somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিজিটালের ডিজি ধরে টানাটানি- রয়ে গেছে শুধু টাল (টাল বাংলাদেশ)

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এই সরকার গত নির্বাচনের আগের নির্বাচনে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়ে নির্বাচিত হয়। বিশেষ করে তরুণরা ডিজিটাল শব্দটি দ্বারা ব্যাপক প্রভাবিত হয়। দেশকে ডিজিটাল করণে প্রথম প্রথম ভালো করার পরও সাম্প্রতিক সময়ে এসে মনে হয় সরকার ডিজিটালের প্রথম অংশ বাদ দিয়ে শেষ অংশ অর্থাৎ টালটাকে ধরে নিয়ে বিশেষভাবে টাল হয়ে পড়েছে। বাংলায় ‘টাল’ বলতে সাধারণত মাথা খারাপ, উল্টোপাল্টা আচরণকেই বুঝিয়ে থাকে। মাতালদের বেশি করে মদ খাওয়ার প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ মাতলামীর ক্ষেত্রেই সাধারণত আমরা এই শব্দটাকে ব্যবহার করে থাকি।

ইন্টারনেট নির্ভরতা অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকেই মূলত আমরা ডিজিটাল হওয়া বলে বুঝে থাকি। তথ্যপ্রযুক্তি মানেই হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি। বাংলাদেশের মানুষ ডিজিটাল হওয়ার পর কি উন্নতি প্রাপ্ত করেছে? সেদিকে তাকাতে গেলে বলতে হয় যোগাযোগব্যবস্থায় তারা ব্যাপক উন্নতি করেছে। যে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে আজকের ২০১৫ সালেও টেলিফোন যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না সেখানে আজকে সেখানে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে। যত্রতত্র প্রায় সবার সাথে থাকছে একটি মোবাইল ফোন সেট। নেটওয়ার্কের বাইরে যাওয়াই আজ মুশকিল। তার টানাটানি, লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। টিএন্ডটি লাইন যেখানে কোন কারণ ছাড়াই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেখানে বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বর্তমান সময় শুধু মোবাইল ফোনে কথা বলা ও যোগাযোগের সুবিধার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সাথে সাথে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত থাকার জন্য একই নেটওয়ার্কের সাথে ইন্টারনেট সংযোগ বিদ্যমান। বিশেষ করে দেশে থ্রি-জি নেটওয়ার্ক যুক্ত হওয়ার পর পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের যে কারো সাথে সংযুক্ত হওয়া, সংবাদ জানা, তথ্য আদান-প্রদান ইত্যাদি অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে গেছে। সহজে যোগাযোগ করার জন্য, অডিও-ভিডিও কল করার জন্য বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে। টুইটার, ফেসবুকের মত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পৃথিবীর একপ্রান্তের মানুষের সাথে অপরপ্রান্তের মানুষের মেলবন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন বাংলা ব্লগের কল্যাণে সাধারণ মানুষ তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে। যা থেকে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে সাধুবাদ ও ভুলত্রুটির সমালোচনা উঠে আসছে। এসব থেকে সরকারের জন্য গণমানুষের মতামত, পরামর্শ ও আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হওয়ার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার জন্য খরচও প্রায় হাতের নাগালে। তবে ইন্টারনেটের মূল্য বাইরের দেশের মত আমাদের দেশে অত সস্তা নয়- যা নিয়ে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ আছে।

সময়ের চাহিদা মোতাবেক অন্য কোন সরকার ক্ষমতায় থাকলেও একই ধরনের উন্নতি ও সুবিধা পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আপাতত আমরা দেশকে ডিজিটালাইজড করার পেছনে ক্ষমতাসীন সরকারকেই ক্রেডিট দিতে রাজী আছি। কিন্তু ইদানীং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও নিরাপত্তার অজুহাতে অনলাইন জগতকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সরকার অবশ্যই অনলাইন অপরাধ, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেগুলোকে পুরোপুরি ব্লক করে দিতে হবে। মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোন চিকিৎসা নয়। বরং মাথা ব্যথার ওষুধ খেতে হবে। কিন্তু ডিজিটাল সরকারের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা মাথা কেটে ফেলতেই উৎসাহী। যাই হোক, কিছুদিন আগে সরকারি সিদ্ধান্তে বহুল ব্যবহৃত কিছু ওয়েবসাইট ও এ্যাপ্লিকেশন বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু কর্মকাণ্ড ঘটে যায় যা নিয়ে সরকারে ডিজিটালিত্বের দুর্দশা ফুটে উঠে। তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হাস্যরসের খোরাক যোগায়।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাসিঁর দণ্ডপ্রাপ্ত দুইজন অপরাধীর দণ্ড কার্যকর করার সময় যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থির সৃষ্টি না হয় সে জন্য গত আঠারো নভেম্বর সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ফেসবুকসহ কিছু যোগাযাগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার। কিন্তু হাস্যকর বিষয় এই যে এর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরো দেশের ইন্টারনেট সংযোগই বন্ধ করে দেয়। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক সেটা বন্ধ থাকার পর আবার খুলে দিলেও খোলা পাওয়া যায়নি ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসএ্যাপ এর মত জনপ্রিয় এ্যাপগুলো। আবার ১০ই ডিসেম্বর ফেসবুক খুলে দিলেও বন্ধ থাকে অন্যান্য এ্যাপসগুলো। এদিকে গত ১৩ ডিসেম্বর বন্ধের তালিকায় যুক্ত করা হয় আরো কিছু যোগাযোগ মাধ্যম যার সাথে ছিল বহুল ব্যবহৃত অডিও-ভিডিও ও চ্যাটিং এ্যাপ স্কাইপি। স্কাইপি এমন এক যোগাযোগ মাধ্যম যার সাথে জড়িত এদেশের শিক্ষিত তরুণদের স্বাধীন জীবীকা ফ্রিল্যান্সিং। সাধারণত স্কাইপির মাধ্যমেই বিদেশি ক্রেতাদের কাজে নির্দেশনা চাওয়া ও তাদের চাহিদার ব্যাপারে জানতে হয়। ইন্টারনেট খরচ বাদে অতিরিক্ত কোন খরচ ছাড়াই পৃথিবীর যে কোনো স্কাইপি ব্যবহারকারীর সাথে এর দ্বারা বিনামূল্যে কথা বলা যায়। হঠাৎ করে সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তরুণদের মাথায় বাজ পড়ে যায়। আবার এর একদিন পরেই (আজকে) সেটা খুলে দেওয়া হয়েছে। সংবাদে জানা গেছে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম টুইটার বন্ধ করার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা না থাকলেও সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে আবার পূর্বে বন্ধ থাকা সব এ্যাপস একসাথে খুলে দেওয়া হয়েছে।

আসলে যে ধরনের নিদের্শনা আসে এবং সেগুলো যারা বাস্তবায়ন করে তাদের মধ্যে অসামঞ্জস্যতার ভুলভালের কোন শেষ নেই। কোন এ্যাপটা বন্ধ করা যাবে না কিংবা বন্ধ করলেও সেটাকে চালু করে দিতে সাথে সাথে বাধ্য হতে হবে সে জ্ঞান সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের আছে কি না সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। সরকার চায় দেশকে ডিজিটাল করতে, কিন্তু যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন তারা নিজেরাই ডিজিটাল কি জিনিস তা বুঝেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টির অবকাশ আছে। আর কোন একটা সাইট বন্ধ করে দিলেই সেটা শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে রাখা যাবে না এ সম্বন্ধে তাদের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব আছে। ইচ্ছে করলে সামান্য সচেতন ব্যবহারকারীই অনলাইনে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার প্রক্সি সার্ভার বা ভিপিএনের সাহায্যে বন্ধ করে দেওয়া সাইটগুলো অনায়াসে ব্যবহার করতে সক্ষম। সে সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতা সুস্পষ্ট।

সুতরাং দেশকে ডিজিটাল করে এখন সেখান থেকে পিছু হটার কোন সুযোগ নেই। বরং উচিত ডিজিটাল বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নকে কাজে লাগিয়ে যাতে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু না করা যায় সে জন্য সরকারের কর্মকর্তাদেরকে ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেওয়া। সরকারের বহু কর্মকর্তা আছেন তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে যাদের জ্ঞান মান্দাতার আমলের পর্যায়ে পড়ে রয়েছে। যারা সত্যি সত্যি অপরাধপ্রবণ তাদের বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে তারা তেমন কিছু করতে সক্ষম নয়। আর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপারে যারা পদক্ষেপ নেন, বিশেষ করে মাথার ব্যথায় মাথা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তাদেরকেও আরো সময় উপযোগী প্রজ্ঞা অর্জন করতে হবে। মনে রাখতে হবে পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া এ জগতকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আর পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার মানে হচ্ছে আদি যুগে ফিরে যাওয়া কিংবা চোরের ভয়ে কাজ ফেলে দুয়ার বন্ধ করে বসে থাকার মত অবস্থা। তাই হাস্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আবার তা থেকে পিছু হটার আগে কিংবা সেগুলো বাস্তবায়ন করার সময় একটা বন্ধ করতে গিয়ে আরেকটা বন্ধ করে ফেলা সম্বন্ধে সতর্ক হওয়া। এ ধরনের কর্মকাণ্ড তথ্যপ্রযুক্তি সচেতন তরুণদেরকে ভালো বিনোদন বৈ অন্যকিছু দেও না। তাদের কাছে ডিজিটালের উল্টো যাত্রা কিছুতেই কাম্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×