বড়ই আক্ষেপের এক সাংঘাতিক ক্ষয়রোগ, সম্ভবত সকলের প্রত্যাশিত এই সোনার হরিণ যার নাম ''সুখ''!সুখি হবার এ দৌড় প্রতিযোগীতায় প্রথম হতে কে না চায় বলো? কানা,লোলা,লেংড়া,সবল আর দূর্বলের কতই না প্রাণগত চেষ্টা, এ ঘোড়ার ডিম সুখটাকে ছুঁবে বলে!
এ সুখের মন মাতানো ছোঁয়ার আশে,
নর-নারিরে কত যে ভালোবাসে।
করে কত দর কষাকষি,
ভাইবোন মা-মাসি।
সুখটাই দায়ী,
দেশ দেশান্তরে আছে যত রেষারেষি।
শুনেছি স্বর্গেও নাকি দেব -দেবিদের কতই না ধাক্কা-ধাক্কি,হুলস্থুল এই দুঃখহারি সুখটাকে নিয়ে!
সত্যি,সত্যি সুখি কেউ আছে কি? বেচারা কুকুর,বনের রাজা হতে চায় বাঘের মতো। এটা কি মামার বাড়ির আবদার নাকি? নিজের যোগ্যতাবলে বেটা বাঘ অহংকারে লাফালাফি করে!তুই হতচ্ছাড়া ক্ষীণ কুকুর লেজ নাড়াস কোন লাজে,কোন ভরসায় ?বিড়াল ভাগ বসাতে চায়,অবশেষে তাড়া খেয়ে গাছে লেজ গুটিয়ে কত কান্না-কাটি মেউ মেউ! অতি সুখের লোভে হতজ্ঞান !পরিনতি যা হবার তাই, সুখের পটল তোলা ছাড়া আর কি?
এবার যদি প্রশ্ন করি, প্রতাপশালী ক্ষমতাবান বনের রাজা বাঘ কি সত্যিই সুখি??? না তা নয়। কারণ প্রাণান্তর চেষ্টার পর, অবশেষে নিরীহ কোন পশু নিধনে ক্ষুদার জ্বালা মেটাতে হয় প্রতিনিয়ত। বনে-জঙ্গলে তার যে একক আধিপত্য চাই । অন্যদিকে, আবার দুশ্চিন্তায়ও সুখ নষ্ট, পিছে হায়ানা আসলো বলে! এমনি আরো কত কি। তাহলে, প্রতাপশালী "বাঘটা" সত্যিই সুখি হতে পারলো কি? এদিকে বেচারি কুকুরের এ হাল কেন? কাণ্ডজ্ঞানহীন অতি প্রত্যাশায় নিজের যোগ্যতার বিস্মরণ! না হলে, তার গন্ডিতে সেতো মন্দ ছিল না! সেতো ছিল বাড়ির সীমানার রাজা, কেউ ঢুকলেই লেজ উঁচু করে সোজা দৌড়, বাবা! সেকি প্রতাপ!! যখনি সীমানার অতিক্রম হলো, ঠিক তখনি ধাওয়া খেয়ে উঁচু লেজটি নীচু হতে-হতে বেহায়া নির্লজ্জের ন্যায় পেছনে দু-পায়ের মধ্যে দিয়ে উদরের নিম্ন দেশে নিরাপদ নিবাস খুঁজলো ! বেচারি বিড়ালেরও একই কারণে সুখের পতন, ভীরু বিড়াল বৃক্ষ শাখায় কুকুরের নাম জপতে, জপতে এখন কাতর প্রায়।
সুখটাকে আমরা নিয়েছি, অনেকটা কুকুর, বিড়াল কিংবা বাঘের মতো বিকৃত মানসিকতায়! ফলে, যখন কোন মুরগী বিক্রেতা তার নিজস্ব যোগ্যতাবলে ঘটনাচক্রে রাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করে রাজা বা রাণী হন, তখন তিনি যত বেশি না সুখি হন, ততোধিক ক্রমেই অহংকারী হয়ে উঠেন! মোড়ল দেশের নেতারাতো বিশ্ব নেতা সেজেই ক্ষান্ত হন না । কালক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বলে উঠেন, আমিই তোদের সৃষ্টিকর্তা, আমি ভিন্ন অন্য কোন অতিরিক্ত সত্ত্বা নাই! আর তখনই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুরু হয় শুভ শক্তির প্রতিযুদ্ধ। ঘোষিত সৃষ্টিকর্তা, শুভ শক্তির পদাঘাতে ধরাশায়ী হয়ে অসহায় ও অশ্রদ্ধার নরকাঘারে সময়ের ব্যবধানে নিক্ষিপ্ত হন প্রায়! সুখ তখন পরিণত হয় শোকে! আমিই একমাত্র সেরা বা শ্রেষ্ঠ এমন ভাবনায়, বিশ্ব শান্তির সিকৃতি নোবেল প্রাপ্তির সুখটাও যেন ছাই-ভস্ম হতে শুরু করে,হিংসা ও অহংকারের অণলে!
সুখটাকে নিয়ে আমাদের প্রায় সকলেরই এমন বেহাল দশা। সুখ ভোগের মাতাল নেশায়, আমরা বড়ই বেপরোয়া। আরো বেশি চাই মানসিকতা, সুখ বিপর্যয়ে অগ্নিতে যেন ঘৃতাহুতি তুল্য। এই বেপরোয়া প্রজ্জ্বলিত শিখা আমাদের সুখটাকে ভস্ম-ছাইয়ে পরিণত করে তুলতে কার্পণ্য করেনি কোনদিন ।
তাহলে, সুখটাকে নির্বাসনে পাঠাবো কি? না, তা অবশ্যই নয়।বরং সুখের সাথে শর্তবিহীন বন্ধুত্ব।সুখের সব অবস্থাতেই আত্মতৃপ্তি ও একাত্মতা প্রকাশ। সুখের আবার অবস্থা কি? অর্থাৎ-তিলে সুখ,তালে সুখ, গ্রহনে সুখ ত্যাগেও সুখ! সুখ অনেকটা ডায়াবেটিস রোগের মত! সুখ নিজে ক্ষতির কারণ না হলেও, সে যেন সব অসুখের ইন্ধনদাতা!কাজেই সুখের নিয়ন্ত্রণ বড়ই প্রয়োজন। জীবনের প্রতি মুহূর্তের বাস্তবতার সবটুকুকে সানন্দে গ্রহণ করার নামই হলো সুখ। তর্কবাগিস যুক্তিবাদীরা সুখের এমন বিশ্লেষণকে
ব্যর্থ মানুষের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের মহৌষধ বলে কটাক্ষ করতে হয়তোবা কার্পণ্য করবেন না। মুর্দা কথা,স্ব-সামর্থ ও নিজ যোগ্যতাবলে যেখানে, যখন, যেভাবে, যতটুকু যা আছি, তাতে তুষ্ট থাকার অপর নামই হলো প্রকৃত সুখ!! প্রকৃত সুখি তিনিই হন,যিনি আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা রাখেন এবং অন্তত নির্মম প্রতিঘাত করেন না। নিশ্চয়ই
সবাই সুখে থাকুন। আবারো কথা হবে অন্য কোন প্রসঙ্গে অন্য কোন দিন ----।