somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সালাত (নামায) জাহান্নামেরও চাবি

২৪ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

’সালাত (নামায) জান্নাতের চাবি’ ইসলামের অনুসারীদের পৃথিবীতে আপনি শুধু এ জিগিরটিই শুনতে পাবেন। ’সালাত (নামায) জান্নাতের চাবি’ বাক্যটি কোরআনের কোথাও পাবেন না। বাক্যটি হাদীস (দেখতে পারেন তিরমিযি শরীফ, ১ম খন্ড, পবিত্রতা অধ্যায়, হাদীস নং ৪)। কোরআনে বরঞ্চ বলা হয়েছে উল্টোটি। বলা হয়েছে,
”অতএব সেই মুসল্লিদের জন্য দুঃখ, যারা তাদের সালাতে অমনোযোগী, এরা তারা যারা শুধুই (মানুষকে) দেখায় (তাদের সালাত)” (সুরা মাউন, আয়াত: ৪-৬)।
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, যারা সালাতে অমনোযোগী এবং লোক দেখানো সালাত পড়ে তাদের জন্য দুঃখ বৈ আর কিছুই নেই মহান আল্লাহর কাছে। আবার অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ সালাতে অমনোযোগীদের ’মুনাফেক’ বলেও অভিহিত করেছেন,
”নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে প্রতারণা (করতে চেষ্টা) করে, বস্তুত তিনিই তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন, এবং যখন তারা সালাতের দিকে দাঁড়ায়, তারা অলসভাবে দাঁড়ায়, সর্বদাই মানুষকে (সালাত) দেখায়” (সুরা নিসা, আয়াত: ১৪২)।
একই সুরার ১৪৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে যে মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবে। সালাতে অমনোযোগী থেকে মুনাফিক পদবী নিশ্চয় কেউ কামনা করেন না। এখন আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, প্রতিদিনকার সালাতে আপনি কি আসলেই মনোযোগী থাকেন। যদি না থাকেন তবে কেন শুধু শুধু আল্লাহর কাছে দুঃখের কারণ হবেন? মুনাফিক হবেন? জাহান্নামের নিম্নস্তরে থাকবেন? তারচেয়ে উত্তম হচ্ছে সালাত বাদ দিয়ে আগে চেষ্টা করুন কীভাবে সালাতে মনোযোগ আনয়ন করা যায়। মনোযোগ অর্থ হল মনের যোগ। যোগ অর্থ ধ্যান বা একাগ্রতার সাধনা। শরীয়ত প্রতিষ্টার আগে মহানবী (সা.) হেরা গুহায় প্রায় ১৫ (পনের) বছর ধ্যানসাধনা করেছেন, নিজের জন্য নয়, আমাদের জন্য কারণ নবীরা আল্লাহর মনোনীত, বাহ্যিক এবাদতের কোন প্রয়োজন তাঁদের নেই, তারপরও তাঁরা এবাদত করেছেন একমাত্র আমাদের শিক্ষার জন্য। একই কথা প্রযোজ্য আল্লাহর আওলিয়াদের ক্ষেত্রেও। সুতরাং আগে সালাত নয়, আগে ধ্যানের মাধ্যমে একাগ্রতা অর্জন করতে হবে। কোরআনে মহান আল্লাহ এজন্যই বলছেন,
”তোমাদের রবকে ডাকো (নফস থেকে শয়তানকে বিতাড়িত করে একাকী হয়ে) বিনয়ের সাথে এবং চুপিসারে” (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫)।
আয়াতটিতে সালাত তথা নামাযের কোন কথাও নেই। শুধু বলা হয়েছে, ’তোমাদের রবকে ডাকো’। কীভাবে রবকে ডাকবো? বলা হয়েছে, ’বিনয়ের সাথে এবং চুপিসারে’। বুঝা যাচ্ছে মহান আল্লাহ চাচ্ছেন মানুষ তাঁর সাথে এমন একটি নিগূঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলুক যা বান্দাকে তার রব সম্বন্ধে আরো আকাক্সিক্ষত করে তুলবে। কিন্তু বান্দা আছে ধান্ধায়! এত সময় তার কোথায়! পরিতাপের বিষয় হল আমাদের ষোল আনা সময় ব্যয় হয় দুনিয়াবী বিষয়ে, মহান আল্লাহর বাস্তব পরিচয় পেতে যে সময়, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন তা আমরা দিতে চাই না পাছে আমার ব্যবসা বা আয় কমে যায়, স্ত্রী/প্রেমিকা মনে কিছু করছে কিনা, সমাজ/পাড়া কি বলবে ইত্যকার শয়তানী চিন্তা জেঁকে বসে। বিদ্যালয়ের ঘড়ি ধরা সময়ের মত ধর্মকেও আমরা পাঁচটি ক্লাসে নিয়ে এসেছি-ফযর ক্লাস, যোহর ক্লাস …! যেন আল্লাহকে দেখাচ্ছি ধর্মে আছি তো বলে! এ যেন ধর্মেও আছি জিরাফেও আছি! আবার আয়াতটি স্মরণ করছি-’নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে প্রতারণা (করতে চেষ্টা) করে, বস্তুত তিনিই তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন’। যেনতেন ভাবে অন্য কাউকে বুঝ দেয়া যায়, আল্লাহকে নয়। আমাদের এ ’যেনতেন’ ভাবের সুযোগ নিচ্ছে স্বঘোষিত মাওলানা-মুফতি-আলেমরা, জাকির-ফিলিপস-তাবলীগ-নামধারী পীরেরা-বিভিন্ন নামের ইসলামি দলেরা, একে৪৭ তথা আইএস-তালিবান-জিহাদি হুজুগেরা।
যারা ’সালাত (নামায) জান্নাতের চাবি’ হাদীসটি বলে চিল্লান তারা কিন্তু এর আগের হাদীসটি বলেন না। বললে যে ধরা খেয়ে যাবে! এর আগের হাদীসটি কী? ”সালাতের চাবি হল পবিত্রতা” (দেখতে পারেন তিরমিযি শরীফ, ১ম খন্ড, পবিত্রতা অধ্যায়, হাদীস নং ৩)। বাহ্যিক পবিত্রতার (ওযু, গোসল) নাম পবিত্রতা নয়, ওটা একটা চোরেরও থাকতে পারে। তবে পবিত্রতা কী? এ হল ক্বলব তথা অন্তরের পবিত্রতা যা না থাকলে সালাত ’পড়া’ হবে বটে কিন্তু ’কায়েম’ কস্মিনকালেও হবে না। এ পবিত্রতা না থাকলে সালাতে মনোযোগ দূরের কথা বরঞ্চ শয়তানও আপনার সাথে সালাতে দাঁড়িয়ে যাবে আর বলবে- ’সালাত পড় বেশি বেশি, ছোওয়াব পাবে রাশি রাশি, জান্নাত যাইবা হাসি হাসি!’ সবাই এখন এ সূত্রে আটকে গেছে। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-জিহাদ-ছোওয়াব-জান্নাত এ চক্রে যারা আপনাকে ফেলতে চাইছে তারা শয়তান ব্যতীত অন্য কিছু নয়। যদিও তাদের মুখ ভর্তি দাড়ি থাকবে, থাকবে লম্বা জোব্বা, বাহারী তসবীহ-টুপি, হালে একে৪৭ কিংবা কোট-টাই-টুপি!
অন্তরের পবিত্রতা কীভাবে অর্জন করবেন? এর জন্য প্রথম শর্ত হল ঈমান। ঈমান মানে কলেমা তাইয়্যেবা নয়। ঈমান কী এটা বুঝাতে গেলে আরেকটা লেখার প্রয়োজন যা আজকের আলোচ্য নয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে প্রথমটি হল ঈমান। ঈমানই নেই, তার আবার কীসের সালাত, কীসের সাওম (রোযা)! পবিত্রতা অর্জনের প্রথম ধাপ হল ঈমান। এরপর একাগ্রতার ধ্যান সাধনা, যাঁর (আল্লাহ) জন্য সালাত কিংবা সবকিছু তাঁকে চেনার সাধনা। সাধনায় পূর্ণতা পেলেই আপনার জন্য শরীয়ত, নচেৎ আপনি শিক্ষানবিস।
ঈমান কীভাবে সংগ্রহ করব? নবী (সা.)-ই হলেন ঈমান। যেহেতু প্রকাশ্যভাবে এখন নবী নেই তাই বলে কি ঈমান থাকবে না? অবশ্যই আছে। কোথায়? সাদেক তথা সত্যবাদীদের কাছে।
”এবং সাদেকগণের সঙ্গী হও” (সুরা তওবা, আয়াত: ১১৯)।
যখন সাদেকদের নিকট থেকে ঈমান সংগ্রহ করে সালাতে দাঁড়াবেন ঠিক তখনই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার অন্তরে বেজে উঠবে নিম্নের আয়াতটি,
”(মুসল্লি তারা) যারা তাদের সালাতের উপর চিরকাল সার্বক্ষণিকভাবে থাকে” (সুরা মা’আরিজ, আয়াত: ২৩)।
কারা মুসল্লি আয়াতটিতে সুস্পষ্ট। আয়াতটিতে কোন ওয়াক্তের কথা উল্লেখ নেই। সালাতে সার্বক্ষণিকভাবে যাঁরা থাকবে তাঁদের জন্যই সালাত জান্নাতের চাবি। বাকিদের জন্য শিরোনামের বাক্যটিই দ্রষ্টব্য।

[লেখাটির দ্বিতীয় পর্ব (অপেক্ষা করতে হবে): ”সালাত পড়লে কিংবা মসজিদে গেলেই মুসল্লি নয়, তবে মুসল্লি কে?”]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×