"সাফারি পার্ক" বিষয়টার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বা ডিস্কভারি টাইপ চ্যানেলের মাধ্যমে। এখন সাফারি পার্কের কথা মনে হলেই মাথায় আসে সেই চেনা দৃশ্য - খাঁচাসদৃশ সুরক্ষিত যানবাহনে করে বন্যপ্রানী দেখতে বেরিয়েছে একদল পর্যটক আর তার চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে বাঘ-সিংহ-জিরাফ। সাফারি পার্কের কনসেপ্টটাই আসলে এমন। পার্ক তৈরি হবে বন্যপ্রানীদের অরিজিনাল বাসস্থানের আদলে - তাদের মনে হবে যেন তারা জঙ্গলেই আছে। নিজেদের অভয়ারণ্যেই আছে। আর মানুষ থাকবে তাদের সুরক্ষিত খাঁচা বা যানবাহনের মধ্যে - চিড়িয়াখানার বিপরীত অবস্থা। সাফারি (Safari) শব্দটা ইংরেজী ভাষায় ঢুকেছে বিদেশি ভাষা হিসেবেই যার উৎপত্তি আফ্রিকান সোয়াহিলি শব্দ সফর (Safar) থেকে যেটা আবার এসেছে আরবী ভাষা থেকে যার অর্থ ভ্রমন। সাফারি (Safari) শব্দটার আভিধানিক অর্থ বন্যপ্রানীকে তাদের আবাসস্থলে (বিশেষ করে আফ্রিকায়) দেখার বা শিকারের জন্য অভিযান। বোঝা যাচ্ছে সাফারি পার্কের কনসেপ্টের সাথে আফ্রিকা বা আফ্রিকার জঙ্গলের একটা যোগসূত্র রয়েছে। তবে আফ্রিকার বাইরে মানুষের জন্য উন্মুক্ত প্রথম সাফারি পার্ক তৈরি হয় ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের লংলিট সাফারি এন্ড এডভেঞ্চার পার্ক যেটার আইডিয়া আসে জিমি সিপারফিল্ড নামের এক ভদ্রলোকের মাথা থেকে। এখন বিশ্বের অনেক দেশেই বিভিন্ন আদলে সাফারি পার্ক গড়ে উঠেছে। এসব সাফারি পার্কে বন্যজীবজন্তুর পাশাপশি অন্যান্য বিনোদনমুলক ব্যবস্থাও থাকে, যেমন - মেলা, গল্ফ কোর্স, রেস্টুরান্ট ইত্যাদি। বাংলাদেশেও সরকারীভাবে দুটি সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে; একটি কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলায় ডুলহাজরা সাফারি পার্ক, অপরটি ঢাকার অদুরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। দেশে দু'টি মাত্র সাফারি পার্ক থাকলেও সাফারি কালচার গড়ে উঠেছে সারা দেশজুড়েই।
বাঙ্গালি বাঘের জাতি - সেটাও যেন তেন বাঘ নয়, পৃথিবীবিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। যদিও নিন্দুকেরা বলে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমতির দিকে কিন্তু মন্ত্রীমহোদয় আশ্বাস দিয়েছেন বাঘমামারা দাদাদের দেশে বেড়াতে গেছে, ভ্রমন শেষ হলেই তারা আবার স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করবে। কারন যাই হোক, সুন্দরবনে এখন বাঘ কম দেখা যায় এটা পন্ডিতরা মানেন। কিন্তু সারাদেশে বাঘের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তারা ধারলো নখ-দন্ত নিয়ে দিনে রাতে চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, একে আঁচড় দেয়, ওকে কামড় দেয়। এতে মানুষ নামের নিরীহ প্রাণীর চলাচলে সামান্য সমস্যা দেখা দেয়। তো সরকার বাহাদুর দেখলেন এই নিরীহ মানুষদের বাঘের হাত থেকে বাঁচানো দরকার। ব্যবস্থা হলো খাঁচার। নিরীহ মানুষগুলো হিংস্র বাঘের হাত থেকে বাঁচার জন্য থাকবে সিএনজি-অটোরিক্সাসদৃশ খাঁচার মধ্যে আর বাঘ তার শিকার খুঁজে বেড়াবে নগর নামক অভয়ারন্যে। মাঝে একবার বন্যজন্তুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমদানি হয়েছিল বিশেষ ধরনের তালা - "সাহারা তালা"। কারন হিংস্রপ্রানী নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা কারো নেই।
সাফারি কালচারের আরেকটা শিকার এদেশের নারী সমাজ। চারিদেকে হায়েনার দল হাহা হিহি করে ছুটে বেড়াচ্ছে। সুযোগ পেলেই তারা নারীদের উপর আক্রমন করে ভয়াল থাবা নিয়ে। তাই সমাজপতিরা নিদান দিলেন, "নারী, তুমি অন্দরে থাকো, বাইরে বের হলেও থাকবে খাঁচার মধ্যে যেন হায়েনাগুলো তোমাকে দেখে প্রলু্ব্ধ না হয়।" দুর্ভাগ্যক্রমে কেউ কোনো হায়েনার থাবার শিকার হলে বলবে, নারী, তোমারই দোষ, তুমিই নিশ্চয়ই হায়েনাটাকে উস্কানি দিয়েছো। কারন হায়েনাকে বসে আনার মন্ত্র সমাজপতিদের জানা নেই।
সাফারি কালচারের সর্বশেষ শিকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ ঘোষনা দিয়েছেন সন্ধ্যার পরে যেনো নিরীহ মানুষগুলো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে না অবস্থান করে, কারন শুধু সন্ধ্যা নয় দিনরাত সবসময় সেখানো ঘুরফিরা করে হিংস্র জীবজন্তুগুলো। এসব হিংস্র জানোয়ারদের হাত থেকে সাধারান মানুষকে বাঁচানোর মত যথেষ্ঠ শক্তি তাদের নেই কাজেই সাফারি কালচারই ভরসা।
--------------- জয়তু সাফারি কালচার -------------
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৪৪