somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনার জীবনি

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনা তিনি হলেন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সেরা চিকিৎসক ও গণিতজ্ঞ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং একজন দার্শনিক ব্যাক্তি । তাকে সর্ববিদ্যায় পারদর্শী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । তাকে একইসাথে ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান এবং রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিরা তাদের জাতীয় জ্ঞানবীর হিসেবে দাবী করেছেন । মুসলিম বিশ্বে তার প্রভাব সব চেয়ে বেশী । মধ্যযুগীয় জ্ঞান বিজ্ঞানের ভিত রচনায় তার অবদান অনস্বীকার্য । তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসার শাস্ত্রে । তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্বকোষ আল কানুন ফিত তীব রচনা করেন যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্তও মধ্যপ্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠ ছিল । আরবিতে ইবনেসীনাকে আল শায়খ, আল রাঈস, তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে । ইউরোপে তিনি আভিসিনা নামে সমধিক পরিচিত, হিব্রু ভাষায় তার নাম আভিসিনা ।

ইবনে সিনা বুখারার বর্তমান উজবেকিস্তান অন্তর্গত খার্মাতায়েন জেলার আফসানা নামক স্থানে ৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে কিংবা অনেকের মতে আগস্ট মাসে জন্মগ্রহণ করেছেন । আরবি পঞ্জিকা মতাবেক সালটি ছিল ৩৭০ হিজরী । তার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং মাতার নাম সিতারা । তার মাতৃভাষা ছিল ফার্সি । ফার্সি ভাষায় তিনি বেশ কিছু কবিতা এবং গ্রন্থ রচনা করেছেন । তবে সমকালীন অন্যান্যদের মতো তিনিও আরবি ভাষাকে জ্ঞান প্রকাশের মূল বাহন হিসেবে গ্রহণ করেন । ইবন সীনার পিতা বুখারার সামানীয় সম্রাটের অধীনে একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন ।
ইবনে সিনার জন্মের পর সপরিবারে আফসানাতে বাস করতেন । ইবনে সিনারর দ্বিতীয় ভাইয়ের জন্মের পরে আবদুল্লাহ এবং সিতারা সবাইকে নিয়ে বুখারায় চলে আসেন । তাদের শিক্ষার জন্য যথোপযুক্ত গৃহশিক্ষক নিয়োগ করেন । এখান থেকেই সীনার শিক্ষার শুরু । সব ভাইয়ের মধ্যে সীনা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বিশেষ মেধার স্বাক্ষর রাখেন । ইবনে সিনা মাত্র ১০ বছর বয়সে সমগ্র কুরআন মুখস্ত করেন । মুখস্তের পাশাপাশি তিনি সকল সূক্ষ্ণ ও জটিল বিষয় নিয়ে ছোটবেলা থেকে চিন্তা করতেন । এতে তার বাবা মা এবং শিক্ষক সকলেই বিস্ময় প্রকাশ করতেন । বাবা বুআলীকে ইসমাইলী শাস্ত্র বিষয়ে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন । কিন্তু ইবন সীনা ইসমাইলীদের কোন কথাই বিনা যুক্তিতে মেনে নিতেন না । তাদের অনেক বিষয়ই তিনি যুক্তি দিয়ে প্রত্যাখান করেন । মূলত এরা সীনাকে শিক্ষা দেয়ার মত যোগ্য ছিলনা । তাই আবদুল্লাহ পুত্রের জন্য আরও যোগ্য শিক্ষকের খোজ করতে থাকেন ।

আগে থেকেই আবদুল্লাহ সেখানকার এক মেওয়া বিক্রতার কথা জানতেন । এই বিক্রতা ভারতীয় গনিতশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিল । বাবা আবদুল্লাহ সীনাকে এই মেওয়া বিক্রতার কাছে গণিত শিখার ব্যবস্থ করে দিলেন । মেওয়া বিক্রতা এর আগে কাউকে তার জ্ঞান বিতরণের সুযোগ পায়নি । এই সুযোগে সে সীনাকে সানন্দে শিক্ষা দিতে থাকে এবং সীনার মেধা এতে আরও সহযোগীর ভূমিকা পালন করে । অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় গণিতের অনেক বিষয় তার আয়ত্তে এসে যায় । এরপর তাকে অধ্যয়ন করতে হয় ইসমাইলী শাস্ত্রের আইন অধ্যায় । এতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেন । এর মাঝে আর একজন যোগ্য শিক্ষকের সন্ধান পান সীনার পিতা । তিনি ছিলেন তৎকালীন অন্যতম জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব আল নাতেলী । নিজ পুত্রকে শিক্ষা দেয়ার জন্য তিনি নাতেলীকে নিজের গৃহে থাকার ব্যবস্থা করে দেন । এই শিক্ষকের কাছে সীনা ফিকহ, ন্যায়শাস্ত্র, জ্যামিতি এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র শিক্ষা করেন । ছাত্রের মেধা দেখে পড়ানোর সময় নাতেলী বিস্মিত হয়ে যেতেন । তার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভ্যাবাচেকা খেতে হত তাকে । বিস্মিত হয়ে তিনি আবদুল্লাহকে বলেছিলেন আপনার ছেলে একদিন দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হবে । দেখবেন ওর পড়াশোনায় কোন ব্যাঘাত যেন না ঘটে ।

পরবর্তীতে সীনার শিক্ষক হিসেবে আরও দুজন নিযুক্ত হন তারা হলেন ইবরাহিম এবং মাহমুদ মসসাহ । এসময় শিক্ষক নাতেলী বুঝতে পারেন সীনাকে বেশী দিন শিক্ষা দেয়ার মত সামর্থ বা জ্ঞান তার নেই । তখন ইবনে সীনা শিক্ষার বিষয়ে অনেকটা নিজের উপর নির্ভর করেই চলতে থাকেন । এসময় তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেনঃ

যে কোন সমস্যার সমাধান ওস্তাদ যেরুপ করতেন আমি তার চেয়ে ভালভাবে করতে পারতাম । তার কাছে জাওয়াহির মানতিক বা তর্কশাস্ত্রের খনি নামক বইটি পড়ে মুখস্থ করার পর বুঝলাম আমাকে শেখাবার মত কিছু নতুন আর তার কাছে নেই । তখন বইগুলো আর একবার পড়তে শুরু করলাম । ফলে সকল বিষয়ে আমি বিশেষ পারদর্শী হয়ে উঠলাম । ইউক্লিডের জ্যামিতির দ্য এলিমেন্টস প্রথম কয়েকটি সম্পাদ্যের সমাধানে ওস্তাদের সাহায্য নিয়ে বাকি কটির সমাধান আমি নিজেই করলাম । টলেমির ১৩ খণ্ডের আলমাজেস্ট বইটি শুরু করে সমস্যার সম্মুখীন হলে ওস্তাদ বললেন তুমি নিজে সমাধান করতে চেষ্টা কর যা ফল দাড়ায় এনে আমাকে দেখাও । আমি বিচার করে রায় দেবো । একে একে সব সমস্যার সমাধান করে ওস্তাদের সম্মুখে হাজির করলাম । তিনি দেখে-শুনে বললেন ঠিক হয়েছে সব কটিই নির্ভুল সমাধান হয়েছে । আমি বেশ বুঝতে পারলাম এ ব্যাপারে ওস্তাদ আমার কাছ থেকে কিছু নতুন তথ্য শিখে নিলেন ।

এভাবে নাতেলী বুঝতে পারলেন তার প্রয়োজন শেষ । এরপর তিনি বুখারা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । বুআলী নিজেই এবার নিজের শিক্ষক সাজলেন । এসময় চিকিৎসা শাস্ত্র এবং স্রষ্টাতত্ত্ব সম্বন্ধে তার আরো মৌলিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটে । এরিস্টটলের দর্শন সম্পূর্ণ ধাতস্থ করেন এ সময়েই । নতুন বই না পেয়ে আগের বইগুলোই আবার পড়তে শুরু করেন । তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগল । বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা তার কাছে পড়তে আসত ইবনে সিনা তরুণ বয়সেই শিক্ষকতা শুরু করে দিলেন ।
এ সময় বুখারার বাদশাহ নুহ বিন মনসুর এক দুরারোগ্য ব্যাধীতে আক্রান্ত হয় । দেশ এবং বিদেশের সকল চিকিৎসক এর চিকিৎসায় ব্যর্থ হন । ততদিনে সীনার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় বাদশাহের দরবারে তার ডাক পড়ে । তিনি বাদশাহকে সম্পূর্ণ সাড়িয়ে তুলেন । তার খ্যাতি এ সময় দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে । আরোগ্য লাভের পর বাদশাহ সীনাকে পুরস্কার দেয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন । এসময় সীনা চাইলে বিপুল সম্পদ এবং উচ্চপদ লাভ করতে পারতেন । কিন্তু তিনি কেবল বাদশাহের কাছে শাহী কুতুবখানায় বাদশাহের দরবারের গ্রন্থাগারে প্রবেশ করে পড়াশোনার অনুমতি প্রার্থনা করেন । বাদশাহ তার এই প্রার্থনা মঞ্জুর করেন । এভাবেই ইবন সিনা শাহী গ্রন্থাগারে প্রবেশের সুযোগ পান । গ্রন্থাগারের ভিতরে যেয়ে অবাক হয়েছিলেন সিনা । কারণ এমন সব বইয়ের সন্ধান তিনি সেখানে পেয়েছিলেন যেগুলো এর আগেও কোনদিন দেখেননি এবং এর পরেও কখনও দেখেননি । প্রাচীন থেকে শুরু করে সকল লেখকদের বইয়ের অমূল্য ভাণ্ডার ছিল এই গ্রন্থাগার । সব লেখকের নাম তাদের রচনাসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা তৈরির পর তিনি সেগুলো অধ্যয়ন করতে শুরু করেন । এমনই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন যে নাওয়া খাওয়ার কথাও তার মনে থাকত না ।

১০০১ সালে ইবন সিনার পিতা মৃত্যুবরণ করেন । সুলতান নুহ বিন মনসুরও ততদিনে পরলোকে চলে গেছেন । নুহ বিন মনসুরের উত্তরাধিকারী নতুন সুলতান ইবন সিনাকে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত করেন । এভাবে সিনা বুখারা অঞ্চলের শাসনকর্তার অধীনে সরকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন শুরু করেন । কিন্তু রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নতুন । অভিজ্ঞতার অভাবে কার্য সম্পাদনে তাকে হিমশিম খেতে হয় । কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ট্রান্সঅকসিনিয়ায় বিদ্রোহ দেখা দেয় । খার্মাতায়েনের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে ঐতিহাসিক অকসাস নদী আমু দরিয়া প্রবাহিত হয়ে গেছে যা বুখারা এবং তুর্কীস্তানের মধ্যবর্তী সীমারেখা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে । ট্রান্সঅকসিনিয়া তথা খার্মাতায়েনের লোকেরা তাই বেশ দুর্ধর্ষ প্রকৃতির ছিল । তাদের বিদ্রোহ দমন ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। ইবন সিনা এই বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থ হন এবং এতে সুলতান তার উপর বেশ বিরক্ত হন । আত্মসম্মানবোধ থেকেই ইবন সিনা চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন । এই যাত্রায় তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল । কখনও রাজার হালে থেকেছেন কখনও আবার কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন । তবে সকল কিছুর মধ্যেও তার মূল অবলম্বন ছিল চিকিৎসা বিজ্ঞান । এই বিজ্ঞানের বলেই তিনি সবসময় সম্মানিত হয়েছেন । এর বদৌলতেই চরম দুর্দিনের মধ্যেও আনন্দের দেখা পেয়েছেন ।

ইবন সিনা অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন । তার অভিজ্ঞতার ঝুলিও ছিল সমৃদ্ধ । তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ নগরী খোয়ারিজমে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি পণ্ডিত আল বেরুনির সাথে সাক্ষাৎ করেন । আল বেরুনির মূল উৎসাহ ছিল ভারতবর্ষ । কিন্তু ইবন সিনা কখনও ভারত অভিমুখে আসেননি । তিনি যাত্রা করেছিলেন পশ্চিম দিকে । তার মূল উৎসাহও ছিল পশ্চিমে দিকে । এ জন্যই হয়তো তার চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত বইগুলো প্রাচ্যের সীমানা ছাড়িয়ে পাশ্চাত্য জগতেও আপন অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিল । খোয়ারিজম থেকে বিদায় নিয়ে তিনি রাজধানী শহর গুরুগঞ্জে উপস্থিত হন । এই শহরে তার জীবনের বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করেন । এখানে অবস্থানকালেই চিকিৎসা বিষয়ে তার অমর গ্রন্থ কানুন ফিততিব রচনা করেছিলেন । এরপর যান পূর্ব পারস্যের অন্তর্গত খোরাসান শহরে । স্বাধীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন সিনা । কিন্তু এসময় গজনীর সুলতান মাহমুদ ইবন সিনার গুণের কথা শুনতে পেরে তাকে তার দরবারে নিয়ে যাওয়ার জন্য সব দিকে দূত প্রেরণ করেন । নিজ দরবার নয় সুলতান মাহমুদের ইচ্ছা ছল তার জামাতা খোয়ারিজম অধিপতির দরবারকে তিনি জ্ঞাণী গুণী ব্যক্তিদের দ্বারা সুশোভিত করবেন । ইবন সিনাকে তিনি চেয়েছিলেন সভাসদ হিসেবে । কিন্তু সিনা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জর্জন নামক স্থানে পালিয়ে যান । সুলতান মাহমুদ এ খবর জানতে পেরে জর্জনের অধিপতিকে ফরমান পাঠান যেন ইবন সিনাকে হস্তান্তর করা হয় যেভাবেই হোক স্বেচ্ছায় আসতে না চাইলে বন্দী করে । কিন্তু ইবন সিনা এবার জর্জন থেকেও পালিয়ে গিয়ে আবার নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন । এবার তার যাত্রার দিক ছিল ইরান বরাবর ।

ইরানে যাওয়ার পথে ইবনে সিনা তার সমসাময়ীক কবি ফেরদৌসীর জন্মস্থান বিখ্যাত তুস নগরী পরিদর্শন করেছিলেন । এখান থেকে তিনি ইরানের সুপ্রাচীন শহর হামাদানে গমন করেন । ঐশ্বর্যশালী এবং ঐতিহাসিক এই নগরীটিকে ভাল লেগে গিয়েছিল ইবনে সিনার কাছে এখানে অনেকদিন তিনি ছিলেন । দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন । বয়সও হয়েছিল অনেক । তাই তিনি মানসিক এবং শারীরিক প্রশান্তি খুজছিলেন । হামাদানে তিনি এই প্রশান্তি খুজে পান । এখানে তিনি ধীর স্থার মনে চিন্তা করার সময় সুযোগ লাভ করেন । হামাদেনের সম্রাট তার থাকা খাওয়া এবং নিরাপদ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন । তিনি এখানে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে স্বাধীন জীবিকা উপার্জন করতেন । এর সাথে তিনি ধ্যান করতেন অধিবিদ্যা ও ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনের মৌলিক বিষয়ে । এখানেই তিনি বিখ্যাত দার্শনিক গ্রন্থ কিতাব আল শিফা রচনা করেন । এই বইটি কবি উমর খৈয়ামের খুব প্রিয় ছিল । জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এটি তার সাথে ছিল বলে কথিত আছে । হামাদানে তিনি অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন । সারাদিন পরীশ্রেমের পর রাতে তিনি অভিজাত ব্যক্তিবর্গের সাথে আমোদ প্রমোদে লিপ্ত হতেন । সুবিশেষ দার্শনিক প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও গম্ভীর মূর্তিতে বসে থাকা তার স্বভাবে ছিলনা । তাই বলে কখনও আবার আমোদ আহলাদে একেবারে মজে যেতেননা । নিজের ধীরশক্তি সবসময় সক্রিয় রাখতেন । কখনই বিস্মৃত হতেননা যে তিনি একজন জ্ঞানপিপাসু এবং জ্ঞান চর্চাই তার মুখ্য কাজ ।

হামাদানের সুলতান অসুস্থ হলে ইবন সিনা তার চিকিৎসা করেন । এতে সম্রাট আরোগ্য লাভ করেন । এই চিকিৎসায় খুশি হয়ে সম্রাট তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে নিয়োগ দেন । কিন্তু রজানীতিতে তিনি বরাবরের মতই ছিলেন অপরিপক্ক । তাই এই পদপ্রাপ্তি তার জীবনে নতুন বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে । তাছাড়া হামাদানের সেনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা বিদেশী ইবন সিনাকে সহ্য করতে পারছিলেননা । তাদের সাথে ইবন সিনার বিরোধের সৃষ্টি হয় । সেনাধ্যক্ষ সিনাকে গ্রেফতার করার জন্য সম্রাটের কাছে আবেদন জানাতে থাকেন । সৈন্য বাহিনীর প্রধানের অনুরোধ উপেক্ষা করার সাধ্য সম্রাটের ছিলনা । তাই তিনি ইবন সিনাকে নির্বাসন দণ্ড দিয়ে অন্য এক স্থানে কারাবন্দী করে রাখেন । তা না হলে শত্রুদের হাতে হয়তো তিনি মারা পড়তেন । শত্রুর পাশাপাশি সিনার বন্ধুও ছিল অনেক । তাদের সহায়তায় সিনা এই কারাজীবন থেকে পালিয়ে যে তে সক্ষম হন । হামাদান থেকে পালিয়ে তিনি ইরানের অন্যতম নগরী ইস্পাহানের পথে পা বাড়ান ।


ইবন সীনার পলায়নের কিছুদিন পরই ইরানের ইস্পাহান নগরীতে এক ছদ্মবেশী সাধুর আবির্ভাব হয়েছিল । ইস্পাহানের সম্রাট জানতে পারেন যে এই সাধু আসলে ইবন সিনা । তিনি তাকে নিজ দরবারে নিয়ে আসেন এবং রাজসভায় আশ্রয় দান করেন । সিনাকে আশ্রয় দিতে পেরে সম্রাট নিজেও সম্মানিত বোধ করেছিলেন । ইস্পাহানে বেশ কিছুকাল তিনি শান্তিতে দিনাতিপাত করেন । হামাদানের কেউ তাকে এসময় বিরক্ত করত না । এখানে বসেই তিনি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কিতাব আল ইশারাৎ রচনা করেন । কিন্তু এখানেও বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারেননি সিনা । অচিরেই হামাদান এবং ইস্পাহাসের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায় । ইসপাহানের সম্রাট হমাদানের বিরুদ্ধে অভিযান প্রস্তুত করেন । এসময় সম্রাট ইবন সিনাকে সাথে নেয়ার ইচ্ছ প্রকাশ করেন । চিকিৎসা সেবা প্রদানের কারণেই তাকে নেয়ার ব্যাপারে সম্রাট মনস্থির করেন । নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সম্রাটের অনুরোধ তিনি প্রত্যাখ্যান করেতে পারেননি । ইস্পাহানের সৈন্যবাহিনীর নাথে হামাদানের পথে রওয়ানা করেন । হামাদানের সাথে সিনার অনেক স্মুতি জড়িত ছিল । আর এখানে এসেই তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন । তার এই অসুখ আর সারেনি । হামাদানের যুদ্ধ শিবিরে অবস্থানকালে ইবন সিনা ১০৩৭ সালে আরবী ৪২৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন ।
তথ্য সূত্রঃ ইবন সীনা মোয়াসসাসায়ে ইনতেশারাতে আমিরে কবির তেহরান প্রথম প্রকাশ ১৩৬৪ হিজরী পৃ. ১২২ ।
ইবন সীনাঃ সংক্ষিপ্ত জীবনী সৈয়দ আবদুস সুলতান ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পক্ষে ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রাজশাহী থেকে প্রকাশিত । প্রকাশক মাসুদ আলী ।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা বাংলা উইকি ।


সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×