একজন সিএনজি টেক্সি ড্রাইবারেরও ফ্যামিলি আছে, স্কুল গোয়িং বেবী আছে, দেনা আছে, পেট আছে। আমি চাই সিএনজিও থাকুক, ওবারও থাকুক, পাঠাও থাকুক, মানুষ খেয়ে পরে চলুক। সিস্টেমের গলদ এবং আমাদের সার্বিক অসচেতনতা সিএনজিওয়ালাদেরকে বেপরোয়া ভাড়া চাওয়ার দিকে ধাবিত করেছিলো। এখন সব দোষ হিরের আংটি চোরকে দিয়ে লাভ নেই। যিনি এহেন আংটি জায়গা বেজায়গায় রেখে আসেন তারও দায় আছে।
আমি অনেক টেক্সিওয়ালার সাক্ষাৎকার নিয়েছি - ফলাফল নিম্নে দেয়া হলো :
১। জমার পরিমাণ সরকার নির্ধারিত থেকে বেশি নেয় মালিকেরা। কারণ টেক্সি ড্রাইবারের অভাব নেই। সাপ্লাই এন্ড ডিমান্ড গ্যাপ। একজন ড্রাইবারের টেক্সি দরকার। বেকার থাকার চেয়ে সে বেশি জমায় টেক্সি চালাতে জমার বিষয়ে মুখ খোলতে নারাজ।
২। কোন কোন মালিক দুই শিফ্ট এ ভাড়া দেয় । এক শিফট গাড়ি চালিয়ে জমা এবং নিজের খরচ উঠিয়ে নেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
৩। কিছু কিছু ক্ষেপ খুব লাভবান হলেও কিছু কিছু জায়গায় তীব্র জানজটে এক ক্ষেপেই ৩ ঘন্টা পার হয়ে যায়।
৪। এক শিফট এ ১০ টি ক্ষেপ মারা সম্ভব হয় না। এক একটা ক্ষেপে এভারেজ ১৫০ টাকা হলে ভাড়া হয় ১৫০০ টাকা। যেখানে মালিককে দিতে হয় প্রায় ১ হাজার টাকার উপরে (পুরা দিনের হিসাবে)। এক একটা ক্ষেপের সময় ১ ঘন্টা করে হলে ১০ ঘন্টা টেক্সি চালাতে হয়। নিজের খাওয়া, বউয়ের খাওয়া সব মিলিয়ে তাদের কখনো ফ্লাট কেনার মতো পয়সা হয় না।
এনার্জি রেগুলেটরী বলেন, লাক্স সাবান বলেন, হরলিক্স বলেন , ডায়গোনেসিস সেন্টার বলেন, ডাক্তার/ উকিলের চেম্বার বলেন সবাই আপনার থেকে অসঙ্গতিমুলক দাম নেয়। শিক্ষক /ডাক্তার /প্রকৌশলীরা যখন আন্দোলন করে তখন আমরা আন্দোলনের যৌক্তিকতা খুঁজি না। কিন্তু অশিক্ষিত প্রান্তিক গরীব সিএনজি ড্রাইবার যখন আন্দোলন করে তখন আমাদের এলিটীয় ইগুতে আঘাত লাগে। বেটা অশিক্ষিত তুই আবার কিসের আন্দোলন করিস? এতদিন বেশি দাম নিয়ে জিম্মি করে পেন্ট পরা ভদ্রলোকের ঐ দিকে যাওয়ার আদেশ অমান্য করে যাবিনা কস? তমা কোম্পানীর এসি টেক্সি যখন আপনার ডেসটিনেশনে না যায় তখন আমরা স্বাভাবিক ভাবে নিই।
সরকার মিটার দিয়েছিলো কিন্তু সেটার সাথে মিশাসওদাগরকেও ঢুকিয়ে দিয়েছিলো - সেটা হলো ওয়েটিং ভাড়া পার মিনিট ২ টাকা। এখন ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় শতাব্দী সেরা যানজট হয় । কোন যাত্রী হাগল হলেই সে মিটারে যেতে রাজী হতো।
একজন টেক্সী ড্রাইবারও কারো না কারো পিতা, দিনশেষে তাকেও কিনে নিতে হয় জিলাপী অথবা ছোট মেয়ের জন্য লেইস ফিতা। ঢাকা শহরের ধুলাবালি, ট্রাফিকের ঘুষি, স্ট্যান্ডের চাঁদা একসিডেন্টের ঝুঁকি তাকেও বুক ভরে নিতে হয়।