আমরা অনেকেই ধারনা করি যারা গবেষনার বা আবিস্কারের কাজ করে থাকেন তারাই মনে হয় সবচেয়ে সুরক্ষিত কাজ করেন। মানে এতে কোন মৃত্যু ঝুকি নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাস বলছে আবিস্কারের সাথে সাথে আবিস্কারককে অনেক সময় মনেে নিতে হয়েছে নির্মম অত্যাচার এবং মৃত্যু। আজকে শুধু মাত্র আবিস্কারের সময় যারা অসাবধানতা বশত বা দুর্ঘটনাজনিত ভাবে মৃত্যুবরন করেছেন তাদের কে নিয়ে।
১০) Henry Winstanley
ইংরেজ লাইট হাউজ আর্কিটেক্ট ছিলেন। তিনিই আধুনিক লাইটহাউজ নির্মানের পথিকৃত হিসাবে বিবেচিত হন। এক সময় তিনি তার নবনির্মিত একটা লাইটহাউসের শক্তিমত্ত পরিক্ষ করার জন্য সেটাতে প্রচন্ড ঝরের সময় থাকেন। ঝরের দাপটে লাইট হাউসটি ভেঙ্গে পরলে তিনি তার পাচ সহযোগি সহ মৃত্যু বরন করেন।
০৯) Alexander Bogdanov
একজন রাশিয়ান চিকিৎসক ছিলেন। তিনি একই সাথে চিকিৎসক, দার্শনিক, অর্থনিতিবিদ, সাইন্সফিকশন লেখন এবং অবশ্যই লেনিনেরর রুশ বিপ্লবের অন্যতম সহোযোগি। তিনি মানুষের রক্ত সঞ্চালন নিয়ে গবেষনা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের শরিরের রক্ত ট্রান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে পুনর্জিবন দান করা সম্ভব। তিনি লেনিনের বোনকে রক্ত ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে বাচিয়েছিলেন। তার এই আজব থিউরি তিনি অনেক গবেষনা করেছিলেন। পরিশেষে একবার তিনি এক ম্যালেরিয়া নারি রোগিকে নিজের ব্লাড ট্রান্সফার করতে গিয়ে সেই ইনফেকশনেই মারা যান। তবে ধারনা করা আধুনিক ক্যান্সার এর জন্য যে ব্লাড ট্রান্সফারের একটা প্রযুক্তি আসছে সেটা ওনার সেই থিউরি থেকেই উতপাত্তি। উল্লেখ্য ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি সৃস্টিকর্তায় বিশ্বাসি ছিলেন না।
০৮) Cowper Phipps Coles
তিনি একজন ইংরেজ নৌবাহিনির অফিসার এবং আবিস্কারন ছিলেন। ক্রিমিয়া যুদ্ধের সময় তিনি ইংরেজ নৌবাহিনির জন্য ঘুর্নয়মান কামান আবিস্কার করেন। তার এই আবিস্কারের ফলে পুরো যুদ্ধে অটোমান মিত্র শাক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধের নৌ সেক্টরে অসাধারন সুবিধা আদায় করে। কারন এর আগে জাহাজগুলোতে শুধু মাত্র এক দিকে ফায়ার করার সিস্টেম ছিল। তার এই আবিস্কারের ফলে যেমন ক্রুরা নিরাপদ হয় তেমনি প্রচুর ফায়ার পওয়ার পাওয়া যায়। তিনি এর পরে তার পরিক্ষামুলক যুদ্ধ জাহাজ HMS Captain নির্মান করেন। এতে তিনি তার নিজের মত করে অনেক আজব এবং জাহাজের জন্য ঝুকিপুর্ন জিনিষ সেট আপ করেন। তার মধ্যে ছিল hurricane deck নামক এক অদ্ভুদ এবং সেটা জাহাজের জন্য ঝুকিপুর্ন। এই জিনিষ জাহাজের সেন্টার অফ গ্রাভিটি এতটাই উপরে উঠে যায় যে ঝরের বাতাসের চাপে জাহাজ টা মাঝ খান থেকে ভেঙ্গে সাগরে ডুবে যায়। সাথে সাথে মারা পরেন Coles সহ আরো ৫০০ জন ক্রু। (ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সম্পর্কে আলাদা একটা পোস্ট লেখার ইচ্ছা আছে)
০৭) Karel Soucek
ইতি মুলত একজন স্টান্টম্যান ছিলেন। তিনি উচু থেকে গরিয়ে পরার একধরনের ব্যারেল আবিস্কার করেন। তিনি তার আবিস্কারের নাম দিয়েছিলেন ব্যারেল। তো সেই ব্যারেলে করে তিনি টেক্সাসের এস্ট্রাডোম স্টেডিয়ামে একটি স্টান্ট করার আয়োজন করেন। তিনি ১৮০ ফিট উটু একটি সাপোর্টিং স্ট্রাকচার থেকে গরিয়ে পরলেন। নিচে একটি সুইমিং পুল সেট করা ছিল যেখানে তার পরার কথা ছিল। কিন্তু সামান্য একটু ভুলের কারনে তিনি পুলের মধ্যে না পরে সরাসরি পুলের ওয়ালে আঘাত করেন। সাথে সাথেই তিনি মৃত্যুবরন করেন।
০৬) Franz Reichelt
অস্ট্রিয়ার নাগরিক Franz Reichelt একজন দর্জি ছিলেন। তিনি মুলত আধুনিক প্যারাশুটের আবিস্কারক। ১৯১২ সালে তিনি প্যারিসের আইফেল টাওয়ার থেকে তার নিজের তৈরি কৃত প্যারাশুট দিয়ে লাফ দেন। প্রচুর দর্শক, সাংবাদিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিদিরে সামনে তিনি এই কাজটি করার টেস্টা করেন। কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় প্যরাশুটটি সময় মত না খুলায় তিনি মাটিতে সজোরে আধাত করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরন করেন।
০৫) Otto Lilienthal
জার্মান এই ভদ্রলোককে ধরা হয় আধুনিক গ্লাইডার রাইডের জনক। গ্লাইডার কি সেটা বুঝার সুবিধার্থে নিচের ছবিটা দেয়া হল। বর্তমান যুগে মিলিটারি, সাধার অভিযাত্রি সহ প্রচুর পরিমানে এই গ্লাইডার ব্যাবহৃত হচ্ছে। তো এই কাজে এতটাই জনপ্রিয় হচ্ছিলেন যে তার ছবি নিয়মিত পেপারে আসতে লাগলো, তাকে নিয়ে খবর ছাপা হতে থাকলো এবং তাকে অনুসরনও করা শুরু হল। কিন্তু একদিন তিনি তার একটি জাম্পের সময় গ্লাইডারে ত্রুটি থাকার কারনে প্রায় ১৭ মিটার নিচে পরে যান এবং মেরুদন্ডের হার ভেঙ্গে ফেলেন। পরের দিন তিনি মৃত্যুবরন করেন।
০৪) William Bullock
আমেরিকান এই আবিস্কারকই পৃথিবীতে প্রথম দ্রুত প্রিন্ট করার মেশিন আবিস্কার করেন। এর আগে যে প্রিন্টিং মেশিন ছিল তা ছিল অত্যান্ত স্লো এবং খরচ সাপেক্ষ। তার সেই আবিস্কার পুরো দুনিয়ার বইয়ের জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। তিনি একদনি তারই আবিস্কার করা প্রিন্টিং মেশিনের একটি যন্ত্রাংশ পা দিয়ে ঠিক করতে গেলে তার পা সেটাতে আটকে যায় এবং সেখানে ক্ষতের সৃস্টি হয়। পরবর্তিতে সেই ক্ষতে ঘা সৃস্টি হলে ডাক্তাররা অপারেশন করে পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। ১৮৬৭ সালে তার সেই অপারেশনের সময় তিনি মৃত্যুবরন করেন।
০৩) J. G. Parry-Thomas
J. G. Parry-Thomas এবজন মোটর রেসার এবং অপোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি মুলত রেসিং কারের উপর কাজ করেছেন। তার টার্গেট ছিল তৎকালিন রেসার Malcolm Campbell এর সর্বোচ্চ স্পিড এর রেকর্ডটি ভেঙে ফেলা। এ জন্য তিনি তার গারি বাবস এর পিছনের চাকার সাথে অতিরিক্ত কিছু চেইন যুক্ত করেন এছারাও পুরো গারির মধ্যে তিনি প্রচুর মডিফিকেশন করেন। ১৯২৬ সালে তিনি ১৭০ কিমি স্পিড তুলে Malcolm Campbell এর রেকর্ডটি ভেঙে ফেলেন। কিন্তু পরের বছরই Malcolm Campbell আবার তার রেকর্ড ভাঙেন। তাই তিনি নতুন ভাবে রেকর্ড গরার জন্য রেসিং এর সময় হঠাৎ তার গারির সেই এক্সট্রা চেইন ছিরে তার গলায় পেচিয়ে ঘটনা স্থলেই মৃত্যবরন করেন।
০২) Thomas Midgley Jr
তিনি একজন আমেরিকান রসায়নবিদ ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম লিডেড পেট্রোল বা TEL এবং CFC গ্যাস আবিস্কার করেন। এই ভদ্রলোককে বলা হয় আধুনিক পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়ানক খুনি আবিস্কারকদের অন্যতম যিনি পুরো পৃথিবীকে হুমকির সম্মুখিন করে গেছেন। TEL এমন একটি দাহ্য পদার্থ যা অকেটনের মধ্যে থেকে সেটাকে আরো দাহ্য করে এবং প্রচুর ধোয়ার সৃস্টি করে যা পরিবেশকে মারত্মক দুষিত করে। দুইটা বিশ্বযুদ্ধে তার আবিষকৃত এই ভয়ানক জিনিষ প্রচুর মানুষের মৃত্যুর কারন ছিল।আর CFC এর বিষয়টাতে সবার জানাই আছে। তিনি তার এই ভয়ানক গবেষনার শেষ পর্যায়ে আস্তে আস্তে পোলিও এবং লেড এর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পঙ্গু অবস্থায় পরে থাকেন। একসময় তিনি চাকরকে নির্দেশ দেন তার খাটের উপরে একটা পুলিতে রশি ঝুলিয়ে তাকে টেনে তোলার জন্য। কিন্তু একদিন সকালে তার চাকর তাকে খুব জোরে টান দিয়ে তুলতে গেছে তিনি মেরুদন্ডের হার ভেঙ্গে মার যান। বলা হয়ে থাকে তার নিজেরই আবিস্কার লেডেড পেট্রোল আর পুলি দুইটাই তার মৃত্যুর কারন ছিল।
০১) Marie Curie
ম্যারি কুরি মুলত নতুল মৌল রেডিয়ম এবং পোলোনিয়াম আবিস্কার করেন। তার এই আবিস্কার যে কতটা ভয়ানক ছিল পৃথিবীর জন্য সেটা তিনি তার জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। তিনি কখনওই বুঝতে পারেননি যে এই মৌল দুটির রেডিয়েশন মানুষের সাস্থের জন্য ঝুকিপুর্ন হতে পারে। তিনি নিয়মিত তার পকেটে করে রেডিওএক্টিভ সমৃদ্ধ টেস্টটিউব তার শোবর ঘরে নিয়ে যেতেন যা রাতের বেলায়ও উজ্জল অবস্থায় থাকতো। তিনি বিষয়টা খুবই পছন্দ করতেন। কিন্তু আস্তে আস্তে উনার শারিরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ডাক্তারি পরিক্ষায় ধরা পরে যে প্রচন্ড রেডিয়েশনের কারনে aplastic anaemia নামক ক্যান্সার আক্রান্ত তিনি। এর কিছুদনি পরেই তিনি এই রোগেই মৃত্যুবরন করেন।
আমার ফেসবুক আইডিতে যুক্তথাকুন
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৫০