ক্লাস রুমে যে কটি পরীক্ষা করেছি তার মধ্যে খুব পছন্দের একটা পরীক্ষা হল রঙের কৌটা আর রাইফেল দিয়ে যে পরীক্ষাটি করি।
একটা কৌটাকে পানি দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ করি আর অন্যটাকে এমনভাবে পূর্ণ করি যাতে কিছু জায়গা ফাঁকা থাকে। কৌটাগুলোর মুখ ভালোভাবে বন্ধ করে একটার সামনে অন্যটা রেখে একটা টেবিলে সাজিয়ে রাখি। এরপর কয়েক গজ সামনে রাখা দ্বিতীয় টেবিলটার সামনে যেয়ে দাড়াই। এই টেবিলটায় সাদা কাঠের একটা বক্স রাখা। নিশ্চিতভাবেই কোন একটা চমক এর ভিতরে অপেক্ষা করছে। আমি বক্সটা উঠাই।
স্ট্যান্ডের সাথে বাঁধা একটা রাইফেল উম্মোচিত হয়। যেটা কৌটাগুলোর দিকে তাক করা। ক্লাসের সবাই চোখ বড় বড় করে তাকায়। আমি কী ক্লাসেই রাইফেল দিয়ে গোলাগুলি করতে যাচ্ছি?
“আচ্ছা এই কৌটাগুলোকে যদি গুলি করা হয়... কী ঘটবে বলতে পারবে?”, ওদেরকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম। আমি অবশ্য উত্তরের অপেক্ষা না করেই নিচু হয়ে রাইফেল এর নিশানা ঠিক করতে মন দিলাম। চেম্বারটা খুলে ফুঁ দিয়ে ধুলো পরিষ্কার করলাম... একটা বুলেট ভরলাম। ক্লাসে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। “ ঠিক আছে... দেখাই যাক। সবাই রেডি?”
ট্রিগারে আঙ্গুলটা দিয়ে শুরু করলাম কাউন্টডাউন ... তিন... দুই... এক... ঠাশ! সাথেই সাথেই দেখা গেল একটা কৌটার মুখ শুন্যে উঠে গেল। অন্যটার মুখ জায়গাতেই থাকলো।
কী মনে হয়... কোন কৌটার মুখটা শুন্যে উঠলো?
.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।.।
উত্তরটা বুঝতে হলে প্রথমে যেই তথ্যটা জানা দরকার তা হলো বাতাস সংকোচনশীল, পানি সংকোচনশীল না। ঠেলা দিয়ে বাতাসের অণুগুলোকে চেপে কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়। সব গ্যাসই অবশ্য এই বৈশিষ্ট্য দেখায়। পানি বা তরলের এই ধর্ম নেই। একটা তরলের ঘনত্ব সামান্যতম পরিবর্তনের জন্য মোটামুটি ‘অমানবিক’ মাপের বল প্রয়োগ করতে হবে!
বুলেটটা যখন কৌটায় প্রবেশ করে একটা বিপুল পরিমাণ চাপ নিয়েই সে আসে। এখন যে কৌটায় বাতাস আছে সেখানে বাতাসটা কাজ করে বালিশের মত! অতিরিক্ত চাপটা নিজের উপর নিয়ে সে সংকুচিত হয়। চাপটা শোষণ করে নেয়। কিন্তু যে কৌটায় শুধু পানিই আছে সেখানে পানি কিন্তু সংকুচিত হতে পারে না। ফলে বুলেটের কারণে আসা অতিরিক্ত চাপটা পানি নিজের উপর না নিয়ে কৌটার দেয়াল ও ঢাকনির উপর চাপিয়ে দেয়। তাতেই ঢাকনি বাতাসে উড়তে থাকে!
For the Love of Physics (by Walter Lewin) অবলম্বনে
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৪