somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক নুড়ি পাথরকে "সরি"

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিগন্ত রেখা ছাড়িয়ে শৈশব পেরুনো সূর্য্যটা কৈশোরে পদার্পণ করেছে মাত্র । সূর্য্যদেবের শৈশবের কোমলতা হ্রাস পেয়ে ক্রমশ কঠোর হয়ে উঠছিল । গায়ের উপর মিষ্টি রোদ যেন জেঁকে বসেছে ।

সমুদ্রপাড়ের খুপচির মত দোকানগুলো মিনি বাসরঘর সাজিয়ে অপেক্ষা করছে । সামনে নিম্ন মানের ফুচকা, চটপটি দিয়ে সাজানো- ভেতরে চারপাশ চাদর দিয়ে ঘেরা কেবিন । এইসব খুপচি ঘরের ছেলে গুলো মাঝে মাঝে এসেই আমাদের পথ রোধ করছিল । লোভনীয় বিজ্ঞাপনে ওদের তুলনা নেই । “মামা আসেন- ভেতরে কেবিন আছে; সিট ঠিক করে দিমুনে- যেভাবে চান......।।”

অনিন্দিতাকে কখনও কেবিনে নেয়া যায় নি । ওর ঝাঁঝালো কণ্ঠ রুদ্ধ করে রাখে আমার যৌবনের সব বাউন্ডুলেপনা । “মশারির মত ছোট্ট কেবিনে দম বন্ধ হয়ে আসে মুহুর্তগুলো...... ওসব পরে হবে । তার চেয়ে চল ঐ পাথরে বসে সমুদ্র দেখি- জীবনের তৃষ্ণা মেটাই রুপালি জলে; সমুদ্রে গর্জনের সাথে পাল্লা দিয়ে বলি- তোকে বড্ড ভালবাসি ।”

আমি আর অনিন্দিতা বসে আছি পাশাপাশি । ওর পদ্ম পা পাথরে এলানো...। মাঝে মাঝে সমুদের ঢেউ এসে চুমু খেয়ে যায় ওর পায়ে । অনিন্দিতার স্বপ্নীল নীল চোখে আমি আর একটি সমুদ্র দেখি । আমার সামনেই যেন দু’টো সমুদ্র- একটি বিধাতার সৃষ্টি নারী আর একটু ঝিনুক রহস্যময় জলধি; শুষ্ক পৃথিবীর জলজ আঁধার । পৃথিবীর অদ্ভুত দু’টি অপার রহস্যের মুখোমুখি দাড়িয়ে আমি যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলি ।

“দাদা, একটা চিপস নাও না ।” একটা টোকাইয়ের ডাকে আমার তন্ময় ভাঙে । আট বছরের ছেলে, মলিন ছেড়া একটা জামা গায়ে । এক ঝুলিতে কিছু পটেটো চিপস, অন্য ঝোলায় ছেঁড়া পুরানো কাগজ, কুড়ানো প্লাস্টিক বোতল ।

“এক প্যাকেট চিপস নাও ।” চিপস খেতে ইচ্ছে করছিল না । ওকে জানানোর পরও বলল- “ভালো চিপস, খেলেই বুঝবে; একটা নাও না দাদা ।”

ছেলেটিকে দেখে মায়া হল । ভেতরের কোমল স্বত্বা যেকোন ভাবে ছেলেটিকে সাহায্য করার তাগিদ দিল । আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “এক প্যাকেট চিপস বিক্রি করলে তোমার কত লাভ হয়?”

ছেলেটি বলল, “তিন টাকা ।”

আমি মানিব্যাগ থেকে পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে বললাম, “চিপস তো খেতে ইচ্ছে করছে না; তুমি বরং এটা রাখ ।”

ছেলেটি আমায় আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করল । আমি আর অনিন্দিতা অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছিলাম । অনিন্দিতা তাড়া করে ডেকে উঠল “এই ছেলে...... চিপস দিয়ে যাও, আমি চিপস কিনব ।” ছেলেটি ফিরল না ।

অনিন্দিতা আবার হাই ডেকে বলল, “এই ছেলে, দুই প্যাকেট কিনব ।” ছেলেটি ফিরল না ।

আমার দেয়া ভিক্ষা সগর্বে প্রত্যাখ্যান করে মলিন ছেঁড়া কাপড়ে জীবনের রাজপুত্র পথ আগাতে থাকে । ওর অহংকারের চরণে যেন প্রণাম জানাল আমার যাবতীয় করুণা ।

অথচ একটু অণুগ্রহের জন্য দিনের পর দিন হাত পেতে বসে থাকে টাই- স্যুট পড়া ভিক্ষুকের দল । ঘুষ লাগবে, যৌতুক লাগবে, একটু মামাগিরি লাগবে, একটা ভোট লাগবে আর একবার চুরি করার অনুমতির জন্য । কি নির্লজ বিষমাখা তৈলাক্ত হাসি আমায় প্রতিমূহুর্তে কলুষিত করে ফেলে । আর একটা প্রত্যাখ্যান- এক অহংকারী বালকের সতেজ প্রতিবাদ যেন আমায় জীবনের আর এক রূপ চিনিয়ে দিয়ে গেল- যেখানে বেঁচে থাকাটা সম্মানের, বেঁচে থাকাটা গৌরবের । অর্থই জীবনের একমাত্র সুখ নয় ।

ফেরার পথেই দেখা হয়ে গেল ছেলেটির সাথে । ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, “সরি ।” ছেলেটি হাসল । ওর এক চিলতে হাসি যেন আমার বুকে চেপে বসা পাথরটা এক ফুঁৎকারে বিলীন করে দিল ।

দুনিয়াতে কোন কোন ক্ষুদ্র নুড়ি পাথরও পাহাড় সমান উচ্চতার অধিকার রাখে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×