১. ছয় ঘন্টা এয়ারপোর্টের ভেতর কাটাতে হবে। এর পর কাতার টু ঢাকা ডাইরেক্ট ফ্লাইট। প্রায় পাঁচ বছর পর সাউথ আফ্রিকা থেকে দেশে যাচ্ছে মারুফ। কাতারে বিরতি। কাউকে জানায়নি। সবাইকে চমকে দেবে। ঢাকার বাসায় আছে মা, ছোট ভাই আর বড় বোন তার স্বামীর সাথে। খুবই উত্তেজিত মারুফ। ২০০০ সালে মাত্র বাইশ বছর বয়সে সাউথ আফ্রিকা গিয়েছিল। মাঝে চলে গেল পাঁচটি বছর। এখন সে তরুণ থেকে যুবক। বরাবরই হোম সিকনেস মারুফ। বিদেশের চাকচিক্য জীবন কখনোই তাকে টানেনি। সব সময়ই মিস করেছিল বন্ধুদের আড্ডা। হঠাৎ পিতার মৃত্যু না হলে বন্ধুদের সাথে এই গ্যাপটা আর হত না। সবাই এখন ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত।
২. মারুফের মনে আছে যখন মোবাইল ছিল না কারো কাছে তখন কোন বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করাটা কত বিরক্তিকর ছিল। সেই বাস স্ট্যান্ডে ঠিক বিকাল পাঁচ টায় আসবে বলে তারেক আসতো অনেক দেরি করে। মোবাইল না থাকাতে তখন জানাও যেতনা আর কতক্ষণ লাগতে পারে। অপেক্ষা জিনিসটাই মারুফের খুব অপছন্দের ছিল। কিন্তু আজকে মারুফের কোন বিরক্ত লাগছে না। কাতার এয়ারপোর্টের এই ছয় ঘন্টাকে মনে হচ্ছে মারুফের জীবনের সবচেয়ে সুখকর স্মৃতি। ছয় ঘন্টা পেরুলেই ঢাকার ফ্লাইট। যখন তারেক চিঠি দিত মারুফকে তখন মারুফ ইচ্ছে করেই চিঠির খাম খুলত দেরি করে বা কখনো ২/৩ দিন পরেই খুলত। কারণ, চিঠির জন্য আগ্রহ আর আকাঙ্ক্ষা বাড়াতো নিজেই নিজের সঙ্গে। এই ব্যপারটা মারুফ খুব এনজয় করেই করত মোবাইল আসার আগে। এখনও এয়ারপোর্টে সময় যত যাচ্ছে মারুফের আকাঙ্ক্ষা ততই বাড়ছে।
৩. সব কিছুই হলো মারুফের প্ল্যান মত। সবাইকে চমকে দেয়া। বন্ধুদের সাথে সেই পুরোনো আড্ডা ঘোরাঘুরি, গ্রামের বাড়ি সব মিলিয়ে খুব দ্রুতই ছুটির তিন মাস পেরিয়ে গেল। অতঃপর ফেরার পালা। ফিরতি টিকেটে আবারও কাতারে কানেক্টিং ফ্লাইট। সেই একই এয়ারপোর্টে ছয় ঘন্টা পর কেপটাউনের ফ্লাইট। ঢাকা থেকেই মারুফের মনটা খুব খারাপ। মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই আবার ফেরত যেতে হচ্ছে। তার পরিবার তার উপর নির্ভরশীল। প্রথমবারের মত এবারও মারুফ বিদায়ের সময় পেছনে ফিরে মায়ের দিকে তাকায়নি। আগের বারের মত এবার আর কাতার এয়ারপোর্টের অপেক্ষা মারুফের ভালো লাগছে না। মন চাইছে এখনই গিয়ে কাজে যোগ দিতে। সব কিছু ভুলে যেতে। কাতার এয়ারপোর্টের এই ছয় ঘন্টাকে মনে হচ্ছে মারুফের জীবনের সবচেয়ে কষ্টকর স্মৃতি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫০