somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

|তিল-গপ্পো| বাহান্ন মেঘ ও উনষাট সাইকেলের বাহাস

০৪ ঠা জুন, ২০০৯ রাত ১০:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল এলে আমরা মেঘের সাইকেলে করে আকাশ-রাহা পাড়ি দিতাম, আমাদের পরনে থাকতো রামধনু রঙা লুঙ্গি- যার কোঁচে থাকতো সন্ধ্যাকালে ঘরে ফেরার সংকেত। হাওয়াই গেঞ্জি 'পরে গামছা। গামছাতে থাকতো আমাদের পাড়ার পুষ্পাবলির ঘ্রাণ; যুবতী পুষ্পদল।
আমরা একজনের নাম বিশেষ মনে রেখেছি- শুভ্রা; তার কালো কুন্তলের ভাঁজে আমরা মাঘী পূর্ণিমার সাপ দেখতাম; তার ফোলা গালে ভর করে থাকতো অভিমান ও মেয়েলি রহস্যের কলস। আমাদের পান করে-ও তৃষ্ণা নিবারণ হতো না; বারবার শুভ্রার বাবার বয়ান শোনার ছলে আমরা হানা দিতাম তাদের বাগিচার পিছনে। বিকালে সেখানে শুভ্রা কলাগাছের পাতা কাটতো পিঠা বানানোর জন্য।
- 'শুভরা, কী করছ?' আমরা শুভ্রার নাকের উপরে ঘাম দেখি, আমাদের শরীরে হাওয়া লাগে।
- 'বরগ কাটি, দেখছ না। পিঠা বানাব মায়ে।'
- 'আমাদের ভাগ রাখিস।' আমরা শুভ্রাকে বৈকালীন অভিযানের গল্প শোনাই আর লোভের ইলাস্টিক নিয়ে টানাটানি করতে থাকি।
- 'নিজে করে খাঁ।' শুভ্রা বরগ কাটা শেষ করে চলে যায়, মাটিতে তার পায়ের ছাপ পড়ে-পড়ে করে-ও পড়ে না, কেবল বাতাস কাটে।
আমাদের বাস্তবিকই সাইকেল ছিল, দু'টো- চারজন মানুষ। লুঙ্গি পরে সাইকেল চালানো খানিক কষ্টদায়ক বলে আমরা মাঝে মাঝে গোঁছ মারতাম। টগবগ সাইকেল নিয়ে আমরা চলে যেতাম কালিডাঙার পাড়ে গর্ভবতী ধানক্ষেতের আইল ধরে। বাতাসে কাঁপতে থাকে ধানশিষ, ঢেউ তুলে মাতাল করা; বুক সমান ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের সাইকল নৌকা হয়ে যেত, আমরা শস্যনদী ভাসান দিতাম; কতিপয় ধানশস্যে হাওয়া নিয়ে এক ফোঁটা নদী!
কালিডাঙায় বেবাক মাছ, আন্তা বসানোর সুযোগ নাই বলে আমরা বড়ই ফেলি। তবে তার আগে পটু হাতে আধ-থকথকে কাদা থেকে তুলে আনতে হতো কেঁচো, জোঁক ইত্যাদি।
সেদিন আমরা শুভ্রার শাড়ির পাড়ের প্রস্থ মাপছিলাম।
- 'কালিডাঙাতে নাকি লালচে মাছ পাওয়া যায়, মাঝখানে হলদা দাগ।'
আমরা এই কিসিমের মাছ ইহজীবনে সাক্ষাৎ করি নাই- তদাপি শুভ্রাকে সন্তুষ্ট করার্থে আমি বলি- 'হ, বেবাক।'
- 'সে মাছ খাইলে নাকি সুষম লাগে, শরীরে বল লাগে?'
- 'কনে কইছে?'
- 'দাদীজান কাইলক্যা রাতে কইছিল।'
- 'তোর দাদী তো বুড়ি মানুষ, আবোল-তাবোল বকে।' জামশেদ টিপ্পনী কাটে; তার দিলে ছ্যাঁকা দিয়েছিল শুভ্রা বছরখানেক আগে। কথাটা শুনে শুভ্রা ফোঁস করে উঠে- তার চুলের কালসাপ এবার জিহবা দিয়ে জানান দেয়।
- 'হ, আনুম; তুই আনগোর লাই পিঠা রাখবি। খুশি হমু তুই নিজ হাতে বানাইলে।'
আমরা জওয়ান পোলাপাইন লালচে হলুদ মাছের টিকি সন্ধান করি- আমরা ভেলকি লাগার অপেক্ষায় আল্লাহর নাম জপতে থাকি। জামশেদ দেখতে পায় লাল লাহান কিছু- সে চিৎকার করে উঠে; মীনজাতি আমাদের কথা বুঝতে পারলে এতক্ষণে পালাতো।
আমরা উড়েপড়ে লাগি মাছ শিকারের জন্য। বড়শি ফেলতে থাকি ব্যস্ত হাতে।
দেখা যায় মাছেরা ভীড় করে আমাদের আধারের লোভে। আমরা শরীরে স্রোত অনুভব করি বিজয়ের আনন্দে। কিন্তু আমি বিচক্ষণ চোখে খেয়াল করি যে সবাই মাছ ধরে ফেলছে! আরে, সবাই ইমাম হলে তো হবে না; কিছু মুসল্লী থাকা লাগবে, কয়েকটা মৌলবাদি (এই শব্দটা আমি গত সপ্তাহে সুজন মাস্টারের কাছ থেকে শিখেছিলিম) থাকবে! আমি কৌশলে অন্যদের বড়শির সুতা কাটতে চেষ্টা করলাম। রুপম টের পেয়ে গেল! সে-ও আমার বড়শির সুতো কাটতে উপগত হলো।
বেলা হয়ে আসছে। বাতাসে সন্ধ্যার নিজস্ব ঘ্রাণ তীব্র হচ্ছে; আমাদের লুঙ্গির কোঁচায় রাখা সন্ধ্যাকালে ঘরে ফেরার সংকেতসমূহ জেগে উঠতে শুরু করেছে! কিন্তু লালচে হলুদ মাছ তো ধরা হলো না; শুভ্রা কী এই প্রতারণা মেনে নিবে! মিনিট পাঁচেক আগে আমরা আবিষ্কার করেছি আমাদের কারো বড়শির সুতো অবশিষ্ট নেই।
আমরা অন্য কোন বিকালে ফিরে আসার ইচ্ছা রাখি। সেদিন বিকালের উঠোনে জলপিঁড়িতে বসে থাকবে বাহান্ন মেঘ আর আমাদের কানে বাজতে থাকবে সাইকেল চলার শব্দে সৃষ্ট নামতার সুর!

--------------
গতকাল
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০০৯ রাত ১০:৪৯
২৬টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×