একঘেয়ে কাজ করতে করতে যখন হৃদয় বিষাদে ভরে উঠে, তখনি শ্যামাদির সাথে দেখা করি , কি অমায়িক নারী শ্যামাদি, ৩৮ বছর বয়সেও খুব অফুরন্ত চকচকে লাগে তাকে, মনে হয় সদ্য মাধ্যমিক শেষ করে যেন কলেজে পাঁ দিয়েচে । অনেকদিন পর আজ বিকেলে তার বাসায় গেলাম , দরজা খুলেই শ্যামাদি কিরে , কোথা থেকে এতদিনপর উদয় হলি ? একদম পাত্তাই নেই ? আজকাল বুঝি বাসায় রান্না হচ্ছে নিয়মিত? । শ্যামাদি তোমার বাসায় কি শুধু খাবারের জন্যই নিয়মিত আসতাম , এই খোটাঁ দিলে তুমি ?
শ্যামাদিঃ খোটাঁ না , মুখ দেখলেই বুঝা যায় , আগে বাসায় এসেতো আমতা আমতা করে বলতি খাবার আছে কিছু আমি কিন্তু তোর মুখ দেখেই সব বুঝতাম ,যতই অন্যগল্প করতাম না কেন কোনকিছুইতেই তোর মন থাকতো না যাষ্ট মাথা নেড়ে সায় দিতি , যাইহোক থাক ওসব বোস এখন ।
আমিঃ কলেজ থেকে এলে কখন ?
শ্যামাদিঃ এইতো ঘন্টা হলো , আজকাল লেকচার দিয়েও ভালো লাগে না একি জিনিস বছরের পর বছর বলে যাই ,ভালো লাগে বল ।
আমিঃ তাইতো ।
শ্যামাদিঃ তোর কথা বল, কি বই পড়ছিস এখন ?
আমিঃ গড ডিলিউশন , তুমি ?
শ্যামাদিঃ Magical Bounding .
আমিঃ কি নিয়ে ও বই ?
শ্যামাদিঃ একটু স্পৃচুয়াল রিলেশন রিলেটেট ?
আমিঃ এ আবার কি ?
শ্যামাদিঃ আত্মার খাদ্য ,প্রেম ।
আমিঃ হুম ।
শ্যামাদিঃ তোর বই কি নিয়ে ?
আমিঃ ইশ্বর বিভ্রম , সাইন্স ,রিলিজিয়েন মেশানো ।
শ্যামাদিঃ দুর ! স্পৃচুয়াল কিছু পর ভালো লাগবে, মানুষের জীবনটাইতো একটা মিরাক্কেল । সব মানুষের বানানো ।
আমিঃ শূন্যতা ?
শ্যামাদিঃ জানি না , আছে হয়তো ।
আমিঃ থাক ওসব কথা এবার বল, বাসায় কি যাওয়া হয় ।
শ্যামাদিঃ ঐতো বছরে ।
আমিঃ একাই কাটিয়ে দিবে?
শ্যামাদিঃ দিব ।
আমিঃ তোমার লাইফের কোন কিছু আছে যা কাউকে বলো না , নিজের ভেতর এত জমিয়ে রাখ যে ।
শ্যামাদিঃ সব বলে দিলতো নিজের কিছু থাকবে না ।
আমিঃ হুম ।
শ্যামাদিঃ আসলে কারো প্রতিক্ষোপ ,রাগ কিছু নেই আর । আজ তোকে বলি, আমার এক রিলেশন ছিল ভার্সির্টি থাকা কালিন আসলে ওরা আমাদের থেকে অনেক বিত্তবান ছিল কিন্তু ওর ভেতর আভিজাত্যর ছুয়া দেখতাম না , খুব সাধারণ সুন্দর সম্পর্ক ছিল আমাদের । একবার ওকে বাসায় নিয়েও গেলাম, সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম এরপর ও প্রায়ই যেত, কখনো আমি জানমও না , ও খুব মিশুক ছিলতো সবার সাথে বন্ধু পাতিয়ে নিয়েছিল । ও আমাদের বাসায় যেত কিছু দিন দিন বুঝতে পারছিলাম ও আমার থেকে দুরে চলে গেছে , ও আমাকে বিয়ের প্রস্তাব না দিয়ে আমার ছোটবোনকে দিল, আর বাসার সবাই রাজি হয়ে গেল, কেউ আমাকে একবারও জিজ্ঞাসাও করলও না । তারপর আর ইচ্ছে জাগেনি কোন সম্পর্কে , আসলে তেমন কাউকে হয়তো পাইনি সাবই কাছে আসতে চাইতো শুধু শারীরিক প্রয়োজনে , হয়তো যদি কাউকে এখনো পাই নিয়ে নিব , মনেরতো মৃত্যু নেই, বয়স মানে শরীরের চামড়া ভাড়ী হওয়া । যাইহোক , এত চাইতি আজকে বললাম তোকে ।
আমিঃ হুম , কিছু খাওয়াও না এখন ?
শ্যামাদিঃ কলিজার সিঙ্গারা আছে , গরম করে দিই ?
আমিঃ দাও ।
শ্যামাদিঃ বস দিচ্ছি ।
পুনশ্চ;
খাবার কথা বলে , প্রসঙ্গটা পাল্টালাম । আমাদের গল্পগুলো একই রকম, নিজের গল্প বার বার শুনতে ভালো লাগে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮