সমাজে ব্যক্তিদের মধ্যে প্রচলিত সাধারণ বিশ্বাসগুলোই সামাজিক চিন্তা ও অনুভূতি হিসেবে প্রকাশ পায়, যা জীবনের প্রতিক্ষেত্রে ব্যক্তির আচরণ এবং বিভিন্ন মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককে কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসে। এই চিন্তা ও বিশ্বাসগুলো তাদের কাজের মানদন্ড ঠিক করে এবং সমাজ ব্যবস্থার সাথে তাদের সম্পর্ককেও বিন্যস্ত করে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, আমরা কিভাবে অস্তিত্বে এলাম? আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য কি? আমাদের মৃত্যুর পরে কি ঘটবে? ইত্যাদি মৌলিক প্রশ্নের জবাবে যখন বলা হয় আল্লাহ সুবহানাহুতা’য়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্ ইবাদত করা আর মৃত্যুর পর আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে বিচার দিবস আর জান্নাত অথবা জাহান্নাম এবং জনগণ যখন চিন্তা-ভাবনা করে বুঝে-শুনে এই বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করে তখন তা তাদের জীবনের কার্যাবলীর ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরনের সর্বজনগ্রাহ্য মানদন্ডের জন্ম দেয়। সে ক্ষেত্রে জনগণ মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর আদেশ ও নিষেধকেই তাদের কাজের মাপকাঠি হিসেবে গ্রহন করে। কেননা রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“তোমাদের কেউই (সত্যিকারভাবে) বিশ্বাস করে না, যতক্ষণ না আমি যা নিয়ে এসেছি সে
অনুসারে তার প্রবণতা তৈরী হয়”।
এবং আল্লাহ সুবহানাহুতা’য়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
“(আমরা) আল্লাহ্র কাছ থেকে আমাদের রং নিই, রঞ্জিত করার ক্ষেত্রে কে আল্লাহ্’র চাইতে
বেশী উত্তম? আমরা তাঁরই ইবাদতকারী।” [সূরা বাকারা:১৩৮]
সমাজের কোন বড় কিংবা প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী যে সাধারণ চিন্তা ভাবনাগুলো ধারণ করে, ব্যাপকতর পরিসরে সেগুলো দ্বারাই গোটা সমাজের সাধারণ অনুভূতিগুলো তৈরী হয়। একটি ইসলামি সমাজের পছন্দ- অপছন্দ, এর লোকাচার ও অনুরাগ-অনুভূতি কুরআন ও সুন্নাহ’র রঙে রঞ্জিত হবে। এসব সাধারণ চিন্তা ও অনুভূতিগুলোই সাধারণত জনমত হিসেবে পরিচিত ।
জনগণের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার এই বন্ধন ও নিয়ন্ত্রক সমূহের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ
উপাদান হল সরকার, যাকে অবশ্যই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সরকার সরাসরি
জনমতকে নতুনভাবে ছাঁচ দিতে পারে, রাষ্ট্রের ভিতরে জনগণের কার্যাবলী এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে ইসলামিক রাষ্ট্রের সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করতে পারে। সরাসরি আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এবং অন্যান্যভাবে, যেমন বিশেষ কোন মতবাদের প্রচার ও মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে এ কাজগুলো হয়ে থাকে। সমাজে প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের (যেমন সরকারের) ভূমিকা কি হওয়া উচিত তা একটি বিখ্যাত হাদিসে বিবৃত হয়েছে, যেখানে রাসূল (সঃ) বলেছেন,
“যারা আল্লাহ'র হুকুম মেনে চলে তাদের সাথে থেকে যারা সেগুলো (আল্লাহ’র হুকুম)-কে নিজেদের প্রবৃত্তির খেয়ালে লঙ্ঘন করে, (এরা উভয়ই) যেন তাদের মত যারা একই জাহাজে আরোহণ করে। তাদের একাংশ জাহাজের উপরের অংশে তাদের জায়গা করে নিয়েছে এবং অন্যরা এর নীচের অংশে নিজেদের জায়গা করে নেয়। যখন নিচের লোকদের পিপাসা নিবৃত্ত করার প্রয়োজন হয় তখন তাদেরকে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের অতিক্রম করে যেতে হয়। (তাই) তারা (নিচের অংশের লোকেরা) নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিল, ‘আমরা যদি জাহাজের নীচের দিকে একটা ফুটো করে নিই তাহলে জাহাজের উপরের অংশের লোকদের কোন সমস্যা করব না।’ এখন যদি উপরের অংশের অধিকারীরা নিচের ডেক’এর লোকদেরকে এ কাজ করতে দেয় তবে নিশ্চিতভাবেই তারা সবাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অবশ্য তারা (উপরের অংশের লোক) যদি তাদের (নীচের লোকদের)কে এ কাজ থেকে বিরত রাখে, (তবে) তারা (উপরের অংশের লোক) রক্ষা পাবে এবং এভাবে (জাহাজের) সবাই রক্ষা পাবে। ”(বুখারী )
সুতরাং, সমাজ ব্যবস্থার একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, সমাজকে এমন সব নির্দিষ্ট কার্যাবলী থেকে বিরত রাখা, যা ঘটলে তা হবে পুরো জাতির জন্য ক্ষতিকর। এ ধরণের কার্যাবলীর মধ্যে মদ্যপান, ব্যাভিচার, চুরি, ধর্মত্যাগ উল্লেখযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া শুধুমাত্র ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করার জন্যই যে প্রয়োজন তা নয় বরং গোটা জাতি ও সমাজকে টিকিয়ে রাখার জন্যও এ ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক। হয়রত ওসমান ইবনে আফ্ফান’(রাঃ) এর উক্তিতেও বলা হয়েছে, “যারা কুরআনের শিক্ষা দ্বারা বিরত হয় না, আল্লাহ তাদেরকে সুলতানের ক্ষমতা দিয়ে বিরত করেন”।
[চলবে]
প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন- View this link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



