somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটিবার ভেবে দেখুন...

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে তাকালে আমরা অবাক হতে বাধ্য হই। মানুষ তার শ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে কত সুন্দর আর আরামদায়ক করে তুলেছে তার জীবনকে। অথচ এই মানুষেরই আদি পুরুষগণ সামান্য আগুন জ্বালাতেও জানতেন না। জীবন কাটাতেন খোলা আকাশ, উন্মুক্ত প্রান্তর কিংবা পাহাড়ের গুহায়। রোদ, বৃষ্টি, শীত, গ্রীষ্ম তাদের জীবনকে অসহায় করে তুলত। কিন্তু সেই মানুষই আজ প্রায় সব সীমাবদ্ধতাকে আয়ত্ত্বে নিয়ে এসেছে। শীতকে নিবারণের জন্য বৈদ্যুতিক হিটার, গরমকে সামাল দেওয়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র আবিষ্কার করেছে। খাদ্যকে অধিককাল তরতাজা রাখার জন্য বানিয়েছে রেফ্রিজারেটর। রান্নার জন্য লাকড়ির প্রয়োজনীতা আজ অনেকটাই কমে গেছে। ধোঁয়া-কালির ঝামেলা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেয়ে গেছে মানুষ। গ্যাসের চুলোয় রান্না হচ্ছে বড় বড় ঘনবসতিপূর্ণ নগরীগুলোর উঁচু উঁচু ভবনে। আবার অনেক ক্ষেত্রেই ইলেক্ট্রিক চুলোয় দ্রুত সেরে ফেলা যাচ্ছে রান্না-বান্নার কাজ। অথচ মানুষ যদি লাকড়ির উপর এখনও নির্ভর করতো তবে প্রতিটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলো কালো কালিতে ছেয়ে থাকত। দিনের বেলায়ও বিরাজ করতো ধোঁয়ার রাজত্ব। সুস্বাদু খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হলুদ, মরিচ ইত্যাদি নানা মশলাপাতি গুঁড়ো করার জন্য আগের দিনের মত দরকার হচ্ছে না শিল পাটা। ফলের জুস তৈরিতে একটি ব্লেন্ডার মেশিনই যথেষ্ট। কাপড় ধোয়া ও শুকানোর কাজ সেরে ফেলা যাচ্ছে ওয়াশিং মেশিন দিয়েই। যে খাদ্য খেয়ে মানুষকে জীবন ধারণ করতে হয় তাও আজ প্রযুক্তির কল্যাণে সহজে রোপন, পরিচর্যা, পরিপক্ক হয়ে গেলে তা কর্তন এবং খাওয়ার জন্য উপযোগী করে তোলা সম্ভব হচ্ছে।

আগে যেখানে মানুষ দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য পায়ের হাঁটার উপর নির্ভর করতো সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে যাওয়া আসা করতে পারছে প্রযুক্তির কল্যাণে। বাস, ট্রাক, লঞ্চ, রেলগাড়ি ইত্যাদি পরিবহন কাছের যাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার সাগর মহাসাগর পাড়ি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদি। মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পাড়ি দিতে পারছে মহাদেশ থেকে মহাদেশ। পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য রানারের প্রয়োজন হারিয়ে গেছে। মুহূর্তেই টেলিফোন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে পৃথিবীর দুর্গম অঞ্চলগুলোতেও। সেই সাথে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে যেকোন স্থান হতে।

মানুষের দু’হাতের এই শ্রম পৃথিবীকে উপহার দিয়েছে সুন্দর নগর-বন্দর। দিয়েছে বিশাল ও মনোরম অট্টালিকা ও প্রমোদ উদ্যানসমূহ। যোগাযোগের জন্য সুন্দর সুন্দর সেতু আর সে দিনের অলংঘনীয় পাহাড় চিরে তৈরি করেছে মনোরম রাস্তা। এইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ ও উভভোগ্য করে তুলেছে। এ সকল দানকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর সব মানুষের জীবনকে আরো উপভোগ্য করে তোলা কোনভাবেই অসম্ভ নয়। কিন্তু আমাদের বাস্তবিক অবস্থাটা কি? এত কিছু অর্জনের পরেও আমরা জীবনের অন্য একটি দিক দিয়ে এই সুখ ও সম্ভাবনার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছি। নানা ধরনের বিভেদ-ব্যবধান, যেমন ধর্মীয় বিদ্বেষ, জাতীয়তা, ভাষা ও বর্ণের ব্যবধান তুলে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছি। যে বিজ্ঞান আমাদেরকে সুন্দর জীবন দিতে সক্ষম তারই সাহায্য নিয়ে আমরা বিভিন্ন মারণাস্ত্র তৈরি করেছি। এই মারণাস্ত্রের সম্মিলিত ধ্বংসক্ষমতা এতটাই মারাত্মক যে তা পৃথিবীকে বহুবার ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

আমাদের মধ্যে চলছে ব্যক্তিতে ব্যক্তিকে দ্বন্দ্ব, দলে দলে সংঘাত আর মতপার্থক্য। প্রতিটি ধর্মীয় স¤প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করছে শত্র“তা। বহু দেশের সীমানা নিয়ে চলছে যুদ্ধ। পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট কিছু কিছু দেশ অবস্থান করছে পরস্পর পরস্পরের মুখোমুখি। এদের সকলের হাতেই আবার রয়েছে পারমাণবিক বোমার মজুদ। যদি কোন কারণে তাদের মধ্যে সংঘাত বেধেই যায় তবে সে সব অস্ত্র তারা ব্যবহার করেই ফেলতে পারে। ইতোমধ্যে অবশ্য তার ব্যবহার করেনি এমন নয়। কিন্তু সে সময় আর আজকের সময় এক নয়। আজ অনেক দেশের হাতেই এসব অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। আজকে যদি কেউ একবার এর ব্যবহার করেই বসে তবে অর্ধেক পথ অতিক্রম করার আগে প্রতিপক্ষও তার অস্ত্র ছুঁড়ে দেবে। এর ফলে পুরো মানবজাতি আত্মহত্যায় নিমজ্জিত হবে। অথচ মানবজাতি যদি তার উন্নতির দিকে তাকিয়ে, তার হাজার হাজার বছরের শ্রম আর অধ্যবসায়ের কথা স্মরণ করে এ সকল সংঘাত ও বিভেদ-ব্যবধানকে পরিত্যাগ না করে তবে কোটি মানুষের সব শ্রম, সব আত্মত্যাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে ধূলিস্মাত হয়ে যাবে। আমাদের কি তাদের ঐ কৃতিত্বকে ধ্বংস করার অধিকার রাখি?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×