somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসহায় নাবিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামুর মডুদের শুভেচ্ছা এবং নাবিকদের অসহায়ত্বের আরেক অজানা কাহিনী

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আরেকটি আটক জাহাজ এম. ভি. বঙ্গ বিরাজ-





আমার "সোমালিয়ান জলদস্যুর গল্প এবং ২৬ টি নাবিক পরিবারের পক্ষ হতে প্রধান মন্ত্রীর নিকট একটি খোলা চিঠি"-পোস্ট টিকে স্টিকি করার জন্য অসহায় ২৬ নাবিক পরিবারের পক্ষ থেকে সামুর মডুদের অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।




২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর খবর- দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদের সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।



=============================================

এই ছোট লেখাটি একটু দেখুন-
আদার বেপারী এখন জাহাজের মালিক

=============================================


অনেক কষ্টে আছি ভাই, ভীষন কষ্ট।
৮ মাস ধরে দেশের বাইরে, মালেশিয়ার পোর্ট কেলাং-এ একটা ১৪০ মিটার জাহাজে ২৪০ দিন ধরে। জাহাজটি বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ। বাংলাদেশী কোম্পানির জাহাজটি এরেস্ট হয়ে আছে গত ৪ ঠা মে ২০১০ থেকে।

জাহাজটিতে ২৩ জন নাবিক আমরা ছিলাম ১১ জন অফিসার ১২ জন সাধারণ ক্রু। জাহাজটি আটক হবার কিছু দিন পরে আমরা মালিক পক্ষকে বলি- আমাদের দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা সাইন অফ (জাহাজ থেকে অব্যাহতি) চাই।
কিন্তু কোম্পানি আমাদের সাইন অফ না করিয়ে বলেছিল- "আর কিছু দিন থাক- মালেশিয়ান সরকারের সাথে আমাদের কেস চলছে। কেসের রায় হয়ে গেলে তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোম্পানি খালি বলে- অমুক তারিখে কেসের ডেট আছে, একটু ধোর্য ধর"।

অসহায়ত্বের সেই মুহুর্তে পাশে এসে দাড়িয়েছেন চট্টগ্রামের প্রথম আলোর সংবাদিক মিজান ভাই- আমাদের নিয়ে তার এই লেখাটি পড়ুন- বাংলাদেশি জাহাজ মালয়েশিয়ায় আটক দুর্ভোগে ২৩ নাবিক

এভাবে যখন ২ মাস পার হয়ে গেল তখন আমরা নাবিকরা মালেশিয়ান আই. টি .অফ (ইন্টার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার ফেডারেশন / ইউ কে ভিত্তিক নাবিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন )-এ কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করি মালয়শিয়ান আই টি এফ বলে যে- ওরা আমাদের দেশের শিপিং অফিসের সাথে যোগাযোগ করবে, মালেশিয়ার বাংলাদেশ এম্বাসির সাথে যোগাযোগ করবে, আমাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
মিজান ভাইয়ের আমাদের নিয়ে তার এই লেখাটি পড়ুন-
আইটিএফে নাবিকদের অভিযোগ ৪৫ লাখ টাকা দাবি

মালয়শিয়ান মেরিন ডিপার্টমেন্ট এবং পোর্টের হার্ভার মাস্টার জাহাজে এসে নাবিক দের সাথে কথা কিন্তু কিছু দিন ওরা বাংলাদেশ সরকার, এম্বাসি, শিপিং অফিসের সাথে কথা বলার পর তারা হতাশ হয়ে যায়। আই টি এফ মালেশিয়ান শাখার ইন্সপেক্টর মিস্টার রফিক রাম্মু আমাদের হতাশ গলায় বলেন-দেখো, আমরা তোমাদের দেশে তখনি পাঠাতে পারব যখন তোমাদের সরকার, এম্বাসি, শিপিং অফিস আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরা বার বার ওদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছি কিন্তু তারাই তোমাদের ব্যাপারে মাথা ব্যাথা নেই। আই টি এফ তোমাদের জন্য কিছু করতে পারছে না। যদি তোমাদের শিপিং অফিস আমাদের সাপোর্ট দিত তাহলে আমরা কোম্পানিকে বাধ্য করতাম তোমাদের দেশে পাঠাতে।


আমরাও সব নাবিক এক হয়ে দেশে শিপিং অফিস এবং মালেশিয়ান এম্বাসিতে যোগাযোগ করেছিলাম কিন্তু তারা আমাদের সড়া দেয়নি। আপনারা হয়ত বলবেন- আমরা কেন জোর করে, পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরছিনা?
-আমরা চাইলেই একটা জাহাজ ত্যাগ করতে পারিনা কারণ একটা জাহাজে প্রতিটা রেন্কে এক জন নাবিকই চকুরি করে। আমরা যদি কোম্পানির পারমিসন ছাড়া জাহাজ ত্যাগ করি তাহলে দেশে যাওয়ার পর কোম্পানি আমার নামে কেস করে দিবে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রেখে আসার অপরাধে।

একটা ঘটনা বলি- ডিসেম্বর ২০০৮-এ বাংলাদেশী পতাকাবাহী জাহাজ এম ভি বঙ্গ লঙ্কা পাকিস্থান থেকে ৮,০০০ মেট্টিক টন (প্রায়) সিমেন্ট লোড করে, ডিসচার্জিং পোর্ট ছিল শ্রীলংকার তামিল বিদ্রোহীদের একটি এলাকা, তখন ওই সময় ওই জায়গায় ভয়াভহ যুদ্ধ চলছিল এল টি টি- এর সাথে শ্রীলংকান সেনাবাহিনীর। মেরিন "ল" অনুযায়ী যদি কোনো জাহাজ ওয়ার জোনে যেতে চায় তাহলে জাহাজে অবস্থানরত নাবিকরা ওই পোর্টে যেতে রাজি কিনা তা কোম্পানির জেনে নিতে হবে। যারা যেতে চায় তারা থাকবে আর যারা যেতে চায় না তাদের ওয়ার জোনে যাওয়ার আগেই জাহাজ থেকে নামিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দিতে হবে।

কিন্তু জাহাজ কোম্পানি জোর পূর্বক নাবিকদের ওয়ার জোনে যেতে বাধ্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু নাবিকরা বিদ্রোহ করে জাহাজটিকে শ্রীলংকায় না নিয়ে বাংলাদেশ ফেরত আনে। কিন্তু দেশে আসার পর কোম্পানি জাহাজে বিদ্রোহ সংশ্লিষ্ট চিফ অফিসার, ক্যাডেট, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার সহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়। সে মামলায় নিরীহ নাবিকের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল।
সে ভয়ে আমরা নাবিক বিদ্রোহ করে দেশে যেতে চাইছি না কারণ এক বার মামলায় পড়ে গেলে অনেক দিনের ভোগান্তি / ক্যারিয়ার নষ্ট ।

আপনারা হয়ত জানেন না বিদেশী কোম্পানির জাহাজের তুলনায় বাংলাদেশী জাহাজ গুলো অনেক পুরাতন, ছোট, সর্বপরি বেতন অনেক কম।

বিদেশি কোম্পানিতে এক জন নাবিক যে সুযোগ সুবিধা পান-

১. এক জন ক্যাপ্টেন প্রতি মাসে বেতন পান - ৭ , ০০০ থেকে ১০, ০০০ ইউ এস ডলার ( ৪,৪৯ , ০০০ টাকা থেকে ৭, ০০, ০০০ টাকা ) সেখানে বাংলাদেশী জাহাজে বেতন ৪, ০০০ থেকে ৬, ০০, ০০০ ইউ এস ডলার (২, ৮০, ০০০ টাকা - ৪, ২০, ০০০ ) টাকা।
২. মাস শেষে বেতন জাহাজেই পরিশোধ।
৩. কন্ট্রাক শেষ হবার পর +/- ১৫ দিনের মাথায় সাইন অফ।

আপনারা হয়ত বলতে পারেন বিদেশি জাহাজে এত সুবিধা থাকতে কেন আমরা দেশী জাহাজে চাকরি করি এত কম বেতনে-
এর কারন- দেশী জাহাজে বেশির ভাগ সময় সব নাবিকরা বাংলাদেশী হয় এবং দেশী জাহাজ গুলো মাঝে মাঝে দেশের পোর্ট / হোম পোর্ট টাচ করে।

যাই হোক, আমাদের জাহাজের ৪ জন অফিসার বিভিন্ন মন্ত্রী / এম পি ধরে দেশে চলে গেছেন কিন্তু আমরা যাদের বড় লিঙ্ক নাই তারা অসহায় হয়ে আটকা পড়ে আছি মালেশিয়া।

আমি ব্লগিং করি মালেশিয়া থেকে, আমার জাহাজের কেবিনে বসে। যখন জাহান মনি জাহাজটির খবর শুনলাম তখন আমি ভাবলাম- আমি কি কিছু করতে পারি কিনা। আমি যেহেতু সমুর একজন নিয়মিত ব্লগার তাই ভাবলাম সামুতে যদি একটা পোস্ট দিতে পারি তাহলে হয়ত আমরা নাবিকরা জনসমর্থন পাব।
সেই চিন্তার সুত্র ধরে বন্ধু মেহেদী, বন্ধু মইন এবং প্রিয় ব্লগার আহাদিল আপু থেকে ইনফরমেশান যোগাড় করা, এবং পোস্ট প্রকাশ করার পর প্রিয় ব্লগার জিশান শা ইকরাম ভাই থেকে পরামর্শ নিয়ে- সে মোতাবেক এডিট করা।

আপনারা সব ব্লগার আমার পোস্টটিকে স্টিকি করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। সমুর মত এত বড় ব্লগ সাইটে পোস্টটি স্টিকি করায় আমরা সাধারণ নাবিকরা উপকৃত হলাম, সে জন্য সমুর মডুদের আবরো অনেক ধন্যবাদ। অনেক যারা আমার পোস্ট টিকে স্টিকি করার আবেদন জানিয়ে নতুন করে পোস্ট দিয়েছেন তাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। আপনারা দয়া করে আপনাদের সেই পোস্টের লিঙ্কটি আমার ওই পোস্টে রেখে যাবেন।

যে নাবিকরা জিম্মি আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব- "হে আমার নীল সাগরের সহযাত্রী, তোমরা ভয় পেয়না বন্ধু! দেখো আমরা আছি তোমাদের পাশে, ১৬ কোটি মানুষ আজ তোমাদের পাশে। আমরা বাঙালিরা আজ সবাই এক ফ্লাটফর্মে। মানবতার বিরুদ্ধে আমরা কখনো আপোষ করিনি, কখনো করবনা।
হে বন্ধুরা, আমার আজ ১৬ কোটি বাঙালি তোমাদের মুক্তির অপেক্ষায়। তোমরা ফিরে আসবে, অবশ্যই আসবে। আমাদের এই ভালবাসা বৃথা হবার নয়। তোমরা যখন মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসবে- দেখবে ১৬ কোটি মানুষের চোখ কি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তোমাদের জন্য- তোমাদের নোনা ভাজা মুখ থেকে একটি কথা শোনার জন্য- আমি ফিরে এসেছি তোমাদের মঝে, তোমাদের ভালবাসার টানে।

সামুর মডু এবং সব ব্লগারদের ২৬ নাবিক পরিবারের পক্ষ থেকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে অনেক ভালবাসা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:২২
৪৬টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×