সাম্প্রতিক ঘটনা , ঘটনার প্রতিঘটনা , পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি অবশেষে সবকিছু ছাড়িয়ে যে বিষয়টি আবার পত্রিকার শিরোনাম হতে যাচ্ছে , তা হচ্ছে বিচারপতি নাসিমের পদত্যাগ।
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক ট্রাইবুন্যালের বিচার প্রক্রিয়ার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি সংবাদ সন্দেহ নেই। বিচারিক কাজ চলবে কি , চলবে না , ট্রাইবুন্যালের সচ্ছতা কতটুকু নিশ্চিত হবে তা নিয়ে আরো অনেক পর্যালোচনার দরকার আছে ।
তবে যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে তা হচ্ছে , যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য যে সমস্ত ব্লগার কাজ করে যাচ্ছেন তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু আচরণ ।
স্কাইপি স্ক্যান্ডাল প্রকাশিত হওয়ার পরে বাংলাদেশের স্থানীয় পত্রিকার কাটতি বেড়েছে, বেড়েছে তাদের পাঠকসংখ্যা। আর নোমান অলিউল্লাহর গ্রেপ্তার ব্যাপারটাকে আরো বেশি হিটলাইনে এনেছে নিৎসন্দেহে। জামায়াত যারা শুরু থেকে ট্রাইবুন্যালের সচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ,তারা ঘটনাটা লুফে নেয়, নিরপেক্ষ ট্রাইবুন্যালের দাবি করা দলটি তাদের দাবির স্বপক্ষে অসংখ্য যুক্তি তুলে ধরে এই স্ক্যান্ডালকে ঘিরে।
ইকোনমিস্টের সাংবাদিক ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে রুলজারির পর একটি অংশ দাবি করতে থাকে যে ট্রাইবুন্যাল একটা ফিক্সিং ট্রায়াল বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। আমারদেশ সেইসকল ক্লিপের সুত্র দিয়ে যখন পত্রিকায় খবর প্রকাশ করে তখন থেকে বিচারপতি নিজামের পদত্যাগের দাবি উঠে জোরেশোরে।
আমার চিন্তা সেখানে না , ট্রাইবুন্যাল পরবর্তীতে কি কররবে তাও না, আমি চিন্তা করছি নিঝুম-জেবতিক-অমির দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে। শুরু থেকে তারা যেনো একেবারে একটা অংম না দেখার ভান করে ছিলো। বিচারপতি নাসিম যেনো তাদেরকে লিজ দিয়ে রেখেছিলো , তার পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য। তারা দাবি করতে থাকে ট্রাইবুন্যালের একজন বিচারপতির আইডি হ্যাক করা নিসন্দেহে দন্ডনীয় অপরাধ। নিঝুম সাহেব তো এককাঠি সরেস । তিনি আইনের অনেক প্যাচপোচ দিয়ে সাধারণ ব্লগারদের বুঝাতে চাইলেন যে এটা গর্হিত , একজন বিচারক কথা বলতেই পারেন , তার ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেকের সাথেই আলাপ করতে পারেন। এটা কোন ব্যাপার হলো। ব্যাপার হতো না যদি তিনি ব্যাপারটা গোপন করতে না চাইতেন। গেলো আরকি তার কথোপকথনের ক্লিপ ইকোনমিস্টের হাতে। সমস্যা কি ছিলো এই ব্যাপারে তার রুল জারি করতেই হবে? তিনি যদি এমন কোনকিছু নাই করতেন তাহলে তাঁর এভাবে ভয় পাওয়ার কি ছিলো?
৬ ডিসেম্বরের রুল জারির সময় তিনি কারণ দর্শান যে তার সাথে মি. জিয়াউদ্দিনের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। মেনে নিলাম, আলোচনা আনুণ্ঠানিক ছিলো। কিন্তু বিচারকদের জন্য যে ১২ টি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে সেখানে তো বলা আছে বিচারক তৃতীয় কোন পক্ষ থেকে আইনি কোন রকমের সহযোগীতা নিতে পারেন না। নিঝুম সাহেবেরা জবাব দিলেন , সম্পূর্ণ নতুন ধরণের আইনে ট্রাইবুন্যাল গঠিত , তাই তিনি বিশেষজ্ঞ আইনবিদের সাতে পরামর্শের এখতিয়ার রাখেন। কিন্তু , আমার প্রশ্ন তারা যুধ্ধাপরাধী বলে কি তাদের কেস নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে? বিচারপতি নাসিমের কাছে যেটা শিক্ষা সেটাতো অনেকের জীবন মরণ প্রশ্ন।
তারপর জেবতিক সাহেবরা যুক্তি দেখানো শুরু করলেন যে , মি. জিয়া আর মি. নাসিমের কথোপকথন তো নিতান্তই অনাষনুষ্ঠানিক। তারা কি কোন ক্যাজুয়াল আলাপ করতে পারেন না। আমরা বলি অবশ্যই পারেন , তবে তাদের মধ্যে যদি ক্যাজুয়াল কথাবার্তাই হবে তাহলে কেন মি. নাসিম তাঁর জারি করা রুলের সময় বললেন যে , মি. জিয়ার সাথে তার আনুষ্ঠানিক আলাপ হতো?
প্রশ্ন আরো আছে, স্কাইপি যারা ব্যবহার করেন তারা সবাই নিশ্চয় জানেন এনক্রিপটেড বয়েস চ্যাট হ্যাক করা যায়, সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য ইউজার রেকর্ড করে রাখতে পারেন। এখন মি. নাসিম যে বললেন যে হঠাৎ করে তিনি খেয়াল করেন যে তার এ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে তিনি বুঝতে পারেন , আর এটা নিয়ে নিঝুম সাহেবেরাও বেশ লাফালাফি করেন হ্যাক হয়েছে কেন বলে বলে। আমাদের প্রশ্ন , যেখানে হ্যাকিংয়ের কোন সুযোগই নেই সেখানে একটাই অপশন আছে আছে আর তা হচ্ছে, শত্রু গরেই ছিলো। তিনি এমন একজন যিনি মি. জিয়া এবং মি. নাসিম উভয়ের সাথে , অথবা এককভাবে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। এখন আমি যে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছি সেখানে এমন একজন আছে , যার অন্যের ল্যাপটপ থেকে তথ্য চুরির অভ্যাস আছে। পাঠক নিশ্চয় সেই কথা ভুলেননি।
এরকম অনেকগুলো প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়েই কিন্তু পদত্যাগ করলেন আমাদের নিজাম।
প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর দিলেন না কেন, অভিযোগ সত্য। অবশ্যই সত্য। আর নিঝুম-অমি-জেবতিক যা করতে চেয়েছিলো তাহচ্ছে সাধারণ ব্লগারদের বিভ্রান্ত করা। তারা শুরু থেকেই যেভাবে কাজ করছিলো তাতে তো স্পষ্ট নোংরামি ছিলো । ছিলো সত্য গোপনের অত্যাগ্রহ, ছিলো মিথ্যার ফুলঝুরি।
কেমন লাগলো মামা, তোমাদের ধোয়া তুলসীপাতা বিচারক তো তোমাদের পতে বসালো। লে বাবা , খা হালুয়া শেষ বারের মতো , আমাকে অন্তত পদত্যাগ থেকে বাচা।
এখন নিঝুম, জেবতি , অমি তোমরা তোমাদের স্যারকে কি জবাব দিবা।
ড. পিয়াস করিম তো ঠিকই বলেছে , জামায়াত যা ৪০ কছরে করতে পারেনি , তাতো তোমরা একপলকেই করে দিলে।
তোমরা যদি এতো এতো না লেখতা তাহলে অন্তত পাবলিক কম জানত , এখন তো বিচারক পদত্যাগ করেছে। আর তোমাদের কাহিনীও শেষ। তোমরা কিভাবে আবার লিখবা বলো তো । আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।