স্থাপনা নির্মান মানুষের অত্যান্ত পুরাতন একটি কৌশল। মানুষ দীর্ঘকাল ধরে এই কৌশল রপ্ত করেছে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। কিছু স্থাপনা এতই শক্ত এবং স্থায়ী হয়েছে যে আজ অবধি সেগুলো সমহিমায় দারিয়ে আছে। আজ এরকম কিছু স্থাপনার স্থাপত্য এবং স্ট্রাকচারাল গঠন নিয়ে আলোচনা করব। আমি মুলত স্থাপনা গুলোর আর্কিটেকচারাল এবং স্ট্রাকচারাল বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
০১) Ziggurat of Ur
Ziggurat শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার ধাপওয়ালা পিরামিড আকৃতির মন্দির যার শীর্ষে নির্মিত হত উপাসনাগার। এটি ইরাকের ধি-কর এলাকায় অবস্থিত। সুমেরিয়ান রাজা শুলগি ইসা আ: এর জন্মের প্রায় ২১০০ বছর আগে এটি নির্মান করেন। তাদের রক্ষকর্তা দেবতা নানার সম্মানএর জন্য এই মন্দির টি নির্মান করা হয়। অত্যান্ত প্রাচিন এই স্থাপনাটি ৬ষ্ঠ শতকে একবার নিও-ব্যবিলওনদের দ্বারা ধংশ প্রাপ্ত হয় এবং আবার নির্মিত হয় রাজা নেবোনিডাস এর দ্বারা।
আর্কিটেকচার: এর দৈর্ঘ ২১০ ফিট এবং প্রস্থ ১৫০ ফিট। উচ্চতা ১০০ ফিট। উচ্চতা টা কল্পনা প্রসুত করা হয়েছে কারন এই সুমেরিয়ানদের এই একটি স্থাপনাই টিকে আাছে। এখন যেটি টিকে আছে তা এর বেইজ মাত্র। এতে ১০০ ধাপের দুইটি লম্বা সিড়ি আছে যা ব্যবহার করে সরাসরি টেম্পলে চলে যাওয়া যায়। স্থাপনাটিকে স্থায়িত্ব দেবার জন্য এর বেইজ থেকে উপরের দিকে আস্তে আস্তে ঢালু করে তৈরি করা হয়েছে।
স্ট্রাকচারাল: মুলত বিশেষ ধরনের কাদামাটির মিশ্রনের তৈরি ইটের ব্লক দ্বারা এটি নির্মিত। ইটগুলোকে মাটি দ্বারা বন্ধন দেয়া হয়েছে। একদম উপরে ঠিক মাঝখানে মন্দির টি করা হয়েছে যাতে সেন্টার অফ গ্রাভিটির কারনে এটি কলাপস না করে। এর সিড়িগুলো দিকে খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে এগুলো একই সাথে মুল স্থাপনাটিকে একধরনের স্ট্রাকচারালি সাপোর্ট দিচ্ছে।
০২) Giza Pyramid Complex
পিরামিড সম্পর্কে সবাই কমবেশি জানি। এগুলো তৈরি হয়েছিল ফারও সম্রাটদের আমলে তাদের মৃত্যু পরবির্ত সমাহিত মন্দির হিসাবে। পুরো কমপ্লেক্সটিতে অনেকগুলো সমাধি রয়েছে। কিছু ধংস হয়ে গেছে কিছু রয়ে গেছে কালের পরিক্রমায় স্থাপনার জগতে ভাস্বর হয়ে।
আর্কিটেকাচার: জিওমেট্রির পিরামিড শেইপে সব গুলো মন্দির নির্মিত। প্রত্যেকটি সারফেস একই নিয়মে এবং একই সমান্তরালে তৈরি। সারফেস গুলো ঢালও একই ভালে একদম টপে গিয়ে মিলেছে। মন্দির গুলোর এই শেইপের কারনে সহজে এটি ভেদ করা দুঃসাধ্য হয়েছে। এছারা ভিতরের কবর গুলো সুরক্ষ দেয়ার জন্য এর অভ্যন্তরে প্রচুর ফেইক রাস্তা এবং কুঠরি করা হয়েছে। যাতে চোরেরা বিভ্রান্ত হয়। এছার তিনটি পিরামিডের একটা থেকে একটার দুরত্ব এবং এলাইনমেন্ট অসাধারন। বলা হয়ে থাকে যে ভোরের আকাশের শুকতারা এবং এই তিনটি পিরামিডের চুরা একই এলাইনমেন্টে মিলে যায়।
স্ট্রাকচার: পিরামিড গুলো নির্মান করা হয়েছে পলিশ করা সাদা চুনাপাথর একটা উপর একটা বসিয়ে। পাথর গুলোর সাইজ এবং শেইপ একই রকম। পাথর গুলোকে এত সুন্দর শেইপে কাটা এবং এত উপরে উঠিয়ে সেট করাটা আসলেই একটা রহস্য। তবে মনে করা হয় কাটা হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই তবে খুব ভালকরে পলিশ করা হয়েছে শেইপে আনার জন্য আর লিফটিং করা হয়েছে বড় বড় পাটাতন এবং পুলি ব্যবহার করে।
০৩) Abu Simbel Temples
মিশরের নুবিয়ার আবুসিম্বল এই দুটি বিশাল পাথররের মন্দির অবস্থিত। এর পাশেই বিখ্যাত লেক নাসের রয়েছে। এটি নির্মান করেন প্রাচিন মিশরের ফারাও রামেসিস ২ । ১৯৬৮ সালে পুরো মন্দির কমপ্লেক্সটি স্থানান্তরিত করা হয় আসওয়ান ড্যামের রিজার্ভার তৈরি করার জন্য। পুরো মন্দিরটাকে কেটে বেশ কয়েকটি টুকরা করা হয়। তার পর বিশাল ট্রান্সপোর্টারের মাধ্যমে সেগুলোকে বর্তমান স্থানে এনে একটা আর্টিফিলিয়াল পাহারের সাথে এটাচ করা হয়।
আর্কিটেকচারাল: মুল আর্কিটেকচার হচ্ছে মুর্তি গুলো। মান্দিরটি একটি সাদামাটা বাড়ি। প্রাচিন মিশরের আর্কিটেক্টরা পুরো মন্দিরটিকে এমন একটি এঙ্গেলে নির্মন করেছিলেন যে বছরের দুটি দিন ২২ ফেব্রুয়ারি এবং ২২ অক্টোবর সুর্যরশ্মি সরাসরি মুর্তিগুলো উপরে পরে একটা ঝলসান আলোকিত করে। মনে করা হয় এই দুই দিন রামোসিস এর জন্ম এবং মৃত্যু দিবস। অনেক মানুষ বছরের এই দুই দিন এখানে এই জিনিষটি দেখতে আসতেন।
স্ট্রাকচারাল: এত উচু মুর্তি তৈরি করতে যেটা সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে এই বেইজ। খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রতিটা মর্তির পায়ের নিচে এবং বসার স্থানটি বেইজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
০৪) Acropolis of Athens
প্রাচীন জাতি গ্রিকদের রাজধানি এথন্সে এর মুল কেন্দ্র বিন্দু ছিল ২৬০ ফুট উচু এই পাহারের উপর অস্থিত এই সিটাডেলটি । প্রায় ৭.৫ হেক্টর জামির উপর এই স্থাপনাটি নির্মিত। এটি বিভিন্ন সম্রাজ্যের সময়ে বিভিন্ন রকম কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ সময়ই এটি সম্রাজ্যের কেন্দ্র বিন্দু বা প্রসাসনিক দপ্তর হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এর ভিতরে বিভিন্ন দেব দেবির মন্দির এবং প্রাচীন বীরদের বিশাল সব মুর্তি ছিল।
আর্কিটেকচার: পুরো জমিটার বেশ কিচু অংশে ভাগ করে ডিজাইন টা করা হয়েছে। মন্দির গুলো এমন ভাবে করা হয়েছে যাতে প্রসাসনিক দপ্তর বা অন্য কোন ভবন থেকে এগুলো খুব সহজে দৃশ্যমান হয়। এছারা মুল ফটকে যাওয়ার রাস্তাটা খুব কায়দা করে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে শত্রু আক্রমন প্রতিহত করা যায়।
স্ট্রাকচারাল: পুরো স্থাপনার চারপাশে প্রায় ২৫০০ ফিট লম্বা , ৪০ ফিট উচু এবং ১২-২০ ফিট পুরু ওয়ালের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে। এর ইটের গাথুনি দেয়া হয়েছে প্রাচিন গ্রীসে পাওয়া একধরনের বিষেস লাইম এর কাদা দ্বারা। খুব মজবুত এবং স্থায়ি এই ওয়ালের কিছু অংশ আজও বিদ্যমান। এছরা মুল ভবনের কলামগুলোকে একই সাতে সৌন্দর্য এবং ডেড লোড ক্যারি করতে হয়। সিঙ্গেল কলামের উপর লোড ডিস্ট্রিবিউট করার ঘটনা এটাই প্রথম।
০৫) Colosseum
ইটালির রাজধানি রোমে অবস্থিত। প্রাচিন রোমানদের তৈরি স্টেডিয়াম বলতে পারেন। আবার গ্যালারিও বলতে পারেন। এটির নির্মান কাজ শুরু হয় সম্রাট Vespasian এর সময় এবং শেষ হয় সম্রাট Titus এর সময়। মনে করা হয় কলসিয়ামটি এক সাথে ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ লোক ধরতে পারত। (যেটা আমাদের এই সময়কার মাঝারি সাইজের স্টেডিয়ামের সমান। এবং এই সাইজের কোন স্টেডিয়াম বাংলাদেশে নাই) এটি মুলত ব্যবহার হত গ্লাডিয়েটর দের প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন যুদ্ধের বীরদের কৃতিত্ব এবং মৃত্যুদন্ড দেয়ার জন্য। পরবর্তিতে এটি বিভিন্ন সময়, অফিস, মন্দির, যুদ্ধের মালামালের গোডাউন সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। রাসেল ক্রো অভিনিত হলিউডি ফিল্ম গ্লাডিয়েটর যারা দেখেছেন তারা এটা সম্পর্কে খুব ভাল বুঝবেন। যারা দেখেন নাই তারা এখনই দেখে নিতে পারেন। খুব ভাল জানবেন এটি সম্পর্কে।
আর্কিটেকচার: মুল কলসিয়ামটি গোল না করে এর আর্কিটেক্টরা এটিকে কিছুটা উপবৃত্তাকার শেইপে ডিজাইন করেছেন। এর মুল কারন হল বিপুল মানুষের প্রচন্ড লোড মাটিতে সমভাবে ছরিয়ে দেয়া। দুই ভাবে এটির বর্ননা দিতে হবে।
এক্সটেরিয়র: এটি ৬৪০ ফিট লম্বা এবং ৫১০ ফিট প্রসস্থ। এর বাহিরের দেয়াল ১৫৭ ফিট উচু । ভিতরের মাঠটি ২৮৭ বাই ১৮০ ফিট এবং মাঠের পাশের ওয়াল টি ১৫ ফিট উচু। এখান থেকেই মুল বসার সিট গুলো শুরু হয়েছে। এছারা একবারে উপরে ছাওনি ছিল রোদ থেকে দর্শদের মাথা বাচানোর জন্য। পুরো দেয়ালে আর্কের শেইপের যে খোপ গুলো আছে এগুলো দেয়া হয়েছে মুলত বাতাস চলাচলের জন্য।
ইন্টেরিয়র: ভিতরে বসার স্থান আগত অতিথিদের সম্মান অনুসারে সাজানো ছিল। সবচেয়ে ভিআইপি ছিল সম্রাট এর বসার স্থান। এর পর ছিল সিনেটরদের। তারা চাইলে তারেদ চেয়ার নিজেরা নিয়ে আসতে পারতেন। এর ছিল ধনিক শ্রেনির জন্য। এবং সর্বশেষ ছিল সাধার মানুষের জন্য। খুব সুন্দর ভাবে খাবার এবং পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। ভিতরের চলাচলের রাস্তা গুলো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে এক শ্রেনির মানুষের সাথে আরেক শ্রেনির মুখামুখি না হতে হয়। এটা ধনিক শ্রেনির লোকের খুব অপছন্দ করতেন। এর নিচে ছিল গ্লাডিয়েটর এবং নিরাপত্তরক্ষিদের স্থান। সেখানে তাদের খাওয়া,থাকা এবং প্রাকটিস করার স্থান ছিল। তারা সেখান থেকে পুলির মাধ্যমে উপরে উঠে মাঠে প্রবেশ করতেন।
স্ট্রাকচার: এর বেইজটি প্রায় ৬ একর জমির উপর করাহয়েছে। পুরো স্থাপনাটি করা হয়েছে কিছুটা ভিতরের দিকে কাত করে যাতে লোড বর্ধিত অংশে পরে। এত ভাল মানের পাথর খন্ড ব্যবহার করা হয়েছে যে এখনো এর পাথর গুলো চোরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রিতিমত পুলিশি পাহারা দিতে হয় ইতালি সরকারকে। মজার ব্যপার হল প্রায় ১ লক্ষ কিউবিক মিটার এর এই বিশাল বিশাল পাথর খন্ড গুলো কে কোন সিমেন্ট মর্টার দ্বরা জোরা দেয়া হয় নাই। এগুলো কে জোরা দেয়া হয়েছে প্রায় ৩০০ টন লোহার ক্লিপ দ্বারা। যেগুলেঅ কিছু অংশ এখনো দারিয়ে আছে সগৌরবে। আমার মনে হয় কোন স্থাপনাতে এত ব্যাপক মাত্রায় লোহার লোহার ব্যবহার এটাই প্রথম।
০৬) Ajanta Caves
পাথুরে পারে গর্তকরে বানানো এই প্রাচীন বুদ্ধ মন্দির গুলো ভারতের মহারাস্ট্র প্রদেশে অবস্থিত। দুটি পর্যায়ে নির্মান করা হয়। খ্রিস্ট জন্মের দুই শতক আগে প্রথম পর্যায়ে নির্মান করা হয় এবং খ্রিস্ট জন্মের ৪ শতক পরে দ্বিতিয় পর্যায়ে নির্মান করা হয়। ১৮১৯ সালে একজন ব্রিটিশ অফিসার পাশের জঙ্গলে শিকার ধরার সময় এটি আবিস্কার করেন। এর আগে এটি আধুনিক বিশ্বের কাছে অজানাই ছিল। অত্যান্ত দুর্গম এই স্থানে বৌদ্ধ সাধুরা কি জন্যে বা কিভাবে এগুলো নির্মান করেছিলেন তার কোন দালিলিক প্রমান পাওয়া যায় নাই। এই গুহা গুলো নিযে ভাবছি আলাদা করে একটা পোস্ট দিতে হবে।
আর্কিটেকচার: ভাবছেন গুহার আবার কিসের আর্কিটেকচার। তাহলে নিচের ছবিটা দেখেন। প্রতিটা গুহার মধ্যে অত্যান্ত যত্ন করে কক্ষগুলো ডিজাইন করা হয়েছে। রয়েছে মুল হলরুম যেখানে মুর্তি থাকত এবং প্রাথনা করা হত। পাশে রয়েছে সাধুদের জন্য বেডরুম এবং পয়নিস্কাসন রুম। এগুলো দেখলে আধুনিক স্থাপনার মত বলে মনে হবে। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এক নম্বর গুহার ভিতরের রুম প্লানিং।
রুমগুলো খুব সুন্দর করে প্রধান প্রাথনা হলের আশে পাশে সাজানো হয়েছে যাতে সাধুরা খুব দ্রুত প্রার্থনার জন্য সেখান থেকে বের হতে এবং ঢুকতে পারেন।
স্ট্রাকচারাল: প্রথম বিষয়টি হচ্ছে পাহারটি।
এটি একটি আগ্নেয় শিলাদ্বারা গঠিত অত্যন্ত শক্ত পাথরের পাহার। কিন্তু আজথেকে ২ হাজার বছর আগে কিভাবে এত শক্ত পাহার এত মসৃন করে কাটা হল তা একটা অজানা রহস্য। ভিতরের প্রার্থনার জন্য নির্মিত বড় হলরুমগুলোতে পিলার দিয়ে একসাথে সৌন্দর্য এবং সাপোর্ট এর কাজ করা হয়েছে। যাতে এর ছাদ ধসে না পরে। এছারা গেট গুলোতে পিলার সাপোর্ট দেয়া হয়েছে যাতে গুহার মুখগুলো না ভাঙে। এছারা এত দুর্গম খারা পাহারে এগুলো নির্মান করাটাও একটা মুন্সিয়ানা বলতে হবে।
আচ্ছা সমগ্র পৃথিবীতে তখন এই একই নিয়মে কেন যেকোন বড় স্থাপনার দরজায় কলাম বানানো হত?? তারা তো একে অন্যকে চিনত না বা একে অন্যের সম্পর্কে জানত না। তাহলে কিভাবে সবারটা একই রকম হল??
০৭) Petra
যারা স্টিভেন স্পিলবার্গের হলিউডি মুভি "Indiana Jones and the Last Crusade" দেখেছেন তারা এটা সম্পর্কে খুব ভালো ভাবে অবগত আছেন। এটি জর্ডানে অবস্থিত। ধারনা করা হয় এগুলো Nabataeans দের আমলে নির্মান করা হয়। ১৮১২ সালে এক সুইস অনুসন্ধানকারি এই শহরটি অত্যান্ত রুক্ষ মরুভুমির পাথরের মাঝে খুজে পান। ধারনা করা হয় এটি একটি বানিজ্যিক রাস্তার মধ্যে অবস্থিত ছিল। তাই এখানে এরকম একটি জনপদ গরে উঠেছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি ভুমিকম্প এবং বানিজ্যিক রাস্তার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এটি পরিত্যাক্ত হয়ে যায়।
আর্কিটেকচারাল: এদের মুল আকর্সন গুহা গুলোর বাহিরের প্রাসাদের মত কারুকাজ করা গেট গুলো। এত উচু এবং মসৃন করে কাটা যে মনে হবে আধুনিক সকল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এগুলো কাটা হয়েছে। ভিতরে যা ছিল তা এখন আর নেই। তবে ধারনা করা হয় প্রতিটা গুহার ভিতরে পুরো একটি প্যালেস এর সকল সুযোগ সুবিধা ছিল। পাহার গুলো কাটা হয়েছে অনেক হিসাব নিকাশ করে। যাতে মুল ডিজাইনের কোন হেরফের না হয়।
স্ট্রাকচার: সামনের বিশাল বিশাল কলাম গুলো আসলে গুহার মুখটাকের উপরতেকে ধরে রেখেছে। এছরা কিচু কিছু গুহার মুখের কলামগুলো এর সাপোর্ট হিসাবে কাজ করছে। তবে এগুলো কাটা এবং এত মসৃন করে কাটার কোন সদুত্তর এখনো কেও দিতে পারে নাই।
০৮) Great Wall of China
চীনের একটি স্থাপনা। পৃথিবীর ইতহিাসে এত লম্বাকোন স্থাপনা এখন অবধি নির্মিত হয়নাই। এটি উত্তর চীনের সিমানাতে নির্মিত। এটির প্রথম অংশের কাজ করেন খ্রিস্টপুর্ব ২০০ শতকে কিন রাজবংশ। এবং ১৪ শতকে শেষ অংশের কাজ করেন মিং রাজবংশ। অত্যান্ত দীর্ঘ সময় ধরে এর কাজ চলে। মুলত উত্তর চিনের অন্যান্য রাজ্য গুলো থেকে চিনকে সেফ রাখার জন্য এটি নির্মান করা হয়। তবে এটি চাঁদ থেকে দেখা যায় না।
আর্কিটেকচার: মুল ওয়ালটি ৩৭০০ কিলোমিটার লম্বা। এর উচ্চতা ১৬-২৬ ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এবং উপরে সর্বোচ্চ ১৬ ফিট পর্যন্ত প্রসস্ত। পাহারি অংশ গুলো সবেচেয়ে সুন্দর। পাহারের ঢাল এবং উচু নিচুর সাথে মিলিয়ে এর ঢালগুলো নির্মান করা হয়েছে। এত বড় একটা এলাকা আগে সার্ভে করে তার পর তার প্লানিং করা একটা বিশাল কাজ। এটি কারা করেছে তা জানা যায়নি।
স্ট্রাকচার: প্রথম অংশ নির্মান করা হয় মাটির তৈরি ইট এবং এক ধরনের লাইম সমৃদ্ধ মাটিকে বন্ধনি হিসাবে ব্যবহার করে। প্রথমে মাটিকে একটি নির্দিস্ট গভিরতায় কেটে সেখানে ব্লকগুলো আস্তে আস্তে বসিয়ে খারা এবং মসৃন এই ওয়ালটি তৈরি করা হয়। পরবর্তিতে পাথর এবং লাইম ব্যবহার করা হয়। পাথরের অংশগুলো এখনো যথেস্ট শক্তিশালি এবং মোটামুটি বর্তমান আধুনিক পদাতিক বাহিনি ঠেকিয়ে দিতে পারবে।
০৯) Machu Picchu
মাচুপিচু পেরুতে অবস্থিত। এটি ১৫শ শতকে ইনকা সভ্যতার মানুষেরা নির্মান করেন। এটি অত্যন্ত উচু এবং পাহারি অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে যাবা কোন রাস্তা বা কোন পথ নেই। এতটাই দুরহ যোগাযোগ ব্যাবস্থা যে এখানে যেতে একটা বিশাল ঘন বন এবং পর্বত পার হতে হয়। ইনকারা এখানে কি নির্মন করেন নাই। ঘর বারি, রাস্তাঘাট, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পার্ক, পয়নিস্কসন ব্যবস্থা সহ একটা শহরের জন্য প্রয়োজনিয় সবকিছু।
আর্কিটেকচার: শহরের প্লানিংটা অত্যান্ত চমকপ্রদ। পুতিটা স্থাপনাডিজাইন করা হয়েছে সুর্যের অবস্থান হিসাব করে। যেমন নিচের স্থাপনাটি।
এখানে মন্দির গুলোর জানালা গুলো এমন এঙ্গেলে বসানো হয়েছে যাতে সুর্যের অবস্থানের উপর সময় নির্ধারন করা যায়। এছরা একটা চমৎকার ড্রেনেজ সিস্টেমছিল শহরের পয়নিস্কশনের জন্য। এছারা গবাদি পশু চরানো এবং চাষাবাদ করার জন্য পাহারের ঢালে খুব সুন্দর করে ছোট ছোট মাঠ বানানো হয়েছিল।
স্ট্রাকচারাল: সবচেয়ে আশ্চর্য জনক ব্যাপার হল এত উচুতে কোন রাস্তা ছারা এত বড়বড় পাথর তুললো কিভাবে আর তা নির্মান করল কিভাবে।?? ধারনা করা হয় নির্মান করা হয়েছে দির্ঘ সময় ধরে। পাথরের ব্লক গুলোকে লাইম দ্বারা বন্ধনি দেয়া হয়েছে। বেইজের কাজে মাটি খোরা হয়েছে খুব সামান্য। একাজে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ঢাল গুলোকে। মন্দির গুলো কে কিছু বড় পাথর দিয়ে সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। মাঠ গুলোকে এক শক্ত সাপোর্ট দিয়েছে যে এখনো সেগুলো মাটি ধরে রাখছে অবলিলায়।
পোস্ট বিশালকার ধারন করেছে। তাই আর লিখলাম না। লেখায় বানান বা তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। শুধরিয়ে দেবার অনুরোধ রইল।
সামনে নতুন পর্বে আরো কিছু নিয়ে হাজির হব। আশা করি পোস্ট সবার ভাল লাগবে। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:২৪