somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাকির নায়েক: আধুনিক তোতা পাখি কিংবা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান বিশ্বে বহুল পরিচিত একটি নাম-জাকির নায়েক। চমৎকার স্মরণশক্তি, কোরআন-হাদিস থেকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উদ্ধৃতি দেয়া, বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের তুলনামূলক আলোচনা, মিডিয়ার সফল ব্যবহার ইত্যাদি কারণে তিনি খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। মনে করবেন না তাঁর জনপ্রিয়তায় আমি ঈর্ষান্বিত। আমি বরং শঙ্কিত সবাইকে মাকাল ফলের পেছনে কোন কিছু না বুঝে দৌড়াতে দেখে। এখন ঘরে-বাহিরে সর্বত্র ওয়াজ কিংবা লেকচারের ছড়াছড়ি, ধর্মীয় প্রকাশনাও বিকাশমান, মসজিদে (শুধু জুমার দিনে) নামাজীও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়ছে, দাড়ি-টুপির ব্যবহারও ক্রমবর্ধমান, ধর্ম এখন ইন্টারনেটেও সরগরম কিন্তু সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপকর্ম, অবাধ যৌনাচার, মাদক, সুদ-ঘুষ, খুন-রাহাজানি, অশ্লীলতা ইত্যাদি। কেন? ধর্মের প্রসার বাড়লে এগুলো তো কমার কথা, বাড়ছে কেন? বহু বছর ধরে মৌলভী-মাওলানা-পীর ছাহেবদের ওয়াজ কিংবা হালের জাকির নায়েকের লেকচার যদি কাজ দিত তবে তো আমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র শয়তানী আচরণ থাকার কথা না। কেন আমরা এখনো গোপন পাপে লিপ্ত, কেন আমরা নামসর্বস্ব ধর্মীয় কাজে লিপ্ত, কেন আমরা চলচ্চিত্র, খেলা, রং-তামাশা ইত্যাদি অনর্থক কাজ থেকে বের হতে পারছি না? কারণ ঈমান আমাদের মুখে, ভেতরে নেই; নামায আমরা পড়ি কিন্তু কায়েম তথা বাস্তব প্রকাশ নেই; উপবাস ব্রত পালন করি, রোযা নয়; হজ্ব-ওমরা করি আবার রঙিন চশমা পড়ি; টাকার যাকাত আদায় করি, শরীরের যাকাত ভুলে যাই।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন মহানবী (সা.) মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন সেখানে হযরত হারিস বিন মালিক (রা.) অবস্থান করছেন। তিনি (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ঈমান আনার পর তোমার অবস্থা এখন কী? হযরত হারিস বিন মালিক (রা.) বললেন, এখন আমার মনে হচ্ছে আমি একজন পরিপূর্ণ মু’মিন। মহানবী (সা.) বললেন, প্রত্যেক কিছুর একটি বাস্তবতা থাকে, তুমি যে নিজেকে মু’মিন দাবি করছো এর বাস্তবতা কী? হযরত হারিস বিন মালিক (রা.) প্রত্যুত্তরে বললেন, আমি আল্লাহর আরশ দেখেছি, আরো দেখেছি জান্নাত এবং জাহান্নাম। মহানবী (সা.) খুশি হয়ে বললেন, তোমার হৃদয়কে আল্লাহ সত্যই আলোকিত করেছেন। [হায়াতুস সাহাবা ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৫৮, মূল: হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কান্দালভী, ইংরেজি অনুবাদ: মুফতী আফজাল হোসেন ইলিয়াস, জম জম পাবলিশার্স, পাকিস্তান]
হাদিসটি বর্তমানকার মৌলভী-মাওলানা-পীর ছাহেবদের ওয়াজে কিংবা জাকির নায়েকের লেকচারে মোটেও শুনতে পাবেন না। কারণ এখানে প্রমাণের কথা আছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে মহানবী (সা.) এর নাম আছে কি নেই এটি জেনে আমার লাভটাই বা কী যদি আমি ”নবী” নামটির বাস্তবতা (অর্থাৎ আল্লাহ এত শক্তিশালী হওয়ার পরও কেন তাঁর ধর্ম প্রচারে নবীদের আশ্রয় নিলেন) না বুঝি। মৌলভী-মাওলানা-পীর ছাহেবদের ওয়াজ কিংবা জাকির নায়েকের লেকচার শুনে যেসব বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তাদের মনে এ প্রশ্ন কি আসে না যে অন্য ধর্ম থেকে ইসলামের পার্থক্যটা কী? ওখানে আমি ভগবান কিংবা বুদ্ধ কিংবা যিশুর মূর্তি পূজা করতাম আর ইসলামে এসে কাবা নামক ঘরটির পূজা করছি। ওখানে আশ্বাস দেয়া হয়েছে ভাল কাজ করলে স্বর্গে আর মন্দ করলে নরকে। ইসলামও তাই বলছে, সৎকাজ করলে জান্নাত আর অসৎকাজ করলে জাহান্নাম। সবখানেই আন্দাজ আর আশা, বাস্তবতা কিংবা প্রমাণ নেই। উপরোক্ত হাদিসটিতে মু’মিন দাবির সপক্ষে নবীর সাহাবী কিন্তু বলেননি যে তিনি এখন নামায পড়েন, রোযা রাখেন বরং বলেছেন তিনি আল্লাহর আরশ দেখেছেন। একই প্রশ্ন যদি আপনাকে করা হয় যে ঈমানদার দাবী করে আপনি কী পেয়েছেন বা কী দেখেছেন? বলবেন, এসব কি আর আমরা দেখতে পাবো, আমরা তো পাপী। কেন? নবীর সাহাবারা তো পূর্বে ভিন্ন ধর্মের ছিলেন, তাঁরা যদি ইসলাম গ্রহণ করার পর আল্লাহর আরশ দেখতে পান তো আমার আর আপনার জন্য সেটা হবে না কেন? বলবেন, তারা তো নবী থেকে ঈমান গ্রহণ করেছেন তাই এত কিছু দেখতে পান। কেন? আপনার যুগে কি কোরআন নেই? নায়েবে নবী তথা নবীর উত্তরসূরি নেই? অবশ্যই আছে। আপনি যদি কোরআনকে শুধু তেলাওয়াত করা কিংবা নামাযে পাঠ করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখেন অথবা নবীর উত্তরসূরির খোঁজে ঘর থেকে বের না হন তবে কস্মিনকালেও ইসলাম ধর্মের বাস্তবতা বুঝবেন না। যতই নামায পড়ে ললাট কালো করুন আর রোযা রাখুন, আপনি যেই অন্ধ সেই অন্ধই থেকে যাবেন। আল্লাহ তাই বলেছেন, ”এবং যে ব্যক্তি এখানে (পৃথিবীর মধ্যে) অন্ধ হয়ে থেকেছে আখেরাতেও সে অন্ধ থাকবে” (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৭২)। এ অন্ধত্ব চোখের নয় হৃদয়ের, যা দিয়ে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত দেখা যায়। অবাস্তব কথা বলছি না কিংবা কোন গালগল্পও করছি না। সুতরাং আন্দাজে ওয়াজ কিংবা লেকচারে আন্দাজে নামাযী বাড়বে, আন্দাজে রোযাদার বাড়বে, আন্দাজে হাজী বাড়বে আবার অন্ধের সংখ্যাও বাড়বে।

আমার এ লেখাটি পড়ার পরও যদি আপনার মধ্যে অন্ধত্ব দূর করার প্রেরণা না জাগে তবে বুঝবো তকদিরের অমোঘ বিধানে আপনি দুর্ভাগা!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ ভোর ৪:১২
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×