তাৎপর্যময় মৃতু্যএবং আমরা....
মৃতু্য অনিবার্য এবং তাৎপর্যময় মানব জীবনে। তবে পথের একটি কুকুরের মৃতু্য নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই আমাদের। এজন্যই রাস্তার মাঝে হাড় মাংস জড়িয়ে মরে পড়েছিল যে কুকুরটি সেদিকে কারো ভ্রূক্ষেপ পর্যন্ত ছিল না ঢাকা মহানগরের আধুনিক মানুষের। কুকুর কেন, যদি একজন অপরিচিত লোক ঠিক ঐ কুকুরটির মতোই মরে পড়ে থাকত রাস্তায় তাহলেও কি যান্ত্রিক শহুরে মানুষের মাঝে মহিমউদ্দিনের মতো কোন বোধ জাগত। কিংবা সেই মৃত মানুষটিকে নিয়ে ছুটে চলা পথচারীদের কোন বিকার ঘটত। হয়তো কেউ কেউ মানুষের জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়তেন, জানার চেষ্টা করতেন কি হয়েছে, আর যখন জানা হতো একজন মানুষের অকাল মৃতু্য ঘটেছে-- তখন মুখ দিয়ে হয়তো কারো কারো আহা উহু নির্গত হওয়ার পর যে যার মতো গন্তব্যের দিকে ছুটতেন। এভাবেই শহুরে আধুনিক মানুষের মানবিক বোধগুলো ক্রমাগত আবেগহীন যন্ত্রময় হয়ে উঠছে।
ঢাকা শহরে বাস করেও মহিমউদ্দিন পুরোপুরি যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন নি কিংবা তখনো মহিমউদ্দিনের মানবিক বোধগুলো সক্রিয় ছিল, এজন্য একটি বেওয়ারিশ পথের কুকুরের মরে পড়ে থাকা দেখে তার মস্তিষ্কের মানবিক বোধগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে-- তিনি একটি ঘোরের মধ্যে চলে যান। অফিসে ঢুকেও কাজে মন দিতে পারেন না, ঘুরেফিরে তার মাথায় মৃত কুকুরটির দলিত মথিত দেহটির প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতে থাকে। মহিমউদ্দিন মূলত কুকুরটি গলিত দেহের সাথে কিংবা তার বেওয়ারিশ লাশ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকার সাথে নিজের সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছেন।
অফিসের রহুল দশ হাজার টাকার ঘাপলা করায় তার চাকরি নিয়ে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তার রিপোর্ট তৈরি করতে হবে মহিমউদ্দিনকেই, কিন্তু তার মাথায় অফিসের কর্তার তাগাদা ঢোকে না মাথায় সেঁটে থাকে একটি বেওয়ারিশ কুকুরের দলিত মথিত লাশ এবং তার পাশ দিয়ে কখনো ওপর দিয়ে ছুটে চলা যানবাহনের স্রোত। মহিমউদ্দিন এভাবে বাহ্যিক চেতনা থেকে যে অবচেতন জগতে ঢুকে পড়েছে তার পেছনে ক্রিয়াশীল তার মানবিক জীবনের সমাপ্তির ইঙ্গিত। হয়তো একইভাবে একদিন সেও কারওয়ান বাজারের সামনের রাস্তায় অথবা ঢাকা শহরের অন্য কোথায় কোন রাস্তায় বেওয়ারিশ কুকুরটির মতোই মৃত পড়ে থাকবে, আর তার পাশ দিয়ে আধুনিক নগরের যানবাহনগুলো ছুটে যাবে, ফিরে তাকাবে না কেউ। জীবনের অনিবার্য পরিণামের কথা আমরা ভাবি না, অথচ সেই সত্যকে যে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না কোনভাবেই তা মহিমউদ্দিনের ঘোরলাগা অফিস কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।