প্রিয় মুভির প্রিয় দৃশ্য : Chariot race of Ben-Hur (1959)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
মানব মস্তিষ্কের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল এটি স্মৃতি রক্ষার ক্ষেত্রে খুব সৌখিন।কোন কিছু সম্পর্কে সে সেই স্মৃতিটুকুই সংরক্ষণ করে যে অংশটুকু সে রেখে দিতে পছন্দ করে।ভেবে দেখুন,আপনি যে মুভিগুলো দেখেছেন,অনেকদিন পর ঐ মুভির কথা মনে পড়লে আপনার প্রিয় কোন দৃশ্যের কথায় মনে পড়বে,পুরো মুভির কথা মনে পড়বে না।আজ তেমনই একটি প্রিয় মুভির প্রিয় একটি অংশ নিয়ে লিখতে বসেছি।
Ben-Hur (1959) মুভিটি তো আমাদের সবারই দেখা।ছবিটি সেই তিনটি মুভির একটি যারা সর্বোচ্চ ১১টি ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতে নিয়েছিল(অপর দুটি মুভি - Titanic(1998) এবং The Lord of the Rings: The Return of the King(2004)।বেন হারের সেই ঘোড়দৌড় দৃশ্যটা(Chariot race) মনে আছে কি??
বেন হারের ঘোড়দৌড় দৃশ্য পরিচালনা করেছিলেন অ্যান্ড্রু মার্টন এবং স্টান্ট পরিচালনায় ছিলেন ইয়াকিমা কানাট।চিত্রায়িত হয়েছিল রোমের বাইরে সিনেসিটা স্টুডিওতে।সে যুগে কম্পিউটারই ছিল না, অ্যানিমেশন তো দূরে থাক।পুরো দৃশ্যটি শেষ করতে সময় লেগেছিল তিনমাস।মোট ১৫০০০ এক্সট্রা ব্যবহার করা হয়েছিল।ঘোড়দৌড়ের জন্য ব্যবহৃত মাঠের ক্ষেত্রফল ছিল ১৮ একর।মোট ১৮টি মাঠ তৈরি করা হয়েছিল,যার অর্ধেকটা শুধু অনুশীলনেই কাজে লেগেছিল।রেসের জন্য সময় নেয়া হয়েছিল পাঁচ সপ্তাহ।
দৃশ্যগুলো ২৬৩-১ কাটিং অনুপাতে করা অর্থাৎ ২৬৩ ফুট ফিল্ম থেকে মাত্র একফুট ফিল্ম রাখা হয়।সম্ভবত এটাই আজ পর্যন্ত ৬৫ মি.মি. সিকোয়েন্সের সর্বোচ্চ কাজ।
সার্কাসের মধ্যবর্তী স্পাইনা বলতে একটা স্থাপনা ছিল যেটা হল রোমান সার্কাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।এছাড়া প্রতিটি ল্যাপ হওয়ার সাথে সাথে সোনালী ডলফিনের ঘূর্ণনের আইডিয়াটা নেয়া হয়েছে রোমের সার্কাস ম্যাক্সিমাসের কাছ থেকে।
নায়ক চার্ল্টন হেস্টন প্রায় এক মাস অনুশীলন করে ঘোড়দৌড় শিখেছিলেন।আর খলনায়ক স্টিফেন বয়েড শিখতে হয়েছিল মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে।কারণ বয়েড মুভির কাস্টিংয়ে দেরীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।
ঘোড়াগুলোর নাম রাখা হয়েছিল Aldebaran, Altaïr, Antares এবং Rigel নামে।যদিও রোমে সাদা ঘোড়া পাওয়া যেত,কিন্তু ঐ ঘোড়াগুলো আনা হয়েছিল স্লোভেনিয়া থেকে।মোট ৭৮টি ঘোড়া পালন করা হয়েছিল,যারমধ্যে ৪টি বাছাই করা হয়।রেসের শুরুতে হেস্টন লাগাম ধরে টানলেন,কিন্তু ঘোড়া তো আর নড়ে না।তখন দর্শকদের মধ্যে বলে উঠল,"Giddy-up!"ঘোড়াগুলো দৌড়াতে আরম্ভ করল।
দৃশ্যগুলোতে বাস্তবতার ছোঁয়া দেয়ার জন্য রেসের মূল পয়েন্টগুলোতে ৩ টা ডামি হিসেবে রাখা হয়েছিল।অশ্বখুরের আঘাতে মেসালার আহত হবার দৃশ্যে যে ডামিকে ব্যবহার করা হয়েছিল,সেই দৃশ্য তখনকার অনেক দর্শকই সহ্য করতে পারেননি।দৃশ্যের চিত্রায়নে কোন স্টান্টের মৃত্যু ঘটেছিল কিনা সেটা ঠিক নিশ্চিত করে বলা যায় না।নোশার পাওয়েল নামে একজন স্টান্ট তার বইতে একজন স্টান্টের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে ছিলেন,কিন্তু পরিচালক উইলিয়াম ওয়াইলার এই ঘটনা অস্বীকার করেন।
তবে জো কানাট নামে একজন স্টান্ট খুব মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।রেসের একটি দৃশ্যে দেখা যায়,জুদাহ-র গাড়িটি অন্য একটি বিধ্বস্ত গাড়ির উপর হামলে পড়ে এবং জুদাহ গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যাবার উপক্রম হয়।এই দৃশ্যের স্টান্ট জো কানাট সত্যিসত্যিই ছিটকে পড়েছিলেন,কিন্তু থুঁতনিতে সামান্য আঘাত ছাড়া আর তেমন ব্যথা পান নি।ওয়াইলার এই ছিটকে যাবার দৃশ্যটি অবিকৃত রেখে পরবর্তী শটে দেখান যে ছিটকে যাওয়া জুদাহ আবার গাড়িতে উঠে আসছে।চিত্রায়নের মাঠের বাইরে একটি সাময়িক হাসপাতাল তৈরি করে রাখা হয়েছিল,যদিও তেমন কোন আঘাতপ্রাপ্ত রোগী সেখানে ভর্তি হয় নি।যারা ভর্তি হয়েছিল তারা শুরু sunburn সমস্যা নিয়েই ভর্তি হয়েছিল।
ইউটিউবে দেখুন-
আশা আছে,ভবিষ্যতে আরো কিছু প্রিয় মুভির প্রিয় দৃশ্য নিয়ে লিখব।ভাল থাকবেন।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
তালগোল
তুমি যাও চলে
আমি যাই গলে
চলে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফুরালেই দিনের আলোয় ফর্সা
ঘুরেঘুরে ফিরেতো আসে, আসেতো ফিরে
তুমি চলে যাও, তুমি চলে যাও, আমাকে ঘিরে
জড়ায়ে মোহ বাতাসে মদির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন