somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপি: আমার উগ্রতার পরিসংখ্যান নেই

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম আমি ঢাকায় এসেছিলাম ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে। সেদিন অনেক স্বপ্ন ছিলো চোখে এবং আবেগ। কিন্তু দিনশেষে সব আবেগ বাস্তব হয় দিনশেষে। রাতে আবার ফিরে যাই। এ ঢাকা শহর সেদিন কোনো আশ্রয়ই দেয়নি আমাকে। তার মধ্যে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। দ্বিতীয়বার আবার ঢাকায় আসি ৬ ফেব্র“য়ারি ১৯৯১ সালে। তখন আমি আর আগের আমি নই। ডাহুকপাখির প্রেমে হাবুডুবু খাই। কারো ড্রেসিং টেবিল দেখলে মুগ্ধ হয়ে দেখি। কিন্তু রগচটা মানুষের সঙ্গে কেউ প্রেম করে না। তুলতুলে মেয়েরা নাকি উগ্র ছেলেদের মারাত্মক ভয় করে। মায়ের মুখে এ কথা এত শতবার শুনেও আজও পারিনি আমার রগচটা স্বভাবটি দূর করতে। প্রথম আমি ঢাকায় এসেছিলাম ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে। সেদিন অনেক স্বপ্ন ছিলো চোখে। ছিলো লেখক হওয়ার স্বপ্ন। আজ আমি মসজিদেও যাইনা এবং তুলসীপাতার পূজায়ও আজ আমার নেই বিশ্বাস। এখন আমার উগ্রতার পরিসংখ্যান নেই। কারণ এখন পরীদের ডানা আর অলৌকিক শক্তিকেও বিশ্বাস করি না আমি। দ্বিতীয়বার আবার যখন ঢাকায় আসি ৬ ফেব্র“য়ারি ১৯৯১ সালে, তখনও আমার বিশ্বাস ভাঙ্গেনি এমন। এখন আমি ডিটেকটিভ উপন্যাসের নায়কের মতো রাজকন্যার হৃদয় থেকে পুঁজিবাদের পতঙ্গ ধরে এনে পিষে মারতে চাই।
অক্টোবর-১৯৯২, ঢাকা
বিখ্যাত ফরাসি কবি গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মোপাসাঁ আধুনিক ছোটগল্পের অন্যতম জনক। এত শত ছোটগল্প তিনি এত অল্প বয়সে লিখলেন কিভাবে ? সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৩ বছর তিনি বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। জীবনের এই স্বল্প সময়ের মধ্যে আবার সেনাবাহিনীতেও যোগ দেন। কিন্তু তার ছোটগল্পে বাস্তবতা আমার কাছ স্বল্প মনে হয়েছে। অবশ্য এটা আমার থেকেই হতে পারে। বিখ্যাত লেখক গুস্তাভ ফবেয়ার, এমিল জোলার রেফারেন্স পড়েছি। মূল লেখা এখনো পড়া হয়নি। তার মানসিক বৈকল্য নিয়ে আমি ভাবিত হই। মানুষের জীবনের শেষ পরিণতি এমন মর্মান্তিক হতে পারে , ভেবেও ভয় পাই।
অক্টোবর ২০০৬, কুমিল্লা।
তুমি ছাড়া কে আছে সংসারে হায়! যুগে যুগে আমি খুঁজেছি তোমায়। আছে এক কুঁড়েঘর, আর টুনটুনির বাসা, জবাফুলের সবুজ গাছ আর আছে কিছু ঘুঘুর ডাক। এছাড়া হায় কী আছে আর আমার। এছাড়া আর আপন বলবো কারে। তুমি ছাড়া কেউ নেই এই সংসারে।
অক্টোবর ১৯৯১ , ঢাকা।
‘শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী’। আমিও তোমাকে অনেক গড়ে দিতে পারি। তোমাকে তো আমিই পরাই অলংকৃত শাড়ি। ‘পুরুষ গড়েছে তোমায় সৌন্দর্য সঞ্চারী’। তোমার জন্যই পুরুষ গড়েছে স্বর্গবাড়ি। তোমার সৌন্দর্য তাই কখনো অল্পনা। ‘অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা’।
সেপ্টেম্বর ১৯৯২ , ঢাকা।
মাকে আমার পড়ে খুব মনে। ‘মা বুঝি গান গাইতো আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে’। এ কথাটি জানতে চাইতাম মাকে কাছে পেলে। মাকে আমার পড়ে খুব মনে। মনে হলে মায়ের কথা, কথা বলি নিজের সনে।ণে ণে মনে মনে। মাকে আমার পড়ে খুব মনে। আজ কতোদিন দেখা নেই হায় মায়ের সনে।
ফেব্র“য়ারি ১৯৯৩ , ঢাকা।
নদীতে ডুবোচর, চলছে জাহাজ খুব ঝুঁকি নিয়ে। মাটিতে পা রেখে চলতে যেদিন শিখেছিলাম, সেদিন থেকেই দেখি শরীর ভরা গুলিবিদ্ধ আমার। বের করতে না পেরে আরোগ্য কামনা করি। কখনো কখনো বলি, সমুদ্রে আর ভাসতে চাইনা আমি। অথচ শেষে দেখি জাহাজ ডুবে গেলেও কোনোমতে বেঁচে থাকতে চাই। হায়! নদীতে ডুবোচর, চলছে জাহাজ খুব ঝুঁকি নিয়ে। স্বপ্ন আজ ধর্ষিতা নারী। উলঙ্গ কোনো পাগল যদি হতাম, দুঃখ ছিলো না কোনো। দুঃখ কেবল দু’চোখ থেকে টাপুরটুপুর বৃষ্টি পড়ে বলে। আর দুঃখ কেবল মানুষ হয়েছি বলে।
(মার্চ-১৯৯৫, কুমিল্লা)
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় গাছপালার ছায়ায় বসে বই পড়তে পারতেন। পড়তে পারতো অপুও। কিন্তু আমি পারি না। কারণ আমি প্রকৃতিকেই পড়ি। গাছের নিচে যখন পড়ে থাকে থোকায় থোকায় ছায়া, আমি তখন পাগল হয়ে যাই। পথিক হয়ে, বাউল হয়ে, বাউন্ডুলে হয়ে বাঁধাকপির মতো মাটিতে বাঁধা পড়ে যাই।
(সেপ্টেম্বর-১৯৯৩, কুমিল্লা)
প্রতিবছর আমার ঘরের পাশের বড়ই গাছে, এ আশ্বিনে বুলবুলিরা সারাটা দিন নাচে। তাদের নিয়ে লিখি আমি কতো যে কবিতা, করি তাদের আমার প্রাণের অন্তরঙ্গ মিতা। এ আশ্বিনে আবার যখন বুলবুলিরা এলো, তখন মনে সব আনন্দ ঢেউ খেলিয়ে গেলো। আমি একদিন চলে যাবো এ পৃথিবী থেকে, বুলবুলিরা গানের ছবি তখনও যাবে এঁকে।
(আশ্বিন-১৩৯৬ বঙ্গাব্দ, খয়রাবাদ, দেবিদ্বার, কুমিল্লা)


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×