নেতৃত্বে দলের ভেতরকার ডানপন্থী অংশ অন্যদিকে ফজলুল হক মণির নেতৃত্বে 'মুজিব বাহিনী' সংগঠিত হতে থাকে এবং তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাতে থাকে। শুধু তাই নয়, তারা একত্রিত হয়ে তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে না নেবার ঘোষণা দিয়ে যুক্ত সাক্ষর পাঠিয়ে দেন ভারতীয় কতৃপক্ষের কাছে।

একদিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নিপীড়ন, বাঙালির মুক্তির লড়াই, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে এইসব উপদলীয় কোন্দল মাথায় নিয়েই তাঁকে নেতৃত্ব দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি তাঁকে হত্যা করার জন্য মুজিব বাহিনীর ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেও, এমনকি হত্যার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবককে হাতের কাছে পেয়েও, বিশেষ কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই তিনি তাকে ছেড়ে দেন-- যেন এই ঘটনাটি বাইরে ফাঁস হয়ে তাদের ভেতরকার দ্বন্দ্বকে অধিকতর তীব্র করে তুলতে না পারে।

যাহোক, বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে ভারতের যে অসুবিধাগুলো ছিলো সেগুলো অনেকটাই আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফলে উদ্ভুত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের জন্য বহুমুখি সংকটের সৃষ্টি করেছিলো-- একদিকে অব্যাহত শরনার্থীর ঢল (প্রায় এক কোটি শরণার্থীর চাপ ভারতের সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার ওপর গভীর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিলো) অন্যদিকে এই শরণার্থীদেরকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরির বাধ্যবাধকতাও ছিলো। কিন্তু সেই অবস্থা কীভাবে সৃষ্টি করা সম্ভব? জানা যায়-- জুলাই'র মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারত আশা করেছিলো যে, আমেরিকার 'যাদুদণ্ডে' পাকিস্তানের "অভ্যন্তরিন" সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান হবে। কিন্তু ওই সময়ের পরপরই তারা বুঝে যায়-- এটি আদৌ সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া তাদের জন্য ভিন্ন কোনো পথ খোলা ছিলো না। কারণ এক কোটি শরণার্থীর চাপ কোনো দেশের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সক্রিয় সহযোগিতা করার অন্য বিপদও ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে চীন পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ায়, ভারত যদি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে চীনের পক্ষ থেকেও আক্রমণের আশংকা ছিলো। ফলে তাদের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো একটি বৃহৎ শক্তির সমর্থন। আমেরিকা আগে থেকেই জেনারেল ইয়াহিয়া তথা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বসেছিলো-- তারা ইয়াহিয়াকে ব্যবহার করেছিলো চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কোন্নয়নের দূত হিসেবে। বাকি থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন, কিন্তু সোভিয়েট ইউনিয়ন সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে প্রথম দিকে আগ্রহ পোষণ করেনি। তার পেছনে কারণও ছিলো। সময়টি ছিলো ঠান্ডা যুদ্ধের এবং পারমানবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আমেরিকা ও সোভিয়েট ইউনিয়নের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিলো ওই সময়। ফলে সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ওই আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করতে তারা রাজি ছিলো না। কিন্তু ভারতের অব্যাহত চেষ্টায় তারা পাকিস্তানের নিপীড়ন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারতের শরনার্থী সমস্যার ব্যাপারে মনোযোগ দেয়। বাংলাদেশের নেতৃত্বও এই সুযোগে সোভিয়েত সহানুভূতি লাভের উদ্দেশ্যে প্রধানত বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের উদ্যোগ নেয়। এটিও তাজউদ্দিননের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিলো-- যদিও তাঁর এই চেষ্টা সর্বাংশে সফল হয়নি। বরং দলের ভেতর থেকে প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো-- যার কথা আগেই বলেছি। আওয়ামী প্রভাব খর্ব করার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নেতারা এই প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং অবশেষে সর্বদলীয় উপেদেষ্টা কমিটি গঠনের মধ্যে বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে। অবশ্য সোভিয়েট ইউনিয়নের সহানুভূতি ও সহযোগিতা পাবার জন্য এই উদ্যোগটিই সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে। বলা প্রয়োজন যে, সোভিয়েত সমর্থন লাভের জন্য ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অনস্বীকার্য, কিন্তু ভারত যতোটা না বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন চেয়েছে তারচেয়ে বেশি চেয়েছে 'শরণার্থী সমস্যা" সমাধানের সমর্থন। যাহোক, সোভিয়েতের এই সমর্থন এত তীব্র ছিলো যে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমেরিকার চাপে নিরাপত্তা পরিষদে মোট তিনবার সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার প্রশ্নে প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তিনবারই সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে তা বাতিল হয়ে যায়। সোভিয়েতের এই সমর্থনে ভারত যেমন সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সাহস ফিরে পায় তেমনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধও অবিশ্বাস্যভাবে গতি লাভ করে। সোভিয়েতের এই ভূমিকায় আমেরিকা ক্ষিপ্ত হয়ে পারমানবিক যুদ্ধের হুমকি দেয় কিন্তু সোভিয়েট এই হুমকির জবাবে নিরুত্তর থাকে। অবশেষে বাধ্য হয়ে নিজ দেশের জনসমর্থন বা আন্তাজাতিক সমর্থেনের তোয়াক্কা না করেই আমেরিকা বঙ্গোপসাগেরের উদ্দেশ্য সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করে। চীনের সমর্থনের আশায় এই নৌবহরকে ২৪ ঘন্টার জন্য নিশ্চল করে ফেলা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে চীন জানায়-- বিষয়টি নিয়ে তারা আরেকবার নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করতে আগ্রহী, সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী নয়! যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ, বাঙালি যখন তার বিজয়ের দ্বরপ্রান্তে উপস্থিত, পাকিস্তানি বাহিনী কার্যত অবরুদ্ধ তখন এই ২৪ ঘন্টা সময় বাংলাদেশকে একটি অসাধারণ বিজয়ের স্বাদ এনে দেয়। পাকিস্তানী বাহিনী নিঃশর্ত আত্নসমর্পনে বাধ্য হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট জানা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের নেতৃত্বের সামর্থ্য-যোগ্যতা-দূরদর্শীতা ও প্রজ্ঞা সম্বন্ধেও কিছু বোঝা যাবে না। লেখকের মতে-- 'সূচনায় যা ছিলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরিন সংকট, তা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বলদর্পী বুদ্ধিভ্রংশতায় উপমহাদেশীয় সংকটে পরিণত হয় এবং মাকিন প্রশাসনের ন্যায়নীতি বিবর্জিত পৃষ্ঠপোষকতা ও ভ্রান্ত পরামর্শের ফলে এই সংকটের জটিলতা ও পরিসর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মার্কিন প্রশাসনের চিরাচরিত বিশ্ব পাহারাদারীর মনোবৃত্তির প্রভাবে পাকিস্তানের আট মাস আগের অভ্যন্তরিন সংকট বিশ্ব সংঘাতের রূপ নেয়।'

আর এই 'বিশ্ব-সংঘাত' কে মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করার কেন্দ্রে যিনি ছিলেন তাঁর নাম তাজউদ্দিন আহমদ। বঙ্গবন্ধুর যাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার জন্য তৈরি করা, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের মাধ্যমে জাতিকে উদ্বুদ্ধু করা, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ও তাঁর সহকর্মী সেক্টর কমান্ডারদের বিচক্ষণ সামরিক নেতৃত্ব, সারাদেশে অগুনিত মুক্তিযোদ্ধার দুঃসাহসিক লড়াই, অপরিসীম আত্নত্যাগ ও জীবনদান, জনগণের বিপুল সমর্থন ও স্বাধীনতার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মানসিকতা-- এই সমস্ত কিছুর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়েও একথা বলা বোধহয় অতিশয়োক্তি হবে না যে, তাজউদ্দিন আহমদের মতো একজন রাজনৈতিক ও দার্শনিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন নেতা না থাকলে আমাদের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ করা প্রায় অসম্ভব হতো।

তাঁর কর্মনিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায় স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর তিন সপ্তাহের প্রধানমন্ত্রীত্বকাল বিবেচনা করলে। বাংলাদেশ সরকারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করার জন্য তিনি সড়ক যোগাযোগ, রেল যোগাযোগ ও বন্দর সচল করা, ডাক বিভাগ চালু করা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা, সেনাবাহিনীর রূপরেখা প্রণয়ন করা ইত্যাদিতে সফল হন। কিন্তু সেইসঙ্গে অত্যন্ত গুরম্নত্বপূর্ণ একটি নীতিগত সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন তিনি-- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরেপেক্ষতাকে মুক্তিযুদ্ধের এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সকল কর্মকাণ্ডের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে তিনি নতুন দেশ গঠনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। দেশগঠনে সহায়তার নামে যুক্তরাষ্ট্র যে তার সাম্রাজ্যবাদী থাবা বিস্তার করার চেষ্টা করবে সেটি তিনি পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। মর্মান্তিক বিষয় হলো-- বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তাজউদ্দিনের এই মৌলিক নীতিটি পরিত্যক্ত হয়। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে তাজউদ্দিন আহমদ একরকম উপেক্ষিতই ছিলেন। আর, আমার নিজের মতে, তাঁকে উপেক্ষা করাই ছিলো শেখ মুজিবের জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ভুল। তাজউদ্দিন আহমদের মতো একজন দার্শনিক প্রজ্ঞাবান সহকর্মীকে দূরে সরিয়ে রাখার ফলেই বঙ্গবন্ধুর চারপাশে ডানপন্থীদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে-- আর এ ফলাফল আমাদের সবারই জানা।

আরেকটি বিষয়ের উত্থাপন করে এই আলোচনা শেষ করবো।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত প্রথম থেকেই নানাভাবে সহায়তা করলেও-- (শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেয়া, প্রবাসী সরকারের কার্যক্রম চালানোর জন্য ভারতীয় ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া, এমনকি সামরিক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি দেয়া, আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের জন্য সহায়তা করা, আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ার নিসদ্ধান্ত নেয়া ইত্যাদি)-- ভারতীয় স্থলবাহিনী বাংলাদেশে অভিযান শুরু করে ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, এবং আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয় ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ভারতের এইসব সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে এত দ্রুত জয়লাভ করা কঠিন হতো এ কথা অনস্বীকার্য, কিন্তু এ-ও মনে রাখা দরকার যে, ২৬ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারই পাকিস্তানীদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলো, নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলো, ওদের মনোবলকে নিয়ে এসেছিলো শূন্যের কোঠায়। এবং এটা না করতে পারলে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাত্র ১২ দিনের মাথায় পাকিস্তানীদের পরাজিত করা ভারতীয়দের পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভব ছিলো না। মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃসাহসিক অভিযানে পাকিস্তানীরা যখন পলায়নপর এবং মানসিক ভাবে প্রায় পরাজিত, তখন ভারতীয় বাহিনীর অংশগ্রহণ তাদের এই পরাজয়কে কেবল তরান্বিত ও অনিবার্য করে তুলেছিলো। মূলধারা '৭১ গ্রন্থে লেখক বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের এইসব দুঃসাহসিক অভিযান ও তার ফলাফলের কথা উল্লেখ করলেও এর বিস্তারিত বিবরণ দেননি। তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে ছিলো প্রবাসী সরকারের কর্মকাণ্ড ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি। ফলে এই গ্রন্থটিও মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নয়। তবে একটি অজানা অধ্যায়ের উন্মোচন করে তিনি আমাদেরকে চির কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। নতুন প্রজন্মের পক্ষ তাঁকে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।

১৮টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×