১
ঘটনাটা আমি যখন শিক্ষক ছিলাম তখনকার । শিক্ষক না বলে প্রভাষক বলা ভাল । দুই শব্দের মধ্যে ফারাক বিশাল । ভাষণ বা লেকচার দিলেই প্রভাষক হওয়া যায় । লেকচার দেওয়া সহজ । কিন্তু আমার ধারণা শিক্ষক হওয়া এত সহজ না, অনেক জটিল বিষয় । যাই হোক, সেই আলাপ অন্য কোনদিন ।
ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক্স ল্যাবের ভাইভা নিচ্ছিলাম । ভাইভা জিনিসটা বেশ বোরিং । মানুষের কথা শোনার মত বোরিং কাজ দুনিয়াতে কমই আছে । আমি নিজে খুবই ব্যাড লিসেনার (মাই টোফেল স্কোর ভেরিফাইস দ্যাট !!!) । বোরডম দূর করার জন্য আমি পোলাপানের সাথে মজা নেবার চেষ্টা করতাম, নির্দোষ মজা (একজন শিক্ষকের কখনই সেটা করা উচিৎ না !) ।
- বল মাক্স (মাল্টিপ্লেক্সার) কি জিনিস ?
- স্যার, মাক্স হচ্ছে একটা আবরণ, সার্কিটের ওপর দিলে সার্কিট ভাল থাকে
- ও আচ্ছা, মাক্স তাইলে স্নো পাউডারের মত । মুখে লাগালে চেহারাও ভাল থাকবে নিশ্চয়ই
- না স্যার, কি যে বলেন !
- দাম বেশি কোনটার মাক্স না স্নো পাউডারের ?
- তাতো জানি না স্যার
- জানা দরকার না ? বউ বা গার্লফ্রেন্ড যখন আবদার করবে তখন সস্তায় মাক্স কিনে দেওয়া কস্ট ইফেক্টিভ স্ট্রাটেজি না ?
- কি যে বলেন স্যার !
আমার উল্টাপাল্টা কথা শুনে পোলাপান আরও উল্টাপাল্টা রিপ্লাই দিত ।
- রিং কাউন্টার কি করে ?
- স্যার, মোটর ঘুরায়
- ও, আমি তো জানতাম রিং চিপস বানায়, ছোটবেলায় আমরা যে ৩ টাকা দিয়ে রিং চিপস খাইতাম না, সেগুলা
- কি জানি স্যার, কিছু কাউন্টার মোটর ঘুরায় আর কিছু মনে হয় চিপস বানায়, আল্লাহর দুনিয়ায় কত কিছু যে হয়
ছেলেটা হঠাৎই দার্শনিক হয়ে গেল । ওরে কি গ্রেড দিব ভাবতে গিয়ে আমিও সেমি-দার্শনিক হয়ে গেলাম ! তো এমনই ভাইভা হচ্ছে একদিন । এক মেয়ের ভাইভা নিচ্ছিলাম ।
- ফুল এডারের সার্কিট পারো ?
- স্যার, আমার শ্বশুর গত সপ্তাহে অসুস্থ ছিল, প্রিপারেশন নিতে পারি নাই
- ও আচ্ছা (বাবা অসুস্থ থাকলে মনে হয় পার পাওয়া যায়, শ্বশুর অসুস্থ হলে মনে হয় কোনও মাফ নাই !), কোর্সের যে কোনও টপিক নিয়ে কিছু একটা বল
- বললাম না স্যার, শ্বশুর অসুস্থ ছিল
- আচ্ছা, অন্য একদিন এসে ভাইভা দাও তাহলে
- স্যার, সেটা পারব না । বাচ্চাটা অসুস্থ এই সপ্তাহে
- বল কি ? ঘরে সুস্থ কেউ আছে, নাকি সবাই পালা করে অসুস্থ হয় ?
- বাচ্চার বাবার হাঁপানির ধাত আছে (প্রশ্নটা যে রেটোরিকাল ছিল, এটা মেয়েটা বুঝে নাই)
- তোমাদের ফ্যামিলি দেখি রোগ বালাইয়ের মিউজিয়াম !
মেয়েটা সত্যি কি মিথ্যা বলছে জানি না । যদি সত্যি বলে থাকে, আমার রসিকতাটা যথেষ্টই নির্দয় ছিল । আবেগহীন বা অত্যন্ত স্বল্প আবেগি (স্টিল ডিবেটেবল) মানুষ হিসেবে আমি সেটা নিয়ে মোটেই বিচলিত হলাম না । সবার ভাইভা শেষে এসে মেয়েটা অনুরোধ করে গেল ল্যাব টেস্ট আর ভাইভাতে কিছু না পারার পরও তাকে যেন পাস করায়ে দেই । ফেল করালে তাকে আবার এই কোর্স রেজিস্ট্রেশন করতে হবে । তাতে যে পয়সা লাগবে শ্বশুরবাড়িতে থেকে সেটা তার জন্য ম্যানেজ করা মুস্কিল । এসব কথা শুনতে ভাল লাগছিল না । “ঠিক আছে, দেখব” বলে তাকে বিদায় করে দিলাম ।
সপ্তাহ দুই বাদে মেয়েটা আমার সাথে দেখা করতে আসল । অফিস রুমে বসে এমএস থিসিস বইটা সাইজ করার কথা, কিন্তু মুভি দেখতেছিলাম । দরজায় নক করে, মেয়েটা সালাম দিল, নাম বলল । রেগুলার কথা হয় না এমন মানুষের নাম আমার কখনই মনে থাকে না । আমার কতগুলা কাজিন আছে আমি যাদের নাম লিটারেলি ভুলে যাই, এদের বাচ্চা-গাচ্চার কথা তো ছেড়েই দিলাম । পিচ্চি, বাবু, হাবু এসব দিয়ে কাজ চালায়ে দেই । দরজার দিকে তাকায়ে জিজ্ঞেস করলাম
- হ্যাঁ বল
- স্যার, ভাল আছেন ?
- আমি ভাল আছি কিনা জানার জন্য দেখা করতে আসছ ?
- না স্যার, আপনাকে থ্যাংকস দিতে আসছি
- কি জন্য ?
- ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সে পাস করানোর জন্য
- ও আচ্ছা, তা কি গ্রেড পাইলা ?
- বি মাইনাস
- বি মাইনাস পাইয়া এত খুশি ? বল কি ?
- ভাবছিলাম ফেল করায়ে দিবেন, কিছু পারি নাই
- ও আচ্ছা, ইউ আর ওয়েলকাম
বলে আবার কানে হেডফোন লাগায়ে বসতে যাচ্ছিলাম ।
- স্যার, আর একটা কথা
- আবার কি ?
- আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন ?
- হুম, যাচ্ছি তো । কেন ?
- আমার আর আমার বাবুটার জন্য দোয়া কইরেন
- দোয়া চাওয়ার আর মানুষ পাইলা না ? আমি জুম্মার নামাজ ছাড়া নামাজ তেমন পড়ি না, ঠেকায় পরলে মাঝে মধ্যে মাগরিব পড়া হয়, যে রেগুলার নামাজ পড়ে তার দোয়া নিলে ভাল হয় না ?
- নামাজ ছাড়াই দোয়া কইরেন স্যার
- আচ্ছা করবোনে
মেয়েটা যেমন আসছিল, তেমন চলে গেল । আমি আবার কানে হেডফোন লাগায়ে বসলাম । মুভি শেষ করেই থিসিস বইটা নিয়ে বসতে হবে । মরার থিসিস !!!
২
ফল সেমিস্টারে ডিজিটাল ইমেজ প্রোসেসিং টিএ করার পর মেজাজ ভীষণ খারাপ হইছিল । যা পারি না তাই ধরায়ে দিছে । মনে মনে কয়েক হাজার গাল দিছিলাম । স্প্রিং সেমিস্টারে যখন সলিড স্টেট ডিভাইস থিওরির টিএ দেয়, খুশিতে মনে চাইছিল গ্র্যাড কোঅরডিনেটরের সাথে কোলাকুলি করে আসি । যখন জানলাম কোর্সে স্টুডেন্ট ৬০+, খুশির লেভেল একটু নীচে নেমে গেল, কোলাকুলি করার ইচ্ছেও আর ওতটা থাকল না । তারপরও আগের মত বুগিচুগি দিয়ে তো আর সেমিস্টার পার করা লাগবে না, এতেই চলবে ।
কোর্সের প্রফেসর কোরিয়ান । মহিলা বেশ প্র্যাকটিকাল মানুষ । একদিন লাঞ্চ করাতে চাইল, ভদ্রতা করে বললাম “না থাক” । ভাবছিলাম জোরাজুরি করবে, কিসের কি ! “ওকে” বলে একলা খাইতে চলে গেল । এদের কালচারে মনে হয় জোরাজুরি জিনিসটা নাই । অ্যান্ড আই লার্নড দ্যাট উইথ সাম কস্ট । ফাও লাঞ্চ খাওয়াতে চাইল, আজাইরা ভদ্রতা করতে গিয়ে ধরা খেলুম । খালি পেটে ভদ্র হয়ে লাভ আছে ?
একদিন মহিলা মেইল দিল দেখা করার জন্য । গেলাম অফিসে,
- ওয়ান অফ দ্য স্টুডেন্টস কমপ্লেইন্ড অ্যাবাউট ইউ, এ ফিমেইল ওয়ান
- ওহ ক্র্যাপ (বলতে চাই নাই, মুখ ফস্কে বের হয়ে গেল) ! বল কি ?
এই দেশে হ্যারাসমেন্ট বিশাল ইস্যু । একটা কেস খাইলে হোমরাচোমরাদেরই হালুয়া টাইট হয়ে যায়, আর আমি তো পুরাই দুধভাত, একটানে খেয়ে গিলে ফেলবে । ছাত্রীদের সাথে টুকটাক কথা তো হয়ই, কিন্তু কে কোন চিপা দিয়ে হ্যারাসড হয়ে গেল মনে করার চেষ্টা করতে থাকলাম, কিছুই মনে আসল না ।
- শি সেইড, ইউ গ্রেড টু জেনারাসলি
- হোয়াট ? আই থট ইউ সেইড সামওয়ান কমপ্লেইন্ড
- ইয়াহ, দ্যাট ইজ দ্য কমপ্লেইন
পুরাই মদনা হয়ে গেলাম । গ্রেড বেশি পাওয়া কেমনে কমপ্লেইন হয় ? খুশি হয়ে বাড়ি গিয়ে পার্টি দে, অপশন থাকলে আমারে ইনভাইট কর ।
- শি ক্লেইমড, সাম স্টুডেন্টস গেটিং সেম গ্রেড লাইক হার উইথ লেস এফোরট
- আউচ, আই ডোন্ট নো হাও টু রেস্পন্ড টু দ্যাট
- নাইদার ডু আই, বাট ইউ আর দ্য টিএ । ইউ হ্যাভ টু হ্যান্ডল ইট
নিজে কম পাইলে কাঁদাকাটি করা দেখছি, অন্যে বেশি পাইলে কাঁদাকাটি করাও দেখছি । কিন্তু কাঁদাকাটি অফিস পর্যন্ত এসে করতে কখনও দেখি নাই । এমনই বেকুব হইছিলাম, গাল দিতেও ভুলে গেলাম । টারশিয়ারি লেভেল এর মদনা হয়ে চলে আসলাম । জীবনে কি আর দেখেছ বালক, আরও কত কিছু দেখবা !
টার্ম প্রায় শেষ তখন । একদিন মেইল আসল একটা । কেউ একজন দেখা করতে চায় । বলে দিলাম অফিস আওয়ারে আসতে । আমার যে একটা অফিস আওয়ার আছে সেটাই ভুলতে বসছিলাম । অফিস আওয়ারে কেড ল্যাবে বসে হয় খেলা দেখি নাইলে ইউটিউব । পোলাপানের দেখা করতে আসা মানে হল, সামনের অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর মিলাইতে আসা । মামী (প্রফেসর) এমন বই টেক্সট বুক হিসেবে সিলেক্ট করছে, অনলাইনে ফুল সলিউসন পাওয়া যায় না । যেটুকু পাওয়া যায়, সেখান থেকে সে কোনও প্রশ্ন দেয় না । মামী ঝানু পাবলিক, ঘাস খেয়ে তো আর প্রফেসর হয় নাই !
অফিস আওয়ারের আগেই মহিলা এসে হাজির । কেড ল্যাবের পিসিতে লগ ইন করতে করতেই
- হায় মেইডি (এরা আমার নামের কোনও অংশই বলতে পারে না, শুরুতে কারেক্ট করতাম, এখন আর করি না, বল যা মন চায় !)
- হেই, (ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ উচু করলাম, যার মানে হয় “কি চাও”)
- আই মেইলড ইউ
- ও ইয়াহ, উত্তর মিলাতে আসছ ?
- কিসের উত্তর ?
- কিসের আবার, অ্যাসাইন্মেন্টের নিশ্চয়ই
- ও না না, অ্যাসাইন্মেন্ট দেওয়া হয় নাই
- ও আচ্ছা, শেষেরটা দাও নাই ?
- না, কোনটাই দেওয়া হয় নাই
মহিলার কাহিনী শুনলাম । শি হ্যাজ এ নিউবরন বেবি, অ্যান্ড ইটস হার থার্ড ওয়ান । ভ্যাকেসন সেমিস্টার নিল না কেন জিজ্ঞেস করলাম । পর পর দুই সেমিস্টার ভ্যাকেশন নিবে না । আমার ধারণা ভার্সিটি নিশ্চয়ই কনসিডার করত । সে নিজেই নেয় নাই । বলল মাস্টার্স নিয়া জলদি বের হইতে চায় । বাচ্চা পালা তো আছেই, টাকাও দরকার, এত পড়ে কি ঘোড়ার ডিম হবে ? “ইটস নট দ্য টাইম টু স্টাডি, দ্য ফ্যামিলি নিডস মানি” ।
ইউটাহ মরমনদের সবার কাহিনীই এরকম । ৩০ বছর আগেও গড়ে প্রত্যেক মহিলা ৫ জন বাচ্চার জন্ম দিত । ৫০ বছর আগে সংখ্যাটা ছিল ৬/৭ । ২০০৮ সালে ইউটাহতে মোট ৫৬ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করে । ২০১৪ সালে কমে ৫১ হাজার । এই ৫ হাজার কমে যাওয়ায় তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নাই । তারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরের সাথে সাথে তারাও এই সমস্ত সন্তানের কো-ক্রিয়েটর । সন্তান (ফিজিকাল বডিস) হচ্ছে অমরত্ব ও শাশ্বত গৌরবের একমাত্র উপায়, যা তারা ঈশ্বরের সাথে ভাগাভাগি করতে পারে । এরা নিজেদের Latter-day Saints (LDS) বলে । ফ্যামিলি ইজ দ্য কোর অফ এলডিএস চার্চ । যা হোক, ওদের দেশ, ওদের ফ্যামিলি, ওদের চার্চ । ওরা বাচ্চা পয়দা করে মাঠ ঘাট সয়লাব করে ফেলবে নাকি জঙ্গলে নিয়ে বলি দিয়ে আসবে, এসব নিয়ে আমার কিসের মাথাব্যথা । এসব বাচ্চা উৎপাদন জনিত কচকচি আবার অন্য কোন সময় হবে ।
ছাত্রী তিন শিশু নিয়া ছ্যারাবেড়া অবস্থায় পড়েছে । বাচ্চাগাচ্চা সামলানো নিশ্চয়ই কঠিন কাজ, সহানুভূতিশীল হবার চেষ্টা করলাম । যদিও বাচ্চা পালন বিষয়ে ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিএন্স না থাকায় পর্যাপ্ত এমপ্যাথি দেখাতে পারলাম না । বললাম ৪/৫ টা অ্যাসাইনমেন্ট করে জমা দিতে পারলেও প্রফেসরকে ম্যানেজ করে দিব । বাচ্চা সামলায়ে যতটুকু পারে করতে বললাম । তিন বাচ্চার অন্তত একটাও যদি আমার মত হয়, তাইলে তো পুরাই কাম সারছে । বেস্ট অফ লাক !
টার্ম শেষ । সামার শুরু, ক্যাম্পাস খালি হয়ে গেছে । আমাদের কমিউনিটির লোকজন মোটামুটি সবই আছে । তাই খালি ক্যাম্পাসও যা, ভরা ক্যাম্পাসও তা । একদিন মেইল আসল একটা । দুই লাইনের একটা মেইল । এক লাইনে লেখা “থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ” । আরেক লাইনে লেখা “গড ব্লেস ইউ”। নাম দেখে কিছুই বুঝতে পারলাম না (আগেই বলছি নাম জিনিসটা মোটেই মনে থাকে না) । কে রে ভাই ব্লেসিং পাঠাচ্ছিস, তার চেয়ে দুই একবেলা দাওয়াত দিয়ে খাওয়াইলে ............
প্রফেসরের সাথে টার্ম পরবর্তী বিদায়ী সাক্ষাৎ । কিছুক্ষন আজাইরা আলাপ ।
- তোমাদের দেশ থেকে তো ভালই স্টুডেন্ট আসে এখানে
- অত কই আসে ? আমি এই করিডোরটা চক্কর মেরে আসলেও তোমাদের দেশের অন্তত ৫ টা দেখা যাবে
- আহা, হবে আস্তে আস্তে । ভাল কথা তোমার কথা বলে এক স্টুডেন্ট মেইল করছিল
- এবার আবার কি হল ? বেশি মার্ক পেয়ে দুঃখিত ? নাকি কম মার্ক পেয়ে আনন্দিত ?
- আরে না না । বলল তুমি খুব হেল্পফুল ছিলা ।
- ও আচ্ছা (আমাকে কেউ ভরে ভরে নাম্বার দিলে আমিও তাই বলতাম)
- সে তার বেবি সামলায়ে অল্প সময়ে ভাল পরীক্ষা দিছে
- ও (আচ্ছা ওই মহিলা)
ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হলাম । ইউনিয়ন যাই, টেবিল টেনিস খেলব । বিচ্ছিরি রোদে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ।
- শালার সূর্য, দূর হ
- হুম, তোমার কথায় আমি দুপুর তিনটায় ডুবে যাই এখন, তুমি দূর হও
৩
ঈশ্বর নিয়ে আমার একটা থিওরি ছিল । খুবই ছেলেমানুষি থিওরি । এই ভদ্রলোক বা ভদ্রসত্ত্বা (জানিনা কি বলা উচিৎ) একটা সিস্টেম তৈরি করে সেটা চালু করে দিছে । সিস্টেমের অরিজিন পয়েন্ট বিগ ব্যাং হইতে পারে বা তার আগেও হইতে পারে । সেটা কথা না । কথা হল, এই সিস্টেম চালু করার পর সে সিস্টেমের কোনও কিছুকে এফেক্ট করতেছে না, কোনও কিছুকে ইনফ্লুএন্স করতেছে না । এটা এক রকমের এক্সপেরিমেন্ট, অনেকটা “দেখি কি হয়” টাইপ এক্সপেরিমেন্ট । এই দেখি কি হয় করতে করতে দুনিয়া আই মিন ইউনিভার্স এতদূর চলে আসছে । শুরুতে যখন এক-দুইটা মানুষ ছিল (অ্যাডাম-ইভ/আদম-হাওয়া) তখন সে ভাবছে “আরে বেকুব দুইটা, দেখি তোরা কি করিস”, আজকে যখন সেখানে সাড়ে সাত বিলিয়ন মানুষ তখনও সে ভাবতেছে, “আরে বক্সদের গুষ্টি, আরেকটু দেখি এরা কি করে” । নিতান্তই ছেলেমানুষি থিওরি । এটা পড়ে কেউ না আবার কোপাইতে চলে আসে !
এই সব মানুষকে একটা রেখার মত চিন্তা করা যায় । অবভিয়াসলি, স্টার্টিং পয়েন্ট জন্ম, এন্ড পয়েন্ট ডেথ । কিছু রেখা একটা আরেকটাকে ইন্তারসেক্ট করে ( সহজ ভাষায় “আওয়ার পাথ ক্রসড” ) । কিছু রেখা করে না, কিছু রেখার কোনোদিন দেখা হয় না (যেমন বাংলাদেশের মেয়েটা আর ইউটাহর মরমন মেয়েটা, এদের কোনওদিন দেখা হবে না) । এইসব রেখা সমান্তরাল । এই সমান্তরাল রেখাকে অন্য কোনও রেখা ইন্টারসেক্ট করে (যেমন আমি) । সমান্তরাল রেখার ইন্টারসেকশনের ফলাফল সমান, সমান একান্তর কোণ সমান অনুরূপ কোণ ।
প্যারালেল কজ,
প্যারালেল এফেক্ট,
প্যারালেল সিচুএশন,
প্যারালেল লাইফ,
প্যারালেল লাইন,
সমান্তরাল ।
জুলাই ৩, ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩