somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নফল রোজা কেন রাখবেন, কখন রাখবেন

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করেছেন তাকওয়া অর্জনের জন্য।

আল্লাহ বলেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। [২:১৮৩]”

রমজান মাস শেষ হয়ে গেলো শাওয়াল মাস ও শেষের পথে, আত্ম সমালোচনায় মনে জাগে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি কি?

দুনিয়াবী জীবনে আমরা একটা পরীক্ষায় খারাপ করলে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নেই । এবার রমজানকে যদি ধরি তাকওয়া অর্জনের পরীক্ষা তবে অন্য ১১ মাস হবে পরীক্ষার প্রস্তুতি। এজন্য দরকার নফল রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা যাতে পরবর্তী রমজানে পুরপুরি তাকওয়া অর্জন করা যায়।

আমরা আল্লাহর পাপী বান্দা, সর্বদা চেষ্টা করতে হবে কিভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়। নফল রোজা একটা সুবর্ণ সুযোগ।

আসুন জেনে নেই রসুল ﷺ কখন নফল রোজা রাখতেন বা রাখতে বলেছেন

১। রসুল ﷺ সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখতেন

২। রসুল ﷺ সপ্তাহে আরবী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ নফল রোজা রাখতেন

৩। রসুল ﷺ আরাফার দিন নফল রোজা রাখতেন

৪। রসুল ﷺ আশুরার দিন নফল রোজা রাখতেন

৫। রসুল ﷺ শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোজা রাখতেন

৬। রসুল ﷺ শাওয়াল মাসে ৬ টি নফল রোজা রাখতে বলেছেন।

দলীলঃ

১। রসুল ﷺ সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার নফল রোজা রাখতেন


আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “(মানুষের) আমলসমূহ সোম ও বৃহস্পতিবারে (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তাই আমি ভালবাসি যে, আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোযার অবস্থায় থাকি।” (তিরমিযী হাসান) (মুসলিম ২৫৬৫, তিরমিযী ৭৪৭, ২০২৩, আবূ দাউদ ৪৯২৬, ইবনু মাজাহ ১৭৪০, আহমাদ ৭৫৮৩, ৮১১৬, ৮৯৪৬, ৯৯০২, ২৭৪৯০, ২৭২৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৬, ১৬৮৭, দারেমী ১৭৫১ ) ইমাম মুসলিমও এটি বর্ণনা করেছেন, তবে তাতে রোযার উল্লেখ নেই।

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার জন্য সমধিক সচেষ্ট থাকতেন।’ (তিরমিযী হাসান) (তিরমিযী ৭৪৫, নাসায়ী ২৩৬১-২৩৬৪, ইবনু মাজাহ ১৭৩৯)

২। রসুল ﷺ সপ্তাহে আরবী মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ নফল রোজা রাখতেন

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে ও সফরে কোথাও শুক্লপক্ষের (তিন) দিনের রোযা ছাড়তেন না।’ (নাসাঈ হাসান সূত্রে) (নাসায়ী ২৩৪৫ [জা‘ফর বিন আবুল মুগিরা])

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন; প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা। চাশ্‌তের দু’ রাকআত নামায আদায় করা এবং নিদ্রা যাবার পূর্বে বিত্‌র নামায পড়া।’ (বুখারী, মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ১১৭৮, ১৯৮১, মুসলিম ৭২১, তিরমিযী ৭৬০, নাসায়ী ১৬৭৭, ১৬৭৮, ২৪০৬, আবূ দাউদ ১৪৩২, আহমাদ ৭০৫৮, ৭১৪০, ৭৪০৯, ৭৪৬০, ৭৪৮৩, ৭৫৪১, ৭৬১৫, ৮০৪৪, ৯৬০০, ৯৯০৩, ১০১০৫, দারেমী ১৪৫৪, ১৭৪৫)

৩। রসুল ﷺ আরাফার দিন নফল রোজা রাখতেন

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আরাফার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গোনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম) (মুসলিম ১১৬২)

৪। রসুল ﷺ আশুরার দিন নফল রোজা রাখতেন

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশূরার (মুহার্‌রাম মাসের দশম) দিনে স্বয়ং রোযা রেখেছেন এবং ঐ দিনে রোযা রাখতে আদেশ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ২০০৪, ৩৩৯৭, ৩৯৪৩, ৪৬৮০, ৪৭৩৭, মুসলিম ১১৩০, আবূ দাউদ ২৪৪৪, ইবনু মাজাহ ১৭৩৪, আহমাদ ১৯৭২, ২১০৭, ২১৫৫, ২৬৩৯, ২৮২৭, ৩১০২, ৩১৫৪, ৩২০৩, দারেমী ১৭৫৯)

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে আশূরার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম) (মুসলিম ১১৬২, আহমাদ ২২০২৪, ২২১১৫)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আগামী বছর যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে মুহাররম মাসের নবম তারিখে অবশ্যই রোযা রাখব।” (অর্থাৎ, নবম ও দশম দু’দিন ব্যাপী রোযা রাখব।) (মুসলিম) (মুসলিম ১১৩৪, আবূ দাউদ ২৪৪৫, আহমাদ ২১০৭, ২৬৩৯, ২৮২৭, ২১০২, ৩১৫৪, দারেমী ১৭৫৯)

৫। রসুল ﷺ শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোজা রাখতেন

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাস চাইতে বেশি নফল রোযা অন্য কোন মাসে রাখতেন না। নিঃসন্দেহে তিনি পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখতেন।’

অন্য বর্ণনায় আছে, ‘অল্প কিছুদিন ছাড়া তিনি পূর্ণ শা‘বান মাস রোযা রাখতেন।’ (বুখারী – মুসলিম) (সহীহুল বুখারী ৪৩, ১১৩২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪-৬৪৬৭, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, ১২৫৬, ৭৮২, ১৮১৮, নাসায়ী ৭৬২, ১৬১৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬০৪, ২৩৬৬৯, ২৪০১৯, ২৪১০৭, মুওয়াত্তা মালিক ৪২২, ৬৮৮)

৬। রসুল ﷺ শাওয়াল মাসে ৬ টি নফল রোজা রাখতে বলেছেন।

আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযানের রোযা পালনের পর শওয়াল মাসের ছয়দিন রোযা রাখল, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।” (মুসলিম) (মুসলিম ১১৬৪, তিরমিযী ৭৫৯, আবূ দাউদ ২৪৩৩, ইবনু মাজাহ ১৭১৬, আহমাদ ২৩০২২, ২৩০৪৪, দারেমী ১৭৫৪)

সবশেষে কুরানের আয়াত দিয়ে লেখা শেষ করছি, আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে সঠিক আমল করার তৌফিক দান করুন।
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

31
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×