
শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে তিনি হয়তো আশঙ্কা করেছিলেন, যে কোনো মুহূর্তে তার জীবনাবসান হতে পারে। তিনি এমনও বলেছেন, ‘আমি তো ভীষণভাবে প্রত্যাশা করি, কোনো একটা বিপ্লবে, কোনো একটা মিছিলে আমি সামনে আছি, একটা বুলেট এসে বিদ্ধ হয়ে গেছে আমার মাথায়, আমি হাসতে হাসতে শহীদ হয়ে যাচ্ছি।’ তার কথাই যেন বাস্তবে ফলে গেল। তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হলেন এবং তারপর মারা গেলেন। একজন মানুষ কত সাহসী হলে ‘অকাল মৃত্যু’র আশঙ্কা আছে জেনেও নিজ আদর্শ ও সংগ্রাম থেকে পিছু সরে যাননি। তিনি তার স্বভাবসুলভ তেজোদীপ্ত কণ্ঠে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। ওসমান হাদি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম সাহসী নেতা ছিলেন। স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে গত দেড় বছর, হাদি তার কথা ও কাজের মাধ্যমে এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এমনভাবে সবাইকে উজ্জীবিত করেছিলেন, তার মৃত্যুতে পুরো দেশ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
হাদি কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শে বিশ্বাসীও ছিলেন না। অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি যখন কথা বলতেন, তখন কাউকে ছেড়েও কথা বলতেন না।
যে লক্ষ্য নিয়ে ওসমান হাদিকে হত্যা করেছে, বাস্তবে তার বিপরীত ফল হয়েছে। ঘাতকরা যে ধারণা করেছিল, হাদির মৃত্যুর পর আধিপত্যবাদবিরোধী কণ্ঠগুলো স্তব্ধ হয়ে যাবে, তা ভুল প্রমাণ হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের নেতারা বরং আরও বেশি সোচ্চার হয়েছে। ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার দেখিয়ে দেওয়া পথেই ঐক্য গড়ে উঠছে। তারা ভেবেছিল, ওসমান হাদির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্যে আরও ফাটল ধরবে; তাদের সেই ভাবনায় নিশ্চয়ই ছেদ পড়েছে। ঘাতকরা হয়তো কল্পনাও করেনি, এভাবে হাদির জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। অবশ্য, আমরাও কি তার এ বিপুল জনপ্রিয়তার পরিমাপ করতে পেরেছিলাম? ওসমান হাদির শারীরিক মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু হয়নি। তিনি বেঁচে থাকবেন আধিপত্যবিরোধী সংগ্রামী মানুষের ভেতর।
কিছু কুৎসিত মানুষ হাদিকে নিয়ে তার মনোবৈকল্যে বমন গুলো দেখি। এবার আপনারাই বলবেন এরা কিভাবে মানুষ বলে নিজেদের দাবি করে। মনুষত্বের কিছু অবশিষ্ট আছে কি এদের মধ্যে?





সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


