আমার স্কুল বন্ধু বিভু সব সময় ইশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতো ওর বাবা যেন মরে যায় কারণ ওর বাবা মরে গেলে সমস্ত সম্পত্তি ওর হয়ে যাবে ! তখন যা ইচ্ছে করতে পারবে । তবে এটা ঠিক যে ওর বাবা অনেক কিপটে ছিল, প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কমদিত বিভুকে, হয়তো রাগে অভিমানে এগুলো বিভু বলতো । দু'বছর পর বিভুর বাবা মারা গেল, আমরা তখন ক্লাসট্রেনে পড়ি , তখন সত্যিই দেখি বিভুর চোখে অনেক জল , সমস্ত ক্ষোপযেন ঝড়ে গেল । বিভুদের জমি ,জমা মোটামুটি ছিল , কিছুদিন পরই ওর চাচাদের সাথে বিভুদের ঝগড়া বাধঁলো জমি জমা নিয়ে , বিভু ও ওর মা,ছোটবোন কিছুতেই পেরে উঠছিল না ওর চাচা ও চাচাতো ভাইদের সাথে । এক সন্ধেয় বিভুর চাচাঁ হাজী রমিছ উদ্দিন বসতবাড়ির কাছে খোটাঁ ঘেরে গেল , ওদের জমি বলে । এই সেই নিয়ে বিভুর আর পড়াশুনা হলো না , বিভু একটু মাস্তানির দিকে ঝুকে গেল । বিভু জুয়া,মদ, বাজারী মেয়ে মানুষদিয়ে অনেক জমিজমা খোয়ালো , একদিন সকালে উঠে শুনি বিভু ওর চাচাঁ মেরে কোথায় যেন পালিয়েছে এরপর এলাকায় কোনদিন ওকে দেখিনি । বহুবছর পর আজ ধানমন্ডীলেকে ঝালমুড়ি কিনতে যেয়ে বিভুকে আবিস্কার করি , বিভুকে পরিচয় দিতেই বিভু আর্তকে উঠে, এড়িয়ে যেতে চায় শেষমেষ বলে ও বিভু কিন্তু আগের বিভু মরে গেছে, এখন খেটে খাওয়া বিভু ! চোখের জল মুছতে মুছতে বিভু বলে , ভাই বল আমি যে খানে থাকি কাউকে বলবি না বল? ওরা জানলে আমার ফাসিঁ হবে ! আমি মরে যামু, তাইতো পালিয়ে বেড়াচ্ছি ! আমি কথা দিলাম ওকে বলবো না । এরপর বিভু ভয় ভয় আতঙ্ক নিয়ে চলে গেল, একবারও পিছন ফিরে তাকালো না । আমি মনে মনে বললাম , মানুষের জীবন কোথা থেকে কোথায় এসে থামে, স্কুলের সেকেন্ট বয় থেকে আজ ঝালমূড়ি বিক্রেতা ! প্রতিদিন সমাজ,পারিপাশ্বিকতা, অবহেলা,গ্লানি ,হিংস্রতা মানুষকে অপরাধী করে ফেলছে । কোথাও প্রেম নেই, এই ধর্ম,জাত,মানুষের ভেতর ! মানুষ হিসেবে আর ধন্য মনে হয় না ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:৫৮