somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘বাংলাদেশকে নিয়ে হাসতে হাসতে আমরাই হাসির পাত্র হয়ে গেছি’

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিক্ত হলেও সত্য, আমরা বাংলাদেশি ভাইদের প্রাপ্য সম্মান কখনোই দিতে পারিনি। তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়েও ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশিদের নিয়ে সব সময় আমরা হাসাহাসি করেছি। আর বড় বানিয়েছি নিজেদের।

এই বাস্তবতায় কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশিরা পাকিস্তানকে শুধু ভালোবাসে না বরং পাকিস্তান সৃষ্টিতে তাদের হাত রয়েছে। পাকিস্তান আন্দোলনে খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীদের মতো বীর আমাদের পথ দেখিয়েছে। কিন্তু সেই মুহব্বত, আত্মত্যাগ ও বিশ্বস্ততার মূল্য দেয়ার মানসিকতা পশ্চিম পাকিস্তানের রয়েছে বলে বিশ্বাস হয় না।

আমরা বাংলাদেশিদের কোনো বিষয় নিয়েই প্রশংসা করতে পারি না। কথায় কথায় তাদের পেছনে ফেলে দেই। তাদের সম্মান, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে কখনোই স্বীকার করিনা। কখনো ইচ্ছেও করেনা। অথচ আমাদের চির শত্রু ভারতের বেলায় আমরা কত নমনীয়।
ভারতের ফিল্ম স্টারদের ছবি আমরা ঘরের দরজায় টানিয়ে রাখি, বিয়ের আসরে তাদের গান ছেড়ে নাচি, তাদের পোশাক দেখে আমরা ফ্যাশন করি, অথচ আইপিলে তারা আমাদের ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগও দেয় না। আবার দেখা যায় পাকিস্তানে যখন ভারতীয় ক্রিকেটার আসে আমরা তাদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে যাই। হাত পায়ে অন্যকরম জোস হাজির হয়। কিন্তু বাঙালি ভাইদের থেকে দশ হাত দূরে থাকি। বড়ই আশ্চর্য।

আমরা বাঙালিদের ভাষা থেকে শুরু করে সব বিষয়ই হাস্যকর বানিয়ে তুলেছি। কখনো যদি কোনো বাঙালির দেখা পাই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মুখে হাসি উপচে উঠে। তার উদ্দেশে বলতে শুরু করি ‘তুম বাঙালি হো’?
বাঙালিদের বিষয়ে আমরা একটা ধারণা পাকাপোক্ত করে ফেলেছি, তারা কেবল টুপি বানায় আর লুঙ্গি পড়ে ঘুমায়, মাছ আর ভাত খায়। বড়জোর হোটেলের বাবুর্চি হয়।

আমরা তাদের অর্থনীতি কেউ হাসির পাত্র বানিয়েছি। তাদের দেখছি নিকৃষ্ট দৃষ্টিতে। পাকিস্তানে যে এলাকায় বাঙালিরা থাকে সেটা নিয়েও আমরা ঠাট্টায় মশগুল। সেটাকে বাঙালি পাড়া বানিয়েছি আমরা।
আমরা এগুলো নিয়ে মজা করছি আর দিন দিন নির্বোধের গোলাম হচ্ছি। অন্যদিকে আমাদের বাঙালি ভাইরা ধীরে ধীরে কষ্ট মেহনত ও দেশপ্রেমে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে। বাংলাদেশ আজ তৃতীয় বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশ হতে চলেছে। তাদের শক্তিশালী দেশগুলোর কাতারে গুণতে শুরু করেছে বিশ্ব।

এটাও এখন তিক্ত বাস্তবতা যে, আমাদের টেক্সটাইল ব্যবসা এখন বাংলাদেশের দিকে শিফট করতে শুরু করেছে। আর বাংলাদেশ এখন বিশ্বের টেক্সটাইল ব্যবসার দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ হয়ে গেছে। এর থেকে বছরে বাংলাদেশের আয় ২৭ বিলিয়ন ডলার। এসব নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া যেখানে পাকিস্তানকে খুঁজেই পাচ্ছে না সেখানে বাংলাদেশ আকাশের তারকার মতো জ্বলজ্বল করছে।
শিক্ষাখাতেও বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ২০১৪ সালের বাজেটের ১৪ থেকে ১৯ ভাগ ব্যয় করেছে শিক্ষায়। সেখানে পাকিস্তান খরচ করেছে মাত্র ২ ভাগ।

আমরা যে রাষ্ট্রের সূচনা থেকেই মজা করে আসছি, তারা ধীরে ধীরে আমাদের টেক্কা দিয়ে উদাহরণ তৈরি করে যাচ্ছে। তাদের এক ডলারের বিপরীতে ১০২ টাকা পাওয়া যায়, অথচ আমাদের ১ ডলারের বিপরীতে ৭৮ রুপি পাই।

বাংলাদেশ পাকিস্তান তুলনাটা এখানে শেষ করা যেত কিন্তু বিষয়টা যে অনেক লম্বা। বাংলাদেশের কাছে দুধ ও মধুর নহর রয়েছে। আর তাদের অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের গর্ব করার রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটা হলো ক্রিকেট। আমরা যেটি নিয়ে এতদিন হাসাহাসি করেছি। সেটা দিয়ে তারা আজ আমাদের মুখে পর্দা সেঁটে দিয়েছে। হাসি আর কটূক্তির জবাব দিয়ে আমাদের নির্বাক করে দিয়েছে। আমরা যখন একটু সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণপণে মেহনত করে যাচ্ছি তখন তারা হেসে খেলে ম্যাচ জিতছে। স্বগৌরবে মাছ ভাত খাচ্ছে আর আমরা যাচ্ছি অধপতনের দিকে।

আশআর জায়েদি: পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও কলামিস্ট।আস
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×