আমি সে ব্যক্তি ভবিষ্যতে যে ইতিহাস বর্ণনা করবে এই বলে যে- "আমাদের গুটিকয় মানুষের চোখের সামনে একটি দেশের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সমস্ত প্রকিয়াটি অবলোকন করেছি। আমরা গুটিকয় সেই ব্যক্তি যারা তখনি বুঝতে পেরেছিলাম যে দেশের কিছু বুদ্ধিভ্রষ্ট বুদ্ধিধারীরা আমাদেরই চোখের সামনে তাদের ক্ষুরধার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ক্রমাগত দেশের কবর রচনা করে যাচ্ছিল। আমরা তখন বড় অসহায় ছিলাম। আমরা বার বার তাদেরকে সাবধান করেছিলাম এই বলে যে তোমরা আজ যে কবর রচনা করছ সেই কবরেই তোমাদের স্থান হবে। সাথে নিয়ে যাবে আমাদেরও। কিন্তু আমরা সংখ্যায় কম ছিলাম বলে তাদেরকে দেশের কবর রচনার হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি। পারিনি নিজেদেরকেও বাঁচাতে। দেশ নিয়ে আদৌ তাদের কোন দায়-দায়িত্ব ছিল না। তাদের অনেকেই দেশের প্রতি কোন দায়িত্ব না নিয়ে 'এই দেশ আমার নয়' বলে বিদেশে চলে গিয়েছিল। বিদেশে বসেই তারা দেশকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত তাদের আঘাত হেনে যাচ্ছিল।
এদেশীয়দের অধিকাংশ মানুষও তখন অতি আনন্দের সাথে সেই কবর রচনায় কোদাল-শাবল চালাচ্ছিল। গণপিটুনিতে চোর-ডাকাতের গায়ে আঘাত করে যেমন যে কেউ হাতের সুখ মেটায় তেমনি তারাও এতে অংশ নিয়ে সমান আনন্দ পেয়েছিল। কেউবা রসিয়ে রসিয়ে খুঁচাচ্ছিলো, কেউবা চিপা-চাপা দিয়ে আঘাত করছিল। আমরা বার বার বলছিলাম তোমরা সংযত হও, মানুষটা (দেশটা) মরে যাবে। কিন্তু তারা সংযত হয়নি।
দেশ নিয়ে তাদের শংকা ছিল না। বিদেশে তাদের প্রত্যেকেরই নিরাপদ আবাস ছিল। তাদের মন্ত্রণায় এদেশে যারা বিপুল শক্তি-সামর্থ নিয়ে কবর রচনা করছিল তারাও ছিল শংকামুক্ত। কারণ তাদেরও প্রত্যেকের বিদেশে সেকেন্ড হোম প্রস্তত ছিল। অতপর যা হওয়ার তাই হয়েছে।"
হ্যাঁ, আমাদেরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা রাজনীতি এবং এতে ইন্ধন দেওয়া রাজনীতিক ও তাদের দোসর মিডিয়াসমূহের কথাই বলছি। তারা ক্রমাগত বিভক্তি ঘটিয়ে আমাদের শক্তিকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। দেশকে পবিত্র করার নামে তারা কম্বলের লোম বাছাই করে কম্বলের অস্তিত্বকে বিপন্ন করার মত দেশকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিচ্ছে। আমরা যখন বলছি আমাদের দেশ বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে- তখন তারা আমাদেরকে 'খামোশ! চুপ রাহো' বলে থামিয়ে দিচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই আমরা একটা উন্মত্ততা দেখতে পাচ্ছি। জিঘাংসায় তাদের চোখ থেকে আগুন ঠিকরে বের হতে দেখছি। একে অপরকে নির্মূল করার প্রত্যয়ে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এখন তারা এতদূর চলে এসেছে যে তাদের ফেরার আর কোন লক্ষণ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে আসলে যেমন সেই তীর আর ফিরে আসা সম্ভব নয় তেমনি পারস্পরিক দ্বন্দ্বে তাদের মুখ থেকে এমন কথা বেরিয়ে সম্পর্কের অবনতি এতটাই ঘটেছে যে তা আর জোড়া লাগার কোন উপায় নেই। এখানে শেষ নয়- উভয় পক্ষের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এই দ্বন্দ্ব চালিয়ে যেতে পারে তার প্রশিক্ষণ চলছে।
কোন এক সময় আমি অথবা আমার মত কেউ বেঁচে থাকলে তারা বর্তমানে ঘটে যাওয়া এই কথাগুলো ইতিহাস আকারে বলতে পারবে। যেভাবে আমরা বিভক্ত হচ্ছি, জাতীয় ঐক্য ভেংগে খান খান হচ্ছে তাতে বলা এটা ঘটার সম্ভাবনা শতভাগ। যদি আমাদের এই আশংকাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে হয় তবে এই ধ্বংস প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে। এদেশ নিয়ে যাদের ন্যূনতম ভালোবাসা আছে, ভালোবাসা না থাকুক অন্তত যারা মনে করে দেশে ছেড়ে গিয়ে অন্য কোথাও ঠাঁই পাবে না বাধ্য হয়ে তাদের উচিত এদেরকে নিবৃত্ত করা। বিভক্তির হাত থেকে দেশটাকে বাঁচানো। চেতনা ফিরবে কি কারো? নাকি পক্ষ নিয়ে হাতের সুখ মেটানোর চেষ্টা করে যাবেন? মনে রাখবেন সাময়িক সুখ কখনো কখনো দীর্ঘ যাতনারও জন্ম দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১:৩৪