somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইন পাসের এখনই সুযোগ, হেলায় সুযোগ হারাবেন না

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি দূর্ঘটনা নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়ন দাবীর চিত্রটাই বদলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎই চেষ্টা করা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন পাসের। কিন্তু আইনে কঠোর কিছু থাকলেই বেকে বসতেন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী যে কিনা একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা। পরিস্থিতি তার অনুকুলে না দেখলেই ধর্মঘটের ডাক দিতেন। দেশ হতো অচল। অগত্যা সরকার আইন পাস করা থেকে সরে আসতে বাধ্য হতো। দূর্ঘটনার পর সেই মন্ত্রী কাম শ্রমিক নেতার একটি নির্লজ্জ হাসি দেশের পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে। তাই এখনই সময় সড়ক পরিবহন আইন পাসের, হেলায় এই সুযোগ হারানো ঠিক হবে না।
পরিবহন শ্রমিকদের কাছে দেশবাশী অনেকটা জিম্মি। যাদের কালো টাকা নেই বা কালো টাকা কামানোর সুযোগ নেই তাদের এক বা একাধিক গাড়িও নেই। সেই সব সৎ ও নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য গণপরিবহনই একমাত্র ভরসার জায়গা। কোন অযুহাতে যদি গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয় তাহলে অনেক মানুষের জীবণ যাত্রা অনেকটা থমকে যায়। আর শ্রমিক নেতা সেই সুযোগটাই সবসময় ব্যবহার করছিলো এতোদিন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার পশ্চাদ দেশের নিচে আর ক্ষমতাধর চেয়ারটা থাকবে না। শ্রমিকদের খিস্তিখেউর শোনা সহ্য করতে পারবে কিন্তু মন্ত্রীত্বের চেয়ারটা হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারবে না। তাই এখনই সময়।
দেশে সড়ক নিরাপত্তা বাস্তবায়নে শুধু গণপরিবহণ শ্রমিকরাই একা দায়ী নয়। সেই সাথে দায়ী অন্য গাড়ির মালিক-চালকরাও। যেমন, মটর সাইকেল মালিকরা যেখান দিয়ে ছিদ্র পায় সেখান দিয়েই ঢুকে পড়ে। আমাদের দেশের প্রভাবশালীরা উল্টো রাস্তায় চলতে খুব পছন্দ করে, এতে আমি একটা হনু হনু ভাব থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিক্সাও একটা সমস্যা। রিক্সাওয়ালারা কোন শৃঙ্খলা মানতে নারাজ। সর্বপরি আমরা জনগণতো আছিই। ফুট ওভার ব্রিজ থাকলেও আমরা ব্যবহার করি না, জেব্রা ক্রসিং থাকলেও যেখান দিয়ে মন চায় হাত উঠিয়ে রাস্তা পার হই, নির্ধারিত স্টপেজ মানি না যেখানে নামা প্রয়োজন সেখানেই বাসের গায়ে থাপ্পর দিয়ে বলে বসি ‘ওস্তাদ একটু ব্রেকে পাও দেন’। ফুটপাত দিয়ে হাটতে ইচ্ছে করে না। ফুটপাথ দিয়ে না হাটার কিছু কারনও আছে যেমন, ফুটপাথ হকারদের দখলে থাকে সবসময়, যেখান দিয়ে ফাকা সেখানে থাকে ময়লার স্তুপ। তবে সবথেকে বেদনাদায়ক বিষয় হলো আমাদের আইন না মানার মানসিকতা।
প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। খসড়া আইনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় হলো-ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। আগে যেখানে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজনই ছিল না। শুধু রং চিনলে এবং গরু ছাগল চিনলেই লাইসেন্স দেয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হত। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। গাড়ির হেলপার বা কন্ডাক্টরের (ভাড়া আদায়কারী) লাইসেন্স থাকাও বাধ্যতামূল। হেলপার ও কন্ডাক্টরের যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, তাকে লিখতে ও পড়তে পারতে হবে। হেলপার বা কন্ডাক্টরের লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নির্ধারিত আসনে বসতে না দিয়ে কেউ ওই আসনে বসলে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। চালক মোবাইল ফোন বা এরূপ কোনও ডিভাইস ব্যবহার করলে এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড, বেপরোয়া গাড়ি চালালে ২ বছরের কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড, বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদন্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধার রাখা হয়েছে, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নিহতের ঘটনা ঘটলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং আমলযোগ্য অপরাধে বিনা পরোয়ানায় আটকের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন আইনে ৬ মাসের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকার বেশি জরিমানা হলে সেটি জামিন অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবে অপরাধীকে। আর অতিরিক্ত ওজন বহনে মালিক ও চালকের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে আইনে। পাঁচ টনের ট্রাক যদি ১৫ টন ওজন বহন করে সে ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড, জাল লাইসেন্স ব্যবহার করলে চালক ও হেলপারের দুই বছরের কারাদন্ড বা তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালালে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল (কারাদন্ড) এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা। মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে চালক ও সহযাত্রীর দুজনেরই হেলমেট থাকতে হবে, গাড়ীর সামনে ও পেছনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কোনও কিছু বহন করা যাবে না, চলন্ত অবস্থায় প্যাসেঞ্জার ওঠা-নামা করানো যাবে না, সাইড করে গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করা যাবে না, উল্টো পথে বা রং সাইট দিয়ে মোটর সাইকেল চলাচল করতে পারবে না।
আইন পাস নাহয় হলো। এবার প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ ও আইন মানার অভ্যাস গড়া। আমাদের দেশে আইন প্রয়োগ একটা বড় সমস্যা। যারা আইন প্রয়োগ করবেন তাদের মধ্যে চাদাবাজীর প্রবণতা বেশি। গাড়ি থামিয়ে কালেকশন করবেন না আইন মানতে বাধ্য করবেন? দুটি তো একসাথে চলতে পারে না। আর আইন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা হচ্ছে ক্ষমতা। আমাদের ধরলেই পরিচয় দেই আমি সাংবাদিক, আমি আইনজীবী, আমি শিক্ষক, আমি ডাক্তার, আমি অমুক নেতার শালার চাচতো ভাইর বন্ধু, আমি পুলিশ কর্তার দুঃসম্পর্কের নিকট আত্মীয় ইত্যাদি। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাছবিচার করতে করতে কম্বলের মত পশমই থাকে না। আর যাদের উপর প্রয়োগ হয় তাদের কোন ক্ষমতা নেই বা অন্যায়টাকে টাকার বিনিময়ে রফাদফা করে ফেলেন।
তবে যে যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আইন পাস হলে কিছুটাতো কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করা হবে। দু-চার জন ক্ষমতা ও চাতুরতা দিয়ে বেরিয়ে গেলেও কিছু ফল পাওয়া যাবে। তাই এখনই সময় আইন পাস করার এবং আইন ব্যবহার করার। আবারও বলছি, হেলায় সুবর্ণ সুযোগ হারাবেন না, প্রিয় রাষ্ট্রযন্ত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×