Les Misérables (লা মিজারেবল
ভিক্টর হুগো রচিত লা মিজারেবল বা লেস মিজারেবল নামের বইটি আমার পড়া হয় প্রায় দুই বছর আগে। সার্থক ট্রাজিক উপন্যাস বলা যেতে পারে ভিক্টর হুগোর লিখা এই কালোত্তির্ণ বইটিকে। কাহিনী শুরু হয় প্রচন্ড অভাবী দরিদ্র পরিবারের সন্তান জাঁ ভালজা নামের বালককে নিয়ে।
আঠার শতকের দক্ষিণ ফ্রান্সের ব্রাই প্রদেশের এক ছোট্ট কুঠির থেকে ভালজার কাহিনী শুরু। বাবা মার মৃত্যুর পর সে তার বড় বোনের আশ্রয়ে থাকে ও কাজ করে খায়। কিছুদিন পর ভগ্নিপতির মৃত্যু হলে ভালজা তার বোন ও বোনের সন্তানদের নিয়ে মহা বিপদে পড়ে। পঁচিশ বছর বয়সী তখন ভালজা। যৌবনের সব সাধ-আহ্বলাদ উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম করেও বোন ও তার সাত সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য যোগার করতে পারে না ভালজা।
ফ্রান্সে তখন খাদ্যের তীব্র অভাব। চারিদিকে দরিদ্র মানুষদের নাভিশ্বাস আর হতচকিত অবস্থা। একদিন ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এক দোকান থেকে এক টুকরো রুটি চুরি করতে গিয়ে ধরা খায় ভালজা। লোকজন প্রচন্ড মার দেয় তাকে ধরে। ভালজা বারবার বলে যে, একমাত্র বোন ও তার ছোট ছোট সাতটি ছেলে না খেয়ে তার পথ চেয়ে বসে আছে। কিন্তু লোকজনের কোনো করুণা হয় না তাতে।
ফ্রান্সে সে সময় আইন বড় কড়া। ভালজার পাঁচ বছরের জেল হয়ে যায় ক্ষুধার জ্বালায় রুটি চুরির অপরাধে! চার বছর পর অতিষ্ঠ হয়ে ভালজা জেল পালাতে নেয়। তারপর আবার ধরা খায় ও সাজা বাড়িয়ে আট বছর করা হয়। এভাবে বিভিন্ন শাস্তি স্বরূপ ভালজার মোট উনিশ বছরের জেল হয়ে যায়! জেল থেকে যখন সে বের হয়, তখন সে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ। কয়েদী নাম্বার ২৪৬০১, জাঁ ভালজা নামে তার পরিচিতি তখন।
সমাজের কোথাও তার ঠাই হয় না। দাগী আসামী ভালজার নাম শুনলে কেউ আশ্রয় দেয় না, খাদ্য দেয় না, এমনকি কাজ করার সুযোগও দেয় না। ভালজা অসহায়ের মতো ঘুরতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে যখন তার মনে হয় সে সত্যিকার অর্থেই একজন জঘন্য পাপী, তখুনি সে একজন পাদ্রীর সহানুভূতি পায়। এ ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ভালজা নতুন জীবন শুরু করে। বিস্ময়করভাবে সে একদিন শহরের মেয়র হয়। অর্থ-সম্পদ আর ভাগ্যের চাকার ঘর্ঘর ছুটে চলা ভালজাকে নিয়ে ছুটতে থাকে এমন এক অজানার উদ্দেশ্যে যা ভালজার জীবনকে বারবার পোড় খাইয়ে খাইয়ে অবশেষে চিরশান্তির দেশে ফিরিয়ে আনে। ভালজার অসম্ভব আত্মত্যাগ, সবকিছু হারিয়ে যখন কসেত্তকে সে নিজের আপন মেয়ে ভেবে তাকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিতে চায়, তখনও তার শেষ সম্পদে ভাগ বসাবার জন্য হাজির হয় কসেত্তের প্রেমিক। ভালজার দীর্ঘশ্বাস ভারী হয়ে আসে। এই দিনের ভয় সে সবসময়ই পেতো। তবুও সে নিজের আশ্রিতা মেয়েটির সুখের দিকে তাকিয়ে জীবন বাজী রেখেই তাকে সুখের সন্ধান দিয়ে যায়।
উপন্যাসের সমাপ্তি বিয়োগান্তক হলেও তা মূল চরিত্রের কষ্টের স্বীকৃতি দেয় বলে দীর্ঘশ্বাসের সাথে সাথে অস্পষ্ট এক তৃপ্তিও দিয়ে যায়।
ভিক্টর হুগো-এর এই বইটিকে সিনেমায় রূপদান করেছেন প্রখ্যাত ডিরেক্টর টম হুপার। আর মূল চরিত্র জাঁ ভালজার চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন আমার প্রিয় নায়ক হিউগ জ্যাকম্যান। সিনেমাটির চিত্রায়ন আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে কারণ, সিনেমার ডায়লগগুলো গতবাঁধা উপন্যাস বা ট্রাজেডির ডায়লগের মতো না। প্রতিটি ডায়লগই গানে গানে। এমনকি চরিত্রগুলো যখন মৃত্যু বরণ করছে, মারামারি করছে, অনুশোচনা করছে বা হত্যা জজ্ঞে মেতে উঠছে- তখনও গানে গানে তাদের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এবং তা অত্যন্ত সার্থকভাবে। আমাদের উপমহাদেশেও এরকম না হলেও অনেকখানি এরকম স্টাইলে বাংলা সিনেমা তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর “হীরক রাজার দেশে” সিনেমাটি।
তবে লা মিজারেবল সিনেমাটি দেখার আগে বইটি পড়ে নিলে অনেক ভালো হয়। বইয়ে জাঁ ভালজার জীবনের প্রাথমিক অংশ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সিনেমা শুরু হয়েছে ঠিক কারাগার জীবনের শেষভাগ থেকেই।
বইটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ
http://www.amarboi.com/…/les-miserables-victor-hugo-bangla-…
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৫