somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিশোরতোষ গল্প: আকাশছোঁয়া

৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল গল্পকার: মাইক রাথ (Mike Krath)
মূল শিরোনাম: High and Lifted Up


=========================================
অনুবাদের অভিপ্রায়টা ছিলো মোস্তাফিজ রিপনের। এর আগে কতগুলো ছড়া লিখেছিলাম পিচ্চিদের জন্য, কয়েকটা গল্প-ও লিখেছি; তবে সেইসব শিশুতোষ হয়েছে কিনা সে দ্বিধা নিয়ে প্রকাশ করা হয় নি, কম্পুতে নিদ্রা দিচ্ছে। অনুবাদ করে ফেললাম অনীক আন্দালিব বলায়। আবার দ্বিধা, শিশুতোষ হলো তো! শিশুতোষ না হলে-ও কিশোরতোষ হলেই হবে।

অনুবাদের প্রয়োজনে, অনেকটা আমাদের সাহিত্যের মতো করার জন্য আমি চরিত্র, বর্ণনাভঙ্গি, এমনকি কিছু বাক্য নিজে লাগিয়েছি। গল্পটি অনুমতি নিয়ে করা হয় নি। দুঃখিত।

গল্পটা পিচ্চি কাউকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছে করছে। পারমিতাকেই করি। সে রূপকথার লাবণ্য ধরে রাখুক আজীবন।
=========================================


সেদিনটা ছিলো হাওয়ার দিন।
ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে সামনের দরজার খুব কাছাকাছি-ও যেতে পারে নি। যখন দরজাটা খোলা হলো, গিন্নি লাবণী শুধু বলতে পারলো, 'কীহে', কিন্তু তিনি ধন্যবাদ জানানোর আগেই বাতাসের তোড়ে চিঠিটি ডাকপিয়নের হাত থেকে উড়ে গেলো ঘরের ভিতরে এবং সামনের দরজাটা যেনো তার মুখের উপরই বন্ধ হয়ে গেলো! বাড়ির গিন্নি লাবণী চিঠি তুলে নেয়ার জন্য দৌড়ে গেলেন।
"অ্যাঁ আমার," তিনি বললেন।
হিমু শুধু দেখছিলো দরজার ঝাপ কেবল খুলছে, বন্ধ হচ্ছে, খুলছে, আবার বন্ধ হচ্ছে।
"আম্মু," সে কণ্ঠ ছাড়ে, "আমি একটু বাইরে যাই?"
"সাবধানে যাহ্" তিনি বলেন, "বাইরে আজ খুব বাতাস হচ্ছে।"
হিমু হামাগুড়ি দিয়ে জানলার বেদী থেকে নেমে দরজার দিকে দৌড়ায়। সে খটাশ করে দরজা খুললো। ফলে বাতাস আরো তীব্র বেগে বইলো এবং এক ঝাটকায় লাবণীর হাত থেকে সদ্য উদ্ধার করা চিঠিটি কেড়ে নিয়ে বাড়ির আরো অন্দরে নিয়ে ফেললো।
"হায়, হায়।" তিনি বললেন। ততক্ষণে হিমু একদৌড়ে বাইরে, দরজার ঝাপ আবার বন্ধ হলো জোরে শব্দ করে।
বাইরে হলদে সোনালি ও লাললাল পাতারা ঝরে পড়ছে দুলতে থাকা গাছগাছালি থেকে; বাড়ি ছাদে এই বসছে তো সেখান থেকে লাফ দিচ্ছে নিচে, আবার হয়তো একটি পাতা আরেকটি পাতাকে তাড়া করতে লাগলো রাস্তার উপর ঘুরপাক বাতাসের স্ফূতিতে।
হিমু মুগ্ধতা নিয়ে গোল গোল চোখে দেখছে তো দেখছেই।
"ইশ, আমি যদি একটা পাতা হতাম দিব্যি সারা দুনিয়া ঘুরে ঘুরে উড়ে উড়ে বেড়াতুম। হুমম," হিমু ভাবে, তারপর হঠাৎ উঠোনে রঙের ঘূর্ণির দিকে দৌড়ে যায়।
লাবণী বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন।
"হিমু, তোমার জ্যাকেট এনেছি, পরে যাও।"
কেউ কথা বললো না।
"হিমু"
কিন্তু হিমু তো আর উঠোনে দাঁড়িয়ে নেই। ততক্ষণে সে একটি পাতা হয়ে গেছে! তার খেলার সাথীদের নিয়ে রাস্তার উপরে খেলছে, দৌড়াচ্ছে, হাওয়ায় হাওয়ায় খানিক উড়ছে-ও বটে।


একটা কৃষ্ণচূড়াপাতা তার কাছাকাছি নেমে এলো, তাকে ছুঁয়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। হিমু তার কাছে দ্রুত চলে যায়, পাতার সাথে নিজের শরীর ঘষে নিলো মৃদু, এবং এবার সে পাতাটিকে ছাড়িয়ে গেলো। তারা ঘুরছে তো ঘুরছেই; গাড়ি, টেলিফোনের খুঁটি সবকিছুর সাথে ধাক্কা খাচ্ছে, ইচ্ছে হলে বাতাসে ঝাঁপি দিয়ে উড়ছে নামছে।
"আহ্, কী মজা।" সে আনন্দে ছটফট করে।
কৃষ্ণচূড়ার পাতাটি বোকা নয় মোটেই। চুপি চুপি সে হিমুকে হারিয়ে দিয়ে সামনে উড়ে গেলো। এমনিতেই ঝলমলে শিরা নিয়ে পাতাটির রঙ লাল, তার উপর সূর্যের ঝিকিমিকি আলোয় পাতাটি রূপকথার রাজকন্যার মতো মিষ্টি হয়ে উঠলো, হিমু এমনটি আর কখনো দেখে নি।
"আমরা কোথায় যাচ্ছি?" হিমু দেখলো বাড়ি ছাড়িয়ে তারা অনেক দূরে।
"কোনো সমস্যা? আসো আমরা খেলি, জীবনটা জলের মতো, শুকিয়ে যায় তাড়াতাড়ি।"
"আমি তা মনে করি না" একটা বুড়ো পাতা গমগম কণ্ঠে বললো, এতক্ষণ তাদের পাশাপাশিই আসছিলো, তারা টেরই পায় নি! কী আশ্চর্য! "হ্যাঁ, আমাদের ভ্রমণ ছোট হতে পারে, কিন্তু শেষটাই যে শুরু!"
হিমু ভেবে দেখলো একটি পাতা বড়জোর এটাই ভাবতে পারে।
"তাহলে আমরা কোথায় থামবো?"
"যদি বাতাস তোমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়, এদিকে, তবে তুমি শহরের ময়লায় গিয়ে পড়বে।"
"না, আমি তা চাই না।" হিমু কাঁদো কাঁদো।
"আর বাতাস যদি তোমাকে ঐদিকে বয়ে নিয়ে যায়, তুমি উপরে আরো উপরে উড়ে যাবে এবং এমনসব জিনিস দেখবে যা পাতারা জীবনে-ও দেখে নি!"
লাল পাতাটি হঠাৎ বাঁধা দিয়ে বলে, "হিমুসোনা, আমার পিছে পিছে আসো, আমার বন্ধুরা শহরের ময়লার কাছেই আছে, আমরা চড়ুইবাতি খেলবো।"
হিমু ভাবলো খানিকটা, সে আরো খেলতে চায়, সে বাতাসের হাতে হাতে রেখে লালপাতাটির পিছনে উড়তে লাগলো।
বাতাস দিক পরিবর্তন করলো, হিমু এবং লালপাতাটিকে শহরের ময়লার দিকে উড়িয়ে নিতে লাগলো।
বুড়ো পাতাটি কিন্তু তাদের অনুসরণ করে নি, হ্যাঁ, সে উপরে উড়তে লাগলো, মেঘের কাছে, তারার কাছে।


"এই যে তোমরা, দেখো দেখো, এখানকার দৃশ্যগুলো কেমন জমকালো।" বুড়ো পাতাটি তাদের ডাকে। তারা সাড়া দেয় না।
"আমি ময়লার জায়গাটি দেখতে পাচ্ছি। আমি ধোঁয়া দেখছি, কালো ধোঁয়া, সাপের মতো।" বুড়ো পাতাটি ভয়াল সুরে বলে, "উপরে আসো, ওহ্, সেকি আমি আগুন-ও দেখছি।"
"আমি তো কিছুই দেখছি না।" লালপাতাটি বলে উঠে।
হিমু কেবল শহরের ময়লাখনির বেড়াটি দেখতে পারলো। যদি-ও সে খুব খুশি, এখন সে বন্ধুদের নিয়ে খেলতে পারবে।
হঠাৎ একটি গাড়ি কাছে এসে দাঁড়ালো, আরে, ভিতরে তো হিমুর মা! গিন্নি লাবণী মনে হয় তার ছোট্ট বাবু ছেলেটাকে একা একা শহরের ময়লাখনিতে যেতে দিবে না।
"যেও না বলছি।" তিনি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললেন, "ওটা তোমার খেলার জায়গা নয়। দেখো কী ভীষণ কালো ধোঁয়া। দেখছো না?"
হিমু দেখলো লাল কৃষ্ণচূড়াপাতাটি দেয়ালের কাছে উড়ে গেলো, কিন্তু অনেক কষ্ট করে-ও সে দেয়াল পেরুতে পারছে না।
লাবণী হেঁটে গিয়ে পাতাটিকে পাকড়াও করলেন, আলতো করে তার পকেটে ভরে রাখলেন।
"এই যে, আমি তাকে ধরলাম। ও যত্নে থাকবে আমরা বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে।" তিনি বললেন।
হিমু হেসে দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে প্রবেশ করলো। সে জানলার কাছাকাছি বসে, আকাশ দেখে। না জানি বুড়ো পাতাটি কোথায় গিয়েছে। সেকি আজ রাতে মায়ের কাছে চুপটি করে ঘুমালে স্বপ্নে আসবে? হয়তোবা কোনো একদিন সে ঠিকই দেখতে যাবে যা বুড়ো পাতাটি দেখেছিলো। হয়তোবা কোনো একদিন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৪:২৭
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×