আমি তখন লেস্টারশায়ারে থাকি তিন রুমের বাসার একটি রুম ভাড়া করে। পাশের রুমেই থাকেন বাঙালী এক ভদ্রলোক। সাধা-সিধা মানুষ, কারো সাতে-পাঁচে নাই। এই বাঙালী ভাইটি’র কাছ থেকে জানতে পারলাম এলাকায় বুঝি ভূতের খুব উপদ্রব। এ নিয়ে ভাইটি আমাকে প্রায়ই গল্প শোনানোর চেষ্টা করেন। এসব শুনে আমি তো হেসেই খুন। মাঝে মাঝে উনার সাথে ভুত সেজে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে মজাও করি বেশ। একদিন তো ভয় দেখাতে গিয়ে দেখি উনার ফিটের মত অবস্থা!
একরাতে ঘুম আসছিলো না গরমে। বিছানায় এ পাশ-ওপাশ করছিলাম। এমন সময় শুনি, বাথরুমে কলের পানি পড়ার আওয়াজ। বুঝতে পারলাম, পাশের রুমের ভদ্রলোকটি বাথরুমে গিয়েছেন। উনাকে ভয় দেখানোর মহা ফিচকেলে এক বুদ্ধি মাথায় এসে সওয়ার হলো। বিছানায় উঠে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন উনি বের হবেন।
কিছুক্ষণ পরেই বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজে বুঝতে পারলাম আসল সময় হাজির। আমার রুমের সামনে উনার পায়ের আওয়াজ পেতেই খুব ফ্যাসফেসে গলায় উনার নাম ধরে ডাক দিলাম। আওয়াজ শুনে বুঝতে পারলাম উনি জায়গায় জমে গেছেন। আমার ঘরটা অন্ধকার। বাইরের লবীটাও। রাতের নিঝুম, নিরীবিলী পরিবেশে জানালা দিয়ে আসা ল্যাম্পপোস্টের ক্ষীণ আলো কেমন যেন এক ভৌতিক আবেশ তৈরী করে। তার উপর আবার এমন একটি ঘটনা। যে কারোরই ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক।
আমি গলাটাকে আরো অদ্ভুতূরে করে উনাকে বললাম যে ঘরের ভিতর একটু আসতে। উত্তর দিতে গিয়ে বেচারার গলা কেঁপে গেলো। বললেন- ''ভাই, ভেতরে আসতে হবে কেন? আমি শুনছি। কোন দরকার হলে বলুন।'' আমি কোন মতে হাসি চেপে গুরু গম্ভীর স্বরে আবারো উনাকে ডেকে বললাম-
''আপনাকে বলছি ঘরে আসার জন্যে। একটু দরকার আছে। আমি বিছানা থেকে উঠতে পারছি না।''
এবারে উনি আরো ভীত স্বরে উত্তর দিলেন, ''ভাই, কিছু মনে করবেন না, আমার একটু সমস্যা আছে। আমি ভিতরে আসতে পারবো না। যা দরকার ঐখান থেকে বলেন। আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো।''
আমি অন্ধকারে ফিক করে হেসে দিলাম। বেচারা জন্যে এবারে বেশ মায়া হলো। উনার নাম ধরে বললাম, ভাই, ভিতরে আসেন। এইটা আমি, অন্য কেউ না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫১