somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল চরিত্র থেকে বাস্তবের মানুষটি কতোটা দূরে থাকেন?

১১ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই পোস্টটি ব্লগের সবচেয়ে (সম্ভবত) জনপ্রিয় চরিত্র 'চিকন মিয়া'কে উৎসর্গ করা হলো]

এই ব্লগের ভার্চুয়াল জগতে আমরা যারা লিখি, পরস্পরের সঙ্গে আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, রাগ-ক্ষোভ, অভিযোগ-অভিমান বিনিময় করি, বাস্তব জীবনে হয়তো তাদের কোনো সম্পর্কই নেই। এমনকি, হয়তো জানিও না-- এত সুন্দর সুন্দর লেখা যিনি লিখছেন তিনি আসলে কে! অথবা আমার লেখা পড়ে যারা এত চমৎকার সব মন্তব্যে ভরে দিচ্ছেন, ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন, মুগ্ধতার কথা জানাচ্ছেন, অথবা ভালো না লাগার কথা জানাচ্ছেন, অপছন্দের কথাও কোনো রাখঢাক না করেই প্রকাশ করছেন-- জানাও যাচ্ছে না, এর পেছনের মানুষটি কে! ছদ্মনাম/নিক নামের আড়ালে থেকে যিনি লেখেন বা মন্তব্য করেন তার সম্বন্ধেই কথাগুলো বিশেষভাবে মনে হয়। যারা ছদ্মনামের আড়াল নেন, নিজের বাস্তব চরিত্রের কাছ থেকে কতোটুকু দূরে দাঁড়াতে পারেন তারা? কিংবা নিজের বাস্তব ও ভার্চুয়াল চরিত্রের মধ্যে কতোটুকু দূরত্ব বজায় রাখেন তারা? কতোটুকু রাখা সম্ভব, কতোদিনই বা রাখা সম্ভব? একসময় কি এই দুই চরিত্র মিলেমিশে যায় না? ভার্চুয়াল জগতের ভার্চুয়াল চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কি প্রকাশিত হয়ে পড়েনা বাস্তবের রক্তমাংসের চরিত্রের মানুষটিও?

ধরা যাক এই ব্লগের জনপ্রিয় এক চরিত্র 'চিকন মিয়া'র কথাই। আমি যখন ব্লগে প্রথমদিকে আসি তখনই এই চিকন মিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা টের পেয়ে যাই। বিভিন্ন ব্লগ পড়তে পড়তে দেখি, তিনি প্রায় সব লেখাতেই 'মাইনাচ' দিয়ে চলেছেন (ইদানিং বোধহয় তার এই 'মাইনাচ' দেয়াটা একটু কমেছে), এবং এই 'মাইনাচ' পাওয়া ব্লগার খুশিতে আটখানা হয়ে যাচ্ছেন। আবার নিজের পোস্টে কারো ভালো লাগার জবাবে জানাচ্ছেন-- দুই কেজি ধইন্যাপাতা। তার প্রোফাইলের ছবিটিও যেন অনেকের কাছে সত্যি মনে হতে লাগলো। কারণ, অনেকেই তার 'চিকন' শরীর নিয়েও কথা বললেন। যেন চিকন মিয়া সত্যিই 'চিকন'! এই চিকন মিয়া সম্বন্ধে নিজের অজান্তেই আমার মনে একটা ছবি আঁকা হয়ে গিয়েছিলো, অনেকটা এই রকম :

চিকন মিয়া :
১. কম লেখেন, কিন্তু প্রচুর পড়েন, অথবা না পড়েই কমেন্ট করেন (তার বিখ্যাত কমেন্ট, মাইনাচ)।
২. প্রায় সবসময় লগইন করে থাকেন (অন্তত আমি যতোবার ব্লগবাড়িতে ঢু মেরেছি ততবারই তাকে দেখেছি। এটাও রহস্যময়। একজন মানুষের টপক্ষে কিভাবে এত দীর্ঘসময় নেটের সামনে বসে থাকা সম্ভব? নাকি তিনি, আদৌ থাকেন না, লগইন করে অন্য কাজ করেন, কিন্তু ব্লগারদের জানান দেন যে তিনি আছেন!)
৩. সম্ভবত ব্লগের সর্বাধিক জনপ্রিয় চরিত্র এই চিকন মিয়া। তার উপস্থিতি যে কোনো ব্লগারকে আনন্দ দেয়। তিনি কৌতুকপ্রবণ, আনন্দদায়ক, প্রীতিকর একজন মানুষ। ইত্যাদি। ইত্যাদি।

তবে তার এই চরিত্র যে নিজের মনের ভেতর আঁকা হয়ে গিয়েছিলো তা সহসা টের পাইনি। আমার একটি পোস্টে তিনি এসে যখন শুধু কমেন্ট করলেন-- 'পড়চি'-- উত্তরে আমি প্রায় নিজের অজান্তেই লিখলাম-- 'মাইনাচ দেন নাই?!?' সেই পোস্টে আমি প্রচুর মন্তব্য পেয়েছিলাম, এবং জটিল সব বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলাম পাঠকদের সঙ্গে। তার মধ্যে 'চিকন মিয়া'র এই মন্তব্য-- পড়লাম।আমি প্রায় স্বতস্ফূর্তভাবেই তার উত্তর দিয়েছিলাম। এতকিছু ভাবিনি। কিন্তু পরে, মন্তব্যগুলো আবার পড়তে গিয়ে, আমার মনে হলো-- চিকন মিয়া সম্বন্ধে আমার অবচেতনে নিশ্চয়ই এমন একটি ধারণা জন্মেছিলো যে, চিকন মিয়া মানেই মাইনাচ; আর তাই আমি তাকে এমন উত্তর দিয়েছি। নিজের কাছেই লজ্জা পেলাম। চিকন মিয়া তো মাইনাচ বলেননি, আমি কেন তাকে ওরকম কথা বলতে গেলাম! (চিকন মিয়া, আপনার কাছে এখন দুঃখ প্রকাশ করছি সেজন্য।)

চিকন মিয়ার কথা বিশেষভাবে বললাম এই কারণে, যে, তিনি সাফল্যের সঙ্গে নিজের একটি ভার্চুয়াল চরিত্র নির্মাণ করতে পেরেছেন এবং সেই চরিত্র দিয়ে তিনি সবাইকে কনফিউজ করতেও সক্ষম হয়েছেন। ফলে তিনি অনেকের কাছেই এখন সত্যি সত্যি 'চিকন' 'জ্যাডা' 'মাইনাচ' বা 'ধইন্যা পাতা'র সমার্থক হয়ে উঠেছেন!

চিকন মিয়ার আড়ালে বাস্তবের যে মানুষটি বসে বসে এইসব কাণ্ডকীর্তি করে বেড়ান, তিনি নিশ্চয়ই এমন নন! (নাকি, সত্যিই তিনি এমনই?)অতিশয় বুদ্ধিমান না হলে সচেতনভাবে নিজের একটি ভার্চুয়াল চরিত্র নির্মাণ করা এবং সেটিকে প্রতিষ্ঠিত করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। এই বুদ্ধিমান মানুষটি মাঝি মাঝে যে কতোটা বিষণ্ন ও কোমল হয়ে ওঠেন, সেটা বোঝা যায় তার 'কোবতে' গুলো পড়লেই। পাঠকরা তার এই রূপটির সঙ্গেও ইতিমধ্যেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

চিকন মিয়ার কথা আলাদাভাবে বলার আরেকটি কারণও আছে। তিনি বাস্তব ও ভার্চুয়াল চরিত্রের মধ্যে একটি দূরত্ব রক্ষা করে চলেন, ফলে তাকে নিয়ে এই অহেতুক বিশ্লেষণে বাস্তবের মানুষটি কিছু মনে করবেন না। কিন্তু যারা এই দূরত্ব রাখতে পারেন না, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, নিজের বাস্তব অস্তিত্বের ওপর নিয়ে নেন। এই পোস্টে তাদের নিয়ে বিশ্লেষণ করলে হয়তো তা তাদের ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠতো!

তবু কিছু কিছু কথা তো বলাই যায়।

এস্কিমো কিছুদিন আগে ব্যাখ্যা করেছেন কেন তিনি এই নাম নিলেন। বৃত্তবন্দীও বলেছেন- এই নিকটির সঙ্গে তিনি নিজের মিল খুঁজে পান। সবাই কি এমন? নিজের বাস্তব চরিত্রের সঙ্গে মিল রেখেই কি ছদ্মনাম নেন ব্লগের লেখকরা? তাই যদি হয়, তাহলে-- অপ বাক তো 'অপ' কথা বলেন না, রাগ ইমন তো ততোটা রাগী নন যতোটা নামে প্রকাশিত, আক্রমণও শুধু আক্রমণ করেন না, 'সুতরাং' তো কোনো সিদ্ধান্তেও পৌঁছাননি--- এইসব কতো কথা বলা যায়!

অপ বাক, মহাজাগতিক, আক্রমণ, রাগ ইমন, আরণ্যক যাযাবর, লংকার রাজা, মহারাজা, রাজামশাই, দূরন্ত, মু্ক্ত মানব, সবাক, লাল দরজা, তারার হাসি, বাফড়া, কুঙ্গ থাঙ, এফ, হটডগ, নামহীন মানব, প্রচেত্য, বেহাগ, নির্বাসিত, সুতরাং, অ্যামাটার, বহুরূপী মহাজন, যীশূ, হনলুলু, আকাশচুরি, মৈথুনানন্দ, মাহিরাহি, এস্কিমো, জনারন্যে নিসংঙগ পথিক, বিবর্তনবাদী, শান্তির দেবদূত, সক্রেটিস-- এরকম কতো কতো নাম; এইসব নামের মানে কি? বাস্তব চরিত্রের সঙ্গে এইসব নিকের মিল কতোটুকু, কতোটুকুই বা অমিল? জানতে ইচ্ছে করে, হয়তো কোনোদিন জানা হয়ে উঠবে না। হয়তো এটাই ভার্চুয়াল জগতের রীতি!

[কিছুদিন আগে ছদ্মনাম নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়ে গেছে, এটি সেই ধারাবাহিকতায় লেখা নয়। এইসব প্রশ্ন আমার মনে অনেকদিন ধরেই ছিলো, বহুবার মন্তব্যও করেছি, এখন পোস্ট আকারে লিখলাম এই যা! আশা করি পাঠকরা বিষয়টি বুঝতে পারবেন!]

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ১০:৩১
১৩৬টি মন্তব্য ১১০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×