somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাফারি পার্ক, সাফারি কালচার ও আমরা

৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"সাফারি পার্ক" বিষয়টার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বা ডিস্কভারি টাইপ চ্যানেলের মাধ্যমে। এখন সাফারি পার্কের কথা মনে হলেই মাথায় আসে সেই চেনা দৃশ্য - খাঁচাসদৃশ সুরক্ষিত যানবাহনে করে বন্যপ্রানী দেখতে বেরিয়েছে একদল পর্যটক আর তার চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে বাঘ-সিংহ-জিরাফ। সাফারি পার্কের কনসেপ্টটাই আসলে এমন। পার্ক তৈরি হবে বন্যপ্রানীদের অরিজিনাল বাসস্থানের আদলে - তাদের মনে হবে যেন তারা জঙ্গলেই আছে। নিজেদের অভয়ারণ্যেই আছে। আর মানুষ থাকবে তাদের সুরক্ষিত খাঁচা বা যানবাহনের মধ্যে - চিড়িয়াখানার বিপরীত অবস্থা। সাফারি (Safari) শব্দটা ইংরেজী ভাষায় ঢুকেছে বিদেশি ভাষা হিসেবেই যার উৎপত্তি আফ্রিকান সোয়াহিলি শব্দ সফর (Safar) থেকে যেটা আবার এসেছে আরবী ভাষা থেকে যার অর্থ ভ্রমন। সাফারি (Safari) শব্দটার আভিধানিক অর্থ বন্যপ্রানীকে তাদের আবাসস্থলে (বিশেষ করে আফ্রিকায়) দেখার বা শিকারের জন্য অভিযান। বোঝা যাচ্ছে সাফারি পার্কের কনসেপ্টের সাথে আফ্রিকা বা আফ্রিকার জঙ্গলের একটা যোগসূত্র রয়েছে। তবে আফ্রিকার বাইরে মানুষের জন্য উন্মুক্ত প্রথম সাফারি পার্ক তৈরি হয় ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের লংলিট সাফারি এন্ড এডভেঞ্চার পার্ক যেটার আইডিয়া আসে জিমি সিপারফিল্ড নামের এক ভদ্রলোকের মাথা থেকে। এখন বিশ্বের অনেক দেশেই বিভিন্ন আদলে সাফারি পার্ক গড়ে উঠেছে। এসব সাফারি পার্কে বন্যজীবজন্তুর পাশাপশি অন্যান্য বিনোদনমুলক ব্যবস্থাও থাকে, যেমন - মেলা, গল্ফ কোর্স, রেস্টুরান্ট ইত্যাদি। বাংলাদেশেও সরকারীভাবে দুটি সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে; একটি কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলায় ডুলহাজরা সাফারি পার্ক, অপরটি ঢাকার অদুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। দেশে দু'টি মাত্র সাফারি পার্ক থাকলেও সাফারি কালচার গড়ে উঠেছে সারা দেশজুড়েই।

বাঙ্গালি বাঘের জাতি - সেটাও যেন তেন বাঘ নয়, পৃথিবীবিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যদিও নিন্দুকেরা বলে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমতির দিকে কিন্তু মন্ত্রীমহোদয় আশ্বাস দিয়েছেন বাঘমামারা দাদাদের দেশে বেড়াতে গেছে, ভ্রমন শেষ হলেই তারা আবার স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। কারন যাই হোক, সুন্দরবনে এখন বাঘ কম দেখা যায় এটা পন্ডিতরা মানেন। কিন্তু সারাদেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারা ধারলো নখ-দন্ত নিয়ে দিনে রাতে চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, একে আঁচড় দেয়, ওকে কামড় দেয়। এতে মানুষ নামের নিরীহ প্রাণীর চলাচলে সামান্য সমস্যা দেখা দেয়। তো সরকার বাহাদুর দেখলেন এই নিরীহ মানুষদের বাঘের হাত থেকে বাঁচানো দরকার। ব্যবস্থা হলো খাঁচার। নিরীহ মানুষগুলো হিংস্র বাঘের হাত থেকে বাঁচার জন্য থাকবে সিএনজি-অটোরিক্সাসদৃশ খাঁচার মধ্যে আর বাঘ তার শিকার খুঁজে বেড়াবে নগর নামক অভয়ারন্যে। মাঝে একবার বন্যজন্তুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমদানি হয়েছিল বিশেষ ধরনের তালা - "সাহারা তালা"। কারন হিংস্রপ্রানী নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা কারো নেই।

সাফারি কালচারের আরেকটা শিকার এদেশের নারী সমাজ। চারিদেকে হায়েনার দল হাহা হিহি করে ছুটে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই তারা নারীদের উপর আক্রমন করে ভয়াল থাবা নিয়ে। তাই সমাজপতিরা নিদান দিলেন, "নারী, তুমি অন্দরে থাকো, বাইরে বের হলেও থাকবে খাঁচার মধ্যে যেন হায়েনাগুলো তোমাকে দেখে প্রলু্ব্ধ না হয়।" দুর্ভাগ্যক্রমে কেউ কোনো হায়েনার থাবার শিকার হলে বলবে, নারী, তোমারই দোষ, তুমিই নিশ্চয়ই হায়েনাটাকে উস্কানি দিয়েছো। কারন হায়েনাকে বসে আনার মন্ত্র সমাজপতিদের জানা নেই।

সাফারি কালচারের সর্বশেষ শিকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ ঘোষনা দিয়েছেন সন্ধ্যার পরে যেনো নিরীহ মানুষগুলো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না অবস্থান করে, কারন শুধু সন্ধ্যা নয় দিনরাত সবসময় সেখানো ঘুরফিরা করে হিংস্র জীবজন্তুগুলো। এসব হিংস্র জানোয়ারদের হাত থেকে সাধারান মানুষকে বাঁচানোর মত যথেষ্ঠ শক্তি তাদের নেই কাজেই সাফারি কালচারই ভরসা।
--------------- জয়তু সাফারি কালচার -------------
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×