somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ে শান্তি হবে কবে?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১। ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির যুগ পূর্তি আজ। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর, এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পক্ষে চুক্তিতে সাক্ষর করেন সে সময়ের সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুলাহ এবং শান্তিবাহিনী তথা জনসংহতি সমিতি প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।

শান্তিচুক্তির এক যুগ পূর্তিকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি নেতারা চান চুক্তির মৌলিক শর্তসমূহ তথা এর পূর্ণ বাস্তবায়ন। এই লেখকের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক গেরিলা নেতা সন্তু লারমা এ জন্য সরকারের কাছে রোডম্যাপ বা সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা দাবি করেন।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে যথেষ্ট আন্তরিক। এ সরকার তার মেয়াদ কালেই চুক্তি বাদবাকী শর্তগুলো বাস্তবায়ন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২। চুক্তি সাক্ষরের মধ্যে দিয়ে শান্তিবাহিনীর প্রায় দুহাজার সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। বিলুপ্তি ঘটে গেরিলা গ্র“পটির। অবসান হয় পাহাড়ে প্রায় দুই দশকের শান্তিবাহিনী--সেনা বাহিনীর রক্তয়ী বন্দুক যুদ্ধের। চুক্তি সাক্ষরের সুযোগে ত্রিপুরা থেকে শরণার্থীর গানিময় জীবনের অবসান ঘুচিয়ে দেশে ফেরেন প্রায় ৭০ হাজার পাহাড়ি মানুষ। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সন্তু লারমাকে চেয়ারম্যান করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ। পুনর্গঠিত হয় উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান--এই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, গঠন করা হয় ভূমি কমিশন, শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স, চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি।

তবে চুক্তি সাক্ষরের সময়েই বিএনপি, জামাতসহ পাহাড়ে অভিবাসিত বাঙালিদের (সেটেলার) কয়েকটি সংগঠন এ চুক্তিকে ‘কালো চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে চুক্তি বাতিলের দাবিতে লং মার্চ, হরতালসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। অবশ্য বিএনপি সরকার মতায় গিয়ে দৃশ্যত চুক্তি বাতিল, সংশোধন বা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই নেয়নি। পাহাড়িদের আরেকটি ছোট গ্র“প--ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও (ইউপিডিএফ) চুক্তির বিরোধীতা করে আসছে।

৩। সরকারের সঙ্গে চুক্তি সারকারী জনসংহতি সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও চুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা দাবি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরিসংখ্যান তুলে ধরে আরো বলা হয়, ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ৪০ জন খুন ও ২০ নারী ধর্ষণসহ মোট তিন হাজার ৮৮২ জন নিরীহ পাহাড়ি (জুম্ম) নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া জুম্মদের জায়গা-জমি জবরদখল পূর্বক বহিরাগত বাঙালি পরিবার বসতি প্রদানের উদ্দেশ্যে গত ১২ বছরে জুম্মদের ওপর নয়টি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। কেবলমাত্র এসব হামলায় জুম্মদের ৬২৫টি বাড়ী সম্পূর্ণরূপে ভস্মিভূত, ৬৯৮টি বাড়ী লুটপাট ও তছনছ, পাঁচজনকে নৃসংশভাবে খুন, ৩১১ জনকে জখম এবং ১৬ জন জুম্ম নারীকে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উলেখ করা হয়।

এতে আরো বলা হয়, চুক্তি স্বারের পর গত ১২ বছরে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিকে মদদদান, বহিরাগত অনুপ্রবেশ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান, সর্বোপরি জুম্মদের মধ্যে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা মদদদানের কার্যক্রম জোরদার হয়ে ওঠে। নিজেদের ‘হীন কায়েমী স্বার্থ চরিতার্থ করার ল্েয একটি প্রভাবশালী কায়েমী গোষ্ঠী’ কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্থিতিশীল অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব অপতৎপরতা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এতে অভিযোগ করা হয়, এই ল্েয একদিকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন’ নামে সেটেলার বাঙালিদের উগ্র সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনের মাধ্যমে জুম্মদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, জমি জবরদখলসহ চুক্তি বিরোধী অপতরতায় ইন্ধন যোগানো হয়; অন্যদিকে ইউপিডিএফ নামধারী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যা ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মদদ দেওয়া হয়। গত বছরগুলোতে ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যদের হাতে ৮২ জন জনসংহতি সমিতির সদস্য, সমর্থক ও গ্রামবাসী খুন এবং তিন শতাধিক নিরীহ লোক অপহরণ ও শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়।

৪। লক্ষ্যনীয়, চুক্তির পর গত ১২ বছরেও পাহাড়ে ভূমি সমস্যা সমাধানে পার্বত্য ভূমি কমিশন সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। পাহাড়ের স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদকে পূর্ণ মতা দেওয়া হয়নি--এই এক যুগেও। আরেক স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদ সেই ১৯৮৯ সালে গঠন হওয়ার পরেও আজো পরিষদগুলোর নির্বাচন হয়নি। এ পর্যন্ত দলীয় নিয়োগের ভিত্তিতে পরিষদগুলো শুধু টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স গঠন ও পুনর্গঠন হওয়ার পর ভারত প্রত্যাগত শরণাথী পুনর্বাসনে উদ্যোগ নিলেও ছয়ের দশকের কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ ও দুদশকের অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের কারণে পাহাড়ের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাবসনে এখনো কোনো ভূমিকাই রাখেনি।

এছাড়া পাহাড়ে ’অপারেশন দাবানলের’ পর এখন চলছে সেনা বাহিনীর ’অপারেশন দাবানল’। ছয়টি স্থায়ী সেনা নিবাস ছাড়াও সেখানে রয়েছে পাঁচ শতাধিক অস্থায়ী সেনা ছাউনি। অর্থাৎ সেখানে এক ধরণের সেনা শাসন রয়েই গেছে। অথচ চুক্তির শর্ত মেনে গত ১২ বছরেও এ সেনা ছাউনিগুলো সম্পূর্ণ অপসারণ করা হয়নি। প্রায় ৫০ টি সেনা ছাউনি অপসারণে বিগত সরকারগুলো সময় নিয়েছে ১২টি বছর। উপরন্তু সেখানে রয়েছে বিডিআর, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, ভিডিপি ও বন রীদের অসংখ্য ছাউনি।

৫। এ অবস্থায় দৃশ্যত পার্বত্য সমস্যা প্রতিনিয়ত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। প্রশ্ন পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে কবে? কবে প্রতিষ্ঠা হবে সেখানে কাঙ্খিত শান্তি??
---
ছবি: শান্তিচুক্তি সাক্ষর, ফাইল ছবি, লেখক।
পড়ুন: লেখকের ই-বুক, 'রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে', আমারব্লগ.ডটকম।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৯
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×