somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার ইসলামি পদ্ধতি (পর্ব -১)

১৭ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সময়ের দমবন্ধ হয়ে আসা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমরা সবাই একমত যে আমাদের সমাজের যে অবস্থা তাকে কোনোভাবেই সুস্থ অবস্থা বলা চলে না। প্রতিদিনের পত্রিকায় যে পরিমাণ নির্যাতন, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাস্তানি, দুর্নীতি, প্রতারণা, কেলেঙ্কারী ইত্যাদির খবর প্রকাশিত হয় তা আমাদের সমাজের মারাত্মক অধঃপতনের চিত্র তুলে ধরার জন্য যথেষ্ঠ। যদিওবা বিভিন্ন ব্যক্তি এসব ঘটনার সাথে জড়িত, তথাপি এগুলো শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ের কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র নয়। এগুলো এখন ব্যাপকতর পরিসরে ঘটমান দৈনন্দিন ঘটনা- তাই এগুলোকে আমাদের সামাজিক সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা উচিৎ।

এমতবস্থায় যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চান তাদেরকে প্রথমে সমাজ বলতে বাস্তবে কি বোঝায় সে সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণায় উপনীত হতে হবে। এজন্য আমাদেরকে সমাজ ও এর উপাদানগুলো সম্পর্কে গভীর, আলোকিত ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে যেতে হবে।

অগভীর কিংবা দুর্বোধ্য আলোচনা আমাদেরকে বাস্তব সমস্যা মোকাবেলায় কোনোভাবেই সাহায্য করবে না। আমরা যদি শুধুমাত্র প্রতিক্রিয়াসার, তাৎক্ষণিক ও ক্ষণস্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে চিন্তা ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করি এবং তার ভিত্তিতে কাজ করি তাহলে তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং সমস্যাগুলোকে আরো জটিল করে তুলবে।

উপরন্তু আমরা যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামি ব্যবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চাই তাদেরকে
সমাজ পরিবর্তনের ইসলামি পদ্ধতি সম্পর্কেও সামগ্রিক ও স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে হবে
যাতে আমরা কাঙ্খিত পরিবর্তনের ধারায় সমাজকে পরিচালিত করতে পারি।


সমাজ কিঃ
পশ্চিমা সভ্যতা জীবনের সব বিষয়কে হালকাভাবে দেখে তাই সমাজ সম্পর্কে পশ্চিমা পূঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গিও অগভীর হওয়াই স্বাভাবিক। তারা সমাজকে শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিমানুষের সমষ্টি বলেই মনে করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় মার্গারেট থ্যাচার একবার এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় বলেছিলেন, “সমাজ হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কিছু ব্যক্তি ও পরিবারের সমষ্টি মাত্র।”

মুসলিম উম্মাহ্ অধঃপতনের এই দীর্ঘ সময়কালে অনেক সৎ সংস্কারক ও অনেক সাহসী আন্দোলনের আবির্ভাব ঘটেছে। তারা আন্তরিকভাবেই উম্মাহ্ এই খারাপ অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করেছেন বা করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের মধ্যে অনেকেই সমাজ সম্পর্কে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অনেকাংশেই প্রভাবিত হয়েছেন- অর্থাৎ তারাও মনে করেছেন সমাজ হলো আসলে অনেকগুলো ব্যক্তি। তাই তাঁরা চেষ্টা করেছেন ব্যক্তিকে ভাল মুসলমানে পরিণত করতে; তাকে ভাল আদব কায়দা, ধর্মীয় রীতি নীতি শেখাতে এবং চিন্তা করেছেন যে অনেকগুলো ব্যক্তি যখন ভাল হয়ে যাবে তখন সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। যদিও তাদের আন্তরিক চেষ্টার ফলে অনেক মানুষ সে সব আন্দোলন ও কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো সমাজের বাস্তব অবস্থা অর্থাৎ সমাজে বিদ্যমান অপরাধ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, নিরাপত্তাহীনতা, বিশৃংখলা, নৈরাজ্য ইত্যাদির তো কোনও পরিবর্তনই হয়নি বরং এগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সমাজ সর্ম্পকে গভীরতর বিশ্লেষণঃ
আমরা যদি সমাজের সামগ্রিক ও গভীরতর বিশ্লেষণ পেতে চাই তাহলে বাস্তবে মানুষ বলতে
কি বোঝায় তা নিয়ে শুরু করতে হবে। আমরা মানুষের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখব যে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু জৈবিক চাহিদা ও প্রবৃত্তি আছে। যেমন, তাকে খাদ্য গ্রহণ ও পানীয় পান করতে হয় (জৈবিক চাহিদা); তার মধ্যে অধিকতর সম্পদ ও অর্থ উপার্জন করার ও তা দিয়ে জীবনমান উন্নত করার আকাংখা আছে; তার স্বভাবগত প্রবণতা হচ্ছে বৈরী পরিবেশে নিজেকে রক্ষা করা এবং বেঁচে থাকা (টিকে থাকার প্রবৃত্তি)। এছাড়াও বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তার স্বাভাবিক আকর্ষণ আছে এবং সে সংসার করতে চায় (জনন প্রবৃত্তি)। নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ, মুসলমান- অমুসলমান সবার জন্যই এগুলো অনস্বীকার্য বাস্তবতা।

জৈবিক চাহিদা ও প্রবৃত্তিগুলো পূরণের প্রয়োজন ও তাড়নাই মানুষকে পারস্পরিক সম্পর্ক ও
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসে। মানুষ একা বিচ্ছিন্ন ভাবে এসব চাহিদা ও প্রবৃত্তি পূরণ
করতে পারে না। তাই মানুষ একটা সমাজের মধ্যে থাকে যাতে করে তারা পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমঝোতার ভিত্তিতে এসব চাহিদা পূরণ করতে পারে।

মানুষ যখন পরস্পরের সাথে ক্রিয়া করে বা সম্পর্ক স্থাপন করে তখন বাকী প্রাণীজগতের তুলনায় সে মৌলিকভাবে ভিন্নতর। মানুষের চিন্তা করার এক অনন্য ক্ষমতা আছে যার সাহায্যে সে বিভিন্ন ধারণায় উপনীত হতে পারে যেগুলো তার জৈবিক চাহিদা ও প্রবৃত্তিগুলো পূরণের উপায় বা পদ্ধতি ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ এই ধারণা বা বিশ্বাসগুলো তার চাহিদা ও প্রবৃত্তিগুলোকে কিছু শৃংখলা ও নিয়মের অধীনে নিয়ে আসে।

তাই মানুষ যখন কোথাও দলবদ্ধ হয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠা করে তখন তার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে এমন কিছু ধারণা, বিশ্বাস ও আবেগ-অনুভূতি যা তাদের সবার মধ্যে বিদ্যমান। সেইসাথে তারা কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তাদের চাহিদা ও প্রবৃত্তিগুলো পূরণের পারস্পরিক সমঝোতায় উপনীত হয় যা তাদের বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ অথবা বিশ্বাস থেকে উৎসারিত। তারপর তারা একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে যা বাস্তবে এসব নিয়ম-পদ্ধতি প্রয়োগ ও রক্ষা করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই কর্তৃপক্ষটিই রাষ্ট্র বা সরকার।

উপরের আলোচনা থেকে এটাই বেরিয়ে আসে যে 'সমাজ' নিম্নোব্ক্ত উপাদানগুলোর সমন্বয়ে গঠিতঃ

১. ব্যক্তি
২. ব্যক্তিবর্গের (জনসাধারণের) মধ্যে প্রচলিত বা লালিত সাধারণ ধ্যানধারনা বা বিশ্বাস
৩. জনগণের সাধারণ(ঈড়সসড়হ) বিশ্বাস প্রসূত আবেগ-অনুভূতি
৪. তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের নিয়ম পদ্ধতি এবং তা বাস্তবায়ন ও রক্ষা করার জন্য যথাযথ
কর্তৃপক্ষ(রাষ্ট্র/সরকার/সামাজিক নেতৃত্ব ইত্যাদি)।


আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার ইসলামি পদ্ধতি (পর্ব -২)- Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৫
১৬টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×