somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহাই কারা?

২০ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইনি বাহাউল্লা। বাহাউল্লা অর্থ আল্লার গৌরব। বাহাউল্লা বিশ্বাস করতেন যে-তিনিই বিশ্বধর্মের প্রতিশ্রুত উদ্ধারকর্তা। এমন কী কলকি অবতারও তিনি। তিনিই মৈত্রীয় বুদ্ধ, বা শেষ জামানার প্রতিশ্রুত বুদ্ধ। বাহাউল্লা ছিলেন বাহাই ধর্মের প্রবক্তা। অনেকেরই ধারনা- ইরানের শিয়া ইসলাম থেকে এদের উদ্ভব। যদিও বাহাইরা নিজেদের ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন সম্পূর্ন পৃথক এক ধর্মের অনুসারী বলে মনে করে।

বাহাউল্লার কথা বলার আগে সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ-এর কথা বলতে হয়।
সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ এর জন্ম ২০অক্টোবর ১৮১৯; ইরানের সিরাজ প্রদেশে। তরুন বয়েসে ব্যবসা করতেন সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ। ছিলেন মেধাবী, অন্যদের মতো নয়- ধর্মশাস্ত্র নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতেন। কিছু ভাবুক গোছেরও ছিলেন সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ। ছিলেন তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষক। ইসলামের অনেক রীতিনীতিই যে ইরানের সমাজে মানা হচ্ছিল না-লক্ষ করেছিলেন। ইরানি সমাজেএকটা পরিবর্তনের কথা ভাবছিলেন। ঝুঁকি নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন।
আজকের মতো সেকালেও ইরানি সমাজে বারো জন ইমাম-এর কথা প্রচলিত ছিল। বারো ইমামের শেষজন ছিলেন ইমাম মাহদি। বলা হয়ে থাকে- ইনি নাকি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন প্রতিনিধির মাধ্যমে। শেষ প্রতিনিধির মৃত্যু হলে ইমাম মাহদি চলে যাবেন এক অতল অতীন্দ্রিতায়। তখন ইমাম মাহদি জীবিত থাকলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হবে না। তবে কেয়ামতের আগে শেষ জামানায় জগত যখন পাপাচারে পূর্ন হয়ে উঠবে- অতীন্দ্রিতা থেকে বেরিয়ে এসে পৃথিবীতে ধর্মের পুনুরুদ্ধার করবেন মাহদি।
তো, সিরাজ প্রদেশের সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে নিজেকে মাহদি দাবী করলেন।
তখন ১৮৪৪ সাল। সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদের কেবল ২৪ বছর বয়েস। এমনই ঘোর!
প্রথম প্রথম লোকে তাঁর কথা অগ্রাহ্য করল। ইরানে ছয় মাস পরপর একজন বিভ্রান্ত ব্যাক্তি নিজেকে ইমাম মাহদি বলে দাবি করে। ইরানের তখতে তখন শাহ। তার কানে গেল কথাটা। তিনিও আমলে নিলেন না। বরং, মুচকি হাসলেন।
নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করে সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ নতুন নাম নিলেন বাব। বাব মানে: দরওয়াজা। গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিবর্গের কাছে চিঠি লিখতে শুরু করলেন। বই লিখলেন। বইয়ে নতুন শিক্ষা, নতুন পথের কথা বললেন। ইসলামের সঙ্গে সম্পর্ক চ্যূত করলেন। বাব-এর প্রধান লেখার নাম: “বেয়ান।” (মনে হয় বয়ান বলতে যা বুঝি তাই।)
জনৈক ঐতিহাসিক লিখেছেন-The Báb taught that the realm of language, as well as all other aspects of phenomenal reality, including natural and cultural objects were symbolic of a deeper spiritual meaning. He taught that everything that exists in the world is a sign that proclaims the sovereignty of God. In this way, reality is a type of language that consists of words and letters that celebrate the divine revelation in all things. In his later writings the Báb described the divine or eternal essence to be unknowable, indescribable and inaccessible.
অধিকন্তু, The Báb compared the divine to the sun which remains single, although it appears under different names and forms in the persons, prophets, whom it is in manifested in. Some of these teachings exhibit features common to earlier Shite sects such as the Ismailis and the Hurufis.
অধিকন্তু, বাব নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করার পরও একজন প্রেরিতপুরুষের আবির্ভাবের কথা ঘোষনা করেছিলেন।
কত লোক এসে জুটল তার বয়ান শুনে। তাদেরও বিদ্যমান ধর্মকর্ম ভালো লাগছিল না। বাব-এর দলে লোক ভারী হল। লোকে তাদের বলল বাবি, মানে বাব-এর অনুসারী।
শিয়া কাঠমৌল্লারা আর বরদাস্ত করল না। কী বাব নিজেকে ইসলামের পয়গম্বেরর সমান দাবি করেছে। বেয়ান কে বলছে কোরানের চেয়েও যুগোপযোহী! শাহ তার শাসনশোষন বজায় রাখার জন্য শিয়া কাঠমৌল্লারাদের পুষতেন। তারা শাহের কানে কানে কী সব বলল। শাহ সাহেব মদের গেলাস ঠক করে টেবিলে রেখে প্রধান মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললেন।
প্রধানমন্ত্রী ক্রর হাসল।
কদিন পরেই বাবের অনুসারীদের ওপর গুলি চালালো ইরানি সৈন্যরা।
এবং অতি সত্ত্বর গেরেপতার করা হল সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ ওরফে ইমাম মাহদি ওরফে বাব-কে।
আগেই বলেছি। সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ ছিলেন তীক্ষ্ম পর্যবেক্ষক। ইসলামের অনেক রীতিনীতিই যে ইরানের সমাজে মানা হচ্ছিল না-লক্ষ করেছিলেন সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ। ইরানি সমাজে একটা পরিবর্তনের কথা ভাবছিলেন। ঝুঁকি নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ। ১৮৫০। জুলাই মাসের ৯ তারিখ। তাবরিজের ফায়ারিঙ স্কোয়াডের সামনে দাঁড়ালেন বাব। একজন সৈন্য তাঁর চোখ বেঁধে দিল। ... মৃতদেহ প্রথমে তেহেরান আনা হয়েছিল। পরে ওখান থেকে ইজরাইলের হাইফায়। যা করার বাবিরাই করেছিল। ইজরাইলের হাইফায় বর্তমানে বাব-এর সমাধি ।
বাব এর হত্যাকান্ডের পর দুটো ঘটনা ঘটল।

১/বাবিরা ইরান থেকে নির্বাসিত হল।
২/ বাবের দেখানো পথ থেকে বাহাই আন্দোলনের সূত্রপাত হল।



বাব যে একজন প্রতিশ্রুত পুরুষের কথা ভবিষ্যৎবানী করে গিয়েছেন সে কথাটা মনে রেখেছিল তেহরান শহরের হুসাইন আলী নুরি। এবার তাঁর কথাই না-হয় বলি। হুসাইন আলী নুরির জন্ম ১২ নভেম্বর। ১৮১৭। বাব-এর চেয়ে বছর দুয়েকের ছোট ছিলেন নুরি। নুরির বাবা ছিলেন শাহ আমলের একজন মন্ত্রী। নাম: মির্জা বুর্জুগ ই নুরি। ইরানের রাজকীয় বংশের সঙ্গে নাকি কী রকম সম্পর্ক ছিল তাদের । যাক। কিশোর বয়েসে সুখেস্বচ্ছন্দে কেটেছিল হুসাইন-এর। শিখেছিল ক্যালিওগ্রাফি, অশ্বারোহণ বিদ্যা, তরোয়ালবাজি আর পাঠ করছিল ধ্র“পদি কাব্য। নিসর্গপ্রকৃতি ভালোবাসত সে কিশোর। অনেকটা সময় ওর কাটত উদ্যানে। আর কে না জানে- তেহরান বরাবরই ছিল উদ্যানের নগর।
যা হোক। এক সময় হুসাইন-এর বাবা মারা গেলেন। উপরমহল থেকেই হুসাইন কে সাধা হল মন্ত্রীত্ব । যুবক অস্বীকার করল। প্রধানমন্ত্রী হেসে বললেন, থাক। ছেলেটা অন্যরকম। ইনিই পরে বাবিদের রক্তে হাত রাঙিয়ে ছিলেন। মনে থাকার কথা শিয়া মোল্লাদের প্ররোচনায় শাহ সাহেব মদের গেলাস ঠক করে টেবিলে রেখে প্রধান মন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলে ছিলেন।
স্বাপ্নিক হুসাইন নিঃস্ব মানুষের গিয়ে পাশে দাঁড়াল।সময়টা- ১৮৪০। তেহরানের লোকে যুবককে ভালোবেসে বলল, “গরিবের বাবা।”
১৮৪৪। সিরাজ প্রদেশের সাইয়িদ আলী মুহাম্মাদ-এর মাহদি দাবী করার কথাটা হুসাইন-এর কানে গেল। ছিলেন কৌতূহলী। ১৮৪৮। বাদাস্ত গ্রামে বাবিদের সঙ্গে দেখা করলেন হুসাইন। জীবনজগৎ সম্বন্ধে বাবা-এর অসাধারন ব্যাখ্যায় রীতিমত মুগ্ধ হয়ে গেলেন। একজন বাবি তাকে বেয়ান পড়তে দিল। হুসাইন গভীর মন দিয়ে বেয়ান পড়তে লাগলেন। বাব যে একজন প্রতিশ্র“ত পুরুষের কথা ভবিষ্যৎবানী করে গিয়েছেন সে কথাট সবচে ভালো লাগল হুসাইনের। কী যেন ভাবলেন মনে মনে। বাব-এর ধর্ম গ্রহন করলেন। বাবিদের সঙ্গে গোপনে ঘন ঘন দেখা করছেন। ঐ বছরই, অর্থাৎ ১৮৪৮ সালে মাজিনধারান প্রদেশের আমূলে কয়েকজন বাবির সঙ্গে দেখা করতে গেল হুসাইন। শেখ তাবারসি দূর্গের কাছে সরকারী সৈন্যরা তাকে গেরেপতার করল । বন্দি অবস্থায় পায়ের তলায় রড দিয়ে পেটাল। যার হওয়ার কথা ছিল পারস্যের মন্ত্রী তাকেই কি না উলটো করে ঝুলিয়ে গরম রডের ছ্যাঁকা দিল পায়ে! ধর্মের ঘোর এমনই!
১৮৫২। তেহরানের কাছে এফচি নামে একটি গ্রাম। সেই গ্রামেরই একটি বাড়িতে ক’জন বাবির সঙ্গে গভীর আলোচনায় মগ্ন ছিল হুসাইন। বছর দুয়ের আগে বাবকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এখন কী করা যায়। আলোচনা সেসব বিষয়ে চলছিল। হঠাৎ একদল সৈন্য বাড়িটা ঘিরে ফেলল। একজন সৈন্য অস্ত্র উচিঁয়ে বলল- ইরানের মহামান্য শাহ্ কে হত্যা-পরিকল্পনার অভিযোগে তোমাকে গেরেপতার করা হল।
হুসাইন মুচকি হাসল।
এফচি থেকে হুসাইনদের হাঁটিয়ে নেওয়া হল তেহরান অব্দি। আগস্ট মাসের গনগনে দিন। প্রখর সূর্যরশ্মি গায়ের চামড়া পুড়িয়ে ফেলছিল। পথের দুপাশে উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে। তারা ভদ্র তারা ইরানি তারা শিয়া। তারা নষ্ট হুসাইনদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারল। বাপ-মা তুলে গালাগাল করল। হুসাইন তখন ঈশ্বরের মুখটি স্মরণ করছিল ...
সেই সময় তেহরানে ছিল ভয়ঙ্কর এক জিন্দানখানা। এককালে ওটাই ছিল ভূগর্ভস্থ জলাধার। পানি শুকিয়ে এলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। শাহ প্রশাসন ওই জায়গাই বেছে নিয়েছিল নিকৃষ্টমানের কয়েদিদের রাখার জন্য। তেহরানের লোকেরা জিন্দানখানাকে বলত: কালো গহব্বর। পাথরের সিঁড়ি পেরিয়ে ভিতরের ঢোকার পথ একটাই । ভিতরে গিজগিজ করত কয়েদির। গুমুতের দুর্গন্ধ ... আর অন্ধকার।
হুসাইনদের ঐ কালো গহব্বরেই ফেলা হল । হুসাইনে গলায় লোহার শৃঙ্খল। দিন কাটছিল অসহ্য শারীরিক মানসিক যন্ত্রনায়। এখানেই একদিন স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ পেল হুসাইন। আমার নিয়ম পরির্তিত হয়। একটাই নিয়মে জগৎ দীর্ঘকাল চলতে পারে না। আর আজ থেকে তোমার নাম বাহাউল্লা।
হুসাইন জানে, বাহাউল্লা অর্থ আল্লার গৌরব। তাঁর শরীর শিউরে ওঠে। অন্ধকারে গুয়ের গন্ধ ... পেশাবে গন্ধ। সে সব ছাপিয়ে বাহাউল্লা আতরের গন্ধ পান। নিকষ অন্ধকারের ভিতরে আলোর রেখা দেখতে পান। বাহাউল্লা কাঁদেন আর কাঁদেন। হে খোদা, আমাকে নির্বাচন করলে কেন? আমাকে নির্বাচন করলে কেন?



সেই সময়টায় তুরস্কের অটোমানদের সঙ্গে ইরানের শাহের সম্পর্ক ছিল তিক্তমধুর ।
নির্বাসিত বাবিরা অটোমানদের মনে হয় বুঝিয়ে ছিল। যে কারনেই হোক- আটকের চার মাস পর বাহাউল্লাকে মুক্তি দিল ইরান সরকার। মুক্তি দিয়েই ইরান থেকে নির্বাসিত করা হল তাঁকে।
বাহাউল্লা প্রথমে বাগদাদের পথে রওনা হলেন। সঙ্গে পরিবার আর শিষ্যরা ছিল। পথে শীত ও ক্ষুধার জ্বালায় ভুগল সবাই। যা হোক। বাগদাদ ছিল অটোমানদের। নির্বাসিত বাবিরা আগে থেকেই বাগদাদে ছিল। তারাই আশ্রয় দিল বাহাউল্লা পরিবারকে।
বাহাউল্লা তারপর নির্জন বাসের উদ্দেশে কুর্দিস্থানের এক নিভৃততম পাহাড়ের কাছে চলে গেলেন। The period is reminiscent of Moses' withdrawal to Mount Sinai, Jesus’ 40 days and nights in the desert, and Muhammad's retreat to the cave on Mount Hira.
পাহাড়ে একাই গেলেন বাহাউল্লা। কাউকে সঙ্গে নিলেন না। তারপর একটি নির্জতম গুহা বেছে নিয়ে ধ্যান করতে শুরু করলেন প্রাচীন পারস্যে প্রেরিতপুরুষ জরথুশত্রর মতন । নির্জন সে পাহাড়ের গুহায় বাহাউল্লা কাঁদেন আর কাঁদেন। হে খোদা, আমাকে নির্বাচন করলে কেন? আমাকে নির্বাচন করলে কেন?
বাহাউল্লা পরে যে বইগুলি লিখেছিলেন সেসব লেখার প্রেরণা ওই নির্জনবাসে থাকাকালীনই পেয়েছিলেন।
২ বছর কাটল নির্জনে।
তারপর বাগদাদে ফিরে এলেন। একে একে লিখতে শুরু করলেন। (১) লুকানো শব্দ। (২) সাত উপত্যকা। (৩) নিশ্চিত বই। এই বইটিই “কিতাব-ই-ইকান” নামে পরিচিত। যে বইয়ে জীবনকে বলেছেন-মহাজাগতিক উপন্যাস। সেই সময়টায় বাগদাদের কফিহাউসগুলিতে ভিড় করত বাগদাদের সব ভাবুক চিন্তাবিদেরা। বাহাউল্লা যেতেন ওখানে। অনেকেই আকৃষ্ট হয়েছিল তাঁর শান্ত সৌম চেহারায়। বিজ্ঞানের আলোচনা হত কফিহাউসগুলিতে। বাহাউল্লা বুঝলেন বিজ্ঞানকে এড়ানো যাবে না। তবে এক আধ্যাত্মিক নীতি যেন বিজ্ঞানকে পরিচালিত করে।
বাগদাদে দশ বছর কাটল।
সময়টা ১৯ শতকের। মুসলিম বিশ্ব শাসন করছিল ইরান ও অটোমান সাম্রাজ্য । দুটো শক্তির প্রভাব বাহাউল্লার জীবনে পড়েছিল। আগেই বলেছি, বাগদাদ ছিল অটোমান তুর্কিদের নিয়ন্ত্রনে। অটোমান তুর্কিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শাহ সাহেব বাহাউল্লার নির্বাসনের বাধ্য করলেন। ১৮৬৩। বাহাউল্লাকে ইস্তানবুলে যাওয়ার নিদের্শ দিল অটোমান সরকার। ইস্তানবুল ছিল অটোমানদের রাজধানী। এ ভাবে শাহ সাহেবের ইচ্ছা পূরণ হল। বাহাউল্লা তুর্কিদের চোখের সামনেই থাকুক। বাহাউল্লাকে নিয়ে যা করার ওরাই করুক। আমার হাতে অনেক রক্ত ...
ইস্তানবুল রওনা হওয়ার আগে তাইগ্রিস নদীর পাড়ে সঙ্গী শিষ্যদের নিয়ে পাড়ে ১২ দিন কাটালেন বাহাউল্লা। তাদের বললেন, বাব যার কথা বলেছিলেন আমিই সে। আর, সৃষ্টিকর্তা একজন। তিনিই সকল সৃষ্টির কারণ। সৃষ্টিকর্তা transcendent
হওয়ায় তাকে জানা সম্ভব না। তিনি পূর্বে প্রেরিতপুরুষ পাঠিয়েছেন।
যেমন? এক শিষ্য জানতে চাইল।
বাহাউল্লা বললেন, ১ আদম ২ ইব্রাহিম ৩ মুসা ৪ কৃষ্ণ ৫ জরথুশত্র ৬ বুদ্ধ ৭যিশু ৮মহম্মদ ৯ বাব ও তাঁর পর আমি।
সৃস্টিকর্তা ভবিষ্যতেও প্রেরিতপুরুষ পাঠাবেন। যাদের মাধ্যমের ঈশ্বরের কথা প্রকাশ পাবে।
এ কথার পর গুঞ্জন উঠল।
বাহাউল্লা বললেন, আমাদের আজ বিশ্বধর্মের ঐক্যের কথা ভাবতে হবে। তবে আমি বলি না যে সবই সত্য।
তা হলে?
বাহাউল্লা বললেন, বরং আমি বলব-সব ধর্মমতের উৎস অভিন্ন। পরিবেশের কারণে ধর্মগুলি বিভিন্ন রকম দেখায়। আয়ারল্যান্ডে সাধু প্যাট্রিকের খ্রিস্ট ধর্ম প্রচলিত। আমরা পারস্যের মানুষ। সে ধর্ম সত্য হলেও আমরা তা পালন করি কি করে?
তাই তো।
আর, প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে আত্মা। আত্মা অমর। মৃত্যুর পর এটি কখনও ধুলিস্মাৎ হয়ে যায় না।
এ কথার পর গুঞ্জন উঠল।
আর আমাদের জাতিগত সমতায় বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের হতে হবে লৈঙ্গিক বৈষম্যবিরোধী। আমাদের এক অভিন্ন বিশ্বসরকারব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। যেখানে মানুষ রয়েছে-তা হলে অর কি পার্থক্য ইউরোপ আর এশিয়ায় বল?
তাই তো!
অন্যরা যাই করুক। বাহাউল্লা বললেন- বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রত্যেক রাষ্ট্রের কাছে ধর্মীয় সহনশীলতা দাবী করব। আর, আমাদের বিজ্ঞানে বিশ্বাসী হতে হবে। তবে যেন এক আধ্যাত্মিক নীতিমালা বিজ্ঞানকে পরিচালিত করে। কুসংস্কার দূর করার জন্য আমাদের কাজ করতে। ধর্মকে দূর্বল করে দেয় কুসংস্কার। মনে রাখতে হবে-কর্মই ধর্ম। সবাই প্রতিদিনই খোদার কাছে প্রার্থনা করবে দুঃখকষ্টে পরিপূর্ন একটি জীবন উপহার দেওয়ার জন্য। আর, তোমরা মদ পান করো না। সব সময় সচেতন থেকো। মনে রেখ, মহান বাব ১৯ সংখ্যাকে পবিত্র বলে গন্য করতেন। তোমরা বছরে ১৯ দিন উপবাস করবে। তোমরা ৩টি কথা সব সময় মনে রাখবে-"The best beloved of all things in my sight is justice,""The earth is but one country, and mankind its citizens""The well-being of mankind, its peace and security, are unattainable unless and until its unity is firmly established."
তারপর নতুন শিষ্যদের দিকে চেয়ে বাহাউল্লা বললেন-আর আমার কথা আর কী বলব। আমার বাবা ছিলেন শাহ আমলের মন্ত্রী । বাবা মারা যাওয়ার পর আমাকে মন্ত্রীত্ব সাধা হল। ওসব আমার ভালো লাগত না। ভিড়ভাট্টা। বরং নিঃস্ব মানুষের গিয়ে পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছে হল। যতটা পেরেছি করেছি। তোমরাও করো।
এমনতরো উপদেশ দিয়েই তাইগ্রিস নদীর পাড়ে সঙ্গী শিষ্যদের নিয়ে পাড়ে ১২ দিন কাটালেন বাহাউল্লা। বাহাইরা আজও রিদভান উৎসব পালন করে ঐ বারো দিন স্মরনে। কেননা, বাহাউল্লা বলেছিলেন-বাব যার কথা বলেছিলেন আমিই সে। বাহাউল্লার দাবী কট্টরপন্থি বাবিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল।
তখন বাহাউল্লা বললেন, তোমরা জান আমাকে তেহরানের কালো গহব্বরে ফেলা হল । আমার গলায় ছিল লোহার শৃঙ্খল। আমার দিন কাটছিল অসহ্য শারীরিক মানসিক যন্ত্রনায়। তখনই একদিন স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ পেলাম: আমার নিয়ম পরির্তিত হয়। একটাই নিয়মে জগৎ দীর্ঘকাল চলতে পারে না। আর আজ থেকে তোমার নাম বাহাউল্লা।
বাহাউল্লার কথা কট্টর বাবিরা মানল না। বাহাউল্লার এক ভাই ছিল। নাম: ইয়াহিয়া । সে ছিল কট্টর বাবপন্থি। সে ষড়যন্ত্র শুরু করল।
যা হোক। বাগদাদ ছেড়ে যাওয়ার দিন পথের দুপাশে অজস্র মানুষ ভিড় করেছিল। বাগদাদের লোকেরা বড় ভালোবেসেছিল পারস্যের নম্র সুন্দর মানুষটিকে। তারাই বিদায় জানাতে এসেছিল। ভিড়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সব পন্ডিতবর্গ-এমন কী সরকারী কর্মকর্তারাও নাকি ছিল।
১৮৬৩। ৩ মে। ইস্তানবুল পৌঁছলেন বাহাউল্লা। মোট চার মাস ছিলেন ইস্তানবুলে। সুলতানকে রীতি অনুযায়ী উপঢৌকন দেননি। সুলতান বিরক্ত হলেন। নির্বাসনের নির্দেশ দিলেন। ইন্তানবুল থেকে এবার অ্যাডরিয়ানোপোল। অ্যাডরিয়ানোপোল জায়গাটা তুরস্কের পশ্চিমে, গ্রিসের পূর্বে।
ওদিকে বাবি ও বাহাই বিরোধ তুঙ্গে উঠেছিল। আগেই বলেছি বাহাউল্লার ইয়াহিয়া নামে এক ভাই ছিল। সে ছিল কট্টর বাবপন্থি। সে গোপনে বিষ মেশালো খাবারে। সে বিষমেশানো খাবার খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন বাহাউল্লা।
যা হোক। শেষমেশ সেরে উঠলেন কোনওমতে।
এবার আক্কায় নির্বাসন যেতে আদেশ দিল তুর্কিরা।
আক্কা জায়গাটা ছিল তৎকালীন প্যালেস্টাইনে। বর্তমানে জায়গাটি ইজরাইলের উত্তরে। কাছেই হাইফা উপসাগর। অটোমান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে স্থানীয় লোকজনদের বলা হল: বাহাউল্লা রাষ্ট্রের শক্র। এদের চোখে চোখে রেখ।
প্রথম বছর বড় দুঃখেকষ্টে কেটেছিল আক্কায়। বাহাউল্লার এক ছেলে ছিল। নাম- মির্জা মেহেদি। সে আকস্মিক ভাবে ছাদ থেকে পড়ে মারা গেল।
বাহাউল্লার শেষ জীবন কেটেছিল আক্কার বাইরে। “বাহজি ম্যাসন” নামে একটা বাড়িতে।
মৃত্যুর আগে ‘কিতাব-ই-আকদাস’ লিখলেন। তখনও অটোমানদের বন্দি ছিলেন বাহাউল্লার।
৯ মে। ১৯৯২। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হলেন। ঘোরের মধ্যে বললেন- হে খোদা, আমাকে নির্বাচন করলে কেন? আমাকে নির্বাচন করলে কেন?
২৯ তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বিশ্বধর্মের প্রতিশ্র“ত উদ্ধারকর্তা।।
বাহজি ম্যাসনের পাশেই কবর দেওয়া হল।



বাহাউল্লার এক ছেলের নাম আবদুল বাহা।
বাহাউল্লার মৃত্যুর পর তিনিই বাহাই ধর্মের হাল ধরেছিলেন।
৯টি পুণ্য দিবস উদযাপন বাহাইরা। সবই বাব ও বাহাউল্লার স্মৃতির সঙ্গে জড়িত।
বাহাইদের তীর্থ দুটি।
একটি বাব-এর সমাধি । মনে থাকার কথা-১৮৫০। জুলাই মাসের ৯ তারিখ। তাবরিজের ফায়ারিঙ স্কোয়াডের সামনে দাঁড়ালেন বাব। একজন সৈন্য তাঁর চোখ বেঁধে দিল।মৃতদেহ প্রথমে তেহেরান আনা হয়েছিল। পরে ওখান থেকে ইজরাইলের হাইফায়। বাব-এর সমাধিই বাহাইদের অন্যতম তীর্থ ।
দ্বিতীয় তীর্থটি বাহজি ম্যাসন।
Bahá'ís have no clergy, sacraments or rituals.

সংগঠন-

The Universal House of Justice in Haifa, Israel, is the global governing body; বাহাউল্লা নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ঠিক করে দিয়ে গেছেন। বাহাইরা লৈঙ্গিক সমতায় বিশ্বাসী হলেও-It is an all-male body.
National Spiritual Assemblies (NSA) supervise affairs in each country. The American NSA is located in Wilmette IL at the site of a Bahá'í House of Worship, one of 7 worldwide.
In each locality where there are more than nine adult believers, affairs are administered by local spiritual assemblies. Each of these institutions has nine members and is elected, not appointed. Their functions have been defined by Baha'u'llah and 'Abdu'l-Baha in Bahá'í scripture.



আর, বাবিদের কি হল-যারা বাহাউল্লার কথায় বিশ্বাস করেনি?
বাবিরা নাকি এখনও মধ্য এশিয়ায় বাস করে।
যদিও সংখ্যালঘু। এখনও স্বপ্ন দেখে তারা-একজন প্রেরিতপুরুষ জন্মাবে ওদের সম্প্রদায় থেকে! মহামতি বাব তো এমন কথাই বলে গেছেন। আর বাহাউল্লা তো আস্ত একটা ভন্ড।
বুঝুন তাহলে! ধর্মের এমনই ঘোর!

তথ্যসূত্র:

http://www.bahaullah.org/
http://reference.bahai.org/en/t/b/KI/
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৬
৩০টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×