অনুচ্ছেদ 57:
(1) প্রধানমন্ত্রীর পদ শুন্য হইবে যদি-
(ক) তিনি কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন;অথবা
খ)তিনি সংসদ সদস্য না থাকেন।
(2) সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারাইলে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিবেন কিংবা সংসদ ভাংগিয়া দিবার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শদান করিবেন এবং তিনি অনুরূপ পরামর্শ দান করিলে রাষ্ট্রপতি, অন্য কোন সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নহেন এই মর্মে সন্তুষ্ট হইলে, সংসদ ভাঙ্গিয়া দিবেন।
3) প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।

অনুচ্ছেদ 58:
অন্যন্য মন্ত্রীদের পদের মেয়াদ:
1)প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন মন্ত্রীর পদ শুন্য হইবে, যদি-
(ক) তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগ পেশ করেন:
(খ) তিনি সংসদ সদস্য না থাকেন, তবে 56 অনুচ্ছেদের(2) দফার শতাংশের অধীনে মনোনীত মন্ত্রীর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য হইবে না:
(গ) এই অনুচ্ছেদের (2) দফা অনুসারে রাষ্ট্রপতি অনুরূপ নির্দেশ দান করেন; বা
ঘ)এই অনুচ্ছেদের (4) দফার যে রূপ বিধান করা হইয়াছে তাহা কার্যকর হয়।

2) প্রধানমন্ত্রী যে কোন সময়ে কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন এবং উক্ত মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হইলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে উক্ত মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাইবার পরামর্শ দান করিতে পারিবেন।
3) সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় যে -কোন সময়ে কোন মন্ত্রীকে স্বীয় পদে বহাল থাকিতে এই অনুচ্ছেদের 1) দফার (ক)(খ) ও (ঘ) উপ-দফার কোন কিছুই অযোগ্য করিবে না।
4)প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করিলে বা স্বীয় পদে বহাল না থাকিলে মন্ত্রীদের প্রত্যেকে পদত্যাগ করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে; তবে পরিচ্ছদের বিধানাবলী সাপেক্ষে তাঁহাদের উত্তরাধিকারীগন কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তাহারা স্ব স্ব পদে বহাল থাকিবেন।
5) এই অনুচ্ছেদে মন্ত্রী বলতে প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রী অন্তরভুক্ত।

অনুচ্ছেদ 58 (ক)। পরিচ্ছেদের প্রয়োগ: সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইণ 2011, 20 নং ধারা বলে বিলুপ্ত।
2 (ক)( পরিচ্ছেদ)-[নির্দলীয় তত্বাবধায়ক] সরকার সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন 2011, 21 ধারা বলে বিলুপ্ত।

অনুলিখন:constitutional law of bangladesh, uk,usa & india-prof- নাজনীন হোসেন, মোহাম্মদ শাহিনুর রহমান, জাকিয়া সুলতানা জলি- ফাইভ জুয়েল পাবলিকেশনস।

পোস্টের অবতারনা এই জন্য যে – গতকাল মন্ত্রীদের পদত্যাগের অভিপ্রায় মুলক পত্র জমাদানকে কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আসছে। সরকার পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রী বলার চেষ্টা করেছেন-‘আমরা পদত্যাগ করিনি। শুধু পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছেও দিইনি। তাই এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না।

আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- আব্দুল জলিলের ট্রাম্প কার্ড( জনৈক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বিএনপির এমপিদের মাথাপিছু এক কোটি টাকা দিয়ে কিনে পক্ষ ত্যাগ করাবেন এবং সংসদে ক্ষমতাসীনরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে। আরেকটি মিথ ছিল- বিরোধী পক্ষ রাজধানীতে দশ লাখ লোকের এক বিশাল সমাবেশ ঘটাবে যারা চারদলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত না করা পর্যন্ত শহর ত্যাগ করবে না। লোক আনার দায়িত্ব প্রশিকা নামের এনজিওকে দেয়া হয়েছে এমন একটি কথাও বাজারে বেশ প্রচলিত ছিল।) সময়ের কথা 2004 সালে 30 এ এপ্রিলকে ডেট লাইন ধরে তিনি যখন সরকারকে হুমকি দেন তখন তৎকালীন সরকার সব এমপি মন্ত্রীদের পদত্যাগ জমা নিয়েছিলেন। সেই সময়ে কিন্তু পদত্যাগ পত্র জমা নিয়ে এত কথা উঠেনি। সাংবিধানিক কথা গুলো উঠেনি।

2য় কথা সংবিধানে অনেক কিছু না থাকা সত্বেও আমরা সেটা দাবী করছি। সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচারের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ে যখন বলবৎ রায় বহাল আছে সেখানে আমরা অগ্রগণ্য দাবি হিসাবে এখনো তত্ববধায়ক সরকার চেয়ে আন্দোলন করে মানুষ মারছি। তখন কেন আইনবিদরা বলবৎ সংবিধানের দোহাই দেন না?

যখন সংবিধানের 38 অনুচ্ছেদের লংঘন করে জামাত শিবির রাজনীতি করে তখন সমস্যা হয় না?
38 অনুচ্ছেদে সংগঠনের স্বাধীনতা: সংগঠন করিবার অধিকার থাকিবে না:
ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ঠ করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় ;
খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী বর্ণ, নারী -পুরুষ , জন্ম স্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্ঠি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়;
ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।
আদালত কর্তৃক জামাতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে তাদের গঠন ও উদ্দেশ্য সংবিধান পরিপন্থি বলে। নিবন্ধন বাতিল যে কারণে সে কারণে জামাত সংঠন হিসাবেও নিষিদ্ধ হয়। অথচ আমাদের আইনবিদেরা সে দিকে দৃষ্টি দেন না। সরকারকে চাপে ফেলেন না।

প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে কি সমাধান:
বিএনপি আসলে কি চায় সেটা সব সময় অস্পষ্ট রেখেছে:
যেমন – তারা কি শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চান?
তারা কি সংসদ ভেঙ্গে যাক সেটা চান?
প্রধানমন্ত্রী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেন তাহলে অন্যমন্ত্রীরা এমনিতেই পদশুন্য হয়ে যান সেই মুহুর্তে রাষ্ট্রপতি কি করবে রুটিন কাজ চালিয়ে যাবার জন্য?
সংবিধানে টেকনোক্রেট কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়ার বিধান নেই। সে ক্ষেত্রে বিএনপির দাবী নির্দলীয় নিরপেক্ষ এবং অনির্বাচিত ব্যক্তি কি রূপে নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী হইবে সেটা বলছে না।
আবার প্রধানমন্ত্রী যদি সংসদ ভেঙ্গে দেবার কথা বলেন তাহলে আরেকটা সমস্যা হয় সেটা হলো- তখন নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে যে নির্বাচন কালীন সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেত সেটার সম্ভাবনাও নষ্ট হয়ে যায়।

বিএনপি দায়িত্বশীল দল হিসাবে নিশ্চয় সংবিধানের বাধ্যবাধকতাকে সম্মান করবে। তাই অবিলম্বে বিএনপির ও উচিত হবে সংলাপের ডাকে সাড়া দিয়ে একটা ফায়সালায় পৌঁছানো। রায় পরবর্তীতে তত্ববধায়ক পুনর্বহাল আর সম্ভব নয় সেটা বিএনপি নিশ্চয় বুঝে ফেলেছে। খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টাদের নির্বাচিত করিয়ে আনার অভিপ্রায় দেখে সেটা নিশ্চয় সবাই বুঝে থাকবেন। তত্বাবধায়ক সরকারের পুনর্বহাল কতটুকু অসম্ভব সেটা আমি আমার আগের একটি লিখায় দেখিয়েছি। পড়তে পারেন।