somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশ্নউত্তর পর্ব ২: এবার মুক্তসোর্স নিয়ে কথা

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিনাক্স নিয়ে প্রশ্ন উত্তর পর্বের পর আজ মুক্ত সফটওয়্যার দিবস উপলক্ষে মুক্তসোর্স নিয়ে প্রশ্ন উত্তর পর্ব দিলাম।

প্রশ্ন:
যদি একটি কোম্পানি কষ্ট করে একটি সফটওয়্যার তৈরি করলো তারা কিসের জন্য এটাকে উন্মুক্ত করে দিবে? এতে তো তাদের প্রতিদন্ধীরা প্রায় বিনাশ্রম ও স্বল্প খরচে ব্যবহার করার সুবিধা পাবে আমরা কেনো তাদের এই সুবিধাগুলো দিবো?

উত্তর:
অনেকেই এই ভুল করেন যে আমাদের প্রতিদন্ধীরা আমাদের পণ্য কেনো ব্যবহার করবেন, তাদেকে যেভাবেই হোক পিছিয়ে রাখা বাধার সম্মুক্ষিন রাখা আমাদের জন্য মঙ্গলকর। এটা আসলে ভুল ব্যাখ্যা। দেখুন এখন তীব্র প্রতিদন্ধীতা যেমন আছে তেমনই আছে সহযোগীতা, বানিজ্যিক সমঝোতা। এখনকার যুগে পণ্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পণ্যের উপস্থাপনা, ও পণ্যের সেবা। এবং তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সম্পর্ক। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্লায়েন্টের ও সরবরাহকারীর সম্পর্ক যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক।

আপনার পণ্য আপনি যতো ভালোভাবে চিনেন তা অন্যরা চিনবে না। এটা আপনার কম্পিটিটিভ এজ থাকবে। আপনার পণ্যের মডিফিকেশন আপনার পক্ষে খুবই সহজ হবে।

এছাড়া আরও একটি বিষয় হচ্ছে আমার সোর্স কোড নিয়ে কোন সফটওয়্যার ডেভেলপ করলে আমি তাকে বাধ্য করতে পারবো আমাকে সেই সফটওয়্যার মডিফিকেশনের তথ্য দেয়ার জন্য। অর্থাৎ ফ্রিতে মডিফিকেশন পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া সুনামের বিষয় আছে, আছে পজিটিভ পাবলিসিটি-গুডউইল। স্ট্রাটেজিক এলায়েন্সও তৈরি করা কঠিন হবে না।

আর পণ্যের চেয়ে বড় এখন পণ্যের সেবা। ধরুন আপনার মোবাইল সার্ভিসের কথা। আমাদের দেশে ৬টির মতো মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার আছে, তারা কিন্তু একই সার্ভিস দিচ্ছে প্রায় একই রকম টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে, কিন্তু সেবার মান খুবই ভিন্ন।

প্রশ্ন:
আমি যে আমার সফটওয়্যারগুলো ডেভেলপ করার পর সোর্সকোড উন্মুক্ত করে দিব আমার আর্থিক সুবিধাটাও চিন্তা করা লাগবে। উন্মুক্তসোর্সে কতখানি সুবিধাজনক? আমার সফটওয়্যারের সোর্সকোড উন্মুক্ত করে দিলে আর কেউ তো আমার কাছে আসবে না অন্যরাই মডিফিকেশন তৈরি করে অর্থ উপার্জন করতে থাকবে।

উত্তর:
মুক্তসোর্স মানেই যে বিনামূল্যের পণ্য তা নয়। সোর্সকোড মুক্ত রেখেও পণ্য ও সেবা বিক্রি করা সম্ভব। সোর্সকোড উন্মুক্ত হলেও সবার কিন্তু সময় বা অভিজ্ঞতা নেই নতুন সফটওয়্যার মডিফিকেশন তৈরি করার। ধরুন চুল কাটার কথা, একজন নাপিত যতো নান্দনিক ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার চুল কাটবে আপনি কী নিজে সেভাবে চুল কাটতে পারবেন, যদিও আপনার কাছে চিরুনী, কাঁচি সবই আছে।

যদি আমি শুরু থেকে একটা সফটওয়্যার তৈরি করার পর উন্মুক্ত করে দিলাম এখন অন্যরা মডিফিকেশন করছেন ঠিক তারপরও কিন্তু সামান্য নিয়ন্ত্রন, সুবিধা আমার হাতে রয়ে যাবে। আমি সবাইকে অনুরোধ করতে পারি মডিফিকেশনগুলো আমাকে প্রদান করার জন্য লাইসেন্সের মাধ্যমে বাধ্য করতে পারাও কঠিন কিছু না।

আর আমি যে একটা সফটওয়্যার তৈরি করেই ক্ষান্ত দিবো তা তো না। আমার মেধার তো শেষ হয়ে যাবে না একটা সফটওয়্যারের সাথে, মডিফিকেশন করার জন্য অন্য আইডিয়া আসবে, আমার নিজের আরও মডিফিকেশন থাকবে। তাছাড়া আমার সফটওয়্যার আমার পরিচয়ে বেশি পরিচিত হবে, তাই মানুষ আমার নাম জেনে আমার কাছেই আসবে প্রথমে মডিফিকেশনের জন্য।

প্রশ্ন:
ছাত্র হিসেবে আমার কি সুবিধা হবে উন্মুক্তসোর্স সফটওয়ারের ক্ষেত্রে?

উত্তর:
ছাত্র হিসেবে মুক্তসোর্স আন্দোলনে জড়িত থাকার সুবিধা কিন্তু আরও বেশি। একটা কারন হতে পারে মেধার বিকাশ। প্রোপ্রাইটরি ক্লোস্ড সোর্স সফটওয়্যার থেকে শিখার সুযোগসুবিধা খুবই সীমিত। উন্মুক্ত সফটওয়্যারের সোর্সকোড উন্মুক্ত হবার কারনে সবকিছু নিজে দেখে শিখতে পারা যাবে। যেমন আমি যদি শিখার পাশাপাশি সফটওয়্যার ডেভেলপ করি আমার সেই সময় কিন্তু স্বাভাবিকভাবে বেশি ক্রুটি থাকবে। এই ক্রুটিগুলোর সব আমার পক্ষে সহজে বের করা সম্ভব না। তখন মুক্তসোর্স হলে অন্যান্য ডেভেলপাররা সোর্সকোড দেখে সমস্যাগুলো বলতে পারবেন।

এরপর আছে পরিচিতির বিষয়। আমার ছাত্রাবস্থাতেই আমার পরিচিতি লাভ হলে আমার ভবিষ্যত কাজের ক্ষেত্র আরও প্রসস্ত হবে। তাছাড়া সফটওয়্যার বা সার্ভিস বিক্রি করার সুবিধা তো আছেই যার মাধ্যমে পড়ালেখার খরচ বহন করাও সম্ভব হতে পারে।

প্রশ্ন:
বাংলাদেশের মতো গরীব দেশে উন্মুক্তসোর্স সফটওয়্যারের প্রয়োজন আছে কি? যেখানে আমাদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ সীমিত সেখানে উন্মুক্ত করে দিলে আর কি থাকবে?

উত্তর:
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে মুক্তসোর্স সংস্কৃতি আরও বেশি করে গ্রহণ করা উচিত। বিভিন্ন প্রোপ্রাইটরি, ক্লোস্ড সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করে মেধা বিকশিত হবার সুযোগ সীমিত। তাছাড়া এসকল পণ্যের উচ্চমূল্যও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। প্রোপ্রাইটরি সফটওয়্যারগুলোর আপগ্রেড/আপডেট নিয়মিত কেনার ক্ষমতা আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই।

এজন্য সুবিধাজনক হচ্ছে উন্মুক্তসোর্সের আশীর্বাদ গ্রহণ। বিভিন্ন উন্মুক্তসোর্স ও বিনামূল্যের অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে অর্থের সাশ্রয় সম্ভব।

তাছাড়া প্রোপ্রাইটরি-ক্লোস্ডসোর্স সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে উন্মুক্তসোর্স সফটওয়্যার অপারেটিং সিস্টেম নিজেদের অভিজ্ঞ জনবল কাজে লাগিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী মডিফিকেশন সহজেই করা সম্ভব, এতেও অর্থের সাশ্রয় হয়।

এছাড়া দেশের ছেলেরা উন্মুক্তসোর্স সফটওয়্যার তৈরি করে দেশের বাইরে যেমন সুনাম আনবে তেমনই সার্ভিস অথবা সফটওয়্যার ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করবে।

প্রশ্ন:
মাইক্রোসফট যদি স্বল্পমূল্যে (ধরুন ৫০০ টাকায় যদিও সম্ভব না) উইন্ডোজ ও অফিস বান্ডেল হিসেবে দেয় তাহলে কি লিনাক্স বা মুক্তসোর্স বিকল্প ব্যবহারের কোন কারণ থাকবে?

উত্তর:
আসলে আমাদের এই মুক্ত আন্দোলন স্বল্পমূল্য বা বিনামূল্যে সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেম পাওয়া নিয়ে না। বরং ধারনা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মুক্ত প্রবাহ নিয়ে আমাদের আন্দোলন। তাছাড়া পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করার জন্যও কিন্তু সোর্স কোড মুক্ত হওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। উন্মুক্তসোর্স সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেমের একটা বড়ো সুবিধা বা গুন ছিলো আছে এবং থাকবে সেটি হচ্ছে সুবিশাল স্বেচ্ছাসেবকগোষ্ঠী। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডেভেলপাররা কাজ করে একটি সফটওয়্যার বা অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে আরও উন্নত ও স্ট্যাবল করছেন। যা প্রোপ্রাইটরি সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে অর্জন কখনই সম্ভব না।

মাইক্রোসফট যদি আপনাকে বিনামূল্যেও উইন্ডোজ বা অন্য পণ্যগুলো আপনাকে দিতে চায় (বর্তমান অবস্থায়) তখনও আমরা মাইক্রোসফটের পণ্য ব্যবহার করতে বলবো না। কেনো? কারন হচ্ছে সোজা কথায় পণ্যের মান। মাইক্রোসফট সম্পূর্ণ নিজের এমন কোন পণ্য এক কথায় অসাধারন এবং স্ট্যাবল বলা যায় না।

উইন্ডোজ বা অফিস কোর কোডের কোন পরিবর্তন ছাড়াই সামান্য ফেস লিফটিং করে পণ্যগুলো ছাড়ছে। ৯০ এর দশকের পর উইন্ডোজের কোর কোডের কোন পরিবর্তন হয়নি। অনেক অভিজ্ঞরা মাইক্রোসফটকে উইন্ডোজের কোড আবার শুরু থেকে লেখার অনুরোধ জানালেও তারা তা শুনেননি। ভিস্তার সময় আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো ভালো পণ্য দেবার ব্যাপারে, কিন্তু ভিস্তা আইক্যান্ডি ছাড়া কিছুই না। ভিস্তায় যা আছে তা এক্সপিতেও পাওয়া যায়। মাইক্রোসফট অফিসের ক্ষেত্রেও কোন ভিন্ন বিষয় না। এটাও একই ভিত্তির উপর তৈরি হয়ে আসছে, প্রয়োজনে কেবল কিছু আদলের পরিবর্তন করা হয়েছে।

প্রশ্ন:
একজন সাধারন ব্যবহারকারী বা মানুষ হিসেবেই আমি উন্মুক্তসোর্স আন্দোলনকে সমর্থন দিবো কেনো?

উত্তর:
সহজ উত্তর মানুষের জন্য ভালোবাসা। আমি একটা জিনিস তৈরি করলাম সেটা আরেকজন ব্যবহার করে উপকৃত হোক। আমি একটা ভালো জিনিস ব্যবহার করেছি আমার বন্ধু পরিচিতরাও সেই জিনিস ব্যবহার করুক। উন্মুক্ত হোক জীবন বাধাহীন সীমানাবিহীন।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০১
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×