বাবা!
মা, বাবার আদর কিরকমের হয় মা? মা, আমি বাবাকে দেখিনা কত বছর হলো মা? মা, বাবাকি আমাকে খুব ঘৃনা করতো? তাহলে বাবা এতদিন দেশের বাইরে কি করে? আমাকে কি একবারো দেখতে ইচ্ছে হয়না তার? এই প্রশ্নগুলো মাকে করতে গিয়েও আবার থেমে যাই। কারন আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। আমি এখন চাইনা বাবা নামের সেই ব্যক্তির কথা জানতে চেয়ে মাকে কোন কষ্ট দিতে। আমি জানি আমার বাবা নামের সেই মানুষটি একদিন হয়তো ফিরে আসবে। কিন্তু সময়টা আর আগের জায়গায় ফিরে যাবেনা। যেই বয়সে ছেলেরা তাদের বাবার কাধে চরে স্কুলে যেত, আমি ঠিক সেই বয়সে বড় ভাইয়ের হাত ধরে স্কুলে যেতাম। স্কুলের সকল পরিক্ষার সময় প্রায় সবার বাবাই স্কুলে ছেলেদের নিয়ে আসতেন। কিন্তু আমি ছিলাম একা। আমরা চার ভাইবোন। দুইবোন সবার বড়। তারপর আমার বড়ভাই আর সবার ছোট আমি। আমার বাবার প্রথমে ছেলে সন্তান না হওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। সংসার থেকে বেশ উদাশীন হয়ে পড়েছিলেন। পরপর দুই মেয়ের পর যখন তার প্রথম ছেলে সন্তান জন্ম নিলো তখন সে খুব খুশি হয়েছিলো। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই আবার আগের মত উদাশীন হয়েই চলতে লাগলেন। তারপর আবার জন্ম নিলাম আমি। আমাকে দুই বছরের রেখে আমার বাবা বিদেশ চলে গিয়েছিলেন, সৌভাগ্যের অন্ব্যেষনে। তারপর থেকেই মায়ের কাছে মানুষ। ও নাহ, একটু ভুল হয়েছে। তার কিছুদিন পরপরই মাও সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করতে লাগলেন। আমার নানা মায়ের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। প্রাইমারি স্কুলে সহকারী শিক্ষিকার চাকরি। তখন ১৯৯৫ সাল। আমার মোটে তিনবছর বয়স। মায়ের চাকরির কারনে আমার দেখাশুনার ভার গেল আমার ছোট দুই খালার উপড়। তারাই আমাকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন। বাবা মা কাছে থাকতোনা বলে আদরটা আমি একটু বেশিই পেয়েছিলাম আমার নানার বাড়ি থেকে। ছোট দুই খালা আর বড় মামার আদরে বড় হতে লাগলাম। এর মধ্যে বাবার সাথে খুব বেশি কথা বলা হতনা। ফোন করে কথা বলতে হলে আমাদের ঢাকায় যেতে হত। তাই মাসে একবার কথা বলার ব্যবস্থা করা হত। বিদেশ পাড়ি দেওয়ার ঠিক সাত বছর পর প্রথম দেশে আসেন। সেখানে মাত্র ২২দিন থেকেই আবার চলে যান। তারপর আজ ষোল (১৬) টি বছর পেড়িয়ে গেলেও এখনো আসেন নি। মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হয় তার সাথে। আসবেন আসবেন করেও আসা হচ্ছেনা তার। কিন্তু সময়ের ব্যব্ধানে আজ আমি পচিশ বছরের তরুন। বাবার আদরটা আমার জন্য অধরাই রয়ে গেলো। তারপরেও বলি আমার কিছু লাগবেনা, তুমি তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে আসো।
তারপরেও চাই তুমি ভালো থাক, সুস্থ্য থাকো।
পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি রইলো আমার গভীর শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালোবাসা।
স্বপ্নহীন মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯