somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যাঁ ভাই, আমি চাকরি পেয়েছি !

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আগের লেখায় একটি চাকরির জন্য আমি হাঁহাঁকার করেছিলাম। আনন্দের বিষয় হল, অবশেষে আমি একটি চাকরি পেয়েছি। বিগত ২ মাস হল, আমি চট্টগ্রাম প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা’ বিভাগে প্রভাষক পদে কর্মরত আছি। এর মানে দাঁড়ালো যে আমি দেশে ফিরে আসার ৩ মাসের মধ্যেই একটি চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলাম:)!

যাইহোক, এইবার একটা ছোটখাটো গবেষণায় আসা যাক। এই চাকরির ফলে মাস শেষে আমি সর্বসাকুল্যে ১৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। এইভাবে ২ মাস যাওয়ার পর, আমি আমার মাসিক আয়-ব্যয় এর একটা হিসাব বের করলাম:|!

** সকল খরচ বাস্তবিক অর্থে আনুমানিক পূর্ণ সংখ্যায় দেয়া হল:

খাবার খরচ = ৬,০০০ টাকা
যাতায়াত খরচ = ৩,০০০ টাকা
বাড়ি ভাড়া = ২,০০০ টাকা
মোবাইল বিল = ১,৫০০ টাকা
ইন্টারনেট বিল = ১,০০০ টাকা
বিবিধ খরচ = ২,৫০০ টাকা
_______________________________
সর্বমোট খরচ = ১৬,০০০ টাকা

এর মানে হল, মাস শেষে আমার সঞ্চয় মাত্র ২,০০০ টাকা। এইভাবে আরও ১/২ বছর চলতে হবে। এমতাবস্থায়, আমার মস্তিকে কয়েটি নতুন চিন্তা এসেছে:

১. এইভাবে চলতে থাকলে, এই জীবনে আর বিবাহ হইবে না:|

২. বাবা-মা অথবা পরিবারের দায়-ভার নেয়া সম্ভব নয়/:)

৩. আমি কি এই সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন চাকরি খুঁজব?

৪. এই চাকরি দিয়ে জীবনে কিছুই হবে না!

৫. এই চাকরি যদি করতেই হয়, তবে নিয়মিতভাবে আমাকে বিশেষজ্ঞ মতামত-দানকারী ব্যক্তি [কনসালটেন্সি] হিসাবে কাজ করতে হবে।

৬. অথবা আগামী ১৫/২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা, কবে একজন অধ্যাপকের মর্যাদা পাব?:D

এইরকম হাজারো চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। আগের লেখায় বলেছিলাম যে, “আমি মাসিক ৩০ হাজার টাকার নিচের বেতনে কোন চাকরি করব না”। কিন্তু আফসোস, সেই ১৮ হাজার টাকার বেতনেই চাকরি করতে হচ্ছে। কেননা ক্ষুধার রাজ্যে যে পৃথিবী আজ গদ্যময় হয়ে রয়েছে !!
__________________________________________________________

সেইদিন একটি ‘সিএনজি’তে উঠলাম। মিটারে উঠল ৮০ টাকা, কিন্তু চালক ভাই আমার কাছ থেকে নিলেন ১৫০ টাকা। আমি বললাম, “ভাই আমি এই অতিরিক্ত ৭০ টাকা আপনাকে কোথা থেকে দিব? আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা, আমার তো বেতন খুবই স্বল্প”। উনি বলে উঠলেন, “এইরকম নিয়মকানুনের মধ্যে চললে তো এই দেশটা সোনার বাংলা হয়ে যেত”। আমি হাসি মুখে উনাকে ন্যায্য ভাড়ার চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলে আসলাম।

না জানি আমাদেরকে এইভাবে পদে পদে আর কত নিয়ম ভঙ্গের মুখোমুখি হতে হবে? এই অতিরিক্ত টাকা আয় করার কোন উৎস আমার জানা নেই, তবে ব্যয় করার অনেক অনেক সুযোগই আমার সামনে খোলা আছে।

একদিন গরীব আর মধ্যবিত্তের এইভাবে নিষ্পেষিত হবার দিন শেষ হবেই। একদিন এইদেশ হবে ‘সোনার বাংলা’। সেই দিন হবে আমার দেশে “সূর্যোদয়”। আর সেই সোনালি রঙের আলোক-ছটা যেন আজই ছড়িয়ে পরুক আপনাদের মুখমণ্ডলে......এই কামনায়, সবাই ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।

__________________________________________________________
*** ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও দেশ সেবার আকাঙ্ক্ষা বাদ দিয়ে, উচ্চ-বেতনের নতুন একটি চাকরি খোঁজা শুরু করলাম.........বাঁচতে চাই, বাঁচার মত করে !!!

__________________________________________________________
সবশেষে একটি কবিতা রইল:;)

"জীবন – পাবলো নেরুদা"

"মাঝে মাঝে যখন তোমার কথা ভাবি
কি যে খারাপ লাগে!
যেহেতু তুমি জানো না
আমার সঙ্গে রয়েছে অগণন বিজয়ী মানুষের মুখ
যা তুমি দেখতে পাও না,
আমার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে অগণন পা আর হৃদয়,
তাই আমি একা নই
একা হিসেবে নিজের কোনো অস্তিত্বই নেই,
আমি কেবল রয়েছি যারা আমার সঙ্গে চলেছে তাদের পুরোভাগে,
তাই আমি দুর্বল নই
কেননা আমি কেবল আমার ছোট্ট জীবনটাকেই বহন করে নিয়ে চলিনি
চলেছি সমস্ত মানুষের হৃদয়কে বহন করে
এবং এগিয়ে চলেছি দৃঢ় পায়ে
কেননা আমার যে হাজারো চোখে,
নিমেষে চূর্ণ করে ফেলি ভয়ঙ্কর সব পাথর
কেননা আমার যে হাজারো হাত,
তাই আমার কন্ঠস্বর
প্রতিটা দেশের সমুদ্রতীর থেকেও শোনা যায়
কেননা এ কন্ঠস্বর
যারা কখনও কথা বলেনি তাদের,
যারা কখনও গান গায়নি তাদের,
আর আজ যারা গান গাইছে
চুম্বনে তারা তোমাকে স্পর্শ করছে।"
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২৬
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×