somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুশ দেশের সত্যিকথা ৭

১৯ শে জুন, ২০০৭ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে যা হোক, অনেক ঘাটের পানি খেয়ে বিশ্বভ্রমন শেষে নিকোলাস যখন সেইন্ট পিটার্সবুর্গে ফিরলেন তখন দেখেলন মুরুব্বীরা সব, নিকির বিয়ে দেয়ার জন্য উতলা হয়ে পড়েছেন । তেইশ পেরোলো বেচারা আর এখনো বিয়ে করল না!

তবে শুধু নিকোলাসের জন্যই যে তাঁদের চিন্তা ছিল তা নয় । নিজেদের পারিবারিক ভবিষ্যতও তাঁরা ভাবছিলেন । রাজাদের বিয়ে মানে সিংহাসনের ভবিষ্যত দাবীদারের পথ নিষ্পন্ন করা । তাঁরা জনগনের মালিক হতে পারেন কিন্তু কিছু কিছু কাজ করতে তাঁদের নিজের বলতে খুব কমই স্বাধীনতা ছিল ।

আসলে নিকোলাসের বাবাও ভাবেন নি যে তিনি সম্রাট হবেন । সেই জন্য দ্বিতীয় আলেকজান্ডার, তৃতীয় আলেকজান্ডারের শিক্ষা দীক্ষার জন্য তেমন একটা গা করেন নি । তাঁকে স্রেফ একজন গ্র্যান্ড ডিউক পর্যায় কাজ করার মত শিক্ষা দেয়া হয়েছিল । আর নিকোলাসের বড় ভাই খুব ছোটবেলায় মারা না গেলে নিকোলাসও সিংহাসনের দাবিদার হতে পারতেন না । এই সব সে যুগে ছিল খুব প্রচলিত একটা ব্যাপার ।

মানুষের আয়ু ছিল কম, রাজা-রাজড়ারাও অল্পবয়সে দুম করে দুনিয়ার পাট চুকিয়ে চলে যেতেন ডিপথেরিয়া-কলেরা-টাইফয়ডের মতো অসুখে । তাই বর্তমান তৃতীয় বিশ্বের লোকদের মত বিয়ে ও (পুত্র) সন্তান পাগল ছিলেন তাঁরা । সন্তান থাকা মানে সিংহাসন ও নানান সম্পত্তি ও খেতাবের উপর দাবিদাওয়া পোক্ত হওয়া ।

মাতিলদাকে যে বিয়ে করা যাবে না সেটা শুরুতেই নিকি বুঝেছিল । অভিজাত পরিবারের, নিদের পক্ষঢ ডিউকের কন্যা সম্রাটের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী । কনের পরিবারের সাথে আবার রাশিয়ার পুর্ব শত্রুতা থাকলে চলবে না । কনেকে অর্থোডক্স ধর্মে দীক্ষান্তর নিতে হবে, এবং এই বিয়েতে যেন রাশিয়া যৌতুক হিসেবে কিছু 'কৌশলগত মিত্র' পায় শ্বশুরবাড়ির দেশে । সেক্ষেত্রে পছন্দ করার স্বাধীনতা কমে যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই ।

নিকোলাসের যখন ষোলোবছর বয়স, তখন কাজিন সের্গেইএর বিয়েতে যোগ দিতে গিয়ে বারো বছরের একটি সোনালীচুলো কিশোরীর সাথে দেখা হয় তার । জানা যায় যে সে হচ্ছে সের্গেইএর কনে জার্মানীর হেস-ডার্মস্টাটের গ্র্যান্ড ডিউকের কন্যা প্রিন্সেস এলার বোন, প্রিন্সেস আলিক্স, বা অ্যালিকি । ভিক্টোরিয়ার মেয়ে প্রিন্সেস বিয়াট্রিস, আলিক্সের মা । আলিক্সকে মহামুল্য একটা ব্রুচ উপহার দিয়েছিল কিশোর নিকোলাস । আলিক্স সেটা হাতে নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার নিকোলাসের হাতে গুঁজে দেয় । দেখে ভারী রাগ হয়েছিল নিকি, মেয়েকে পটানো তো সহজ নয় !

সে যাইহোক , আজব দেশের অ্যালিসের (আলিক্স, অ্যালিসের জার্মান উচ্চারণ) মতোই মেয়েটা নিকির মাথার মধ্যে রয়ে গেল । মাঝে মাঝেই বাপ মাকে সে জ্বালাতো 'বিয়ে করলে আলিক্সকেই করব!' বলে । শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন তৃতীয় আলেকজান্ডার আর মারিয়া ফিওদরভনা । আলিক্সকে তাঁরা দেখেছেন এবং পুত্রবধু হিসেবে মোটেই পছন্দ করেননি । ভিক্টোরিয়ার নাতনি হতে পারে সে, কিন্তু সে একেবারে মফস্বলের রাজকুমারী (হেস-ডার্মস্টাট, জার্মানির সবচেয়ে ক্ষুদে করদ রাজ্যগুলোর একটা ছিল), আর না সেটাও না । মেয়েটা উমম..কী বলে...মাথা..ঠিক তাও নয় মানে একটু হিস্টিরিয়ার ছোঁয়া আছে ।

আলিক্সের চলন-বলনও ঠিক সুবিধার নয় । খুব বেশী ইন্ট্রোভার্ট, ভয়াবহ ফরাসী উচ্চারন (সে সময়ে রুশদেশের ও ইউরোপের অনেক দেশেরই রইস আদমীরা ফরাসীতে বাতচিত করতেন), পোশাক-আশাকের উপর খুব ভাল ধারনা নেই (কোনো প্রিন্সেস, ফ্যাশন দুরস্ত হবেন না সেটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ) । নিন্দুকেরা বলে থাকে আলিক্স নাকি খুব অহংকারীও! লাজুক লোককে সবাই ভুল বোঝে, বিশেষ করে যখন তার উপর অনেক সামাজিক দায়িত্ব থাকে ।

তৃতীয় আলেকজান্ডার, ছেলের জন্য ফ্রান্সের সিংহাসন চ্যুত রাজার কন্যা ইলেনকে বাছাই করেছিলেন । কিন্তু ফরাসী প্রিন্সেস ধর্মান্তরে ক্যাথোলিক বিশ্বাস ত্যাগ করতে না চাওয়াতে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেল । এর পরে । এরপরে প্রাশিয়ার প্রিন্সেস মার্গারেট, (ভিক্টোরিয়ার আরো একটি নাতনি) সাথে সম্বন্ধ এল, নিকোলাস জানালো এ বিয়ে করার চেয়ে সন্ন্যাসী হওয়াটা তার জন্য অনেক বেশী পছন্দের । সুতরাং আবারো আলিক্স ।

অষ্টাদশ শতকের আগে প্রায় সমস্ত রুশ জার তাঁদের নিজেদের দেশের অভিজাত সম্প্রদায় (বয়ার) থেকে কনে বেছেছেন । বিদেশী 'ধর্মচ্যুত' দের মধ্যে নিজেদের সম্বনধ খোঁজেননি । পিটারই প্রথম নিজের ছেলের জন্য জার্মানির ব্রুন্সভিক-ভোলফেনবুটেল বংশের প্রিন্সেস শার্লটকে পছন্দ করেন । তারপর কালে কালে অনেক জার্মান রাজকুমারী এসেছেন রোমানভ রাজবংশের পুত্রবধু হিসেবে । দু'জন অবশ্যই নিজেরাই সম্রাজ্ঞী বনে গেছেন ।

তখন জার্মানী শতধা বিভক্ত ছিল ছোট-বড় নানান রাজ্যে । প্রাশিয়া (প্রয়সেন) অবশ্য একটা উল্লেখ করা মত রাষ্ট্র ছিল তবে তখনো তা রাশিয়ার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠেনি । ফরাসীরা রুশদের খুব একটা পাত্তা দিত না আর ফরাসী বিপ্লবের পর তাদের নিজেদের গদিই এমন টলমলে হয়ে যায় যে ফরাসী বংশে বিয়ে করে খুব একটা ফায়দা ছিল না ।

আর জার্মানদের সাথে দুনিয়ার রাজা-রাজড়ার আত্বীয়তা ছিল । ১৭১২ সালে ইংল্যান্ডের রানী অ্যান, নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তাঁর এক দূর সম্পর্কের আত্বীয় জার্মানির হ্যানোভারের ডিউক, জর্জ (গিওর্গ) কে এনে সিংহাসনে বসায় । ফলে লতাপাতায় অনেক ক্ষুদে জার্মান রাজকুমার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে থাকেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৭ সকাল ১০:৪৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×