- “তোর সমস্যাটা কি?”
রাব্বির প্রশ্নে উদাসীনভাবে শুধু চেয়ে রইলাম । আর চেহারায় গম্ভীর ভাব এনে বললাম, “হুম” ।
মানুষের মনের অবস্থা আদ্ধাত্বিকভাবে চেহারায় প্রকাশ পায় । রাব্বিরও তেমনি চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছে এখন । ওর চেহারায় এখন বিরক্তির ছাপ । কারণটা আমিই ।
এবার মুখ কুচকিয়ে বলল, “তোর কি একটুও কষ্ট লাগছেনা ? কি করে থাকিস এতটা স্বাভাবিক হয়ে ?”
উত্তর দিতে গিয়ে কি যেন একটা ভেবে থেমে গেলাম । কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম । ভাবছি.... ভাবতে ভাবতেই টপিকটা ভুলে গেলাম হঠাৎ ।
আমার একটা প্রবলেম আছে । “শর্ট টাইম মেমোরি লস” । মাঝে মাঝে এমন কিছু ব্যাপার ভুলে যাই, যেগুলো আসলে ভুলে যাবার মত না ।
একবার কলেজ পরীক্ষা দিচ্ছি । কি যেন একটা প্রশ্নের উত্তর লিখছি । লিখতে লিখতেই ভুলে গেলাম ‘ধ’ কিভাবে লিখতে হয় । ‘ধ’ দেখতে কেমন । কি একটা লজ্জার ব্যাপার ! তাইনা ? ছি ছি !
অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না । বন্ধুকেও বলতে পারছি না লজ্জায় । কোন গতি না পেয়ে সামনের জনকে বলেই ফেললাম, ‘দোস্ত “ধ” কিভাবে লিখে রে ?’
সেদিন ভাগ্য ভাল ছিল । বন্ধু ফিক করে একটা হাসি দিয়ে বলেছিল, “ব- এর সামনের দিকে হাতির শুড়ের মত একটা দিয়ে দে ।” তারপর পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বেশ তামাশা করেছিল সবাই । খুব হেসেছিলাম ঐদিন । সেদিনের কথা আজ বেশ মনে পড়ছে । কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে হাসতে পারছিনা আজকে ।
কি যেন একটা কারণ !! মনে পড়ছেনা .. পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসছে না ।
“শর্ট টাইম মেমোরি লস”-এর দোষ দিয়ে টপিকটা ছেড়ে রাব্বির দিকে নজর দিলাম ।
ফিরে দেখি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ও । এখন কোন বিরক্তির ছাপ নেই চোখে । মুখেও কিছু বলছেনা ।
নীরবতা ভেঙ্গে বললাম, “কি যেন বলছিলি?”
কিছু না বলেই উঠে চলে গেল ও । বিরক্ত হয়েছে হয়ত । শুধু যাবার সময় বিড়বিড় করে কি যেন একটা বলল । বুঝলাম না । বোঝার চেষ্টাও করলাম না ।
***
চুপ করে বসে আছি । হাতে আপাতত কোন কাজ নেই । যখন কোন কাজ থাকেনা । তখন মাথায় রাজ্যের সব চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে । যেন আমিই রাজা । সারা রাজ্যের সব দায়িত্ব আমার ।
রাজা-প্রজা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রানীর কথা মনে পড়ল ।
আমারও একটা রাণী ছিল । আমার হৃদয় রাজ্যে রাজ করে বেড়াত সে । অনেক ভালবাসত আমাকে । আমিও বাসতাম ।
সবকিছু ঠিকই ছিল । দু’পরিবার মেনেও নিয়েছিল আমাদের সম্পর্কটা । কিন্তু একজন হয়তো মেনে নিতে পারেনি । তাই কেড়ে নিলেন ।
বিধাতা; তার নিয়ম বেশ জটিল । আমাদের বোঝার বাইরে ।
আমার রাণীটা বড্ড ভাল ছিল । তাই হয়ত ওকে নিজের কাছেই রেখে দিলেন ।
ওকে কথা দিয়েছিলাম সারাটা জীবন পাশে থাকব । যেখানেই যাক না কেন, সাথে রব; ছায়া হয়ে ।
কিন্তু কথা রাখতে পারিনি । পরিবারের একমাত্র ছেলে হওয়ায় সবাই যখন চেয়ে থাকে, তখন নিজের কথা আর ভাবার অধিকার আমার নেই । পৃথিবীর সবচে বড় আদালত হচ্ছে নিজের বিবেক । সেই আদালতে আমি পরাজিত এক আসামী । কথা না রাখার অপরাধে আমি আজ অপরাধী । আর নয়তো ভালবেসে...
আর শাস্তি ? সারাটা জীবন কষ্ট পাওনা রইল ।
মানুষের সহ্য ক্ষমতা অনেক । কিন্তু অসীম না । তাই আর সহ্য করতে পারছিনা । বুকের বামদিকটার ব্যাথা ক্রমশ বাড়ছে । একটু পরেই হয়ত চোথ বেয়ে ঝরে পড়বে এ ব্যাথা ।
নাহ্ .. আমার রাণীটাকে বুঝতে দেয়া যাবেনা সেটা ।
কবরটায় একটু হাত বুলিয়েই উঠে পড়লাম । আর বললাম, “ভাল থেকো রাণী” ।
অন্য রাজ্য থেকে হয়ত বলছে আমার রাণীটাও,
“রাজা, ভাল থেকো তুমিও....”